Ajker Patrika

যে হ্রদের জলে নামলেই সর্বনাশ

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০১ জুন ২০২৩, ১১: ২৫
Thumbnail image

আবার প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে—এটা আশাও করা যায় না। আগুন ঝরানো দিনে প্রচণ্ড উত্তপ্ত একটি কিছুর সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেব। সেটা বয়লিং লেক বা ফুটন্ত হ্রদ। বুঝতেই পারছেন এই হ্রদের পানি সব সময় ফুটতেই থাকে। আর হ্রদের ওপর চারপাশে শুধু বাষ্পেরই রাজত্ব। 

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ডমিনিকায় অবস্থান দ্য মরন ট্রয়স পিটন জাতীয় উদ্যানের। এই এলাকা আগ্নেয়গিরির জন্য বিখ্যাত। পার্কটির ৭ হাজার হেক্টর এলাকার মধ্যে আছে পাঁচটি আগ্নেয়গিরি, ডজনখানেক উষ্ণ প্রস্রবণ আর আছে বিখ্যাত সেই ফুটন্ত হ্রদ। একে আসলে বলতে পারেন ভূপৃষ্ঠে বড় এক ছিদ্র, যার ভেতর দিয়ে আগ্নেয়গিরির গ্যাস, বাষ্প—এসব বের হয়ে আসে। 

বাষ্পে ঢেকে থাকে হ্রদের চারপাশ। ছবি: টুইটারবুদ্‌বুদ উঠতে থাকা ধূসর-নীল জলে ভরপুর হ্রদটি। তাপমাত্রা কত থাকে শুনবেন? ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। তাও হ্রদের কিনারের অংশে। পানির এই উচ্চ তাপমাত্রার কারণ নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। মাটির নিচের গলিত লাভা থেকে বের হয়ে আসা বাষ্প আর গ্যাসই উত্তপ্ত করে এই জলকে। যখনই যাবেন, দেখবেন হ্রদের সমতল ও ওপরটা বাষ্পের মেঘে ঢেকে আছে। হ্রদটির এক পাড় থেকে আরেক পাড়ের দূরত্ব ৭৬ মিটার, যা একে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুটন্ত হ্রদে পরিণত করেছে। তালিকায় প্রথম স্থানটি নিউজিল্যান্ডের ওয়াইমাঙ্গু উপত্যকার ফ্রাইং পেন হ্রদের দখলে। 

ফুটন্ত জলের হ্রদের মানচিত্র। ছবি: উইকিপিডিয়ালেকটি বাইরের দুনিয়ার মানুষের প্রথম নজর কাড়ে ১৮৭৫ সালে। এ সময় ডমিনিকায় কাজ করা দুই ব্রিটিশ নাগরিক প্রথম ঘুরতে গিয়ে এর দেখা পেয়ে যান। ওই বছরই সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত একজন উদ্ভিদবিদ এবং প্রথম খোঁজ পাওয়া দুই ব্যক্তির একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাকৃতিক এই আশ্চর্যজনক বিষয়টি পর্যবেক্ষণের। তাঁরা তাপমাত্রা মেপে আবিষ্কার করেন, হ্রদের কিনারের দিকে এটি ৮২ থেকে ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে হ্রদের মধ্যখানটা, যেখানে পানি সবচেয়ে বেশি ফুটতে থাকে, সেই জায়গার তাপমাত্রা মাপতেই ব্যর্থ হন। তাঁরা অনুমান করেন, এর গভীরতা ৬০ মিটার বা এর আশপাশে। 

লোকটি বাইরের দুনিয়ার মানুষের প্রথম নজর কাড়ে ১৮৭৫ সালে। ছবি: উইকিপিডিয়াদ্য ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিসমিক রিসার্চ সেন্টারের গবেষকেরা নিয়মিত হ্রদটির পরিস্থিতি তদারক করেন। তাঁদের গবেষণায় উঠে এসেছে, হ্রদের নিচের পাথর চুঁইয়ে আসা আগ্নেয় বিভিন্ন গ্যাসের বুদ্‌বুদ হ্রদের পানির সমতল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। 
 
লেকের জল গরম হওয়ার কারণটা তো জানা গেল। কিন্তু এর পানি আসে কোথা থেকে? আসলে হ্রদটির আশপাশে বিস্তৃত জঙ্গলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ওই পানি নেমে আসে ঢালু এই হ্রদে। এর পাশাপাশি ছোট দুটি ঝরনাও এসে বিসর্জন দিয়েছে উত্তপ্ত জলের হ্রদে। 

 ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ ডমিনিকার গভীর অরণ্যে অবস্থান লেকটির। ছবি: টুইটারপানির উচ্চতাও ঋতুভেদে কম-বেশি হয়। কখনো কখনো অবশ্য হ্রদটি ঝুঁকির মধ্যেও পড়েছে। আবার আশ্চর্যজনকভাবে মোটামুটি আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। একবার যেমন মাটির তলে হওয়া এক অগ্ন্যুৎপাতে প্রায় অদৃশ্য হওয়ার অবস্থা হয়েছিল হ্রদটির। সেটা ১৮৮০ সালের ঘটনা। এ সময় উত্তপ্ত পানি ও বাষ্পে একটি ঝরনা জায়গা দখল করেছিল হ্রদটির। 

২০০৪-২০০৫ সালের দিকেও বড় বিপর্যয়ে পড়েছিল ফুটন্ত পানির হ্রদ। এ সময় পানির উচ্চতা নেমে এসেছিল ১০ মিটারের কাছাকাছি। এক দিনেই অবশ্য আগের অবস্থা ফিরে পেয়েছিল হ্রদটি। 

লেক ও আশপাশের এলাকা ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। ছবি: ফেসবুকফুটন্ত জলের হ্রদটিতে পৌঁছাতে কিন্তু বেশ কতকটা সময় হাঁটতে হয়। লদাত গ্রাম থেকে ঘণ্টা চারেকের ট্রেইল এটি। পাহাড়-জঙ্গলের মাঝের ট্রেইলটি কিন্তু দেখার মতো। তবে এ ধরনের পথে হাঁটার অভিজ্ঞতা না থাকলে বিপদ। কোথাও কোথাও সে অর্থে পথও নেই, জঙ্গলের মধ্যে সেটি তৈরি করে নিতে হবে। তবে ঘটনা হলো, বয়েলিং হ্রদসহ গোটা উদ্যান এলাকাই অনেক সুন্দর, ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। কাজেই ক্যারিবীয় অঞ্চল ভ্রমণে গেলে ডমিনিকার দ্য মরন ট্রয়স পিটন জাতীয় উদ্যান ও হ্রদটি দেখে আসার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না আশা করি। 

তবে ওই যে হ্রদ দেখলেই আমাদের গোসল বা সাঁতরানোর জন্য নেমে পড়ার অভ্যাস, সেটা ত্যাগ করতে হবে। বুঝতেই পারছেন, এর জলে নামলে শরীরে ফোসকা পড়া এমনকি মৃত্যুও অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

সূত্র: অ্যামিউজিং প্ল্যানেট, এডভেঞ্চার ডট হাউ স্টাফ ওয়র্কস ডট কম, এটলাস অবসকিউর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত