Ajker Patrika

সুতায় বাঁধা যৌথ জীবন

আনিসুল হক জুয়েল, দিনাজপুর
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৬: ৫৬
সুতায় বাঁধা যৌথ জীবন

সিরাজুম মুনিরা সাথী ও ফেরদৌস আহমেদ দম্পতির গল্পটা আর দশটি সাধারণ দম্পতির মতো নয়। তাঁরা দুজনই সংসার করেন, চাকরি করেন; আবার একই সঙ্গে গড়ে তুলেছেন নিজেদের স্বপ্নের কারখানা। সেখানে তৈরি হয় পাটজাত বিভিন্ন পণ্য।

স্বপ্ন সফল করতে চাকরি
পড়াশোনা শেষে চাকরি না করে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করেন ফেরদৌস আহমেদ। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে চাকরি করতে বাধ্য হন। তবে নিজের মতো করে কিছু একটা করার তীব্র বাসনা থেকে যায় ভেতরে। ফেরদৌস কর্মজীবনের একপর্যায়ে থিতু হন দিনাজপুরে। সিরাজুম মুনিরার কর্ম এলাকা একই জেলার পার্বতীপুরে। তিনি বেসরকারি একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। 

পাটপণ্যে যাত্রা শুরু
পেশাগত ও পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাথী ও ফেরদৌস দম্পতি নিজেদের মতো করে কাজ করার চিন্তা করতে থাকেন। অবশেষে তাঁরা প্রক্রিয়াজাত পাটজাত দ্রব্য নিয়ে কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। এ জন্য দিনাজপুরের পাশের জেলাগুলোতে খোঁজ নিতে শুরু করেন। ব্যক্তিগতভাবে নিজেরা ধারণা নেওয়ার পাশাপাশি পার্বতীপুরের রাজাবাসর ও তার পাশের গ্রামগুলোর নারীদের সংগঠিত করতে থাকেন।

কিন্তু কাজটি যত সহজ মনে করেছিলেন, বাস্তবে তা ছিল না। নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় অবশেষে তৈরি হয় কাজের উপযোগী পরিবেশ। প্রশিক্ষণের পর একটু একটু করে এগোতে থাকে কাজ। 

পাটের তৈরি পণ্য। ছবি: সংগৃহীতসুতার কাব্যের পণ্য
মাত্র ১০ হাজার টাকা আর ২০ জন নারীকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৭ সালের মে মাসে শুরু হয় তাঁদের উদ্যোগ ‘সুতার কাব্য’। সেখানে তৈরি হতে থাকে পুতুল, ফ্লোর ম্যাট, প্লেস ম্যাট, ফ্লোর রাগ, টেবিল রানার, ব্যাগ, শতরঞ্জি, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, প্ল্যান্ট হ্যাঙ্গিং, প্ল্যান্ট বাস্কেট, লন্ড্রি বাস্কেট, মোড়া, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, শোপিস, গ্লাস কোস্টার, কুশন কভার, অ্যাপ্লিক বেড কভার, পেন হোল্ডার, বুকমার্ক, গ্রিটিংস কার্ড, চাবির হোল্ডার, কিডস রাগ, টাফটিং রাগ ইত্যাদি।

পুরস্কার
সুতার কাব্যের উৎপাদিত পণ্য অনলাইনে বিক্রি শুরু হয় প্রথমে। দৃষ্টিনন্দন নকশা আর চমৎকার নির্মাণশৈলীর কারণে ২০২১ সালের এসএমই মেলায় প্রতিষ্ঠানটি জিতেছে শ্রেষ্ঠ পাটজাতপণ্যের স্টলের পুরস্কার। প্রতিষ্ঠানটি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকায় অনুষ্ঠেয় নিউইয়র্ক নাউ মেলায় অংশ নিতে যাচ্ছে। 

সিরাজুম মুনিরা সাথী ও ফেরদৌস আহমেদ দম্পতিনিজেদের কারখানা
পার্বতীপুর-দিনাজপুর সড়কের পাশে ১০ কাঠা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুতার কাব্যের নিজস্ব ভবন। সেখানে কাজ করছেন ৬০ থেকে ৭০ জন নারী ও পুরুষ। এখানে কর্মরত নারী শ্রমিকেরা জানান, নিজেরা এখন প্রতি মাসে ভালো রোজগার করতে পারছেন।

এখানে কাজ করা পুরুষদের মধ্যে ভারতের পানিপথ থেকে দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ নেওয়া লোকও আছেন।

সিরাজুম মুনিরা সাথী জানান, ছাত্রজীবনে পরিকল্পনার সূত্রপাত হলেও বাস্তবে শুরুটা খুব সহজ ছিল না। নারীদের বাড়ির বাইরে নিয়ে আসা, কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০১৭ সালে ২০ জন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শুধু বিদেশে রপ্তানি নয়, সৃজনশীল কাজ দিয়ে দেশে একটি বড় বাজার তৈরি করতে চান সাথী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...