Ajker Patrika

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল খাগড়াছড়ির ইব্রাহিম

Thumbnail image

খাগড়াছড়িতে দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার তিনি। প্রতিষ্ঠান দুটিতে কাজ করছেন ১৭ জন কর্মী। দেড় হাজারের বেশি মানুষকে ফ্রিল্যান্সিং শিখিয়েছেন। সফল এই ফ্রিল্যান্সারের নাম ইব্রাহিম খলিল। তাঁর ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতার গল্প শুনেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

শুরুর গল্প
২০১৬ সাল। প্রায় ২০ কিলোমিটার বন্ধুর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ইব্রাহিম খাগড়াছড়ি শহরে আসতেন লার্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট কোর্সে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে। অনেক সময় রাত হয়ে গেলে থেকে যেতেন বন্ধুর বাসায়। এই পরিশ্রমের ফল তিনি পেয়েছিলেন। জেলার এক শ জনের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। 

প্রথম আয়
২০১৮ সালে ফাইভারে একটি পাঁচ ডলারের কাজ পেলেও সেটা শেষ করা হয়নি। এর কিছুদিন পর ৫০ ডলারের একটি কাজ পান। কাজটি ভালোভাবে শেষ করায় সেই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে আরও কাজ পান ইব্রাহিম, সঙ্গে ফাইভ স্টার রিভিউ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। 

আয়ের গল্প
এক মাসে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ইব্রাহিম সর্বোচ্চ আয় করেছেন ৫ লাখ টাকা! এখন তাঁর প্রতি মাসে গড় আয় প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৯০ লাখ টাকা আয় করেছেন ফ্রিল্যান্সিং থেকে। এই আয়ের টাকায় নিজের নামে জমি কিনেছেন। দ্রুতই নিজের বাড়ি তৈরির ইচ্ছা আছে তাঁর।

কাজের গল্প
ইব্রাহিম মূলত গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট। তিনি পাঁচ বছরে তিন হাজারের বেশি প্রজেক্ট সফলভাবে শেষ করেছেন। আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের কাজ করেছেন। তিনি টপ রেটেড নমিনি অব ফাইভার। 

ইব্রাহিম খলিলপ্রতিষ্ঠানের কর্ণধার
ইব্রাহিম এখন খলিল আইটি এবং খলিল আইটি এজেন্সি নামে দুটি তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৭ জন কর্মী কাজ করেন। খলিল আইটি এজেন্সি বিদেশি ক্লায়েন্টদের কাজ করে। আর খলিল আইটি  নামের প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে লোকজনকে ট্রেনিং দেয়। এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় হাজারের বেশি মানুষ গ্রাফিক ডিজাইন উইদ ফ্রিল্যান্সিং কোর্স  করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানে কোর্স করে অনেকে এখন স্বাবলম্বী।

দুর্গম এলাকায় সাফল্য
খাগড়াছড়ি দেশের অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। তথ্যপ্রযুক্তিতে যে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব, এখানকার তরুণেরা সে বিষয়ে খুব একটা সচেতন নন। এই তরুণদের বুঝিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ করে তোলার কাজ করছেন ইব্রাহিম। দেখিয়েছেন আয়ের পথ। তাঁদেরই একজন শুভেচ্ছা ত্রিপুরা। শুভেচ্ছা এখন প্রতি মাসে ভালো রোজগার করছেন ফ্রিল্যান্সিং করে।

সাফল্যের রহস্য
ইব্রাহিমের সাফল্যের চাবিকাঠি সঠিক সময়ে কাজ শেষ করা। তিনি পরিশ্রম করতে পছন্দ করেন। কঠিন বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে পারেন সহজে।

মা তুমি অনন্যা
ইব্রাহিমের চলার পথে মা আছেন ছায়ায় মতো। মায়ের কানের দুল বিক্রি করে এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন তিনি। ইব্রাহিম খলিল নিজের সাফল্যের সব কৃতিত্ব দিতে চান মা রানু বেগমকে। ছেলের এই সাফল্যে রানু বেগম বলেন, ‘ইব্রাহিমের এই সাফল্য দেখে আমি খুব আনন্দিত।’ 

নতুনদের জন্য
নতুনদের নিয়েই ইব্রাহিমের বেশির ভাগ কাজ। তিনি নতুনদের মধ্যে যে ভুলগুলো দেখতে পান, সেগুলো হলো ধৈর্য না থাকা, চ্যালেঞ্জ না নেওয়ার মানসিকতা, প্রশিক্ষণ শুরু করলে তা সঠিকভাবে শেষ না করা, কাজ না পেলে হতাশ হয়ে পুনরায় চেষ্টা না করা। নতুনদের জন্য ইব্রাহিমের পরামর্শ হলো, কাঁড়ি কাঁড়ি ডলার আয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। প্রথমে যেকোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তারপর যোগাযোগের বিষয়টি শিখে ক্লায়েন্ট খুঁজতে হবে।

শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার
ইব্রাহিম খাগড়াছড়ি জেলার শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। গত বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল ইয়ুথ ক্যারিয়ার কার্নিভ্যালে রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডও অর্জন করেন তিনি।

মানবতার সেবায়
ইব্রাহিম তাঁর প্রতিষ্ঠানের আয়ের ৫ শতাংশ অর্থ প্রতি মাসে গরিব অসহায় মানুষের একবেলা ভালো খাবারের জন্য ব্যয় করেন। মানুষের সেবায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আন-নাফি ফাউন্ডেশন। এ ছাড়া শীতের সময় প্রত্যন্ত এলাকায় কম্বল বিতরণ করেন তিনি।

ভবিষ্যতের ভাবনা
দেশের প্রতিটি জেলায় খলিল আইটির একটি শাখা খুলে তরুণদের প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চান ইব্রাহিম। তিনি চান, তরুণেরা চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক। অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করুক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত