Ajker Patrika

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে উপবাসে বহু মৃত্যু, বাংলাদেশেও ঘটেছিল এমন ঘটনা

আপডেট : ২৮ মে ২০২৩, ১২: ১৮
কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে উপবাসে বহু মৃত্যু, বাংলাদেশেও ঘটেছিল এমন ঘটনা

কেনিয়াতে যিশুর সাক্ষাৎ পেতে দীর্ঘ উপবাসে মারা যাওয়া প্রায় অর্ধশত মানুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই স্থানে লাশগুলো পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও অনেক লাশ পাওয়া যাবে। কারণ, যেই ধর্মপ্রচারকের নির্দেশে এই উপবাস শুরু হয়েছিল, কমপক্ষে তিনটি গ্রামের মানুষ তাঁর অনুসারী। এটিকে একটি গণ-আত্মহত্যা বলেই মনে করছে প্রশাসন।

এ ধরনের জনগোষ্ঠীকে বলে ‘কাল্ট’। এরা প্রচলিত ধর্মীয় আচারের বাইরে গিয়ে কঠোর বা সহিংস পন্থা বেছে নেয়। সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের আশায় অথবা অসীমে মিশে যেতে স্বেচ্ছায় প্রাণ বিসর্জন দেয়, কখনো কখনো বলি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

আজ থেকে ১৬ বছর আগে ঠিক এ ধরনেই একটি ঘটনা ঘটেছিল ময়মনসিংহ জেলায়। এক পরিবারের নয়জন সদস্য ট্রেনের নিচে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে শিশুও ছিল।

ঘটনাকাল ২০০৭ সালের ১১ জুলাই, বেলা ৩টা ১০ মিনিট। জামালপুরের জগন্নাথগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা জিএম এক্সপ্রেস ২৫৪ লোকাল ট্রেনটি ময়মনসিংহ পৌরসভার কাশর এলাকার ইটখোলায় পৌঁছালে হঠাৎ চালকের নজরে পড়ে রেলপথের বাঁ পাশ থেকে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ একে অন্যকে ধরাধরি করে রেললাইনের দিকে আসছে। এরপর তাঁরা রেললাইন ধরে চুপচাপ বসে পড়েন। প্রথমে চালক ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারেননি। ভেবেছিলেন তাঁরা হয়তো রেললাইন পার হচ্ছেন। কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছেন ততক্ষণে কিছুই করার ছিল না। নয়জনকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে যায় রেলগাড়ির চাকা।

এরপর চালক ট্রেনটি থামিয়ে দেন। মুহূর্তে শত শত মানুষ জড়ো হয়। খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে আসে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান তাঁদের পরিচয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মা,দুই ছেলে, চার মেয়ে এবং দুই নাতি-নাতনি। তাঁরা হলেন- মা হেনা আনোয়ার (৬০), ছেলে আরিফ আনোয়ার (৩০) ও রাহাত আনোয়ার (২২), মেয়ে আক্তারী আনোয়ার (৩৫), মুর্শেদা আনোয়ার (২৭), মুন আনোয়ার ওরফে মবি (৩০) ও শবনম আনোয়ার (১৮), নাতি মৌলা আনোয়ার (৮) এবং নাতনি মৌ আনোয়ার (১০)। রেললাইনের পাশেই তাদের বাড়ি।

এ নিয়ে পরের দিন দেশে সব জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হয়। সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। সাংবাদিকদের ভিড় লেগে যায় ওই এলাকায়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকেরা দেখতে পান সুনসান নীরবতা। একটি পাকা বাড়ির পাঁচ-ছয়টি কক্ষ। উঠানে কবরের মতো গর্ত। বারান্দায় লাশ নেওয়ার খাটিয়া। রান্নাঘরে পড়ে আছে কাটা মাছ ও তরিতরকারি।

আদম পরিবারের হোল্ডিং প্লেটবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বেশ কিছু ডায়েরি ও হাতে লেখা কাগজপত্র উদ্ধার করে। কিছু বাংলায়, কিছু ইংরেজিতে লেখা। ইংরেজিতে একটি ডায়েরিতে লেখা ছিল, ‘আমরা পৃথিবীর একমাত্র পরিবার যারা স্বাধীন ও আত্মনির্ভরশীল। মোহাম্মদের আইনের বাইরে এবং সব ধর্মের সব কার্যকলাপের বাইরে। তাহলে আমরা কে? আমরা হলাম আদম। সবার উপরে আদম সত্য, জুলুমের বিচারের ব্যবস্থা করিব।’—এ ধরনের কথাবার্তা ছিল সেখানে।

পরে পুলিশের বক্তব্য এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী বা এলাকার লোকজনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আনোয়ার দরবেশ নামে এক লোক ‘আদম ধর্ম’-এর প্রতিষ্ঠাতা দাবি করতেন। নিজেকে আনোয়ার আদম বলে পরিচয় দিতেন। তিনিই তৈরি করেছিলেন এই কাল্ট। তাঁর ছোট ভাই আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তাঁর ভাই (আনোয়ার দরবেশ) হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের সবাই খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে। এরপর থেকেই তাঁদের আত্মীয়তা নষ্ট হয়ে গেছে।

অবশ্য আনোয়ার দরবেশের বাড়িতে খ্রিষ্টধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো নথিপত্র বা বইপুস্তক পাওয়া যায়নি। স্থানীয় গির্জাতেও তাঁরা কখনো যাননি।

এই আনোয়ার দরবেশের কার্যক্রম সম্পর্কে ওই সময় পত্রপত্রিকায় যেসব তথ্য বেরোয় সেগুলো হলো—সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি ধর্মে মন দেন। এলাকার মানুষ দরবেশ, ফকির ও পীর বলে ডাকতে শুরু করেন। তবে ধীরে ধীরে চিন্তায় পরিবর্তন আসে। প্রচলিত ইসলাম ধর্মের বাইরে নানা কথা বলতে শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে এলাকায় অনেকের সঙ্গে তর্কও হতো প্রায়ই। এ কারণে একবার লোকজন তাঁকে মারধরও করে। বলতে গেলে এরপরই আনোয়ার একঘরে হয়ে পড়েন। নিভৃতে থাকতে শুরু করেন। স্থানীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। পরিবারের লোকজন ধীরে ধীরে তাঁর মুরিদ হতে শুরু করে। পরিবারের বাইরেও কয়েকজন মুরিদ ছিলেন বলে জানা যায়।

২০০০ সালের ১১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান আনোয়ার। মৃত্যু পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি আগেই লিখে গিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মৃত্যুর পরে আমার কোনো জানাজা দিবা না, গোসল করাবা না, কাফনের কাপড় পরাবা না। যে কাপড় পরে মারা যাব, সেই কাপড়ে সেই অবস্থাতেই আমাকে কবর দিবা। কোনো কবরখানায় আমাকে নিবে না, বাড়ির ভিতরে গর্ত খুঁড়ে আমাকে কবর দিবে। আমার মাথা থাকবে পূর্বে, পা থাকবে পশ্চিমে আর মুখ দক্ষিণ দিকে ঘুরানো থাকবে। যদি অন্য রকমভাবে কবর দাও, তাহলে আমি কঠিন প্রতিশোধ নিব।’

আদম পরিবারের নেমফ্লেট লেখা নির্দেশনাপরিবারের লোকজন সেই নির্দেশনা অনুযায়ীই কবর দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের বাধায় প্রশাসনের উপস্থিতিতে গোসল, কাফন পরানো এবং জানাজা নামাজের পর তাঁকে ইসলামি রীতিতে কবর দেওয়া হয়।

আনোয়ার আদমের জানাজা এবং দাফন নিয়ে জটিলতায় আদম পরিবারটি ক্রমেই আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরিবারটির ওপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। আদম পরিবারের গৃহকর্মী রিনার ভাষ্যমতে, ‘নানা ভাবে তারা ফার্নিচার, টিউবওয়েল চুরি করে নিয়ে গেছে। টয়লেটের দরজা ভেঙে ফেলেছে। বাথরুমের পাইপ নিয়ে গেছে। ওরা বাড়ির ভেতর ঢুকে গাছ কাটার চেষ্টা করেছে।’

এ ঘটনার পর পুরো পরিবার ঢাকায় চলে যায়। বড় ছেলে আরিফ পরিবারের খরচ চালাতেন। কিন্তু তিনি কী করতেন তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য ছোট ছেলের ডায়েরিতে খুনের ইঙ্গিত আছে। তিনি লিখেছেন, ‘So who we are? I have already given my and our identity as ‘‘ADAMS’’...We have come to establish the truth and reallity in to the world but our bodies were killed again and again by mohamod’s rules, law and relisions. ’

আনোয়ার আদম মারা যাওয়ার পর বড় ছেলে আরিফ বাবার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ‘আদম ধর্ম’-এর নেতার ভূমিকা পালন করেন। আরিফ সম্বন্ধে তাঁর পরিবারের অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর ছোট বোন শারমিন ডায়েরিতে লিখেছিলেন—‘My brother worked as dean in many 52 international university in Dhaka and in outside. He is extraordinary smart, intelligent and individual and intellectual man I ever met. There is no doubt. He is different. I am very proud to be his sister...My brother left by muhamad’s attacked.’ 

২০০৫ সালে ঢাকায় আরিফ মারা যান নাকি খুন হন, সেটিও রহস্য। এরপর পরিবারটি গ্রামে ফিরে যায়। তখন পরিবারের একমাত্র পুরুষ সদস্য রাহাত। সেখানে পরিবারটি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করত সেটি জানা যায় না। রাহাতের ডায়েরিতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘We are the only family in the world that is independent and selfdepanded. We are the only one family in the world that is totally independed and selfdepended and out of mohamod’s rules. , law and relisious activities and relisions. ’

বড় বোন আক্তারী আনোয়ার বাবার প্রতিষ্ঠিত আদম ধর্মের পুরোহিত হয়ে বসেন। মৃত বাবা ও ভাইয়ের আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পুরো পরিবার নিয়মিত ধ্যান করত। আক্তারী বেগমের ওপরই বাবার আত্মা ভর করত। তাঁর মুখ দিয়েই আসত বিভিন্ন আদেশ-নিষেধ। 

ডায়েরি এবং হাতে লেখা কাগজপত্র অনুযায়ী, তাঁদের বিশ্বাস ছিল—আদম হচ্ছেন বিশ্বের প্রথম মানুষ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। অন্য সব মানুষ আদমেরই অংশ (বনি আদম)। আদম বিভিন্ন সময়ে মারা যান, আবার পরবর্তী সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জন্ম গ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে আদম হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন আনোয়ার আদম। নবী মোহাম্মদের (সা.) অনুসারীদের (শরিয়তপন্থী) তাঁরা ঘৃণা করতেন।

প্রত্যেক সদস্যই মৃত্যুর আগে ডায়েরিতে কিছু না কিছু লিখে গেছেন। অধিকাংশ লেখাই ইংরেজিতে। তবে মায়ের হয়ে তাঁর কথাগুলো লিখে দিয়েছেন মেয়ে। এমনকি দুটি শিশুর কথাও ডায়েরিতে রয়েছে। অবশ্য তাদেরটি কেউ লিখে দিয়ে থাকতে পারে।

আদম পরিবার আত্মহত্যার জন্য যাত্রা করে এই বাড়ি থেকেইমূলত বাবা-ভাইয়ের মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁরা আত্মহত্যারই পরিকল্পনা করছিলেন। বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তাঁরা এমন ভেবেছিলেন। ডায়েরির লেখাজোখা থেকে তেমনটিই জানা যায়। ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেওয়ার আগে তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যারও আয়োজন করেছিলেন। 

এ ঘটনা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল Mental Health, Religion & Culture সাময়িকীতে, ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। ডা. নাসিমা সেলিমের সেই গবেষণাপত্রের শিরোনাম ‘An extraordinary truth? The Adam ‘‘suicide’’ notes from Bangladesh’। 

সেখানে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: আনোয়ার আদমের চিন্তাধারায় প্রোথিত হয়ে গিয়েছিল শরিয়তবিরোধী ধ্যানধারণা। ১৯৯৫ সালে আনোয়ার আদমের চেতনায় যে পরিবর্তন তৈরি হয়েছিল, মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে বিভ্রান্তি (Delusion)। পরিবারের প্রত্যেকেই সেই বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন, এটিকে বলে Shared Delusion বা যৌথ বিভ্রান্তি। 

এ বিষয়ে ডা. নাসিমা সেলিম লিখেছেন: Shared Psychotic Disorder (SPD), referring to a condition where all members of a family share the delusions This is an extremely rare condition, but one that has been found in many different cultures. 

এ ছাড়া নাসিমা সেলিম এই রোগকে সম্ভাব্য `Folie a famille' বলে চিহ্নিত করেছেন। ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগে সাধারণত পরিবারের সদস্যরা অদ্ভুত আচরণ শুরু করে। বিশেষত একজন সদস্যের কোনো অস্বাভাবিক প্রবণতা অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। 

এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০০৮ সালে সুইডেনে। উরুসুলা এরিকসন নামে এক নারী রাস্তায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। একটু পরেই তাঁর যমজ বোন সাবিনা এরিকসনও একইভাবে হাইওয়েতে বের হয়ে গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার চেষ্টা করেন। ভাগ্যক্রমে তিনিও বেঁচে যান। মনোবিদেরা বলেন, তাঁরা ‘ফলি অ্যা ফ্যামিলি’ রোগের শিকার। 

এ ছাড়া ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ সদস্যের একটি পরিবার বাড়ি থেকে বের হয়ে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দূরে চলে যান। কিন্তু তাদের কোনো উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা ছিল না। স্রেফ একজন ভেবেছেন বাড়ি থেকে দূরে গেলেই ভালো! বাকিরাও তাঁকে অনুসরণ করেছেন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিপসের প্যাকেটকে বন্দুক ভেবে কিশোরকে পুলিশে দিল এআই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৯
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি

চিপস খেতে খেতে রাস্তায় হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের স্কুলপড়ুয়া কিশোর টাকি অ্যালেন। হঠাৎ আটটি পুলিশের গাড়ি এসে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাকে। গাড়ি থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা তার দিকে বন্দুক তাক করে হাঁটু গেড়ে বসতে বললেন। এমন আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর বুঝে উঠতে পারছে না, কী তার ভুল। পুলিশের নির্দেশ মানার পর হাতে পড়ল হাতকড়া।

টাকি অ্যালেনকে কিশোর বয়সে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। অ্যালেনের হাতে থাকা চিপসকে বন্দুক হিসেবে শনাক্ত করেছে এক এআই সিস্টেম!

স্থানীয় গণমাধ্যম ডব্লিউএমএআর-২ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাকি অ্যালেন বলে, ‘হঠাৎ দেখি প্রায় আটটা পুলিশ কার এসে গেল। তারপর সবাই বন্দুক তাক করে আমাকে মাটিতে শুতে বলছে।’

অ্যালেন বলতে থাকে, ‘ফুটবল অনুশীলনের পর এক প্যাকেট ডোরিটোস চিপস খেয়ে খালি প্যাকেটটি পকেটে রেখে দিই। এর ২০ মিনিট পরই এই ঘটনা। একজন অফিসার আমাকে হাঁটু গেড়ে বসতে বলেন, তারপর আমাকে আটক করে হাতকড়া পরান।

তবে বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ বিবিসি নিউজের কাছে দাবি করে, অ্যালেনকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, কোনো হুমকি নেই নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি নিরাপদে সমাধান করা হয়।

এই ঘটনার পর থেকে ফুটবল অনুশীলন শেষে স্কুলের ভেতরে চলে যায় অ্যালেন। সে জানায়, বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়, বিশেষ করে চিপস খাওয়া বা কিছু পান করা।

বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ জানায়, সেই মুহূর্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত ও আনুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের কর্মকর্তারা।

বিভাগটি আরও জানায়, এআই সতর্কবার্তাটি মানব পর্যালোচকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা এতে কোনো হুমকি পাননি। এই বার্তা স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে পাঠানো হলেও তিনি এ তথ্যটি দেখেননি এবং স্কুলের নিরাপত্তা টিমকে জানান। তারা পুলিশকে ডাকে।

অভিভাবকদের উদ্দেশে এক চিঠিতে স্কুলের প্রিন্সিপাল কেট স্মিথ বলেন, স্কুলের নিরাপত্তা দল দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং কোনো অস্ত্র না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রাথমিক সতর্কতা বাতিল করে।

তিনি আরও জানান, ‘আমাদের স্কুল রিসোর্স অফিসারকে (এসআরও) বিষয়টি জানানো হলে তিনি অতিরিক্ত সহায়তার জন্য স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা স্কুলে এসে ওই শিক্ষার্থীকে তল্লাশি করেন এবং দ্রুত নিশ্চিত হন যে তার কাছে কোনো অস্ত্র নেই।’

এআই টুল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমনিলার্ট এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বিবিসি নিউজকে জানায়, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের উদ্বেগ জানাতে চাই।’

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের সিস্টেম প্রথমে এমন কিছু শনাক্ত করে যা দেখতে আগ্নেয়াস্ত্রের মতো লাগছিল। ছবিটি পরে তাদের পর্যালোচনা দল যাচাই করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই তথ্য ও ছবি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুলের নিরাপত্তা দলের কাছে মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তাদের সিস্টেমে ‘সমাধান হয়েছে’ বলে চিহ্নিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা শেষ হয়। তাদের সিস্টেম ‘যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, সেভাবেই কাজ করেছে।’

অ্যালেন মন্তব্য করেছে, ‘আমার মনে হয় না কোনো চিপসের প্যাকেটকে কখনো বন্দুক হিসেবে ভুল ধরা উচিত।’

এই ঘটনায় স্কুলগুলোতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছে অনেকে। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বাল্টিমোর কাউন্টির স্থানীয় কাউন্সিলর ইজি পাকোটা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি তাদের এআই-চালিত অস্ত্র শনাক্তকরণ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিচিত্র /ল্যুভরের লুট এখন ভাইরাল বিজ্ঞাপন, চোরদের মইটি ছিল জার্মান কোম্পানির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ১২
ল্যুভর মিউজিয়ামে ঢুকতে ব্যবহৃতটি মইটি ছিল এক জার্মান কোম্পানির। ছবি: এএফপি
ল্যুভর মিউজিয়ামে ঢুকতে ব্যবহৃতটি মইটি ছিল এক জার্মান কোম্পানির। ছবি: এএফপি

প্যারিসের বিশ্ববিখ্যাত ল্যুভর মিউজিয়ামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মহামূল্যবান অলংকার চুরির ঘটনায় ব্যবহৃত বিশেষ একটি ফার্নিচারের প্রস্তুতকারক জার্মান কোম্পানি বোকার। এই চুরির ঘটনাকে এখন নিজেদের প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে কোম্পানিটি। তারা চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের পণ্যের গুণগান গেয়ে হাস্যরসাত্মক বিজ্ঞাপন প্রচার করছে।

গত সপ্তাহের রোববার সকালে ল্যুভর মিউজিয়াম খোলার পরই চোরেরা একটি ট্রাক মিউজিয়ামের অ্যাপোলো গ্যালারির নিচে থামায়। এই ট্রাকে লাগানো ছিল বোকার কোম্পানির তৈরি একটি ভাঁজযোগ্য মই। দিনের আলোয় তারা সেই মই বেয়ে ওপরে উঠে যায়, জানালা কেটে ভেতরে ঢোকে এবং ডিসপ্লে কেস ভেঙে গয়না চুরি করে।

পুরো অপারেশনটি শেষ করতে চোরদের সময় লেগেছিল মাত্র সাত মিনিট। চুরি হওয়া অলংকারগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দেওয়া একটি পান্না ও হীরার নেকলেস এবং সম্রাজ্ঞী ইউজিনির মুকুট। এই মুকুটে প্রায় ২ হাজার হীরা খচিত।

জার্মানির ডর্টমুন্ডের কাছে অবস্থিত লিফটিং সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি বোকারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলেক্সান্ডার বোক এবং তাঁর স্ত্রী রোববার খবরটি দেখার সময়ই ব্যবহৃত মইটি চিনতে পারেন।

সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আলেক্সান্ডার বোক জানান, তাঁর স্ত্রী, যিনি কোম্পানির বিপণন প্রধানও, তিনিই প্রথম বিষয়টি খেয়াল করেন। তিনি বলেন, ‘যখন পরিষ্কার হলো যে চুরির ঘটনায় কেউ আহত হয়নি, তখন আমরা বিষয়টিকে একটু হালকা চালে নিই।’

আলেক্সান্ডার স্বীকার করেন, ‘এটি আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ! সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সর্বাধিক পরিদর্শন করা জাদুঘরটির খ্যাতি কাজে লাগিয়ে আমাদের কোম্পানির জন্য কিছুটা দৃষ্টি আকর্ষণ করার এ-ই সুযোগ।’ তবে তিনি এ-ও স্পষ্ট করেন, ‘এই অপরাধ অবশ্যই নিন্দনীয়, এটা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’

এই সুযোগে বোকার দ্রুতই একটি প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ল্যুভরের বাইরে লাগানো সেই মইয়ের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছে: ‘যখন আপনার দ্রুত ফেরার তাড়া থাকে!’

বিজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, তাদের তৈরি ‘Agilo’ নামের ডিভাইসটি ২৩০ ভোল্টের বৈদ্যুতিক মোটর এবং ‘ফিসফিসানির মতো শান্ত’ শব্দের ইঞ্জিনের সাহায্যে ৪০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত মালপত্র বহন করতে পারে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চোরেরা মইটির ডেমোনস্ট্রেশন নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল এবং প্রদর্শনের সময়ই এটি তারা চুরি করে নিয়ে যায়। তারা গাড়ির লাইসেন্স প্লেট ও গ্রাহকের লেবেলিং পর্যন্ত সরিয়ে ফেলেছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বোকারের পোস্টগুলো সাধারণত ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার বার দেখা হয়। তবে এই বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকে ৪৩ লাখের বেশি ভিউ পেয়েছে। যদিও প্রচারণার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকে এটিকে ‘স্মার্ট’ ও মজার বলে অভিহিত করেছেন, আবার অনেকে নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আলেক্সান্ডার বোক বলেন, তিনি জানেন এটি ‘খুবই সূক্ষ্ম ভেদরেখা’, কিন্তু কেউ আহত না হওয়ায় তাঁরা এই পথে এগিয়েছেন। তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, এই প্রচারণার অর্থ অপরাধকে সমর্থন করা নয়।

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সম্পূর্ণ বিরোধী। আমরা নিঃসন্দেহে সিরিয়াস কোম্পানি। জার্মানিতে আমাদের ৬২০ জন কর্মচারী আছে। সবকিছু জার্মানিতেই তৈরি হয়। আমরা নিরাপত্তার পক্ষে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিশোরের পেট থেকে বের হলো ১০০টি শক্তিশালী চুম্বক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিউজিল্যান্ডে এক কিশোরের পেট থেকে বের করা হলো ১০০টি চুম্বক। ছবি: নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নাল
নিউজিল্যান্ডে এক কিশোরের পেট থেকে বের করা হলো ১০০টি চুম্বক। ছবি: নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নাল

নিউজিল্যান্ডে ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরের পেট থেকে প্রায় ১০০টি শক্তিশালী চুম্বক অপসারণ করেছেন চিকিৎসকেরা। জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার অন্ত্রের কিছু টিস্যুও অপসারণ করতে হয়েছে। চিকিৎসকেরা গতকাল শুক্রবার এই অস্ত্রোপচারের কথা প্রকাশ করেন। চুম্বকগুলো কেনা হয়েছিল জনপ্রিয় অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্ম টেমু থেকে।

এই ঘটনা অনলাইন শপ থেকে কেনা শিশুদের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দিন ধরে পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে কিশোরটিকে নর্থ আইল্যান্ডের টরাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হাসপাতালের চিকিৎসকদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিশোরটি ভর্তির প্রায় এক সপ্তাহ আগে প্রায় ৮০ থেকে ১০০টি (৫ x ২ মিলিমিটার আকারের) শক্তিশালী নিওডিমিয়াম চুম্বক গিলে ফেলেছিল। এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায়, এই চুম্বকগুলো তার অন্ত্রের ভেতরে চারটি সরলরেখায় জড়ো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, চুম্বকীয় শক্তির কারণে অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ একসঙ্গে আটকে যাওয়ায় তীব্র চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে টিস্যু মারা যায়।

সার্জনরা দ্রুত অপারেশন করে মৃত টিস্যু অপসারণ করেন এবং আটকে থাকা চুম্বকগুলো বের করে আনেন। চিকিৎসকেরা নিশ্চিত করেন, কিশোরটির ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহদন্ত্রের অংশ ক্যাসেম-এর চারটি জায়গায় টিস্যু মারা গিয়েছিল। আট দিন হাসপাতালে থাকার পর শিশুটিকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনের লেখক ড. বিনুরা লেখামালেজ, লুসিন্ডা ডানক্যান-ওয়ার এবং নিকোলা ডেভিস সতর্ক করেছেন, এই ঘটনা কেবল চুম্বক গিলে ফেলার বিপদই নয়, বরং শিশুদের জন্য অনলাইন শপের বিপদকেও তুলে ধরে।

উল্লেখ্য, এই শক্তিশালী চুম্বকগুলো নিউজিল্যান্ডে ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে নিষিদ্ধ।

চিকিৎসকেরা আরও জানিয়েছেন, চুম্বক গিলে ফেলার জন্য অস্ত্রোপচার ভবিষ্যতে অন্ত্রে বাধা, পেটে হার্নিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে।

এদিকে, চীনা ই-কমার্স জায়ান্ট টেমু এই ঘটনা জানার পর দুঃখ প্রকাশ করেছে। একজন মুখপাত্র বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা শুরু করেছি এবং নিউজিল্যান্ড মেডিকেল জার্নালের লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।’

টেমু আরও জানায়, তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি যে চুম্বকগুলো টেমু থেকেই কেনা হয়েছিল কি না। তবে তারা প্রাসঙ্গিক পণ্য তালিকা খতিয়ে দেখছে। অবৈধ পণ্য প্ল্যাটফর্ম থেকে সরাতে ব্যর্থ হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বাজারেও টেমু ইতিমধ্যে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফোন নম্বর ‘মোটু’ নামে সেভ করায় ডিভোর্স দিলেন স্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৫৯
তুরস্কে ফোন নম্বর মোটু নামে সেভ করায় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন এক নারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
তুরস্কে ফোন নম্বর মোটু নামে সেভ করায় স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েছেন এক নারী। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

আপনি কি আপনার স্ত্রীকে ‘মোটু বা গুলুমুলু’ ডাকেন? তাহলে এখনই সাবধান হয়ে যান। কারণ, তুরস্কের এক ব্যক্তি তাঁর ফোনে স্ত্রীর ফোন নম্বর সেভ করেছিলেন, ‘Chubby-চাবি’ দিয়ে। যার অর্থ প্রচলিত বাংলায় দাঁড়ায় ‘মোটু বা গুলুমুলু।’ অনেক সময় এই ডাকনাম আদুরে শোনালেও বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি তুর্কি ওই ব্যক্তির স্ত্রীর। তিনি সোজা আদালতে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। এমনকি তাঁদের বিচ্ছেদ হয়েও যায়।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহের খবরে বলা হয়েছে, তুরস্কের ওই ব্যক্তি তাঁর মোবাইল ফোনের কনট্যাক্টে স্ত্রীর নাম সেভ করেছিলেন ‘চাবি’ নাম দিয়ে। এই ঘটনাকে আদালত ‘অসম্মানজনক’ ও ‘বিবাহের জন্য ক্ষতিকর’ বলে রায় দিয়েছেন।

পশ্চিম তুরস্কের উশাক প্রদেশের ওই নারী এই ঘটনার পর স্বামীর বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। অন্যদিকে স্বামী পাল্টা মামলা করে স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন। তাঁদের সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে, তবে তাঁদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

আদালতের শুনানিতে ওই নারী জানান, তাঁর স্বামী বারবার তাঁকে হুমকি দিয়ে বার্তা পাঠাতেন। এক বার্তায় তিনি লিখেছিলেন, ‘দূর হও, তোমাকে আর দেখতে চাই না।’ আরেকটিতে বলেছিলেন, ‘তোমার মুখ শয়তানকে দেখাও গে।’ এ ছাড়া তিনি নিজের বাবার অস্ত্রোপচারের খরচ বাবদ স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা দাবি করেন।

শুনানির সময় আদালতে সবচেয়ে আলোচিত হয় স্বামীর ফোনে স্ত্রীর নাম ‘তোম্বিক—তুর্কি ভাষার এই শব্দের অর্থ মোটা) নামে সংরক্ষিত থাকার বিষয়টি। ওই নারীর দাবি, এই ডাকনাম তাঁকে অপমান করেছে এবং তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে। আদালত তাঁর দাবিকে সমর্থন করে জানায়, ওই নাম ও বার্তাগুলো ‘মানসিক ও অর্থনৈতিক সহিংসতা’র শামিল।

অন্যদিকে স্বামী দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী অন্য এক পুরুষকে বাড়িতে এনেছিলেন। কিন্তু তদন্তে জানা যায়, ওই ব্যক্তি কেবল একটি বই পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে কোনো অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ মেলেনি। আদালত রায়ে বলে, স্বামীর অপমানজনক ভাষা ও অর্থনৈতিক চাপ ছিল আরও গুরুতর। তাই মূল দায় তাঁরই।

তুর্কি আইনে কারও মর্যাদা বা ব্যক্তিগত সম্মান আঘাত করে এমন ভাষা বা আচরণের জন্য, সেটা বার্তা মারফত হোক বা সরাসরি, দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। শেষ পর্যন্ত দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। স্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা পরকীয়ার অভিযোগ খারিজ করা হয়। স্বামীকে তাঁর সাবেক স্ত্রীকে মানসিক ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক প্রকাশ করা হয়নি।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একজন লিখেছেন, ‘মোটু বা গুলুমুলু ডাক আসলে বেশ মিষ্টি শোনায়। মোটা হওয়া কোনো অপরাধ না, আর মোটা বলে ডাকা সব সময় অপমানও নয়।’ আরেকজন বলেছেন, ‘এটা ন্যায্য রায়। স্বামী তাঁর স্ত্রীকে একের পর এক অপমানজনক বার্তা পাঠিয়েছে—সেখানেই সীমা অতিক্রম করেছে।’ তৃতীয় এক ব্যক্তি মজা করে লিখেছেন, ‘আমার বন্ধুদের নম্বরগুলো এখনই যাচাই করব, যেন কোনো আপত্তিকর কিছু না থাকে।’

এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গত মে মাসে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক ব্যক্তি প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেন। কারণ, প্রেমিকার ফোনটি তাঁদের প্রথমবার একসঙ্গে যাওয়া এক হোটেলের কামরায় ওয়াইফাইয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হয়ে যায়।

এর ফলে ওই পুরুষি মনে করেন, এর মানে ওই নারী আগে অন্য কারও সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন এবং তাঁকে প্রতারণা করেছেন। অপমানিত হয়ে ওউ নারী স্থানীয় এক টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত