Ajker Patrika

অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে প্রাণঘাতী থ্রিডি প্রিন্টেড বন্দুক

অনলাইন ডেস্ক
টেলিগ্রাম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে এসব অস্ত্রের গাইড ও বিজ্ঞাপন। ছবি: অ্যাসোসিয়েট প্রেস
টেলিগ্রাম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে এসব অস্ত্রের গাইড ও বিজ্ঞাপন। ছবি: অ্যাসোসিয়েট প্রেস

খেলনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বস্তু প্রিন্ট করা যায় থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুবিধা আনলেও, এর অপব্যবহার আজ বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, এই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘরে বসেই তৈরি করা যাচ্ছে প্রাণঘাতী বন্দুক। শুধু অস্ত্রই নয়, এগুলো তৈরির নকশা, গাইডলাইনও ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘এভরিটাউন–এর বিশেষজ্ঞ নিক সাপলিনা জানান, বিশ্বজুড়ে অপরাধী এবং চরমপন্থীদের জন্য “পছন্দের অস্ত্র’ হয়ে উঠতে পারে এই থ্রিডি-প্রিন্টেড বন্দুক।

এই ঘরোয়া তৈরি অ্যানট্রেসেবল (শনাক্ত করা যায় এমন) অস্ত্র সম্প্রতি একাধিক অপরাধের তদন্তে উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিমা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের সিইও ব্রায়ান থম্পসন হত্যাকাণ্ডে একটি আংশিক থ্রিডি-প্রিন্টেড বন্দুক ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

বিবিসির অনুসন্ধানে জানা যায়, টেলিগ্রাম, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়েছে এসব অস্ত্রের গাইড ও বিজ্ঞাপন। এই অস্ত্রগুলোকে বলা হয় ‘ঘোস্ট গান’—যা প্রিন্টার, ডাউনলোডযোগ্য ব্লুপ্রিন্ট এবং কিছু সাধারণ উপকরণ ব্যবহার করে ঘরে বসেই বানানো যায়।

এক দশকে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এসব অস্ত্র এখন আরও উন্নত, টেকসই এবং একাধিকবার ব্যবহারযোগ্য। অনেক মডেল একাধিকবার গুলি ছুড়লেও এর প্লাস্টিক অংশ ভেঙ্গে যায় না।

গত এক দশকে প্রযুক্তির উন্নতির কারণে এই অস্ত্রগুলোর মান বেড়েছে, দাম কমেছে এবং এগুলো বানানোর গাইড পাওয়াও এখন অনেক সহজ।

২০২৪ সালের অক্টোবরে টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে শত শত থ্রিডি প্রিন্টেড অস্ত্রের বিজ্ঞাপন দেখা গেছে—যা মেটার নীতিমালার পরিপন্থী। মেটা তখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও, মাস কয়েক পর বিবিসি সেই বিজ্ঞাপনগুলোর অনেককেই সক্রিয় অবস্থায় খুঁজে পায়।

২০২৪ সালের অক্টোবরে টেক ট্রান্সপারেন্সি প্রজেক্ট নামে একটি সংস্থা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে শত শত থ্রিডি-প্রিন্টেড অস্ত্রের বিজ্ঞাপন খুঁজে পায়, যদিও এসব প্ল্যাটফর্মে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ। মেটা সে সময় কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কয়েক মাস পর বিবিসি একই ধরনের আরও বিজ্ঞাপন খুঁজে পায়।

এই বিজ্ঞাপনগুলো থেকে আগ্রহী ক্রেতাদের পাঠানো হয় টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে। টেলিগ্রামে একাধিক চ্যানেলে থ্রিডি-প্রিন্টেড অস্ত্র বিক্রির তথ্য দেখা যায়। এমনই একটি চ্যানেল হলো জেসি।

টেলিগ্রামের চ্যানেলগুলো মাধ্যমে আসলেই বন্দুক অর্ডার দেওয়া সম্ভব নাকি তা যাচাই করতে বিবিসি জেসি চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেসময় জেসি জানায়, তার কাছে লিবারেট, গ্লোক স্যুইচ বা অটো সিয়ার রয়েছে।

লিবারেটর হলো বিশ্বের প্রথম থ্রিডি প্রিন্টেড বন্দুক। এটি ২০১৩ সালে ডিজাইন করেন ‘ক্রিপ্টো-অ্যানার্কিস্ট’ কডি উইলসন। বন্দুকটি কেবল একবারই ব্যবহার করা যায়। এদিকে গ্লোক স্যুইচ বা অটো সিয়ার এমন একটি ছোট যন্ত্রাংশ যা পিস্তলকে স্বয়ংক্রিয় রূপ দেয়—এটিও প্রায়ই থ্রিডি-প্রিন্টেড হয়ে থাকে।

জেসি দাবি করে, সে ১৬০ পাউন্ডের বিটকয়েন নিয়ে অস্ত্র পাঠাতে পারে। চাইলে একটি ব্রিটিশ ব্যাংক অ্যাকাউন্টেও টাকা পাঠানো যেতে পারে বলে জানায়। পরে বিবিসি পরিচয় দিলে সে স্বীকার করে যে, চ্যানেলটি আইন ভঙ্গ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অস্ত্র না কিনেও কেউ নিজে বানিয়ে নিতে পারে। এফজিসি–৯ নামে একটি মডেল আছে, যা সম্পূর্ণ থ্রিডি প্রিন্টেড অংশ ও ঘরোয়া উপাদান দিয়ে বানানো যায়। কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষক ড. রাজন বসরা বলেন, ‘আপনি একপ্রকার ডিআইওয়াই অস্ত্র প্রস্তুতকারক হয়ে যাচ্ছেন। এটা অবশ্যই এত সহজ নয় যে, সাধারণ প্রিন্টারের মতো করে কাগজ লেখা প্রিন্ট করা।

বিবিসির আগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনলাইনে বিনামূল্যে এই অস্ত্র বানানোর প্রতিটি ধাপ এবং নকশা পাওয়া যায়।

অনলাইনে ফ্রি ডাউনলোডযোগ্য গাইডও পাওয়া যায়। এর একটি লিখেছেন ফ্লোরিডার আইনজীবী ম্যাথিউ লারোসিয়েরে। তিনি থ্রিডি অস্ত্রের সমর্থক। তাঁর যুক্তি, ‘এটা কেবল তথ্য। তবে এটি কীভাবে ব্যবহার হবে, তা অন্য প্রসঙ্গ।’

তার কাছে বিবিসি জানতে চায়, যদি এই তথ্য স্কুলে গুলি চালানোর মতো ঘটনায় ব্যবহৃত হয়? তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরের কৃপায় এখনো তা ঘটেনি।’

এদিকে মিয়ানমারই একমাত্র দেশ, যেখানে থ্রিডি-প্রিন্টেড অস্ত্র বাস্তব যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সেখানেও এখন আর এই অস্ত্র ব্যবহার করছে না বিদ্রোহীরা। বিবিসি বার্মিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ সালে শত শত এফজিসি–৯ অস্ত্র তৈরি হলেও কাঁচামাল আমদানিতে বাধা এবং প্রচলিত অস্ত্র সহজলভ্য হওয়ায় এখন থ্রিডি অস্ত্র তেমন ব্যবহার হচ্ছে না।

এই অস্ত্র ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেক দেশ। কেউ কেউ ব্লুপ্রিন্ট রাখাকেই অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে চাইছে। থ্রিডি প্রিন্টারে অস্ত্র তৈরির অংশ প্রিন্ট বন্ধে প্রযুক্তিগত নিয়ন্ত্রণ আনার কথাও উঠছে—যেমন সাধারণ প্রিন্টারে অর্থ ছাপা বন্ধ রাখা হয়। তবে এসব ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের দিকে যাচ্ছে মার্কিন রণতরি

ছেলের কাটা পা হাতে নিয়ে বিচারের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বাবা

পর্যটনে সেরা ১০ মুসলিমবান্ধব অমুসলিম দেশ

পাকিস্তানি সেনাপ্রধানকে কেন যুক্তরাষ্ট্রে ডেকেছিলেন ট্রাম্প, ইরান-ইসরায়েল নিয়ে কী আলোচনা হলো

ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, হতে পারে দু-এক দিনের মধ্যে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত