Ajker Patrika

সবচেয়ে ছোট বিমানপথের দৈর্ঘ্য পৌনে দুই মাইল, সময় লাগে দেড় মিনিট

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২৫ মে ২০২৩, ১৩: ৪৩
সবচেয়ে ছোট বিমানপথের দৈর্ঘ্য পৌনে দুই মাইল, সময় লাগে দেড় মিনিট

ধরুন উড়োজাহাজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবেন, সময় কেমন লাগতে পারে? ভাবছেন এটা তো দূরত্বের ওপর নির্ভর করছে। একেবারে কাছাকাছি হলে আধ ঘণ্টায়ও পৌঁছে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি বলি ফ্লাইটটিতে আকাশে থাকবেন দেড় মিনিট বা তার চেয়েও কম সময়, তাহলে? পৃথিবীর শর্টেস্ট বা স্বল্পতম দূরত্বের ফ্লাইটের বেলায় এটাই ঘটে। 

পৃথিবীর সবচেয়ে কম দূরত্বের বাণিজ্যিক ফ্লাইটে উড়োজাহাজকে কতটা দূরত্ব পেরোতে হয় শুনলে চোখ কপালে উঠবে, মোটে ১.৭ মাইল। আর এতেই গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠেছে এর। দুই স্কটিশ দ্বীপ ওয়েসট্রে ও পাপা ওয়েসট্রের মধ্যে যাতায়াত করে এটি। এর ভাড়া শুরু হয় ১৭ পাউন্ড থেকে। 

এমনিতে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেড় মিনিট সময় লাগলেও চমৎকার আবহাওয়ার কোনো দিন হালকা ওজন দিয়ে দূরত্বটা সর্বনিম্ন ৫৩ সেকেন্ডে অতিক্রম করা সম্ভব হয়। অবশ্য সময়টি আকাশে থাকার। 

প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এই পথে আসা-যাওয়া করে উড়োজাহাজ। স্কটল্যান্ডের উত্তরের দ্বীপপুঞ্জ ওর্কনের ওয়েসট্রের সঙ্গে আরও ছোট, দুর্গম দ্বীপ পাপা ওয়েসট্রেকে সংযুক্ত করেছে এই ফ্লাইট। 

উড়োজাহাজকে এই যাত্রায় অতিক্রম করতে হয় মোটে ১.৭ মাইল। ছবি: ফেসবুকগোটা বছরে চার বর্গমাইলের দ্বীপটির ৮০ জন বাসিন্দার বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের মূল মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এটি। দ্বীপবাসীদের পাশাপাশি গ্রীষ্মে প্রচুর পর্যটকও আনা-নেওয়া করে উড়োজাহাজটি। এদের একটি বড় অংশ দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসে। তাঁরা যাতায়াত করেন ছোট্ট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিতে এবং দ্বীপটিকে ঘুরেফিরে দেখতে। 

যাত্রা আসলে শুরু হয় দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপ কার্কওয়েল থেকে। এখান থেকে মিনিট পনেরো থেকে পৌঁছে যাবেন ওয়েসট্রে দ্বীপে। তারপর শুরু করবেন রেকর্ড গড়া সেই যাত্রা। 

এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে যুক্তরাজ্যের উড়োজাহাজ কোম্পানি লোগানএয়ার। এর সদর দপ্তর স্কটল্যান্ডে। এই পথে চলে দুটি আট আসনের ব্রিটেন-নরম্যান আইল্যান্ডার উড়োজাহাজ। এয়ারলাইনের দেওয়া তথ্য বলছে, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ফ্লাইটের সর্বনিম্ন সময় ৫৭ সেকেন্ড, অর্থাৎ এই সময়টা আপনি আকাশে থাকবেন আরকি! 

এই উড়োজাহাজে নিয়মিত যাতায়াত করেন যাঁরা, তাদের মধ্যে দ্বীপবাসী চিকিৎসক, পুলিশ, শিক্ষকও আছেন। শুধু যাওয়া বা আসার সর্বনিম্ন ভাড়া ১৭ পাউন্ড, আসা-যাওয়া মিলিয়ে এই খরচ ৩৬ পাউন্ড। 

দ্বীপবাসীদের পাশাপাশি গ্রীষ্মে প্রচুর পর্যটকও উপভোগ করেন স্বল্পসময়ের এই ভ্রমণ। ছবি: লোগানএয়ারস্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিমানবন্দরের রানওয়ের সমান দূরত্ব বলা চলে সম্পূর্ণ পথটির। কেবল ১০ কেজি জ্বালানি লাগে উড়োজাহাজের এই যাত্রায়। 

এয়ারলাইনটি এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে সেই ১৯৬৭ সাল থেকে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে ছিল এই পথে যাত্রার ৫০ বছর পূর্তি। 

নোয়োল ফিলিপস নামের এক ট্রাভেল ভ্লগার গত বছরের জুলাইয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ও ‘অন্যতম ব্যয়বহুল’ বাণিজ্যিক ফ্লাইটটির ভিডিও ধারণ করে আলোচনায় আসেন। ওই ফ্লাইটটি গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে ১ মিনিট ১৭ সেকেন্ড। 

এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে যুক্তরাজ্যের উড়োজাহাজ কোম্পানি লোগানএয়ার। ছবি: লোগানএয়ারফ্লাইটটির খরচ আপাতদৃষ্টিতে একেবারেই কম, তবে আপনি যদি মাইলপ্রতি খরচের হিসাব করেন তাহলে লন্ডন–দুবাই ফ্লাইটে সে হিসাবে আপনার খবর পড়বে ৩৪ হাজার পাউন্ড। কী, এখন নিশ্চয় ভ্রমণটিকে মোটেই কম খরুচে মনে হচ্ছে না। 

এদিকে স্থানীয় কাউন্সিল মনে করে, পাপা ওয়েসট্রে ও ওয়েসট্রের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করে ফেলা উচিত। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর আগ পর্যন্ত উড়োজাহাজটি যে সংযোগের কাজ করবে তাতে সন্দেহ নেই। অবশ্য সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে ২০ মিনিটের বোট ভ্রমণেও এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে পৌঁছে যেতে পারবেন। তবে দ্বীপবাসী ও পর্যটকদের স্বল্পতম সময়ের এই উড়োজাহাজ ভ্রমণই পছন্দ। এমন আশ্চর্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায় বলুন! 

সূত্র: সিএনএন, ডেইলি মেইল, বিজনেস ইনসাইডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত