Ajker Patrika

তাসলিমা মিজি ও তাঁর গুটিপা

অলকানন্দা রায়, ঢাকা
তাসলিমা মিজি  ও তাঁর গুটিপা

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘অমলকান্তি’ রোদ্দুর হতে চেয়েছিল। কিন্তু ছোটবেলার স্বপ্নে এমন কোনো ইচ্ছাই পাখা মেলেনি তাসলিমা মিজির। কিন্তু তাতে কি! বড়বেলায় পথ চলতে চলতে স্বপ্ন নিজেই এসে ছড়িয়ে বসেছে জীবনে। সেই স্বপ্নের হাত ধরে একবুক আনন্দ এবং স্বাধীনতার সঙ্গে নিষ্ঠা, ভালোবাসায় গড়ে তুলেছেন প্রতিষ্ঠান গুটিপা।

গুটি গুটি পায়ে যে এগিয়ে চলেছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের ঘরে ঘরেও। পালে বাতাস পেলে যেমন নৌকা এগিয়ে চলে তরতরিয়ে, তেমনি মনের মতো কাজ পেলে সমাজের চোখরাঙানি, বাধা, উপেক্ষা, উপহাস পেরিয়েও যে চূড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, তারই উদাহরণ যেন এই উদ্যোক্তা।

চামড়াশিল্প নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটির নাম গুটিপা। এর স্বত্বাধিকারী তাসলিমা মিজি। তিনি জানান, গুটিপা নামের প্রতিষ্ঠানটির পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে অনলাইনে। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটি এক এক করে পেরিয়েছে সাতটি বছর। ইতিমধ্যে ইউরোপের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডকে নিয়মিত পণ্য জোগান দিয়ে চলেছে। আছে নিজস্ব ফ্যাক্টরি এবং রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি শোরুম। এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক নারী-পুরুষের। তবে নারীর সংখ্যাই বেশি। প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত অংশ নেয় দেশ এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন মেলায়। একই সঙ্গে তারা ওয়ার্ল্ড ট্রেড ফেয়ার অর্গানাইজেশনের সদস্যও।

নিজের উদ্যোগের হাত ধরে এগিয়ে চলাটা মোটেও সহজ ছিল না। এ দেশে নারীদের পথচলা মানেই যুদ্ধ,  সেই যুদ্ধ মিজিকেও করতে হয়েছে। দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন এসব। 
এতটুকু দমে যাননি। করে গেছেন নিজের কাজ। অথচ কর্মজীবন শুরু হয়েছিল সাংবাদিকতা দিয়ে। সাংবাদিকের দৌড়ঝাঁপের জীবন পেছনে ফেলে ২০০৮ সালে শুরু করলেন কম্পিউটার ব্যবসা। নাম হলো টেকম্যানিয়া। টেকম্যানিয়া চালাতে চালাতেই মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকল সৃজনশীল কাজের হাতছানি। সেই হাতছানির নামই আজকের গুটিপা।

গুটিপার তৈরি ব্যাগশুরুতে অভিজ্ঞতা ছিল না মোটেই। ছিল কেবল চামড়াশিল্পের প্রতি ভালোবাসা। জানা ছিল, চামড়াশিল্প নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে এ দেশে বিপুল জনশক্তি কাজে লাগানো যাবে এবং চামড়াজাত পণ্য যেমন ব্যাগ, পার্স, জুতা এবং অন্যান্য পণ্য তৈরির জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ করা বেশ সহজ। বিদেশেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলে এটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে আরও শক্তপোক্ত করে তৈরিতে নিজ উদ্যোগে নানান বইপত্র এবং অনলাইন ঘেঁটে এসব নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করতে হয়েছে তাঁকে। ব্যাগের নকশা, চামড়ার ধরন, কোন চামড়ায় কোন ব্যাগ–আরও কত বিষয়-আশয়। পুঁথিগত বিদ্যা পাওয়া সহজ হলেও বাস্তবের অভিজ্ঞতা তো সহজ ছিল না। কত জায়গায় ছোটাছুটি, যোগাযোগ তৈরি করা, ব্যবসার পলিসি নিয়ে ভাবা, পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করা, কর্মী সংগ্রহ এবং তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা, পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি এবং কর্মপরিবেশে এর মেলবন্ধন ঘটানো—এসব নিয়ে ভাবতে এবং কাজে পরিণত করতে তাঁকে অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে। সময়ে সময়ে নিতে হয়েছে অনেক কঠিন সিদ্ধান্তও।

গুটিপা কর্মজীবী নারীদের ব্যবহারের সুবিধার জন্য বিশেষ ডিজাইনের একধরনের বিজনেস ব্যাগ তৈরি করে থাকে। কর্মজীবী নারীদের কাজে যাওয়া-আসা এবং দীর্ঘ সময় কাজে থাকার সময় প্রয়োজনীয় টুকিটাকি হরেক রকম জিনিস বহন করতে হয়। সেই সব জিনিসপত্র যেন সহজেই ব্যবহার করা যায় এমন একটি স্মার্ট, ফ্যাশন, ট্রেন্ড এবং বেশ কয়েকটি চেম্বারসহ ব্যাগের ভাবনা মাথায় রেখেই তাসলিমা মিজি ডিজাইন করেছেন ব্যাগগুলোর। উদ্দেশ্য, প্রয়োজনের মুহূর্তে হাতের কাছ পাওয়া জিনিসটি নারীকে যেন আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে পার্স, ব্যাকপ্যাক, ল্যাপটপ ব্যাগ, চাবির রিং রাখার পার্স, জুতাসহ আরও নানা রকম পণ্য। চামড়ার কাজ ছাড়াও পাটের তৈরি পণ্য বানিয়ে থাকে তাঁর প্রতিষ্ঠান।

সৃজনশীলতা, স্বাধীন মনোভাব এবং আনন্দকে সঙ্গী করে নিজের স্বপ্নের তরি গুটিপা নিয়ে এগিয়ে চলা তাসলিমা মিজি চান, সমাজে নারী উন্নয়ন ঘটুক। অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হোক তাঁরা। এবং নতুন যাঁরা উদ্যোক্তা হবেন বলে ভাবছেন, তাঁদের জন্য তাঁর একটিই বার্তা—উদ্যোক্তাকে হতে হবে সৃজনশীল এবং নিজেকে প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে ‘আমি কী চাই’, ‘কী আমি পারি’ এবং এর জন্য ‘কতটুকু দৌড়াতে পারব’। তারপরেই নামতে হবে স্বপ্নপূরণে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গ্রেপ্তার হয়ে অবাক ডন, বললেন—‘স্যার আমাকে কীভাবে গ্রেপ্তার করলেন’

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

একাত্তরের হত্যাযজ্ঞে সম্পৃক্ততার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন: জামায়াত

অবশেষে নতুন ঠিকানায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দী

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

এলাকার খবর
Loading...