Ajker Patrika

ক্রেনকে বানানো হয়েছে হোটেল, আছে আরাম-আয়েশের সব ব্যবস্থা

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪: ৩৫
Thumbnail image

প্রথম দেখায় একে মনে হবে কেবলই পরিত্যক্ত একটা ক্রেন। একই সঙ্গে আবার মনে প্রশ্ন জাগবে এটা এখানে কেন? কিন্তু কাছে গেলে অবাক হবেন। আর অন্তঃপুরে প্রবেশ করলে চোখ কপালে উঠবে। কারণ পরিত্যক্ত এই ক্রেনকে ছোট্ট কিন্তু বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তর করা হয়েছে।

ক্রেন হোটেল ফারালডা নামের আশ্চর্য এই হোটেলে পৌঁছানোর জন্য আপনাকে যেতে হবে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডামে। বন্দরে ব্যবহার করা একটি পরিত্যক্ত ক্রেনকে দৃষ্টিনন্দন একটি স্থাপনায় পরিণত করা নিঃসন্দেহে অসাধারণ একটি ব্যাপার। এ জন্য ২০১৬ সালে মর্যাদাপূর্ণ পিটার ভ্যান ভলেনহোভেন অ্যাওয়ার্ড পায় ক্রেন হোটেলটি।

হোটেলটির মালিক এডউইন করনমেনের সঙ্গে আমস্টারডামের আইএএ আর্কিটেকটেন এবং ভিনডিপি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের স্থপতি ও প্রকৌশলীদের মিলিত চেষ্টা ও পরিকল্পনাতেই আলোর মুখ দেখে আশ্চর্য এই হোটেল।

হোটেলের কামরাগুলো থেকে আশপাশের চমৎকার দৃশ্য চোখে পড়ে।প্রায় ৩০ বছর ধরে অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকার পর ক্রেনটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ভেঙে ফেলা হয়। তারপর জাহাজে করে টুকরোগুলো ফ্রানকেরের তালসমা শিপইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে ইস্পাতের কাঠামোটিকে আগের চেহারা দিয়ে নতুনভাবে তৈরি করা হয়। বাইরের অংশটা রাঙানো হয় লাল রঙে। আর ভেতরটা রূপান্তরিত করা হয় আধুনিক, বিলাসবহুল এক হোটেলে। গোটা প্রক্রিয়াটি অবশ্য এক বছরের মধ্যেই সম্পন্ন হয়।

পরিত্যক্ত একটি ক্রেনকে চমৎকারভাবে হোটেলে রূপান্তর করা হয়েছে।স্যুইটগুলোর অবস্থান ৩৫ থেকে ৪৫ মিটার উচ্চতায়। একটি লিফট আপনাকে এখানকার লাউঞ্জ ও স্যুইটগুলোতে পৌঁছে দেবে। রিভার আইজের তীরে দাঁড় করানো ক্রেন হোটেল থেকে নদীর দৃশ্যের পাশাপাশি শহরের বাণিজ্যিক অংশের চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়।

4-hotel-fbবিচিত্র হোটেলের আসবাবগুলোও নজর কাড়ে।তৈরির পর থেকেই বৈচিত্র্যপিয়াসী মানুষদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলে এটি। হোটেলটিতে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকেই পর্যটকেরা আসেন। আসবেন না-ই বা কেন? একে তো ক্রেনকে বানানো হয়েছে হোটেল, তারপর আবার অতিথিদের আরাম-আয়েশে থাকার জন্য সব আয়োজনই রাখা হয়েছে এখানে। আর এখানে একটি রাত কাটানো অতিথিরা কিন্তু বেশ সন্তুষ্ট হোটেলের পরিবেশ ও সার্ভিসের বিষয়ে।

বিছানায় শুয়েই নদীর অসাধারণ দৃশ্য দেখতে পারবেন।এদের একজন অস্ট্রীয় নাগরিক সুজান্না। তিনি বুকিং ডট কমে হোটেলটিতে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এভাবে, ‘আমি থেকেছি এমন সবচেয়ে চমৎকার জায়গাগুলোর একটি এটি। আমি বিশেষভাবে সৌভাগ্যবান যে, অসাধারণ ফারালডা ক্রেনে জন্মদিনটা উদ্‌যাপন করার সুযোগ পেয়েছি। এখানকার স্যুইটগুলো বিলাসবহুল। অসাধারণ আন্তরিকতা ও মুনশিয়ানার সঙ্গে এর নকশা করা হয়েছে। সিক্রেট স্যুইট (সুজান্না যে স্যুইটে উঠেছিলেন) থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমস্টারডামের দৃশ্য উপভোগ করেছি। হোটেলের কর্মচারীরা অবিশ্বাস্যভাবে সহজ-সরল, শান্ত এবং উদার। আপনি যদি বিশেষ একটি সময় কাটানোর জন্য অনন্য একটি জায়গা খুঁজে থাকেন, তবে এটিই সেটা।’

তিনটি চমৎকার স্যুইট পাবেন হোটেলটিতে। প্রতিটি স্যুইটের সাজ-সজ্জায় আছে ভিন্নতা। অবশ্যই ওয়াই ফাই, ফ্রিজের মতো সাধারণ চাহিদাগুলো মেটানো হয়েছে প্রতিটিতে। স্বাভাবিকভাবেই এগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। আপনার সকালের নাশতা পৌঁছে দেওয়া হবে কামরায়।

ফ্রি স্পিরিট নামের স্যুইটটির আসবাব ও সাজ-সজ্জায় হালকা রং ব্যবহার করা হয়েছে। কুইন সাইজের একটি বেডরুম আছে এখানে। বাথরুমে চমৎকার একটি বাথটাব পাবেন। এ ছাড়া আর্ম চেয়ার, এগ চেয়ার, প্লাজমা টিভি স্ক্রিন, মিনি বার পাচ্ছেন এখানে। পাশাপাশি হোটেলের স্পা পুলটি এখানকার অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত।

দ্য সিক্রেট স্যুইটটা ক্রেনের মেশিনারি রুমটিকে রূপান্তর করে বানানো হয়েছে। এখান থেকে নদী আর আমস্টারডামের মূল বাণিজ্যকেন্দ্র দুটোই চমৎকার দেখা যায়। আগে যে কামরাটির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, মোটামুটি সে সুবিধাগুলো পাবেন এখানেও। যুগলদের চমৎকার সময় কাটানোর জন্য একটি আলাদা জায়গা বা ‘লাভ নেস্ট’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মিস্টিক স্লিপস নামের রুমটিতেও অন্য স্যুইটগুলোর মতো একটি কুইন সাইজের বেড আছে। সাধারণ সুবিধাগুলো পাবেন অতিথিরা। এর মধ্যে আছে আলাদা বাথরুম ও বাথটাব, ফ্রিজ, প্লাজমা টিভি, হ্যাংগিং চেয়ার ইত্যাদি। হোটেলের সবচেয়ে ওপরের তলায় স্পা পুলে সময় কাটানোর সুযোগ আছে এখানকার অতিথিদেরও। স্যুইটের ছাদটা আবার সোনালি রং করা।

চমৎকার স্যুইটে রাতযাপন, ছাদের স্পা পুলে সময় কাটানো—এসবেও যদি আপনার মন না ভরে, তবে আরও কিছু সুবিধা পাবেন। ক্রেন হোটেলের ওপর থেকে মেগা সুইং এবং বাঞ্জি লাফের ব্যবস্থাও আছে। রোমাঞ্চপ্রেমী হলে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন।

হোটেলটিতে কিন্তু ধূমপান নিষিদ্ধ। আরেকটি মজার বিষয় হলো, এই হোটেলে শিশুদের যাওয়া বারণ, কেবল প্রাপ্তবয়স্করাই এখানকার অতিথি হতে পারেন।

ছুটির দিনগুলোতে যদি অন্যরকম কিন্তু আরামদায়ক পরিবেশে সময় কাটাতে চান, তবে ক্রেন হোটেল আপনার জন্য আদর্শ। তবে একবার সেখানে একটি কিংবা দুটি দিন থাকার পর বিরক্তিকর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাটা কঠিন হতেই পারে! ও আরেকটি কথা, এখানে থাকতে কিন্তু গাঁটের পয়সা ভালোই খরচ হয়। এক রাতে এখানে থাকার জন্য গুনতে হয় ১ লাখ টাকার বেশি।

সূত্র: ইউনিক হোটেলস ডট কম, হোস্ট আনইউজুয়াল ডট কম, বুকিং ডট কম, আইএএ-আর্কিটেকটেন ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত