Ajker Patrika

কী ভেবে নাম বদলায় দেশগুলো

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ০৯: ২৮
Thumbnail image

বাজিতে বা নানা চূড়ান্ত উত্তেজনার মুহূর্তে অনেককে বলতে শোনা যায়, ‘এই যদি না হয়, তবে নাম বদলে ফেলব।’ শেষ পর্যন্ত এই প্রত্যয়ী লোকেরা নিজেদের নাম বদলায় কি-না, বা বদলালেও কতজন বদলায়, তা বলা বেশ মুশকিল। অনেকে আবার প্রতিপক্ষের নাম বদলে দেওয়ার হুমকিও দেন। এটিও কতটা কার্যকর হয়, তারও কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে মাঝেমধ্যেই যে দেশের নাম বদলে যায়, তা তো সবাই জানে। না জানার কারণও নেই। বেশ ঢাকঢোল পিটিয়েই এটি করা হয়। সর্বশেষ নাম বদলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করল তুরস্ক।

না, কোনো হুমকি-ধমকি বা প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য নয়। দেশের নাম বদলের ক্ষেত্রে কাজ করে অনেক ধরনের বিষয়। এক সময় নতুন নতুন দেশের মানচিত্র ও নাম এসেছে কাতার বেঁধে। মূলত ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়া দেশগুলো বিশ্ব মানচিত্রে নতুন নতুন নামে হাজির হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটা লম্বা সময় ধরেই নতুন নতুন দেশের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে বিশ্ববাসী। সময়ের সঙ্গে এ ধারা স্তিমিত হয়েছে। একটা বৈশ্বিক শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসায়, নতুন দেশের আবির্ভাব যেমন চোখে পড়ছে না, তেমনি আসছে না নতুন নামও।

তবে এতকালের পরিচিত দেশের নতুন নাম নেওয়ার ঘটনা কিন্তু ঘটছে। এই যেমন, সম্প্রতি দেশের নাম বদলে ফেলেছে তুরস্ক। নাম বদলের অনুরোধে জাতিসংঘের অনুমোদন পাওয়ায় দেশটি এখন ‘তুর্কিয়ে’ নামে বিশ্বে পরিচিত হবে। আর আফগানিস্তান তালেবান শাসনের অধীনে যাওয়ার পর নতুন নামের ঘোষণা এসেছে। যদিও তালেবান সরকারের মতোই সে নামও স্বীকৃতি পায়নি এখনো। তাই সর্বশেষ ধরতে হয় তুরস্ককেই। তুরস্ক ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশ তাদের নাম পরিবর্তন করেছে। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে বিচিত্র সব কারণ। চলুন কয়েকটি দেশের নাম বদলানোর ইতিহাস জানা যাক। 

তুরস্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত বছরই দেশের নতুন নামকরণ নিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন। ইংরেজি ‘টার্কি’ নামটি বদলাতে আঙ্কারার আনুষ্ঠানিক আবেদনের পর কিছুদিন আগে জাতিসংঘ নতুন নাম ‘তুর্কিয়ে’-এর অনুমোদন দেয়। তুরস্কের বেশির ভাগ মানুষ ইতিমধ্যে তাদের দেশের নাম ‘তুর্কিয়ে’ বলেই জানে। দেশটির নাম কেন বদলানো হলো, এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন। জানা যায়, ‘টার্কি’ শব্দটি বড়দিন, ইংরেজি নতুন বর্ষ এবং থ্যাঙ্কসগিভিং-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি পাখির নাম। এ ছাড়া ক্যামব্রিজ অভিধানে ‘টার্কি’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘চরমভাবে ব্যর্থ’ অথবা ‘বোকা ব্যক্তি’। এ কারণেই ‘টার্কি’ নামটি বদলে ‘তুর্কিয়ে’ করার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার।

রোডেশিয়ার নাম পরিবর্তন করে জনগণ জিম্বাবুয়ে নামে দেশটিকে স্বাধীন করেজিম্বাবুয়ে
একটা সময় নাম বদলানোর সাধারণ কারণ ছিল উপনিবেশবাদের শেকল ছেঁটে ফেলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, বেশ কয়েকটি দেশ স্বাধীন হয় এবং ইউরোপের চাপানো নামগুলো পরিবর্তন হতে থাকে। তেমনই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সিসিল রোডসের নাম অনুসারে রাখা রোডেশিয়ার নাম পরিবর্তন করা হয়। সংখ্যাগুরু কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ জিম্বাবুয়ে নামে দেশটিকে স্বাধীন করে।

কঙ্গো নদীর পর্তুগিজ নাম জাইর। ছবি: টুইটারকঙ্গো
প্রেসিডেন্ট জোসেফ-দেসিরি মোবুতু নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন মোবুতু সিসি সেকো। পরে মোবুতু ১৯৭১ সালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর নাম পরিবর্তন করে জাইর রাখেন। অথচ কঙ্গো নদীর পর্তুগিজ নাম জাইর। ১৯৯৭ সালে তাঁর শাসনের অবসান হলে আবারও দেশটি পরিচিত হয়ে ওঠে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো হিসেবে।

২০১৬ সালে চেক প্রজাতন্ত্রকে চেকিয়া নামে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। ছবি: টুইটারচেক প্রজাতন্ত্র
২০১৬ সালে চেক প্রজাতন্ত্রকে সংক্ষিপ্ত নাম চেকিয়া ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। তাঁরা বলেন, ফ্রেঞ্চ রিপাবলিককে যে যুক্তিতে ফ্রান্স নামে ডাকা হচ্ছে, সে যুক্তি চেকিয়ার ক্ষেত্রেও খাটে। নামটি ছোট, শুনতে ভালো। তবে এখনো নামটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি।

গ্রিসের একটি অংশের নাম মেসেডোনিয়া হওয়ায় রিপাবলিক অব নর্থ মেসেডোনিয়া নামটি চূড়ান্ত হয়। ছবি: টুইটারমেসেডোনিয়া
আগে যুগোস্লাভিয়ার অংশ ছিল মেসেডোনিয়া। ১৯৯১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে রিপাবলিক অব মেসেডোনিয়া নাম নিয়ে আপত্তি ছিল গ্রিসের। কারণ, গ্রিসের একটি অংশের নামও মেসেডোনিয়া। একই নামের কারণে সীমানা নিয়ে বিরোধ তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে রিপাবলিক অব নর্থ মেসেডোনিয়া নামটি চূড়ান্ত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত