Ajker Patrika

এ কেমন গলফ মাঠ! যেখানে ঘুরে বেড়ায় সিংহ-চিতা বাঘ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২: ৩১
Thumbnail image

দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত স্কুকুজা গলফ ক্লাব নিজেদের পরিচয় করিয়ে দেয় বিশ্বের ‘সবচেয়ে বুনো গলফ কোর্স’ হিসেবে। আর এটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। ৯ গর্তের গলফ মাঠটিতে দেশটির সবচেয়ে পুরোনো জাতীয় উদ্যানে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী বাধাহীনভাবে ঢুকতে এবং ঘুরে বেড়াতে পারে। এদের মধ্যে আছে হাতি, সিংহ কিংবা চিতা বাঘের মতো প্রাণীও। এসব তথ্য জানা যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে। 

মাঠটিকে ঘিরে কোনো বেড়া না থাকায় অনায়াসে ঢুকতে ও বেরোতে পারে বন্যপ্রাণীরা। অবশ্য খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান গ্রিনস্কিপার জো রোসোউয়ের নেতৃত্বে ক্লাবের কর্মীরা দিনভর টহল চালিয়ে যান। 

পেশাদার গলফাররা দর্শকদের আচরণ নিয়ে অভিযোগ করেন কখনো কখনো, সে ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার এই কোর্সে গলফারদের সমস্যাটা যে একেবারে আলাদা, মানে বুনো প্রাণীর অবাধ্য আচরণ, সেটা বুঝতেই পারছেন। অবশ্য বুনো প্রাণীরা একেবারে সুবোধ বালকের মতো বসে থাকবে এটি নিশ্চয় আশাও করবেন না আপনি। 

কালেভদ্রে আফ্রিকান বুনো কুকুরের দেখাও মেলে গলফ মাঠে। ছবি: স্কুকুজা গলফ ক্লাব গলফ কোর্সে বন্যপ্রাণীর আগমনের দিক থেকে স্কুকুজার কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিও আছে। দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন গলফ মাঠের সবুজ জমি ক্যাঙারুদের পছন্দের জায়গা, ফ্লোরিডায় গলফ মাঠের পাশের জলায় মহানন্দে সাঁতরে বেড়ায় অ্যালিগেটর। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে উত্তরের প্রদেশ লিম্পপোর লিজ্যান্ড গলফ অ্যান্ড সাফারি রিসোর্টের সিগনেচার কোর্সে জেবরা, অ্যান্টিলোপ কিংবা ওয়াইল্ড বিস্টের মতো প্রাণীর আনাগোনা সাধারণ চিত্র। 

স্কুকুজার গলফাররা নানা ধরনের তৃণভোজী প্রাণীর সাক্ষাৎ পেলেও একটি জিনিস তাঁরা দেখন না, সেটা কোনো ধরনের ফেন্স বা বেড়া। বন্যপ্রাণীদের নির্বিঘ্নে চলাফেরার জন্যই এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় না। 

গলফ ক্লাবের কর্মী এবং খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার বিষয়টি খেয়াল রাখার পাশাপাশি বন্যপ্রাণীরা বিচরণে বাধা দেওয়া হয় না। ছবি: স্কুকুজা গলফ ক্লাব অর্থাৎ, তৃণভোজীদের শিকারের লোভে আসা মাংসাশী প্রাণীদের আনাগোনাও আছে প্রচুর। সিংহ বিকেলের রোদে এর সীমানায় অলসভাবে ঘোরাফেরা করে। এদিকে হায়েনারা সিংহদের শিকার থেকে কিছুটা অংশ ছিনিয়ে নিতে থাকে তৎপর। চিতা বাঘ অনায়াসে গলফ কোর্সের সবুজের পেছনে ঘন ঝোপের মধ্যে নিজেকে আড়াল করে ঘুরে বেড়ায়। এদিকে কোনো কুমির হয়তো একটি শিকার চোয়ালের মধ্যে নিয়ে পাশের লেক পেনিকের পাড় থেকে গলফারদের দিকে চোখ বোলাচ্ছে। গাছ ফেলে দেওয়া হাতি কিংবা যুদ্ধরত জলহস্তীদের সামলানোও জো রোসোউয়ের নিত্যদিনকার কর্মতালিকায় অন্তর্ভুক্ত। বুনো কুকুরসহ আরও বিভিন্ন প্রাণীরও দেখা মেলে গলফ মাঠটিতে। 

‘আমাদের স্লোগানে একে বিশ্বের সবচেয়ে বুনো গলফ কোর্স হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি কারণ আছে’, জো রোসোউ বলেন সিএনএনকে, ‘আমরা একটি জাতীয় উদ্যানে আছি। প্রাণীরা যেন মুক্তভাবে তাদের পরিবেশে বিচরণ করতে পারে, সে জন্য যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক অবস্থায় রাখতে চাই জায়গাটিকে। মানুষকে এমন অভিজ্ঞতাই দিতে চাইবেন আপনি। এই গলফ কোর্সে বলতে পারেন সবকিছুই আছে।’ 

অনেক প্রাণীর তুলনায়ই সিংহরা মাঠের ক্ষতি কম করে। ছবি: স্কুকুজা গলফ ক্লাব ২০ লাখ হেক্টরের এই জাতীয় উদ্যান এলাকাতেই বেড়ে উঠেছেন জো রোসোউ। তাই ২০১৬ সালে যখন তিনি গলফ কোর্সের গ্রিনস্কিপারের পদটি গ্রহণ করেন, এই পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে মোটেই সমস্যা হয়নি। 

২০২২ সাল থেকে মাঠে নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদার করা হয়। আগস্টে গলফ মাঠের সবুজ ঘাসের জমিতে সূর্যোদয়ের পর একটি নিহত জিরাফের ওপর সিংহদের ভোজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। তারপর আসে হায়েনারা। কোর্সটি তখন সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ট্রাকের মাধ্যমে মৃতদেহ সরানো হয়। ওই মৃতদেহ বহন করা রেঞ্জারদের গাড়িটিকে ঝোপের মধ্যে অনুসরণ করতে শুরু করে বন্যপ্রাণীগুলো। তখন কোর্সটি আবার খোলা হয়। 

তাই গলফ ক্লাবের কর্মী ও খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা হলো ‘প্রথম অগ্রাধিকার’। রোসোও ও তাঁর দল প্রতিদিন ভোরবেলায় কার্টে চেপে ৯ হোলের কোর্সের চারপাশে পশুর উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য টহল দেন। সেই সঙ্গে রাতের কোনো ক্ষতি—সেটা কোনো বন্য প্রাণীর মৃতদেহ, হাতিদের ফেলে যাওয়া ভাঙা ডাল বা ওয়ার্টহগ কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর খনন করা গর্ত যা-ই হোক—আছে কি না দেখেন। 

লেক প্যানিকে লড়াই চলছে দুটি জলহস্তীর মধ্যে। ছবি: স্কুকুজা গলফ ক্লাব যদি কর্মীরা কোর্সটিকে খেলার জন্য অনিরাপদ বলে মনে করেন, গলফারদের মাঠে প্রবেশে নিষেধ করা হয়। সম্ভাব্য বিপজ্জনক প্রাণীগুলোকে শুধু একটি অংশে বিচরণ করলে এর আশপাশের গর্তগুলো বন্ধ থাকে, বাকি অংশ খোলা থাকে। মাঠে উঠে আসা প্রাণীদের সরে যেতে মৃদু চেষ্টা করা হয়। কোনো ধরনের খাবারের লোভ দেখিয়ে প্রভাবিত করা না গেলে নিজেদের ইচ্ছেমতো চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হয় বলে জানান রোসোউ। 

আজ অবধি বড় কোনো অঘটনের জন্ম হয়নি এই গলফ মাঠে। যে অনন্য পরিবেশে তাঁরা খেলছেন, সে সম্পর্কে গলফাররা সচেতন থাকলে এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আত্মবিশ্বাসী জো রোসোউ। 

‘মানুষ স্পষ্টতই প্রাণীদের সম্মান দেখায় এবং এটি অপর দিক থেকেও সত্যি’ বলেন রোসোও, ‘লোকেরা মনে করে যে মাঠের সবুজ ঘাসের রাজ্যে যদি একটি সিংহ থাকে, তবে এটি আপনার দিকে তেড়ে আসবে। কিন্তু বিষয়টি আসলে এমন নয়। আপনি তাকে দেখার অনেক আগেই সে আপনাকে দেখেছে এবং গন্ধ পেয়েছে, তাই প্রথমেই আপনার পথ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত