Ajker Patrika

নাৎসিদের বাংকার এখন বিলাসবহুল হোটেল

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১৬: ০৮
Thumbnail image

হিটলারের সময় এটি ছিল নাৎসিদের একটি বাংকার। বানানো হয়েছিল বাধ্যতামূলক শ্রমের মাধ্যমে। স্বাভাবিকভাবেই জার্মানির অন্ধকার ইতিহাসের একটি স্মারক হিসেবেই এত দিন পরিচিত ছিল স্থাপনাটি। তবে কংক্রিটের এই বিশাল দালানের আশ্চর্য এক পুনর্জন্ম হয়েছে এখন। একে একটি হোটেল ও অবসর বিনোদনের জায়গায় পরিণত করা হয়েছে।

৫৮ মিটার উচ্চতার স্থাপনাটি পিসার হেলানো টাওয়ারের চেয়ে সামান্য উঁচু হলেও ওজনে অনেক বেশি। জার্মানির হামবুর্গে অবস্থান এই সেন্ট পলি বাংকারের। ৮০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরের আকাশে আধিপত্য বিস্তার করেছে এর প্রকাণ্ড শরীর।

নতুন পরিচয়ে এই বাংকারের মধ্যে স্থান পেয়েছে দুটি রেস্তোরাঁ, একটি হোটেল এবং ছাদের ওপরে সদ্য বানানো একটি পিরামিড আকৃতির বার এবং বাগান। ওই বাগান থেকে লতানো সবুজ গাছ কংক্রিটের কাঠামোর কিছুটা অংশও ঢেকে দিচ্ছে।

এসব তথ্য জানা যায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে।

হার্ড রক কোম্পানির এই কমপ্লেক্সকে বলা যায় সংগীতের চমৎকার ঐতিহ্য ধারণ করে এমন এক শহরের জন্য এক বাড়তি সংযোজন। কারণ যাত্রা শুরুর পর ইংলিশ ব্যান্ড বিটলস ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত নিয়মিতই সংগীত পরিবেশন করেছে জার্মান শহরটিতে।

কাভোফেতে নামের যে এলাকায় দুর্গের মতো এই বাংকারের অবস্থান, সেটি চমৎকার সব কফি শপ এবং পুরোনো, ঐতিহ্যবাহী কিছু দোকানের জন্য বিখ্যাত। একসময়ের কসাইখানা থেকে নাইট ক্লাবে রূপান্তর হওয়া ‘নুস্ত’ এখানকার আরেকটি বড় আকর্ষণ।

১৩৪ কামরার ‘রিভারব’ হোটেলে চমৎকার একটি ক্ল্যাসিক রুমের ভাড়া ১৮০ ইউরো। ৫৫ ইঞ্চির একটি টিভি আছে কামরায়। গোটা শহরের দৃশ্য চোখের সামনে নিয়ে আসা একটি স্যুইটের ভাড়া ২৬৯ ইউরো।

তবে এই বাংকারের অন্য সব সুবিধা উপভোগ করার জন্য আপনাকে হোটেলের অতিথি হতে হবে না। নিচতলায় আছে কফি শপ ও বার। দালানটিতে জার্মান টিভি শেফ ফ্রাঙ্ক রসিনের বার ও রেস্তোরাঁ কারো অ্যান্ড পল যাত্রা শুরু করে এ বছরের এপ্রিলেই।

রেস্তোরাঁ লা সালা পঞ্চম তলায়। এখান থেকে চারপাশের দৃশ্য দেখার পাশাপাশি নানান দেশি মেনু পাবেন। আর সবার ওপরে, মানে ছাদে গ্রিন বিনি গার্ডেন। এখানে একটি বারের পাশাপাশি আছে হাঁটা পথ। সবার জন্য উন্মুক্ত জায়গাটি।

বাধ্যতামূলক শ্রমের মাধ্যমে বানানো হয়েছিল বাংকারটি। ছবি: এএফপিহামবুর্গ বাংকারটি ছিল মাটির ওপরে বিমানবিধ্বংসী আটটি আশ্রয়কেন্দ্রর একটি। ১৯৪০ সালে জার্মানিতে ব্রিটিশ বিমান হামলার পর এগুলো বানানো হয়।

হামবুর্গ বাংকারের ইতিহাস বেদনাদায়ক, কিন্তু আড়াই মিটার পুরু দেয়ালসহ ৭৬ হাজার টনের কংক্রিট কাঠামোটি সহজে ভেঙে ফেলা বা উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না।

এএফপি জানিয়েছে, বার্লিনের চিড়িয়াখানায় অবস্থিত এ ধরনের একটি বাংকার বা টাওয়ারটিই কেবল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ অন্যগুলো এমন জনবহুল এলাকায় যে সেখানে ধ্বংস করতে গেলে যে বিস্ফোরণ হবে, তা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হতো।

‘সবুজের মাধ্যমে বিল্ডিংয়ের উচ্চতা বাড়ানোর ধারণাটি ছিল নাৎসিদের এই বিশাল কাঠামোটিতে শান্তিপূর্ণ এবং ইতিবাচক কিছু যোগ করা।’ এএফপিকে বলেন ‘হিলডেগার্ডেন পাড়া সংস্থা’র এনিটা অ্যাঙ্গেলস। এই প্রকল্পকে সহায়তা করছে স্থানীয়দের এই সংস্থা।

সংস্থাটি টাওয়ারের ইতিহাসের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনায় সাহায্য করেছে যুদ্ধের সময় বাংকারে বসবাসকারীদের সাক্ষ্য সংগ্রহ ও শত শত বাধ্যতামূলক শ্রমদানকারীর নামের তালিকা এবং তথ্য সংযোজন করে। নিচতলায় একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে দালানটির গোটা ইতিহাসের গল্প তুলে ধরা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত