Ajker Patrika

বাণিজ্য আলোচনার আগে মার্কিন চিপ কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্তে চীন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীনা চিপ শিল্পের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা ও বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী তদন্ত শুরু করেছে চীন। ছবি: সংগৃহীত
চীনা চিপ শিল্পের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা ও বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী তদন্ত শুরু করেছে চীন। ছবি: সংগৃহীত

চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক। বহুজাতিক বৈঠকের ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক তদন্ত শুরু করেছে চীন।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি কিছু নির্দিষ্ট ধরনের অ্যানালগ আইসি চিপসের বিরুদ্ধে ‘অ্যান্টি-ডায়িং’ তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এই ধরনের চিপ তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস ইনকরপোরেটেড ও অ্যানালগ ডিভাইসেস ইনকরপোরেটেড।

এ ছাড়া, চীনা চিপ শিল্পের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা ও বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী (অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন) তদন্ত শুরু করেছে চীন।

উল্লেখ্য, অ্যান্টি-ডাম্পিং হলো—এমন একটি বাণিজ্যনীতি, যেখানে কোনো দেশ যখন দেখে যে অন্য কোনো দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের দেশের বাজারের ক্ষতি করার জন্য কম দামে পণ্য রপ্তানি করছে, তখন সেই আমদানি করা পণ্যের ওপর একটি বিশেষ শুল্ক আরোপ করা হয়।

এই তদন্ত ঘোষণার ঠিক আগেই যুক্তরাষ্ট্র ২৩টি চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানকে তাদের ‘এনটিভি লিস্ট’ বা কালো তালিকায় যুক্ত করে। ওই তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা বৈদেশিক নীতির স্বার্থের পরিপন্থী কার্যক্রমে যুক্ত। এই তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলতি সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া উচ্চপর্যায়ের বৈঠককে ঘিরে পরিবেশ হয়ে উঠেছে বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। স্পেনের মাদ্রিদে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এবং চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লিফেংয়ের মধ্যে বাণিজ্য, অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বহুমুখী আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক আরোপের পর তা একপ্রকার বিরতি নেয় দুই দেশ। সেই প্রেক্ষাপটে আবার আলোচনার টেবিলে বসতে চলেছে দুপক্ষ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার চিপ নিয়ে সংঘাত

সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ খাতটি বর্তমানে চীন-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক উন্নত চিপসের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এমনকি, এনভিডিয়া করপোরেশনের কিছু সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন চিপ রপ্তানিতেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে তা বাণিজ্য আলোচনার একটি অংশ হিসেবে ব্যবহার করছে।

অন্যদিকে, চীনা কর্মকর্তারা বারবার নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন।

এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ‘অ্যান্টি-সার্কামভেনশন’ বা প্রতিরোধ এড়ানোর তদন্ত চালায় চীন, যার ফলে আমদানি করা অপটিক্যাল ফাইবারের ওপর অ্যান্টি-ডায়িং শুল্ক আরোপ করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের তদন্ত আরও বাড়তে পারে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ৩০১ ধারা ব্যবহার করে এবং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চীনের সার্কিট খাতে একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চীনের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ এবং আমাদের উন্নত কম্পিউটিং চিপ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্পের অগ্রগতিকে দমন করার একটি প্রচেষ্টা।’

টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস, অ্যানালগ ডিভাইসেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি অফিস (ইউএসটিআর) এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

স্কট বেসেন্ট এবং হে লিফেংয়ের আলোচনায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে যাচ্ছে টিকটক। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই ভিডিও অ্যাপটির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাইটডান্স লিমিটেডের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগে বলেছেন, টিকটকের মালিকানা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে একটি চূড়ান্ত চুক্তি করতে হবে, অন্যথায় অ্যাপটি নিষিদ্ধ হতে পারে। চলতি বছরের শুরু থেকেই এই সময়সীমা কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে।

এ ছাড়া, আলোচনায় অর্থ পাচারবিরোধী পদক্ষেপ নিয়েও আলাপ হবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই তারা ঘোষণা দিয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র কম মূল্যে নিম্নমানের চিপ রপ্তানি করে এবং নিজ দেশের চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্যায়ভাবে ভর্তুকি দেয়—এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হবে।

এই তদন্ত প্রায় এক বছর চলবে, তবে প্রয়োজনে সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো যেতে পারে। আর বৈষম্যবিরোধী তদন্তের সময়সীমা সাধারণত তিন মাস।

তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

স্ত্রীর সম্পদ পুনরুদ্ধারে মামলা করা যায়

হামাসকে নিরস্ত্র হতে বাধ্য করা হবে, প্রয়োজনে আমরাই করব সহিংসভাবে: ট্রাম্প

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত