Ajker Patrika

পৃথিবীর ‘সবচেয়ে সরু হোটেল’ মাত্র ৯ ফুট প্রশস্ত

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২৩, ১৭: ৪৫
পৃথিবীর ‘সবচেয়ে সরু হোটেল’ মাত্র ৯ ফুট প্রশস্ত

ইন্দোনেশিয়ায় তৈরি হওয়া নতুন একটি হোটেল যে পৃথিবীর সবচেয়ে সরু হোটেলের তকমাটা নিজের করে নেওয়ার জোর দাবিদার তাতে সন্দেহ নেই। অবিশ্বাস্য হলেও হোটেলটি মোটে ৯ ফুট চওড়া। তবে এটির নির্মাতা বলছেন বিশ্ব রেকর্ড গড়াই এর একমাত্র উদ্দেশ্য নয়, ছোট্ট যে শহরটিতে তিনি বাস করেন সেটিকে পৃথিবীর মানুষের নজরে আনাও বড় একটি ব্যাপার। এসব তথ্য জানা যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে। 

পিতুরুমস নামের হোটেলটির মালিক, নির্মাতা কিংবা নকশাকার সবকিছুই অ্যারি ইন্দ্র। মধ্য জাভার সালাতিগা শহরে বেড়ে ওঠেন তিনি। স্থাপত্যবিদ্যায় পড়ালেখা করা অ্যারি পেশাগত কারণে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও সিঙ্গাপুরে কাটান বেশ কয়েকটি বছর। তারপরই বাড়ি ফেরার এবং নিজের প্রতিভা সেখানে কাজে লাগানোর তাড়না অনুভব করলেন। 

প্রতিটি কামরায় একটি করে ডাবল বেড আছে। ছবি: পিতুরুমসনিজের শহরে এসে এমন এক টুকরো জায়গা খুঁজে পেলেন যার প্রতি কারও আগ্রহ নেই। কারণ এর অদ্ভুত আকৃতি। আর এখানেই এখন দাঁড়িয়ে আছে পিতুরুমস। জাভার ভাষায় পিতু অর্থ সাত, হোটেলটির কামরা সংখ্যাও সাত। আর এটি চওড়ায় কেবল ৯ ফুট (২.৮ মিটার)। 

পাঁচ তলা দালানটির সাতটি কামরার প্রতিটিতেই একটি ডাবল বেডের জায়গা হয়ে যায় সুন্দরভাবে। গোসলের ব্যবস্থা এবং টয়লেটসহ বাথরুম আছে প্রতিটি কামরার সঙ্গে। স্থানীয় বিভিন্ন চিত্রকলার উপস্থিতি এবং ভেতরের অংশ আলাদাভাবে সাজানোতে প্রত্যেকটি কামরারই আলাদা বৈশিষ্ট্য নজর কাড়ে। 

মধ্য জাভার সালাতিগা শহরে সরু এই হোটেলটির অবস্থান। ছবি: পিতুরুমস‘আমি চাই মানুষ সালাতিগাতে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুক’ সিএনএনকে বলেন অ্যারি ইন্দ্র, ‘আমি আমার নিজস্ব টিম নিয়ে পিতুরুমের নকশা করেছি এবং এটি পরিচালনা করছি। স্থানীয় সম্প্রদায়কে জড়িত করে একটি নতুন ধরনের পর্যটন এলাকা তৈরি করার জন্য আমার নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এটি।’ 

সালাতিগা জাকার্তার ৩০০ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এবং বেশির ভাগ বিদেশি পর্যটকের জায়গাটি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তাঁরা ছুটি কাটানোর জন্য যোগিয়াকার্তা, সুরাবায়া কিংবা নিকটবর্তী বালি দ্বীপে যান। 

হোটেলটির মাধ্যমে নিজের শহরটিকে পৃথিবীর মানুষের নজরে আনতে চান অ্যারি ইন্দ্র। ছবি: পিতুরুমসইন্দ্র সিএনএনকে বলেন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন হওয়া পিতুরুমসে আসা মানুষদের মধ্যে ভিনদেশি কেবল শতকরা পাঁচ শতাংশ। 

তবে ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে সালাতিগার ভালো খাবার, ভালো অবকাঠামো এবং চমৎকার জীবনযাত্রার জন্য আলাদা নাম আছে বলে মনে করেন ইন্দ্র। ঔপনিবেশিক যুগে ডাচদের কাছে ছুটি কাটানোর জন্যও এটি একটি জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল। 

ইন্দ্র জানান, বেশির ভাগ ইন্দোনেশিয়ান সালাতিগাকে অবসর কাটানোর জন্য একটি সুন্দর জায়গা বলে মনে করে। কিন্তু তিনি মনে করেন পিতুরুমস তাঁর ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলোর প্রথম ধাপ হিসেবে কাজ করবে, যা ভিনদেশিদের কাছে প্রমাণ করবে সালাতিগা কোনো মতে টিকে থাকা একটি শহরের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। 

‘প্রযুক্তিগত অসুবিধা গুলি বাদ দিলে, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পর্যটনকে ঘিরে সাধারণত মানুষের মধ্যে যেসব মানসিকতা কাজ করে, যেমন বৃহত্তম, লম্বা, সবচেয়ে বিলাসবহুল ইত্যাদির থেকে মানুষকে বের করে আনা। এখানে উল্টো আমরা সবচেয়ে সরু।’ আর্কিটেকচার ব্লগ ডিজিনকে বলেন ইন্দ্র। 

সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হয় হোটেলটি। ছবি: পিতুরুমস‘আমরা এই সীমাবদ্ধতাটিকে আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী বাণিজ্য কৌশলে পরিণত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। ছোট্ট একটি জায়গায় নির্মিত হলেও অতিথিরা “পর্যাপ্ত” জায়গায় চলাচল এবং সময় কাটানোর সম্ভাবনা অনুভব করতে পারবেন।’ বলেন তিনি। 

শহরটি মাউন্ট মেরবাবুর পাদদেশে অবস্থিত। পর্বতটিকে পিতুরুমসের অতিথিরা তাদের কামরা থেকেই দেখতে পাবেন। রুম ছাড়াও হোটেলটির ছাদে রেস্তোরাঁ আছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও এখানে সময় কাটাতে পারেন। পিতুরুমস কর্তৃপক্ষের এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং শিল্প প্রদর্শনী আয়োজনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। 

কাজেই পাঠক, আপনি যদি ভ্রমণ ও রোমাঞ্চপ্রেমী হোন ইন্দোনেশিয়া জাভার আশ্চর্য এই হোটেলে অন্তত একটি রাত কাটানোর সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত