Ajker Patrika

ছবি সংরক্ষণে আসছে কৃত্রিম ডিএনএ, এক গ্রামে থাকবে ২১ কোটি গিগাবাইট ডেটা

অনলাইন ডেস্ক
সাধারণ হার্ড ড্রাইভের পরিবর্তে কৃত্রিম ডিএনএ ব্যবহার করে একটি নতুন ধরনের ছবি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন গবেষকেরা। ছবি: এমআইটি নিউজ
সাধারণ হার্ড ড্রাইভের পরিবর্তে কৃত্রিম ডিএনএ ব্যবহার করে একটি নতুন ধরনের ছবি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন গবেষকেরা। ছবি: এমআইটি নিউজ

বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোন ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি বেড়ে চলেছে এর মাধ্যমে ছবি তোলার প্রবণতাও। প্রতিদিন অসংখ্য স্মৃতি ধরা পড়ছে ক্যামেরায়, আর সেসব ছবি সংরক্ষণে ভরসা রাখা হচ্ছে ফোনের মেমোরি বা ক্লাউড প্ল্যাটফর্মের ওপর। তবে ভবিষ্যতে এসব ছবি সংরক্ষণ করা যাবে ডিএনএতেই। বিষয়টি শুনতে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো লাগলেও এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন সুইজারল্যান্ডের ইপিএফএলের একদল গবেষক।

সাধারণ হার্ড ড্রাইভের পরিবর্তে কৃত্রিম ডিএনএ ব্যবহার করে একটি নতুন ধরনের ছবি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছেন গবেষকেরা।

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ছবি তোলা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে ছবি সংরক্ষণের টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো উপায় খুঁজে বের করাটা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত এসব ছবি ক্লাউড সিস্টেমে রাখা হয়, যা পরিচালিত হয় বিশাল ডেটা সেন্টারের মাধ্যমে। এসব সেন্টারে থাকে অগণিত হার্ড ড্রাইভ ও ম্যাগনেটিক টেপ।

তবে এসব ডেটা সেন্টার অনেক জায়গা নেয়, বিদ্যুৎ খরচ করে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নষ্টও হয়ে যায়। সেখানে ডিএনএ খুবই ক্ষুদ্র, স্থিতিশীল এবং হাজার হাজার বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।

ইপিএফএলের মাল্টিমিডিয়া সিগন্যাল প্রসেসিং গ্রুপের প্রধান এবং বিশেষজ্ঞ তুরাজ ইব্রাহিমি বলেন, এক গ্রাম ডিএনএতে ২১ কোটি ৫০ লাখ গিগাবাইট তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব।

এর মানে, প্রায় ১০ লাখ এক্সটার্নাল হার্ড ড্রাইভের সমপরিমাণ তথ্য একটি কাগজের ক্লিপের চেয়েও ছোট কিছুর মধ্যে রাখা সম্ভব।

ডিএনএ চারটি রাসায়নিক অক্ষর—এ, টি, সি ও জি–ব্যবহার করে তথ্য সংরক্ষণ করে। এখন গবেষকেরা জানেন কীভাবে ডিজিটাল তথ্য, যেমন ছবি, এই অক্ষরগুলোর সিকোয়েন্সে রূপান্তর করা যায়।

এই সিকোয়েন্স কৃত্রিম ডিএনএতে লেখা হয়, যা অনেক দিন নিরাপদে সংরক্ষণ করা যায়। যখন দরকার, বিজ্ঞানীরা ডিএনএ পড়েন এবং তা আবার ডিজিটাল রূপে ফিরিয়ে আনেন।

তবে ছবি এভাবে সংরক্ষণ করা সহজ নয়। এটি ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং সঠিকভাবে রূপান্তর করাও বেশ জটিল।

এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে ইব্রাহিমির দল। ২০১৪ সাল থেকে তিনি জেপিইজি (JPEG) কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা বিশ্বব্যাপী ছবি ফরম্যাটের মান নির্ধারণ করে।

এখন তাঁর দল জেপিইজি ডিএনএ নামে নতুন একটি মান তৈরির কাজ করছে, যা ডিএনএতে ছবি সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি।

জাপান ও ইউরোপের অংশীদারদের সহায়তায় এই প্রকল্প ডিএনএ-ভিত্তিক সংরক্ষণের বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানে কাজ করছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু ডিএনএ সিকোয়েন্স অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, তাই দলটি এমন একটি টুল তৈরি করেছে, যা বিভিন্ন কোডিং পদ্ধতির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে।

তারা এমন একটি উন্নত ছবি সংকোচন অ্যালগরিদম তৈরি করেছে, যা জেপিইজি ছবি ডিকোড না করেই সরাসরি ডিএনএতে রূপান্তর করতে পারে, যা সময় ও শক্তি সাশ্রয় করে।

এই পদ্ধতিতে সংকোচনের পাশাপাশি বিশেষ ‘ত্রুটি সংশোধন’ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যাতে ডিএনএতে রূপান্তর থেকে শুরু করে পুনরুদ্ধার পর্যন্ত ছবিগুলোর অখণ্ডতা বজায় থাকে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের সহায়তায় জেপিইজি ডিএনএ আরও উন্নত হবে বলে মনে করেন ইব্রাহিমি। তাই ভবিষ্যতে ক্লাউডের চেয়েও স্মৃতি সংরক্ষণের সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য ও সহজ উপায় হয়ে উঠতে পরে ডিএনএ।

তথ্যসূত্র: নোরিডজ সায়েন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত