Ajker Patrika

ইংল্যান্ডের শহর চীনে!

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১: ৪৮
Thumbnail image

শহরটিতে প্রবেশ করার পর পর্যটকেরা চমকে ওঠেন। আরে, গোটা শহরটিই তো অবিকল ইংল্যান্ডের কোনো শহরের মতো! ব্রিটিশ ধাঁচের ঘর-বাড়ি, রেস্তোরাঁ এমনকি সেখানকার বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য—কী নেই সেখানে! পর্যটকেদের অবাক হওয়ার কারণ টেমস নামের এই শহরের অবস্থান চীনে! 

টেমস শহরের ভেতর দিয়ে হাঁটতে শুরু করলে একটি ব্রিটিশ শহরের সবকিছুই পাবেন। খোয়া বিছানো রাস্তা, ভিক্টোরিয়ান স্থাপত্যের চত্বর, পুরোনো দিনের সেই লাল টেলিফোন বাক্স এমনকি বিখ্যাত ব্রিটিশ ব্যক্তিত্ব ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার কিংবা উইনস্টন চার্চিলের ভাস্কর্যেরও দেখা পাবেন শহরটিতে। ব্রিটিশ স্থাপত্য রীতির বাড়িগুলো ঘিরে আছে সবুজ গাছগাছালি, গুল্ম। শহরটির নামকরণও ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের টেমস নদীতে অনুপ্রাণিত হয়ে। 

চীনের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর সাংহাই। কাছেই সাগর। বিভিন্ন সমুদ্রবন্দর ও ইয়াংজি নদী থেকে ছেড়ে আসা প্রমোদ তরীগুলোও তাই এখানে ভেড়ে নিয়মিত। জাহাজ থেকে নামা মানুষ চীনা দালান-কোঠা দেখার পাশাপাশি এখানকার খাবার চেখে দেখতে চান। তবে তাঁদের কেউ কেউ চীনা ভূখণ্ডে ওই ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতির শহরটি দেখার সুযোগও হাতছাড়া করতে চান না। অন্তত যাঁরা এর কথা জানতে পারেন আরকি! সাংহাই থেকে কেবল কিলোমিটার ত্রিশেক দূরে শংজিয়ান নিউ সিটির একটি অংশ নিয়ে গড়ে উঠেছে চীনা রাজত্বে এই আশ্চর্য ব্রিটিশ শহর। 

টেমস শহরের দালানকোঠা তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ শহরের আদলেটেমস শহরটি তৈরিও করে কিন্তু অ্যাটকিনস নামের একটি ব্রিটিশ কোম্পানি। এখানে আসা ব্রিটিশ পর্যটকেরা শহরে ঘুরতে ঘুরতে বেশ একটা বাড়ি-বাড়ি অনুভূতি পান। গির্জাটিও বানানো হয়েছে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলের বিখ্যাত এক গির্জার আদলে। এদিকে রেস্তোরাঁ আর পানশালাগুলোকে বলতে পারেন ডোরসেটের রেস্তোরাঁ, পানশালার নকল। শুধু তাই নয়, এখানকার ল্যাম্পপোস্টগুলো পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ইংল্যান্ড থেকে। 

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, সাংহাইয়ের ঠিক বাইরে এমন একটি ব্রিটিশ আদলের শহর বানানোর কারণ কী? আসলে এটি সরকারি একটি প্রকল্পের অংশ। এর উদ্দেশ্য ছিল সাংহাই শহরের ভিড়বাট্টা কমানোর জন্য সেখান থেকে কিছুটা দূরে সুন্দর পরিবেশে থাকার মতো একটি জায়গা তৈরি করা। 

এই প্রকল্পের নির্মাণ করা একমাত্র বসতি কিন্তু টেমস শহর নয়। শংজিয়ান নিউ সিটির অন্তর্ভুক্ত এমন আরও আটটি শহর আছে। সেগুলোর কোনোটির দালানকোঠা ইউরোপের দেশ ফ্রান্স কিংবা জার্মানির আদলে, কোনোটির কানাডার বাড়ি-ঘরের মতো। আবার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান স্থাপত্যরীতির শহরও আছে। 

সাংহাই থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে শহরটির অবস্থানসাংহাই প্ল্যানিং কমিশন ‘ওয়ান সিটি নাইট টাউন’ নামের প্রকল্পে হাত দেয় ২০০১ সালে। টেমস শহরের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে। ২০০ কোটি ইউয়ান বা ২৯ কোটি ডলারের বেশি খরচ হয় এটি তৈরি করতে। ১০ হাজার মানুষের জায়গা দেওয়ার মতো ঘর-বাড়ি তৈরি করা হয় টেমস শহরে। 

তবে পরিকল্পনা অনেকটাই ভেস্তে গেছে। এত বছর পরও শহরটি অনেকটাই ফাঁকা। কারণ যেমনটা ভাবা হয়েছিল মধ্যবিত্তদের টানেনি শহরটি। বেশির ভাগ দালানকোঠা কেনেন ধনকুবেররা নিজেদের দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে। বরং শহরে বেশি দেখা মেলে পর্যটকদের। আবার বাগদান ও ওয়েডিং ফটোগ্রাফির জন্যও নাম কামিয়েছে শহরটি। সেখানে গেলেই এমন কোনো জুটির ছবি তোলার আয়োজন দেখার সৌভাগ্য হয়ে যাবে আপনার সন্দেহ নেই। 

ব্রিটিশ পর্যটকেরা শহরটি ঘুরতে ঘুরতে বেশ একটা বাড়ি-বাড়ি অনুভূতি পানকীভাবে যাবেন? সাংহাই থেকে একটি ট্যাক্সি নিয়ে অনায়াসে চলে যেতে পারবেন সেখানে। মিনিট চল্লিশেক হয়তো লাগবে। কিংবা পাতাল রেলে সাংহাই মেট্রোর লাইন ৯ ধরে গেলে শংজিয়ান নিউ সিটি স্টেশনে নেমে পড়বেন। সেখান থেকে মোটে চার কিলোমিটার দূরে শহরটি। আবার আরেকটি কাজও করতে পারেন, এত কষ্ট করে চীনে গিয়ে ব্রিটিশ শহর দেখার চেয়ে সরাসরি ইংল্যান্ডেও চলে যেতে পারেন! 

সূত্র: সিএনট্রাভেলার. কম, টাইমআউট. কম, পোর্টহোল. কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত