Ajker Patrika

পৃথিবীর অন্যতম গরম যে জায়গাটি পর্যটকদের পছন্দ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ১৬: ০২
Thumbnail image

এ যেন পৃথিবীর মধ্যেই ভিনগ্রহের এক জায়গা। সালফারে পূর্ণ উষ্ণ প্রস্রবণ, অ্যাসিডের ডোবা, বাষ্প উঠতে থাকা ভূমির ফাটল, লবণের পর্বত—সবকিছু মিলিয়ে একে মনে হতে পারে বিজ্ঞান কল্পকাহিনির কোনো দৃশ্যপট। গল্পটি পৃথিবীর উষ্ণ জায়গাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা দানাকিল ডিপ্রেশনের। ইথিওপিয়ার পর্যটক আকৃষ্ট করে এমন জায়গাগুলোর মধ্যেও এটি আছে একেবারে ওপরের দিকে। 

পৃথিবীর উষ্ণ জায়গাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা দানাকিল ডিপ্রেশনের অবস্থান সাগর সমতল থেকে বেশ নিচে। লবণ অনুসন্ধানকারী, বিজ্ঞানী আর পর্যটকেরা নিয়মিতই পা রাখেন সেখানে।

দানাকিল ডিপ্রেশনের মধ্যেই পড়েছে দালোল। একে অনেকেই বিবেচনা করেন বছরজুড়ে থাকা গড় তাপমাত্রার হিসাবে দুনিয়ার সবচেয়ে উষ্ণ জায়গাগুলোর একটি হিসেবে। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত প্রতিদিনের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানকার জলীয় বাষ্প বেশি থাকাটাও জায়গাটিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।

নানা রঙের খেলা প্রচণ্ড উষ্ণ এই জায়গাকে পর্যটকদের প্রিয় এক গন্তব্যে পরিণত করেছেতবে দানাকিলের বৈরী আবহাওয়ায় কিছু মানুষ বাস করে। আফার গোত্রের লোকেদের এখানে দেখা মেলে। মূলত লবণের ওপর নির্ভরশীল তারা। উটের খামারও আছে তাদের। এই পরিবেশে চলাফেরা করত চাইলে উট ছাড়া তাদের উপায় নেই। বেড়াতে আসা পর্যটকদের ভ্রমণেও কাজে লাগে এই উট। অবশ্য যাযাবর আফাররা সব সময় এক জায়গায় থাকে না। দানাকিল ডিপ্রেশনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরেফিরে থাকে তারা।

লবণকে বলতে পারেন এই এলাকার ‘হোয়াইট গোল্ড’ বা সাদা সোনা। এদিকে গবেষক ও বিজ্ঞানীদের জায়গাটির প্রতি নজর কাড়ে অনেক আগেই। ১৯৬০-এর দশক থেকেই এখানে আসা শুরু করেন গবেষকেরা। ২০১৬ সালের বসন্তে ইতালির ইউনিভার্সিটি অব বলোগোনার ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কুল অব প্ল্যানাটারি সায়েন্স ও ইথিওপিয়ার মেকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা পরীক্ষা করেন অনুজীবেরা এখানকার বৈরী আবহাওয়ার চাপ সামলে টিকে থাকতে পারে কি না। তাঁরা আবিষ্কার করেন, এরা পারে।

এ যেন পৃথিবীর মধ্যেই ভিনগ্রহের এক জায়গাদুঃসহ গরম, বদগন্ধের একটি জায়গায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মানুষ আসতে পারে, কিন্তু সেধে পর্যটকেরা এখানে হাজির হন কেন?

একটি কারণ এখানকার সালফারসমৃদ্ধ উষ্ণ প্রস্রবণ, আরেকটি কারণ ইথিওপিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এরতা এলে বা ‘ধোঁয়া ওঠা পর্বতে’র উপস্থিতি। মাঝে মাঝেই হিস হিস শব্দে হলদে ও গাঢ় সবুজ আভা বিকিরণ করে। আবার এর লাভায় সৃষ্ট হ্রদও আকৃষ্ট করে অনেককে।

এবার বরং সংক্ষেপে জায়গাটির কীভাবে সৃষ্টি তা জেনে নেওয়া যাক। দানাকিল ভূপ্রকৃতিগতভাবে আফার ট্রায়াঙ্গেলের অংশ। ইথিওপিয়ার দুর্গম উত্তর-পূর্ব প্রান্তের এই অঞ্চল থেকেই তিনটি টেকনোকিক প্লেট ছড়িয়েছে। এলাকাটি বেশ বড়—দৈর্ঘ্যে ১২৪ মাইল, প্রস্থে ৩১ মাইল। একসময় ছিল লোহিত সাগরের অংশ। সময়ের সঙ্গে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে ছড়ানো প্রচুর লাভা লোহিত সাগরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর এই বৈরী পরিবেশে আটকা পড়া পানি বাষ্পীভূত হয়ে যায়।

ইথিওপিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি এরতা এলেতবে এখানকার ভূপ্রকৃতির আশ্চর্য রং আপনাকে মুগ্ধ করলেও তীব্র গরমে চলাফেরাটা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। সাধারণত গড় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও ১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।

প্রচণ্ড গরম এড়াতে ইথিওপিয়ার শহর উইকরো থেকে তাই খুব ভোরে রওনা দিতে হয় দানাকিলের দিকে। মোটামুটি তিন ঘণ্টা লাগবে আঁকাবাঁকা পর্বতের পথে তিন ঘণ্টার যাত্রা। আবার হেলিকপ্টারেও যাওয়ার সুযোগ আছে। সেখানে পৌঁছার পর আপনার মনে হবে অন্য কোনো জগতে চলে এসেছেন। অনেকে আবার রাতে রওনা দিয়ে ভোরে ভোরে পৌঁছান।

উষ্ণ প্রস্রবণের সামনে এক পর্যটকদানাকিলের উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর চারপাশে মরা পোকামাকড়, পাখি দেখাটা খুব স্বাভাবিক। ধারণা করা হয়, প্রস্রবণের পানি পান করে কিংবা অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডময় বাতাস গ্রহণ তাদের এই পরিণতির জন্য দায়ী। উষ্ণতম, অর্থাৎ বেশি অ্যাসিডীয় ডোবা বা পুকুরে গাঢ় হলুদ রং চোখ ঝলসে দেবে, এদিকে কিছুটা শীতল কপারসমৃদ্ধ ডোবার রং সবুজাভ নীল।

এখানকার হলুদ, কমলা, লাল, নীল ও সবুজ রঙের মিশেলের কারণ বৃষ্টির পানি আর উপকূলের দিক থেকে চুঁইয়ে আসা সাগরজল। ‘সাগরের লবণ প্রতিক্রিয়া দেখায় ম্যাগমার খনিজের সংস্পর্শে। ব্যস, তৈরি হয়ে যায় মনোমুগ্ধকর সব রং।’ বলেন স্থানীয় একজন গাইড হেনক টসেগাই।

পাহাড়ের ফাটল চুঁইয়ে বের হচ্ছে ধোঁয়াসূর্যের তাপে পানি বাষ্পীভূত হলে জমিতে জন্ম হয় বর্ণিল আবরণের, যেটা মিশে যায় ডিপ্রেশনের ঠান্ডা সবুজাভ নীল হ্রদের সঙ্গে।

এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, দানাকিলে ভ্রমণ কি নিরাপদ? এখানকার উষ্ণ প্রস্রবণগুলোর তাপমাত্রা ২১২ ডিগ্রি ফারেনহাইট (১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং প্রচণ্ড রকম অ্যাসিডীয়। বুদ্বুদ ওঠা এই জলে আঙুল চুবানো যে খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তা তো জানাই আছে। তা ছাড়া ইথিওপিয়ার জাতিগত সংঘাতও দুশ্চিন্তার কারণ। কাজেই যেতে হবে খোঁজ-খবর নিয়ে। আর ভ্রমণের সময় সঙ্গে স্থানীয় গাইড থাকাটা জরুরি। 

সিএনবিসি, ফারদার আফ্রিক ডট কম ও মেটাডর নেটওয়ার্ক অবলম্বনে ইশতিয়াক হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত