নেপাল

নেপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে দুই দিন আটকে থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে তাঁদের ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে। একই ফ্লাইটে বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরাও দেশে ফিরেছেন।

নেপালে সরকারের দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে তরুণ জেন–জি প্রজন্মের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় দেশটিতে সরকারের পতন হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। কারাগারগুলোতে অসন্তোষ দেখে দিয়েছে। অনেক কারাগার ভেঙে বিপুলসংখ্যক কয়েদি পালায়।

হিমালয়কন্যা নেপালের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভূদৃশ্যটি পর্বতমালার মতোই চড়াই-উতরাইয়ে ভরা। ১০ বছরের মাওবাদী বিদ্রোহের রক্তক্ষরণের পর ২০০৮ সালে উচ্ছেদ হয়েছিল রাজতন্ত্র। সেই থেকে ১৩ বার সরকার বদল হয়েছে। ক্ষমতার মসনদে ঘুরেফিরে দেখা যাচ্ছিল গুটিকয়েক নেতাকে।

নেপালে জেন-জেড প্রজন্মের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে নতুন মোড় এসেছে। দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ তরুণেরা দেশটির সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছে।

নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি, সিপিএন (মাওবাদী কেন্দ্র) চেয়ারম্যান পুষ্পকমল দাহাল, সিপিএন (একীভূত সমাজবাদী) চেয়ারম্যান মাধবকুমার নেপালসহ একাধিক মন্ত্রীকে নিরাপত্তার কারণে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণকেন্দ্র শিবপুরীতে রাখা হয়েছে।

নেপাল ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কেবল ভৌগোলিক নয়, হাজার বছরের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক বন্ধনে আবদ্ধ। উন্মুক্ত সীমান্ত, অভিন্ন হিন্দু ঐতিহ্য এবং ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও নেপালে ভারতবিরোধী মনোভাব একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল বাস্তবতা।

স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে নেপালের কাঠমান্ডুর পরিস্থিতি। এক দিনেরও বেশি সময় বন্ধের পর আজ দুপুরে খুলে দেওয়া হয়েছে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফেরার আশায় ক্ষণ গুনছে বাংলাদেশ ফুটবল দল।

নেপালের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও জ্বালানিমন্ত্রী টপ বাহাদুর রায়মাঝি আবারও শিরোনাম হলেন। তবে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্স ও লেনিনপন্থী) এ নেতা এবার শিরোনাম হয়েছেন দেশে বিশৃঙ্খলার সুযোগে কারাগার থেকে পলায়ন করে।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার সকাল কিছুটা শান্ত মনে হলেও পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। ভোর থেকে এই শহরের প্রধান মোড়গুলোতে ব্যারিকেড বসিয়ে ভেতরের রাস্তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে সেনারা।

হিমালয়কন্যা নেপালে সরকারের দুর্নীতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এরই মধ্যে অন্তত ২৯ জনের প্রাণ ঝরেছে। এরপর নেপালের প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করায় সরকারেরও পতন হয়েছে। দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী।

নেপালের পর্যটন এলাকা চন্দ্রগিরিতে একটি কেবল কারে আগুন দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। নেপালি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম দ্য হিমালয়ান এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া, বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন মার্কেট, নেতাদের বাসভবন এমনকি থানাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়।

ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, নেপালের উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত-নেপাল সীমান্তে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সশস্ত্র সীমা বল পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে।

লুটতরাজ, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে এরই মধ্যে দেশজুড়ে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তারা। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।

কাঠমান্ডুতে মৃত্যুর মিছিল, ধ্বংসযজ্ঞ আর অগ্নিসংযোগের ভয়াবহ ছবি ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। দেশজুড়ে আন্দোলনের মুখে কেপি শর্মা অলি সরকারের পতনের পর হিমালয়ের পাদদেশের এই দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিয়েছে নেপালের সেনাবাহিনী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ৬৫ বছর বয়সী পৌডেল দৌড়ে পালাচ্ছেন, আর পেছনে শত শত মানুষ তাঁকে ধাওয়া করছে। একপর্যায়ে এক তরুণ বিক্ষোভকারী সামনে থেকে এসে লাফিয়ে তাঁকে লাথি মারেন। এতে তিনি একটি লাল দেয়ালে ধাক্কা খান। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার উঠে দৌড়াতে শুরু করেন।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর কোটেশ্বরে ভয়াবহ সহিংসতায় তিন পুলিশ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, আত্মসমর্পণের পরও আন্দোলনকারীরা তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন।

নেপালে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্যদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আজ মঙ্গলবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো, নূর আলম এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।