পরিবেশ দূষণ

প্রতিনিয়ত বাড়ছে প্রযুক্তিসামগ্রীর ব্যবহার। এতে ব্যাপক শক্তি ক্ষয়ের পাশাপাশি পরিবেশ নানা ধরনের বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছে। ই-বর্জ্য ও অতিমাত্রায় প্রযুক্তির ব্যবহারে ঝুঁকিতে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে এসব প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহারও হয়ে উঠবে পরিবেশবান্ধব।

গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলার দোখলা এলাকায় পলিথিন বর্জ্য মিশছে ফসলি জমিতে। যত দূর চোখ যায় শুধু পলিথিন আর পলিথিন। মাসের পর মাস বছরের পর বছর চলে গেলেও এ থেকে উত্তরণের কোনো পথ পাচ্ছেন না স্থানীয় কৃষকেরা। এতে হাজার হাজার বিঘা জমিতে কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়ে আছে।

প্রতিবছর দেশে জমছে ৩০ লাখ টন ই-বর্জ্য। এর মধ্যে শুধু স্মার্ট ডিভাইস থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে সাড়ে ১০ কেজি টন ই-বর্জ্য। অন্তত ২ লাখ ৯৬ হাজার ৩০২ ইউনিট নষ্ট টেলিভিশন থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ১ দশমিক ৭ লাখ টনের মতো ই-বর্জ্য। জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে আসছে ২৫ লাখ টনের বেশি। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই বর্জ

দেশে অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে, যারা বর্জ্য উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তাদের মোড়কজাত পণ্যের বর্জ্যে সয়লাব হয়ে যায় নগরীর ড্রেন ও খাল, যা নগরীর দূষণ ও জলাবদ্ধতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। ফলে ওই কোম্পানিগুলোকে দায়বদ্ধ হতে হবে, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তাঁদের ভূমিকা রাখতে হবে 

আমাদের দেশের ভারী শিল্প-কারখানাগুলো সাধারণত রাজধানী এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া দেশের বিভাগীয় শহর অথবা গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভারী শিল্পকারখানাগুলো নজরে পড়ে। এতে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত বর্জ্যে শহরদূষণের পাশাপাশি নদী-খাল দূষণের শিকার হচ্ছে ব্যাপকভাবে। শুধু তা-ই নয়, দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া

বিশ্বের অর্ধেকের বেশি জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে বলে সম্প্রতি এক রিপোর্টে উঠে এসেছে। ফলে চরম জলকষ্টের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে। 

কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী মারাত্মক দূষণে ধুঁকছে। সম্প্রতি দেখা গেছে, রামু উপজেলার রামু ফকিরা বাজারের সব ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এই নদীতেই। উপজেলার প্রায় ১২টি পয়েন্টে নানান ধরনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। 

বেশির ভাগ পৌরসভা তাদের আওতাধীন এলাকা থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে  নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনে না রেখে অন্য জায়গায় ফেলে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এমন ১৪টি পৌরসভা চিহ্নিত করেছে, যারা বিভিন্ন মহাসড়কের ৬২টি স্থানে বর্জ্য ফেলছে। এতে জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বায়ুর মানের বিচারে আজ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশের ঢাকার বাতাস ছিল অস্বাস্থ্যকর। দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ১৫০। এই সময় বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান চতুর্থ।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের হোজা নদী। এক সময় খরস্রোতের নদীটি এখন বর্জ্যের ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। সদর ও পৌর এলাকার বাজারের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে দূষণ, ছড়িয়ে পড়ছে রোগ-বালাই। 

ঝুঁকি বিবেচনায় এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে থাকতে বলা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের স্কুল আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। রোববার রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শিগগির তা নিভে যাবে।

বায়ুদূষণের প্রভাবে মাটি থেকে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বনের পরিমাণ সাধারণের চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। তার প্রভাব পড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা মারাত্মক প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপর। 

হাওর অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত। তবে নদী, খাল-বিল ও পুকুর দূষিত হওয়ায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। আর তাই অনেক জেলে জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

সয়াবিন তেল ও সয়া খাদ্য রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা। এ ছাড়া ভুট্টা উৎপাদনে ৩ নম্বরে রয়েছে দেশটি। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন আর্জেন্টিনার সয়া, ভুট্টা এবং গম খেতকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। খরার কবলে পড়েছে এর প্রতিবেশী ছোট্ট দেশ উরুগুয়েও। 

ঢাকার বায়ুদূষণ বিপজ্জনকমাত্রা ছাড়িয়ে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে জানিয়ে জরুরি ভিত্তিতে পানি ছিটিয়ে বা ওয়াটার থেরাপির মাধ্যমে তা রোধ করার আহ্বান জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), জনউদ্যোগ, আইইডি, নাগরিক অধিকার

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর ও হিমবাহের গভীর থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করেন হিমবিজ্ঞানীরা। ফলাফলে দেখা যায়, গত ১ হাজার বছরে এটিই সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রা। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই তাপমাত্রা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

প্রায় ৩৯ হাজার কোটি বৃক্ষের আমাজন রেইনফরেস্ট পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন উৎপাদন করে। অনেকের হয়তো ধারণা, বাকি ৮০ শতাংশের বেশির ভাগ অক্সিজেন আসে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন বন–জঙ্গল থেকেই।