Ajker Patrika

‘পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে’ যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে উৎসাহ

‘পিছিয়ে পড়া ঠেকাতে’ যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে উৎসাহ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বিশ্বজুড়ে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের দিনে শিক্ষা ক্ষেত্রে এআই ব্যবহার আরো বাড়বে। আর তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ব্যবহারে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসহ আগের রক্ষণশীল মানসিকতা আস্তে আস্তে দূর হচ্ছে বলে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে । গত বছরের নভেম্বরে চালুর পর থেকেই শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্টসহ লেখাপড়ার বিভিন্ন কাজে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।

যদিও প্রথম দিকে এআইয়ের ব্যবহারকে নেতিবাচকভাবেই দেখছিলেন শিক্ষকেরা; চ্যাটজিপিটি ব্যবহার বন্ধে তারা বিভিন্ন নীতিও গ্রহণ করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের কলেজ আনবাউন্ডের পরিচালক ল্যান্স ইটন বলেন, স্প্রিং সেমিস্টারে (জানুয়ারি-মে) ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে এআইয়ের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীদের কেন এটা ব্যবহার করা দরকার- তাই নিয়ে আলোচনা চলছে।  

শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য ফেসবুকে ‘স্টাডি গ্রুপ’ তৈরি করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল– হায়ার ইডি ডিসকাশন অব রাইটিং এন্ড এআই এবং গুগল গ্রুপ এআই এডুকেশন। 

এআইয়ের ব্যবহার এখনো স্বস্তিকর পর্যায়ে না এলেও ইটন বলেন, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কোডিং থেকে শুরু করে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন কোর্সে এআই ব্যবহার হচ্ছে।

সিএনএন বলছে, চ্যাটজিপিটি এড়িয়ে গেলে বা এর ব্যবহার নিরুৎসাহিত করলে কর্মজীবনে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়তে পারেন বলে শিক্ষকরা এখন আশঙ্কা করছেন।

শিক্ষাবিষয়ক ওয়েবসাইট ইন্টিলিজেন্টডটকমের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, গত শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৩০ শতাংশ কলেজ শিক্ষার্থী লেখাপড়ার কাজে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে। ইংরেজি বিষয়ে এর ব্যবহার ছিল সবচেয়ে বেশি।

চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জনের জিপিএ বৃদ্ধি পেয়েছে। চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে কলেজ শিক্ষার্থীরা উপকার পেয়েছে। ৪ জনের মধ্যে ৩ জন শিক্ষার্থী অন্যদের চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের পরামর্শ দেয় বলে গবেষণায় দেখা যায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক জুলস হোয়াইট বলেন, এই প্রযুক্তিকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। শিক্ষার্থী, অনুষদ ও শিক্ষকদের এআই ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে এআইয়ের চাহিদা বাড়ছে। তাই এই ব্যবহারে সবাইকে সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। 

যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী ও অনুষদের সদস্যদের এআই ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রশিক্ষণের জন্য বাইরে থেকেও বিশেষজ্ঞদের ডাকা হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নেটওয়ার্ক ৫জি দেখালেই পৃথিবীর কোথাও ৫জি সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফোনে ৫জি দেখানো মানেই ৫জি নয়। ছবি: সংগৃহীত
ফোনে ৫জি দেখানো মানেই ৫জি নয়। ছবি: সংগৃহীত

মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে যখন ৫জি প্রতীকটি লেখা ওঠে, তখন ব্যবহারকারী ধরেই নেন যে তিনি অতি দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল নেটওয়ার্কের এই লেখাটি গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করছে। পাঁচ বছর আগে ৫জি চালু হওয়ার সময় যে গতি, মসৃণ স্ট্রিমিং এবং তাৎক্ষণিক সংযোগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তা অনেক ক্ষেত্রেই অধরা।

প্রতীক মানেই গতি নয়

যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা পলিসিট্র্যাকার-এর গবেষণা এবং বিবিসির ‘মর্নিং লাইভ’-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ সময় একটি ফোনে যখন নেটওয়ার্ক বারে ৫জি প্রতীক দেখা যায়, তখন ফোনটি আসলে ৪জি সংযোগ ব্যবহার করে।

এর অর্থ হলো, গ্রাহকেরা উচ্চ মূল্যে ৫জি পরিষেবার বিল পরিশোধ করেও নীরবে ধীর গতির ৪জিতেই আটকে থাকছেন। পলিসিট্র্যাকারের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রধান কারণ হলো মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো ৫ জি-কে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। তাঁদের মতে, স্ক্রিনের প্রতীকটি এলাকায় ৫জি সিগন্যালের ‘উপস্থিতি’ দেখায় মাত্র, কিন্তু ফোনটি প্রকৃতপক্ষে সক্রিয়ভাবে সেই দ্রুততম নেটওয়ার্কে যুক্ত কি না, তা নিশ্চিত করে না।

নীতিগতভাবে, ৫জি-এর সর্বোচ্চ তাত্ত্বিক ডাউনলোড গতি প্রতি সেকেন্ডে ২০ হাজার মেগাবিটস (এমবিপিএস) পর্যন্ত হতে পারে। এই গতিতে এক মিনিটেরও কম সময়ে ১৮টি এইচডি চলচ্চিত্র ডাউনলোড করা সম্ভব। তবে গ্রাহকদের জন্য এই গতি বহুলাংশে কম দেখা গেছে।

মোবাইল অপারেটর এবং সরকারের বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও,৫জি পরিষেবা বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এর মূল কারণ হলো,৫জি প্রযুক্তিতে দ্রুত গতি বজায় রাখতে তুলনামূলকভাবে কম দূরত্বে অনেক বেশি টাওয়ার (mast) স্থাপনের প্রয়োজন হয়।

পলিসিট্র্যাকারের মার্টিন সিমনস জানান, ফোনে ৫জি লোগো দেখানো সত্ত্বেও, ডেটা এখনও পুরোনো ৪জি অবকাঠামো ব্যবহার করে স্থানান্তরিত হচ্ছে। এর ফলে গ্রাহকেরা যেখানে অতি-দ্রুত নেটওয়ার্কের প্রত্যাশা করেন, সেখানেও ধীর ডাউনলোড বা বাফারিংয়ের সম্মুখীন হতে পারেন।

এই সমস্যার সমাধানে কিছু মোবাইল নেটওয়ার্ক এখন ‘স্ট্যান্ডালোন ৫ জি’ নামে একটি নতুন পরিষেবা চালু করছে। তারা দাবি করছে, এই পরিষেবাটি সব সময় সত্যিকারের ৫জি গতি সরবরাহ করবে।

তবে এই সুবিধা পেতে হলে গ্রাহকদের জন্য একটি বিশেষ ফোন প্ল্যান কিনতে হবে, যার খরচ সাধারণত বেশি হয়। কনজিউমার বিশেষজ্ঞ জেসপার গ্রিগসন বিবিসিকে বলেছেন, এই স্ট্যান্ডালোন ৫জি অনেকের জন্য ‘খুব বেশি খরুচে নয়’ কারণ এর চুক্তিগুলো ব্যয়বহুল এবং বড় শহরগুলোতে এখনও কভারেজ অসম্পূর্ণ। যদিও ট্রেন স্টেশন বা ব্যস্ত এলাকায় ভালো পরিষেবা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রাহকদের স্বচ্ছতা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আপনি একটি জিনিস পাওয়ার আশা করছেন, কিন্তু পাচ্ছেন অন্য কিছু। এখানে নির্ভুলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্য সংস্থা মোবাইল ইউকে অবশ্য নিশ্চিত করেছে,৫জি আইকন মানেই সক্রিয় ৫জি সংযোগ নয়। এটি শুধু ব্যবহারকারী ৫জি এনাবল এলাকায় আছেন তা নির্দেশ করে। তারা জানায়, নেটওয়ার্কগুলো রিয়েল-টাইম সিগন্যাল শক্তির ওপর ভিত্তি করে গ্রাহকদের গতিশীলভাবে ৪জি বা ৫ জি-এর মধ্যে সেরা সংযোগে পরিচালিত করে।

গ্রাহকেরা কী করবেন?

যদি অপারেটর ৫জি নেটওয়ার্ক দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু আপনি নিয়মিত এবং নির্ভরযোগ্য ৫জি সংকেত পাচ্ছেন না বলে মনে করেন, তাহলে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা:

গতি পরীক্ষা করুন: একটি অনলাইন স্পিড টেস্ট ব্যবহার করে আসল ডাউনলোড এবং আপলোড রেট দেখুন।

কভারেজ যাচাই করুন: আপনার এলাকায় কোন নেটওয়ার্ক সেরা ৪জি বা ৫জি সংকেত দিচ্ছে, তা জানতে একটি কভারেজ চেকার ব্যবহার করুন।

প্রোভাইডারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন: যদি আপনি কভারেজ নিয়ে অসন্তুষ্ট হন, তবে আপনার বর্তমান পরিষেবা প্রদানকারীর সাথে যোগাযোগ করে সমস্যাটি ব্যাখ্যা করুন এবং তাদের পরামর্শ নিন।

প্রোভাইডার পরিবর্তন করুন: একটি অপারেটরে আবদ্ধ না থেকে, ভালো কভারেজ দেয় এমন অন্য একটি প্রোভাইডারে সুইচ করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৪ ট্রিলিয়ন ডলার স্পর্শ করল অ্যাপলের বাজারমূল্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাপল’ নতুন এক মাইলফলক অতিক্রম করেছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) কোম্পানিটির বাজারমূল্য ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪ হাজার বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এর মাধ্যমে অ্যাপল ‘এনভিডিয়া’ ও ‘মাইক্রোসফট’-এর পাশে জায়গা করে নিয়েছে—এই দুই প্রযুক্তি জায়ান্টও চলতি বছরই ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্যে পৌঁছেছে।

সিএনএন জানিয়েছে, অ্যাপলের শেয়ারের দাম মঙ্গলবার ০.১ শতাংশ বেড়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক উত্থানের অংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন আইফোন-১৭ এর বিপুল বিক্রি, বিশেষ করে চীনের বাজারে, এই উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

এটি কোম্পানিটির বছরের শুরুর পরিস্থিতির সম্পূর্ণ উল্টো। তখন শেয়ারবাজারে অ্যাপলের অবস্থান ছিল নড়বড়ে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় পিছিয়ে পড়া এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের চাপে কোম্পানিটি বিপাকে পড়েছিল। এভাবে গত এপ্রিলে মাত্র এক দিনেই ৩১০ বিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্য হারিয়েছিল অ্যাপল।

তবে এই ঘুরে দাঁড়ানো প্রমাণ করেছে, এখনো আইফোনই অ্যাপলের প্রধান শক্তি। কোম্পানিটি এআই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লেও এর পণ্য ও বিক্রি মার্কিন শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরিয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত অ্যাপলের শেয়ারমূল্য বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের ৩০.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় অনেক কম এবং বাজারের গড় প্রবৃদ্ধির ১৭ শতাংশ নিচে।

প্রযুক্তি খাতে ২০২৫ সালকে ‘এআই উন্মাদনার বছর’ বলা হচ্ছে। এআই–ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের রেকর্ড ভাঙা উত্থানের মাঝেই অ্যাপল নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। চার ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্যে পৌঁছানো অন্য দুটি কোম্পানির মধ্যে এনভিডিয়া এআই চিপ তৈরি করে এবং মাইক্রোসফট ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে। অ্যাপলের আগে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের ৪ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো ইঙ্গিত দিচ্ছে, ওয়াল স্ট্রিটে এখন এআই–ই সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি।

অ্যাপল প্রথমবার ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজারমূল্যে পৌঁছায় ২০১৮ সালের আগস্টে। এরপর ২০২০ সালে ২ ট্রিলিয়ন, একই বছরে ৩ ট্রিলিয়ন এবং অবশেষে ২০২৫ সালে ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের এই নতুন ইতিহাস গড়েছে।

ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক ড্যান আইভস এক নোটে লিখেছেন, ‘এটি স্পষ্ট যে আইফোন-১৭ এর মাধ্যমে অ্যাপলের নতুন সাফল্য এসেছে। ওয়াল স্ট্রিট এখন কোম্পানিটির নতুন এআই কৌশল ঘোষণার অপেক্ষা করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘উইকিপিডিয়া পক্ষপাতদুষ্ট’, গ্রোকিপিডিয়া আনলেন ইলন মাস্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘উইকিপিডিয়া পক্ষপাতদুষ্ট’, গ্রোকিপিডিয়া আনলেন ইলন মাস্ক

উইকিপিডিয়ার বিকল্প হিসেবে নতুন অনলাইন মুক্ত জ্ঞানকোষ ‘গ্রোকিপিডিয়া’ (Grokipedia) চালু করেছেন টেক মোগল ইলন মাস্ক। স্থানীয় সময় সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে ওয়েবসাইটটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের এক পোস্টে মাস্ক নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এক মাস আগে মাস্কের প্রতিষ্ঠান ‘এক্সএআই’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্ট দিয়ে জানিয়েছিল, তারা এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে, যা হবে ‘উইকিপিডিয়ার চেয়ে বহুগুণ উন্নত’। এর ঠিক এক মাস পর সেটি চালু করলেন মাস্ক।

মাস্ক তখন বলেছিলেন, ‘আমরা এক্সএআই-এ গ্রোকিপিডিয়া তৈরি করছি। এটি উইকিপিডিয়ার চেয়ে বহুলাংশে উন্নত হবে। সত্যি বলতে, মহাবিশ্বকে বোঝার এক্সএআই-এর লক্ষ্যের দিকে এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।’

স্থানীয় সময় সোমবার Grokipedia.com চালুর পর কিছু ব্যবহারকারী সাইটে প্রবেশে সমস্যার মুখে পড়েছেন বলে জানায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। তবে বিজনেস ইনসাইডার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে সাইটটিতে প্রবেশ করে মাস্কের নামে একটি নিবন্ধ দেখতে পায়।

সাইটটির ইন্টারফেস কালো। এতে একটি সার্চ বার এবং উইকিপিডিয়া ও চ্যাটজিপিটির মতো ফন্ট স্টাইল দেখা যায়। হোমপেজে লেখা আছে—‘Grokipedia version v0.1’ এবং এতে ইতিমধ্যে ৮ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি নিবন্ধ যুক্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

‘গ্রোকিপিডিয়া’ মাস্কের এমন একটি প্রকল্প, যার মাধ্যমে তিনি তথাকথিত ‘রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট মূলধারার প্ল্যাটফর্মগুলোর’ বিকল্প তৈরি করতে চান।

একসময় উইকিপিডিয়ার প্রশংসা করলেও গত কয়েক বছরে মাস্ক এই প্ল্যাটফর্মটিকে ‘উদারপন্থী পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে অভিযুক্ত করেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এক্সের এক পোস্টে তিনি তাঁর অনুসারীদের আহ্বান জানান—‘নিরপেক্ষে সা হওয়া অবধি উইকিপিডিয়ার অর্থায়ন বন্ধ করুন।’

২০১৯ সালে তিনি নিজের উইকিপিডিয়া পেজ নিয়েও সমালোচনা করে লিখেছিলেন, ‘এটি একপ্রকার যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে প্রতি মুহূর্তে অগণিত ব্যবহারকারী সম্পাদনার কাজ করছে।’ তিনি মজার ছলে আরও লিখেছিলেন, আমার পেজ থেকে ‘ইনভেস্টর’ শব্দটা কেউ দয়া করে মুছে দাও, আমি আসলে বিনিয়োগ তেমন করি না।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে তিনি এক পোস্টে বলেন, ‘উইকিপিডিয়ার বামপন্থী পক্ষপাত একেবারে নগণ্য নয়।’

এদিকে, উইকিপিডিয়ার সহ–প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস ও মাস্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইন দ্বন্দ্ব চলছে। ২০২৩ সালের মে মাসে ওয়েলস তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে টুইটারে (বর্তমানে এক্স) কনটেন্ট সীমিত করার ঘটনায় মাস্কের সমালোচনা করেন। একই বছরের নভেম্বরে টুইটারের নাম পরিবর্তন করে ‘এক্স’ করার পর ওয়েলস মন্তব্য করেছিলেন, ‘এক্স এখন ট্রল ও উন্মাদে ভরে গেছে।’

এর জবাবে মাস্ক লিখেছিলেন, যদি উইকিপিডিয়া তার নাম ‘ডিকিপিডিয়া’ রাখে, তবে তিনি ১ বিলিয়ন ডলার দান করবেন।

সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জিমি ওয়েলস বলেন, তিনি গ্রোকিপিডিয়ার ওপর বেশি ভরসা রাখছেন না, কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো যথেষ্ট নির্ভুল নয়—‘এতে অনেক ভুল থাকবে।’

গ্রোকিপিডিয়ার মূল ভিত্তি গ্রোক, যা মাস্কের এক্সএআই-এর তৈরি একটি এআই চ্যাটবট। এটি অতীতে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ভুল তথ্য প্রচার করেছে। একবার এটি দক্ষিণ আফ্রিকার ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ সম্পর্কিত একটি ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করে সমালোচনার মুখে পড়ে।

তবে মাস্ক ও তাঁর টিম জানিয়েছে, তারা এ ধরনের ভুল দূর করতে কাজ করছেন। গত জুন মাসে মাস্ক এক্সের এক পোস্টে বলেছিলেন, তাঁর লক্ষ্য অপূর্ণ তথ্য যোগ করে ও ভুল তথ্য মুছে ফেলে ‘পৃথিবীর তথ্যভান্ডারের সম্পূর্ণ পুনর্লিখন’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে আমাজন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন আবারও বড় পরিসরে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটছে। আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) থেকে প্রতিষ্ঠানটি করপোরেট পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

প্রতিষ্ঠানটির ১ কোটি ৫৫ লাখ কর্মীর মধ্যে এই সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও করপোরেট পর্যায়ে কর্মরত ৩ লাখ ৫০ হাজার কর্মীর প্রায় ১০ শতাংশ এর আওতায় পড়বেন। এটি হবে ২০২২ সালের পর আমাজনের সবচেয়ে বড় কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ২৭ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল।

এ বিষয়ে জানতে আমাজনের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

দুই বছর ধরে আমাজন ছোট ছোট ধাপে বিভিন্ন বিভাগে জনবল কমিয়ে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে ডিভাইস, যোগাযোগ ও পডকাস্টিং বিভাগ। এবার যে বৃহৎ আকারের ছাঁটাই শুরু হচ্ছে, তা প্রভাব ফেলবে মানবসম্পদ, অপারেশনস, ডিভাইস ও সার্ভিসেস এবং আমাজন ওয়েব সার্ভিসেস বিভাগে।

এ বিষয়ে অবগত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, গত সোমবার সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যবস্থাপকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কীভাবে তাঁরা ছাঁটাই-সংক্রান্ত ই-মেইল পাওয়ার পর কর্মীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। আজ সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ই-মেইল পাঠানো শুরু হবে।

আমাজনের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি কিছুদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক জটিলতা কমাতে কাজ করছেন। তিনি ব্যবস্থাপক পর্যায়ে কর্মীসংখ্যা কমানোর পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি গোপনে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জমা দেওয়ার একটি ব্যবস্থা চালু করেছেন। জানা গেছে, এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫০০টি অভিযোগ এসেছে এবং ৪৫০টির বেশি বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত জুনে জ্যাসি বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যতে আরও কর্মী ছাঁটাই হতে পারে। কারণ, এআই প্রযুক্তি অনেক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম।

ই-মার্কেট বিশ্লেষক স্কাই কানাভেস বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, আমাজন করপোরেট পর্যায়ে এআই-নির্ভর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত সাফল্য পেয়েছে, যার ফলে বড় আকারে জনবল কমানো সম্ভব হচ্ছে। এ ছাড়া এআই অবকাঠামো গড়ে তুলতে যে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তার খরচ পুষিয়ে নিতেও কোম্পানির ওপর চাপ রয়েছে।’

ছাঁটাইয়ের সঠিক পরিমাণ এখনো নির্ধারিত না হলেও ফরচুনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানবসম্পদ বিভাগে প্রায় ১৫ শতাংশ পদ বাদ পড়তে পারে।

আমাজন চলতি বছরের শুরুতে অফিসে কর্মীদের সপ্তাহে পাঁচ দিন উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিল, যা প্রযুক্তি খাতে সবচেয়ে কঠোর নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু এই কঠোর নিয়মেও প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা কমেনি। তবে দূরবর্তী এলাকায় থাকা বা অফিসে নিয়মিত উপস্থিত না হওয়া অনেক কর্মীকে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

প্রযুক্তি খাতে চাকরি ছাঁটাই ট্র্যাক করা ওয়েবসাইট Layoffs.fyi-এর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২১৬টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯৮ হাজার কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত