নাসিম আহমেদ

ঢাকা: দেহতাত্ত্বিকেরা বলেন—‘যা নেই ভাণ্ডে, তা নেই ব্রহ্মাণ্ডে।’ কথাটা একটু হেঁয়ালিপূর্ণ নিশ্চিতভাবে। কিন্তু এই হেঁয়ালির জটগুলো খুলতে শুরু করলেই নড়চড়ে বসতে হয়। এই যেমন আজকের দিনের সবচেয়ে আলোচিত করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন, তার যে কর্মপন্থা, তার মূল নির্দেশনা আদতে আছে দেহের ভেতরেই।
মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে মূল দেহ–দুর্গে। শুধু ঢুকেই ক্ষান্ত হয়নি সে। অতি ধুরন্ধর এই ভাইরাস প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে নিয়ে নাকাল করছে দেহের ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের।
কথা হলো এই প্রহরী বা নিরাপত্তারক্ষী আদতে কারা? রক্তের মধ্যেই আছে এই পাহারাদারেরা। এই রক্তের কাজকর্ম অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা নানা বাহিনীর মতোই। এর মধ্যে থাকা তিন ধরনের কোষের কাজ একেবারে নির্দিষ্ট। এই তিন ধরনের কোষ হচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। এর মধ্যে শ্বেত রক্তকণিকাকে নিখাদ সৈনিক বলা যায়। শরীরকে বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করাই তার একমাত্র ব্রত। আর লোহিত রক্তকণিকাকে বলা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেই দল, যে খাবারসহ নানা রসদ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে। শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে শরীরের জন্য অতি জরুরি কিছু উপাদান বহনের কাজটি এই রক্তকণিকা করে। বাকি থাকে অণুচক্রিকা। এই রক্তকণিকা হচ্ছে সেই জরুরি সেবা ইউনিট, যে ক্ষত সারাতে এবং শরীরের শুশ্রূষা দিতে নিযুক্ত থাকে সব সময়।
করোনাভাইরাস থেকে শুরু করে যেকোনো ভাইরাস বা জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে মুখ্য ভূমিকাটি রাখে, সে হলো শ্বেত রক্তকণিকা। এই শ্বেত রক্তকণিকারও আবার আছে নানা প্রকারভেদ। এগুলো হলো নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, ইওসিনোফিল, মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। এদের একেকজনের দক্ষতা একেক রকম। এদের লড়াইয়ের কৌশলও আলাদা। অনেকটা ওই যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সেনা সমাবেশের মতো বিষয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের তথ্যমতে, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাককে নিকেশ করার দায়িত্বটি নিউট্রোফিলের ওপর। বাইরে থেকে কোনো শত্রু শরীরে প্রবেশ করতে চাইলে শ্বেত রক্তকণিকার এই অগণিত সেনা সমাবেশকে ডিঙিয়েই যেতে হবে। এর পরেই রয়েছে লিম্ফোসাইটের প্রাচীর। এরা অ্যান্টিবডি তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ সম্ভাব্য সব ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। রয়েছে ইওসিনোফিলের মতো অভিজ্ঞ কোষেরা, যারা বিভিন্ন অণুজীব ও ক্যানসার কোষকে হত্যা করে। বাকি থাকল মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। শ্বেতকণিকায় থাকা পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুষ্কাল রয়েছে মনোসাইটের। এরা মুখ্যত ব্যাকটেরিয়া প্রতিহতে কাজ করে। আর ব্যাসোফিল মূলত সেই ঘণ্টাবাদক, যে যেকোনো বহিঃশত্রুর অণুপ্রবেশ টের পেলেই নিজের সবটা শক্তি দিয়ে সতর্ক সংকেতটি বাজায়।
তাহলে এই যে শরীর, তা এই বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা হলো কী প্রকারে? এই শরীরে ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরাও কাজ করে চেনা পৃথিবীর অন্যসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো করেই। বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকোষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্বেত রক্তকণার লিম্ফোসাইট কোষগুলোই সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। সঙ্গে মনোসাইট ও নিউট্রোফিলসের ব্যস্ততাও কম নয়। এই মূল পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে কিছু কোষ আবার বহিঃশত্রুকে একেবারে গিলে ফেলতে ভালোবাসে। এরা হলো ম্যাক্রোফাজ।
জীবাণুর সঙ্গে লড়াই–টড়াই নয়, ম্যাক্রাফাজ জীবাণুকে একেবারে গিলে ফেলে। এখানেই ক্ষান্ত হয় না তারা। জীবাণুর একটি উপাদানকে রক্তে ছড়িয়ে দেয় ম্যাক্রোফাজ, যাকে বলা হয় অ্যান্টিজেন। শরীর অ্যান্টিজেনকে বিপজ্জনক বিবেচনা করে এর বিপক্ষে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য অ্যান্টিবডিগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। আর এই সক্রিয় করার কাজটি করে বি লিম্ফোসাইট। রক্তে ছড়িয়ে পড়া অ্যান্টিজেনকে ধ্বংসের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে বি–লিম্ফোসাইট। এই কাজ যখন চলে, ঠিক তখন গোটা দেহে সাঁড়াশি অভিযান চালায় টি–লিম্ফোসাইট। এটি এরই মধ্যে আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলে।
আমরা কখন কোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কাবু হই? এর উত্তর খুব সোজা। এই বি–লিম্ফোসাইট ও টি–লিম্ফোসাইট কোষগুলো যদি অ্যান্টিজেন ও ভাইরাসের কারণে আক্রান্ত কোষগুলোকে চিনতে না পারে, তবেই আমরা কাবু হই। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে। অধিকাংশ মানুষের শরীরের সুরক্ষা প্রাচীরকে ফাঁকি দিতে পেরেছে এই নতুন করোনাভাইরাস। ফলে শরীরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা কোষগুলোকে এখন প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এই প্রশিক্ষণের কাজটি করার জন্যই আনা হচ্ছে ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিন বা টিকা কীভাবে কাজ করে?
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার জন্য একেক ধরনের ভ্যাকসিন একেকভাবে কাজ করে। তবে সব ধরনের ভ্যাকসিন একটি সাধারণ কাজ করে। সেই সাধারণ কাজটি হলো– ভ্যাকসিন শরীরে মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমরি বি–লিম্ফোাসাইট কোষ তৈরি করে রাখে। ফলে ভাইরাসটির বিপক্ষে ভবিষ্যতে কীভাবে লড়াই করতে হবে, তা শরীরের জানা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকা নেওয়ার পর শরীরের টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। ফলে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার কিছু আগে বা কিছু পরেও করোনা হতে পারে। কারণ ভ্যাকসিন শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় তখনো পায়নি। অনেক সময় প্রতিরক্ষা তৈরির সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। যেমন জ্বর হতে পারে। এটা নির্দেশ করে যে শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। তাই টিকা নেওয়ার পর গা–ব্যথা বা জ্বর হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
কত ধরনের ভ্যাকসিন?
কর্মপদ্ধতি ভেদে ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত চার ধরনের ভ্যাকসিন এসেছে। গোটা বিশ্বে করোনা টিকাগুলোর মধ্যে ভেক্টর ভ্যাকসিনই এখন সবচেয়ে বেশি অনুমোদন পেয়েছে এবং প্রয়োগও হচ্ছে।
ভেক্টর ভ্যাকসিন
এ ধরনের ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ধারণ করে। কোভিড–১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এই মডিফায়েড ভার্সনের ভাইরাসের শেলের মধ্যে থাকে। একে বলা হয় ভাইরাল ভেক্টর। সিডিসি বলছে, টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই ভাইরাল ভেক্টর আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এটি শরীরের এক–একটি কোষের কোষীয় জৈব প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং কোভিড–১৯ সৃষ্টিকারী স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন কোষটির গায়ে লেবেল আকারে যুক্ত হয়ে যায়। এই চিহ্ন দেখে শরীরের প্রতিরক্ষা কোষগুলো একে বহিঃশত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে।
এই স্মৃতি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে পেয়ে শরীরে তৈরি হয় মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষ। ফলে ভবিষ্যতে যখন স্পাইক প্রোটিনসমৃদ্ধ কোভিড–১৯ ভাইরাস আক্রমণ করে, তখন এই কোষগুলো তা প্রতিহত করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, রাশিয়ার স্পুটনিক–ভি, জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি টিকা— এ সবগুলোই ভাইরাল ভেক্টর ধরনের।
এদিকে চীনের সিনোফার্মের তৈরি সিনোভ্যাক টিকাটি মূলত মৃত ভাইরাসের সমষ্টি। শরীরে মৃত ভাইরাস ঢুকিয়ে এর তথ্যটি নিরাপত্তারক্ষীদের জানা দেওয়া হয়। ভারতের ভারত বায়োটেক কোম্পানির তৈরি কোভ্যাকসিনও মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোও আদতে ভাইরাল ভেক্টর ধরনের ভ্যাকসিন।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন
মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি তুলনামূলক বেশ নতুন। ফাইজার এবং মডার্নার তৈরি কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনই প্রথম এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন হিসেবে মানুষের শরীরে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিলে এটি কোষের মধ্যে ঢুকে চাতুরি করে শরীরকে নির্দোষ বা নিরীহ স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এই প্রোটিন কোষের গায়ে লেবেল আকারে থাকে। প্রতিরক্ষা কোষগুলো তখন একে বহিরাগত পদার্থ (ফরেন বডি) হিসেবে বিবেচনা করে এবং এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে। যেহেতু কোষটির গায়ে লেবেল আকারে প্রোটিনগুলো থাকে, তাই টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট সংশ্লিষ্ট কোষটিকে ধ্বংস করে। এই কার্যক্রমের স্মৃতি আবার মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষে সংরক্ষিত থাকে, যা ভাইরাসটির পরবর্তী সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
ফাইজার–বায়োএনটেক, মডার্না এবং বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গটেক এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন।
প্রোটিন সাব–ইউনিট ভ্যাকসিন
এই ভ্যাকসিন ভাইরাসের সেই প্রোটিন দিয়ে তৈরি, যা কোনো ক্ষতি করে না। টিকার মধ্য দিয়ে শরীরে এই প্রোটিন ঢুকে যায়। তখন শরীর সিদ্ধান্ত নেয় এই প্রোটিন শরীরে থাকা যাবে না। ফলে শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স হচ্ছে প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ভ্যাকসিন। সানোফি–গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের যৌথ উদ্যোগে আরেকটি প্রোটিনভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে।
তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
নিজেকে ও অন্যকে কোভিড–১৯ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ভ্যাকসিনেশন অনেকগুলো উপায়ের একটি। টিকা নিলেও ভিড় এড়ানো, নিয়মিত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, এই কোভিড–১৯ বিষয়টি এখনো নতুন। মানুষ গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই শিখছে এই রোগটির বিষয়ে। তাই টিকা নেওয়ার পরও সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিভিন্ন নতুন ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কাজ করে কি?
আরএনএ কোড, ভাইরাসের জেনেটিক কোড, প্রোটিনের কোড— এই পুরো ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ভাইরাস ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের জেনেটিক কোড বা সিকোয়েন্সে পরিবর্তন হয়। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়া তখন ব্যাহত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভাইরাসটির বিপক্ষে টিকার কার্যকারিতা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি একেবারেই অকার্যকর হয়ে পড়ে।

ঢাকা: দেহতাত্ত্বিকেরা বলেন—‘যা নেই ভাণ্ডে, তা নেই ব্রহ্মাণ্ডে।’ কথাটা একটু হেঁয়ালিপূর্ণ নিশ্চিতভাবে। কিন্তু এই হেঁয়ালির জটগুলো খুলতে শুরু করলেই নড়চড়ে বসতে হয়। এই যেমন আজকের দিনের সবচেয়ে আলোচিত করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন, তার যে কর্মপন্থা, তার মূল নির্দেশনা আদতে আছে দেহের ভেতরেই।
মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে মূল দেহ–দুর্গে। শুধু ঢুকেই ক্ষান্ত হয়নি সে। অতি ধুরন্ধর এই ভাইরাস প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে নিয়ে নাকাল করছে দেহের ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের।
কথা হলো এই প্রহরী বা নিরাপত্তারক্ষী আদতে কারা? রক্তের মধ্যেই আছে এই পাহারাদারেরা। এই রক্তের কাজকর্ম অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা নানা বাহিনীর মতোই। এর মধ্যে থাকা তিন ধরনের কোষের কাজ একেবারে নির্দিষ্ট। এই তিন ধরনের কোষ হচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। এর মধ্যে শ্বেত রক্তকণিকাকে নিখাদ সৈনিক বলা যায়। শরীরকে বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করাই তার একমাত্র ব্রত। আর লোহিত রক্তকণিকাকে বলা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেই দল, যে খাবারসহ নানা রসদ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে। শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে শরীরের জন্য অতি জরুরি কিছু উপাদান বহনের কাজটি এই রক্তকণিকা করে। বাকি থাকে অণুচক্রিকা। এই রক্তকণিকা হচ্ছে সেই জরুরি সেবা ইউনিট, যে ক্ষত সারাতে এবং শরীরের শুশ্রূষা দিতে নিযুক্ত থাকে সব সময়।
করোনাভাইরাস থেকে শুরু করে যেকোনো ভাইরাস বা জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে মুখ্য ভূমিকাটি রাখে, সে হলো শ্বেত রক্তকণিকা। এই শ্বেত রক্তকণিকারও আবার আছে নানা প্রকারভেদ। এগুলো হলো নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, ইওসিনোফিল, মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। এদের একেকজনের দক্ষতা একেক রকম। এদের লড়াইয়ের কৌশলও আলাদা। অনেকটা ওই যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সেনা সমাবেশের মতো বিষয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের তথ্যমতে, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাককে নিকেশ করার দায়িত্বটি নিউট্রোফিলের ওপর। বাইরে থেকে কোনো শত্রু শরীরে প্রবেশ করতে চাইলে শ্বেত রক্তকণিকার এই অগণিত সেনা সমাবেশকে ডিঙিয়েই যেতে হবে। এর পরেই রয়েছে লিম্ফোসাইটের প্রাচীর। এরা অ্যান্টিবডি তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ সম্ভাব্য সব ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। রয়েছে ইওসিনোফিলের মতো অভিজ্ঞ কোষেরা, যারা বিভিন্ন অণুজীব ও ক্যানসার কোষকে হত্যা করে। বাকি থাকল মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। শ্বেতকণিকায় থাকা পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুষ্কাল রয়েছে মনোসাইটের। এরা মুখ্যত ব্যাকটেরিয়া প্রতিহতে কাজ করে। আর ব্যাসোফিল মূলত সেই ঘণ্টাবাদক, যে যেকোনো বহিঃশত্রুর অণুপ্রবেশ টের পেলেই নিজের সবটা শক্তি দিয়ে সতর্ক সংকেতটি বাজায়।
তাহলে এই যে শরীর, তা এই বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা হলো কী প্রকারে? এই শরীরে ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরাও কাজ করে চেনা পৃথিবীর অন্যসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো করেই। বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকোষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্বেত রক্তকণার লিম্ফোসাইট কোষগুলোই সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। সঙ্গে মনোসাইট ও নিউট্রোফিলসের ব্যস্ততাও কম নয়। এই মূল পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে কিছু কোষ আবার বহিঃশত্রুকে একেবারে গিলে ফেলতে ভালোবাসে। এরা হলো ম্যাক্রোফাজ।
জীবাণুর সঙ্গে লড়াই–টড়াই নয়, ম্যাক্রাফাজ জীবাণুকে একেবারে গিলে ফেলে। এখানেই ক্ষান্ত হয় না তারা। জীবাণুর একটি উপাদানকে রক্তে ছড়িয়ে দেয় ম্যাক্রোফাজ, যাকে বলা হয় অ্যান্টিজেন। শরীর অ্যান্টিজেনকে বিপজ্জনক বিবেচনা করে এর বিপক্ষে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য অ্যান্টিবডিগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। আর এই সক্রিয় করার কাজটি করে বি লিম্ফোসাইট। রক্তে ছড়িয়ে পড়া অ্যান্টিজেনকে ধ্বংসের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে বি–লিম্ফোসাইট। এই কাজ যখন চলে, ঠিক তখন গোটা দেহে সাঁড়াশি অভিযান চালায় টি–লিম্ফোসাইট। এটি এরই মধ্যে আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলে।
আমরা কখন কোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কাবু হই? এর উত্তর খুব সোজা। এই বি–লিম্ফোসাইট ও টি–লিম্ফোসাইট কোষগুলো যদি অ্যান্টিজেন ও ভাইরাসের কারণে আক্রান্ত কোষগুলোকে চিনতে না পারে, তবেই আমরা কাবু হই। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে। অধিকাংশ মানুষের শরীরের সুরক্ষা প্রাচীরকে ফাঁকি দিতে পেরেছে এই নতুন করোনাভাইরাস। ফলে শরীরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা কোষগুলোকে এখন প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এই প্রশিক্ষণের কাজটি করার জন্যই আনা হচ্ছে ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিন বা টিকা কীভাবে কাজ করে?
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার জন্য একেক ধরনের ভ্যাকসিন একেকভাবে কাজ করে। তবে সব ধরনের ভ্যাকসিন একটি সাধারণ কাজ করে। সেই সাধারণ কাজটি হলো– ভ্যাকসিন শরীরে মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমরি বি–লিম্ফোাসাইট কোষ তৈরি করে রাখে। ফলে ভাইরাসটির বিপক্ষে ভবিষ্যতে কীভাবে লড়াই করতে হবে, তা শরীরের জানা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকা নেওয়ার পর শরীরের টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। ফলে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার কিছু আগে বা কিছু পরেও করোনা হতে পারে। কারণ ভ্যাকসিন শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় তখনো পায়নি। অনেক সময় প্রতিরক্ষা তৈরির সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। যেমন জ্বর হতে পারে। এটা নির্দেশ করে যে শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। তাই টিকা নেওয়ার পর গা–ব্যথা বা জ্বর হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
কত ধরনের ভ্যাকসিন?
কর্মপদ্ধতি ভেদে ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত চার ধরনের ভ্যাকসিন এসেছে। গোটা বিশ্বে করোনা টিকাগুলোর মধ্যে ভেক্টর ভ্যাকসিনই এখন সবচেয়ে বেশি অনুমোদন পেয়েছে এবং প্রয়োগও হচ্ছে।
ভেক্টর ভ্যাকসিন
এ ধরনের ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ধারণ করে। কোভিড–১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এই মডিফায়েড ভার্সনের ভাইরাসের শেলের মধ্যে থাকে। একে বলা হয় ভাইরাল ভেক্টর। সিডিসি বলছে, টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই ভাইরাল ভেক্টর আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এটি শরীরের এক–একটি কোষের কোষীয় জৈব প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং কোভিড–১৯ সৃষ্টিকারী স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন কোষটির গায়ে লেবেল আকারে যুক্ত হয়ে যায়। এই চিহ্ন দেখে শরীরের প্রতিরক্ষা কোষগুলো একে বহিঃশত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে।
এই স্মৃতি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে পেয়ে শরীরে তৈরি হয় মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষ। ফলে ভবিষ্যতে যখন স্পাইক প্রোটিনসমৃদ্ধ কোভিড–১৯ ভাইরাস আক্রমণ করে, তখন এই কোষগুলো তা প্রতিহত করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, রাশিয়ার স্পুটনিক–ভি, জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি টিকা— এ সবগুলোই ভাইরাল ভেক্টর ধরনের।
এদিকে চীনের সিনোফার্মের তৈরি সিনোভ্যাক টিকাটি মূলত মৃত ভাইরাসের সমষ্টি। শরীরে মৃত ভাইরাস ঢুকিয়ে এর তথ্যটি নিরাপত্তারক্ষীদের জানা দেওয়া হয়। ভারতের ভারত বায়োটেক কোম্পানির তৈরি কোভ্যাকসিনও মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোও আদতে ভাইরাল ভেক্টর ধরনের ভ্যাকসিন।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন
মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি তুলনামূলক বেশ নতুন। ফাইজার এবং মডার্নার তৈরি কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনই প্রথম এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন হিসেবে মানুষের শরীরে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিলে এটি কোষের মধ্যে ঢুকে চাতুরি করে শরীরকে নির্দোষ বা নিরীহ স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এই প্রোটিন কোষের গায়ে লেবেল আকারে থাকে। প্রতিরক্ষা কোষগুলো তখন একে বহিরাগত পদার্থ (ফরেন বডি) হিসেবে বিবেচনা করে এবং এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে। যেহেতু কোষটির গায়ে লেবেল আকারে প্রোটিনগুলো থাকে, তাই টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট সংশ্লিষ্ট কোষটিকে ধ্বংস করে। এই কার্যক্রমের স্মৃতি আবার মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষে সংরক্ষিত থাকে, যা ভাইরাসটির পরবর্তী সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
ফাইজার–বায়োএনটেক, মডার্না এবং বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গটেক এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন।
প্রোটিন সাব–ইউনিট ভ্যাকসিন
এই ভ্যাকসিন ভাইরাসের সেই প্রোটিন দিয়ে তৈরি, যা কোনো ক্ষতি করে না। টিকার মধ্য দিয়ে শরীরে এই প্রোটিন ঢুকে যায়। তখন শরীর সিদ্ধান্ত নেয় এই প্রোটিন শরীরে থাকা যাবে না। ফলে শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স হচ্ছে প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ভ্যাকসিন। সানোফি–গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের যৌথ উদ্যোগে আরেকটি প্রোটিনভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে।
তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
নিজেকে ও অন্যকে কোভিড–১৯ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ভ্যাকসিনেশন অনেকগুলো উপায়ের একটি। টিকা নিলেও ভিড় এড়ানো, নিয়মিত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, এই কোভিড–১৯ বিষয়টি এখনো নতুন। মানুষ গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই শিখছে এই রোগটির বিষয়ে। তাই টিকা নেওয়ার পরও সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিভিন্ন নতুন ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কাজ করে কি?
আরএনএ কোড, ভাইরাসের জেনেটিক কোড, প্রোটিনের কোড— এই পুরো ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ভাইরাস ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের জেনেটিক কোড বা সিকোয়েন্সে পরিবর্তন হয়। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়া তখন ব্যাহত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভাইরাসটির বিপক্ষে টিকার কার্যকারিতা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি একেবারেই অকার্যকর হয়ে পড়ে।
নাসিম আহমেদ

ঢাকা: দেহতাত্ত্বিকেরা বলেন—‘যা নেই ভাণ্ডে, তা নেই ব্রহ্মাণ্ডে।’ কথাটা একটু হেঁয়ালিপূর্ণ নিশ্চিতভাবে। কিন্তু এই হেঁয়ালির জটগুলো খুলতে শুরু করলেই নড়চড়ে বসতে হয়। এই যেমন আজকের দিনের সবচেয়ে আলোচিত করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন, তার যে কর্মপন্থা, তার মূল নির্দেশনা আদতে আছে দেহের ভেতরেই।
মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে মূল দেহ–দুর্গে। শুধু ঢুকেই ক্ষান্ত হয়নি সে। অতি ধুরন্ধর এই ভাইরাস প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে নিয়ে নাকাল করছে দেহের ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের।
কথা হলো এই প্রহরী বা নিরাপত্তারক্ষী আদতে কারা? রক্তের মধ্যেই আছে এই পাহারাদারেরা। এই রক্তের কাজকর্ম অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা নানা বাহিনীর মতোই। এর মধ্যে থাকা তিন ধরনের কোষের কাজ একেবারে নির্দিষ্ট। এই তিন ধরনের কোষ হচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। এর মধ্যে শ্বেত রক্তকণিকাকে নিখাদ সৈনিক বলা যায়। শরীরকে বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করাই তার একমাত্র ব্রত। আর লোহিত রক্তকণিকাকে বলা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেই দল, যে খাবারসহ নানা রসদ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে। শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে শরীরের জন্য অতি জরুরি কিছু উপাদান বহনের কাজটি এই রক্তকণিকা করে। বাকি থাকে অণুচক্রিকা। এই রক্তকণিকা হচ্ছে সেই জরুরি সেবা ইউনিট, যে ক্ষত সারাতে এবং শরীরের শুশ্রূষা দিতে নিযুক্ত থাকে সব সময়।
করোনাভাইরাস থেকে শুরু করে যেকোনো ভাইরাস বা জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে মুখ্য ভূমিকাটি রাখে, সে হলো শ্বেত রক্তকণিকা। এই শ্বেত রক্তকণিকারও আবার আছে নানা প্রকারভেদ। এগুলো হলো নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, ইওসিনোফিল, মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। এদের একেকজনের দক্ষতা একেক রকম। এদের লড়াইয়ের কৌশলও আলাদা। অনেকটা ওই যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সেনা সমাবেশের মতো বিষয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের তথ্যমতে, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাককে নিকেশ করার দায়িত্বটি নিউট্রোফিলের ওপর। বাইরে থেকে কোনো শত্রু শরীরে প্রবেশ করতে চাইলে শ্বেত রক্তকণিকার এই অগণিত সেনা সমাবেশকে ডিঙিয়েই যেতে হবে। এর পরেই রয়েছে লিম্ফোসাইটের প্রাচীর। এরা অ্যান্টিবডি তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ সম্ভাব্য সব ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। রয়েছে ইওসিনোফিলের মতো অভিজ্ঞ কোষেরা, যারা বিভিন্ন অণুজীব ও ক্যানসার কোষকে হত্যা করে। বাকি থাকল মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। শ্বেতকণিকায় থাকা পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুষ্কাল রয়েছে মনোসাইটের। এরা মুখ্যত ব্যাকটেরিয়া প্রতিহতে কাজ করে। আর ব্যাসোফিল মূলত সেই ঘণ্টাবাদক, যে যেকোনো বহিঃশত্রুর অণুপ্রবেশ টের পেলেই নিজের সবটা শক্তি দিয়ে সতর্ক সংকেতটি বাজায়।
তাহলে এই যে শরীর, তা এই বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা হলো কী প্রকারে? এই শরীরে ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরাও কাজ করে চেনা পৃথিবীর অন্যসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো করেই। বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকোষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্বেত রক্তকণার লিম্ফোসাইট কোষগুলোই সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। সঙ্গে মনোসাইট ও নিউট্রোফিলসের ব্যস্ততাও কম নয়। এই মূল পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে কিছু কোষ আবার বহিঃশত্রুকে একেবারে গিলে ফেলতে ভালোবাসে। এরা হলো ম্যাক্রোফাজ।
জীবাণুর সঙ্গে লড়াই–টড়াই নয়, ম্যাক্রাফাজ জীবাণুকে একেবারে গিলে ফেলে। এখানেই ক্ষান্ত হয় না তারা। জীবাণুর একটি উপাদানকে রক্তে ছড়িয়ে দেয় ম্যাক্রোফাজ, যাকে বলা হয় অ্যান্টিজেন। শরীর অ্যান্টিজেনকে বিপজ্জনক বিবেচনা করে এর বিপক্ষে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য অ্যান্টিবডিগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। আর এই সক্রিয় করার কাজটি করে বি লিম্ফোসাইট। রক্তে ছড়িয়ে পড়া অ্যান্টিজেনকে ধ্বংসের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে বি–লিম্ফোসাইট। এই কাজ যখন চলে, ঠিক তখন গোটা দেহে সাঁড়াশি অভিযান চালায় টি–লিম্ফোসাইট। এটি এরই মধ্যে আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলে।
আমরা কখন কোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কাবু হই? এর উত্তর খুব সোজা। এই বি–লিম্ফোসাইট ও টি–লিম্ফোসাইট কোষগুলো যদি অ্যান্টিজেন ও ভাইরাসের কারণে আক্রান্ত কোষগুলোকে চিনতে না পারে, তবেই আমরা কাবু হই। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে। অধিকাংশ মানুষের শরীরের সুরক্ষা প্রাচীরকে ফাঁকি দিতে পেরেছে এই নতুন করোনাভাইরাস। ফলে শরীরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা কোষগুলোকে এখন প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এই প্রশিক্ষণের কাজটি করার জন্যই আনা হচ্ছে ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিন বা টিকা কীভাবে কাজ করে?
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার জন্য একেক ধরনের ভ্যাকসিন একেকভাবে কাজ করে। তবে সব ধরনের ভ্যাকসিন একটি সাধারণ কাজ করে। সেই সাধারণ কাজটি হলো– ভ্যাকসিন শরীরে মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমরি বি–লিম্ফোাসাইট কোষ তৈরি করে রাখে। ফলে ভাইরাসটির বিপক্ষে ভবিষ্যতে কীভাবে লড়াই করতে হবে, তা শরীরের জানা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকা নেওয়ার পর শরীরের টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। ফলে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার কিছু আগে বা কিছু পরেও করোনা হতে পারে। কারণ ভ্যাকসিন শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় তখনো পায়নি। অনেক সময় প্রতিরক্ষা তৈরির সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। যেমন জ্বর হতে পারে। এটা নির্দেশ করে যে শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। তাই টিকা নেওয়ার পর গা–ব্যথা বা জ্বর হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
কত ধরনের ভ্যাকসিন?
কর্মপদ্ধতি ভেদে ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত চার ধরনের ভ্যাকসিন এসেছে। গোটা বিশ্বে করোনা টিকাগুলোর মধ্যে ভেক্টর ভ্যাকসিনই এখন সবচেয়ে বেশি অনুমোদন পেয়েছে এবং প্রয়োগও হচ্ছে।
ভেক্টর ভ্যাকসিন
এ ধরনের ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ধারণ করে। কোভিড–১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এই মডিফায়েড ভার্সনের ভাইরাসের শেলের মধ্যে থাকে। একে বলা হয় ভাইরাল ভেক্টর। সিডিসি বলছে, টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই ভাইরাল ভেক্টর আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এটি শরীরের এক–একটি কোষের কোষীয় জৈব প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং কোভিড–১৯ সৃষ্টিকারী স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন কোষটির গায়ে লেবেল আকারে যুক্ত হয়ে যায়। এই চিহ্ন দেখে শরীরের প্রতিরক্ষা কোষগুলো একে বহিঃশত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে।
এই স্মৃতি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে পেয়ে শরীরে তৈরি হয় মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষ। ফলে ভবিষ্যতে যখন স্পাইক প্রোটিনসমৃদ্ধ কোভিড–১৯ ভাইরাস আক্রমণ করে, তখন এই কোষগুলো তা প্রতিহত করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, রাশিয়ার স্পুটনিক–ভি, জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি টিকা— এ সবগুলোই ভাইরাল ভেক্টর ধরনের।
এদিকে চীনের সিনোফার্মের তৈরি সিনোভ্যাক টিকাটি মূলত মৃত ভাইরাসের সমষ্টি। শরীরে মৃত ভাইরাস ঢুকিয়ে এর তথ্যটি নিরাপত্তারক্ষীদের জানা দেওয়া হয়। ভারতের ভারত বায়োটেক কোম্পানির তৈরি কোভ্যাকসিনও মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোও আদতে ভাইরাল ভেক্টর ধরনের ভ্যাকসিন।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন
মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি তুলনামূলক বেশ নতুন। ফাইজার এবং মডার্নার তৈরি কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনই প্রথম এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন হিসেবে মানুষের শরীরে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিলে এটি কোষের মধ্যে ঢুকে চাতুরি করে শরীরকে নির্দোষ বা নিরীহ স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এই প্রোটিন কোষের গায়ে লেবেল আকারে থাকে। প্রতিরক্ষা কোষগুলো তখন একে বহিরাগত পদার্থ (ফরেন বডি) হিসেবে বিবেচনা করে এবং এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে। যেহেতু কোষটির গায়ে লেবেল আকারে প্রোটিনগুলো থাকে, তাই টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট সংশ্লিষ্ট কোষটিকে ধ্বংস করে। এই কার্যক্রমের স্মৃতি আবার মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষে সংরক্ষিত থাকে, যা ভাইরাসটির পরবর্তী সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
ফাইজার–বায়োএনটেক, মডার্না এবং বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গটেক এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন।
প্রোটিন সাব–ইউনিট ভ্যাকসিন
এই ভ্যাকসিন ভাইরাসের সেই প্রোটিন দিয়ে তৈরি, যা কোনো ক্ষতি করে না। টিকার মধ্য দিয়ে শরীরে এই প্রোটিন ঢুকে যায়। তখন শরীর সিদ্ধান্ত নেয় এই প্রোটিন শরীরে থাকা যাবে না। ফলে শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স হচ্ছে প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ভ্যাকসিন। সানোফি–গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের যৌথ উদ্যোগে আরেকটি প্রোটিনভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে।
তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
নিজেকে ও অন্যকে কোভিড–১৯ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ভ্যাকসিনেশন অনেকগুলো উপায়ের একটি। টিকা নিলেও ভিড় এড়ানো, নিয়মিত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, এই কোভিড–১৯ বিষয়টি এখনো নতুন। মানুষ গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই শিখছে এই রোগটির বিষয়ে। তাই টিকা নেওয়ার পরও সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিভিন্ন নতুন ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কাজ করে কি?
আরএনএ কোড, ভাইরাসের জেনেটিক কোড, প্রোটিনের কোড— এই পুরো ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ভাইরাস ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের জেনেটিক কোড বা সিকোয়েন্সে পরিবর্তন হয়। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়া তখন ব্যাহত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভাইরাসটির বিপক্ষে টিকার কার্যকারিতা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি একেবারেই অকার্যকর হয়ে পড়ে।

ঢাকা: দেহতাত্ত্বিকেরা বলেন—‘যা নেই ভাণ্ডে, তা নেই ব্রহ্মাণ্ডে।’ কথাটা একটু হেঁয়ালিপূর্ণ নিশ্চিতভাবে। কিন্তু এই হেঁয়ালির জটগুলো খুলতে শুরু করলেই নড়চড়ে বসতে হয়। এই যেমন আজকের দিনের সবচেয়ে আলোচিত করোনাভাইরাসের টিকা বা ভ্যাকসিন, তার যে কর্মপন্থা, তার মূল নির্দেশনা আদতে আছে দেহের ভেতরেই।
মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে মূল দেহ–দুর্গে। শুধু ঢুকেই ক্ষান্ত হয়নি সে। অতি ধুরন্ধর এই ভাইরাস প্রতিনিয়ত নিজেকে বদলে নিয়ে নাকাল করছে দেহের ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের।
কথা হলো এই প্রহরী বা নিরাপত্তারক্ষী আদতে কারা? রক্তের মধ্যেই আছে এই পাহারাদারেরা। এই রক্তের কাজকর্ম অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা নানা বাহিনীর মতোই। এর মধ্যে থাকা তিন ধরনের কোষের কাজ একেবারে নির্দিষ্ট। এই তিন ধরনের কোষ হচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা, লোহিত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। এর মধ্যে শ্বেত রক্তকণিকাকে নিখাদ সৈনিক বলা যায়। শরীরকে বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করাই তার একমাত্র ব্রত। আর লোহিত রক্তকণিকাকে বলা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সেই দল, যে খাবারসহ নানা রসদ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করে। শরীরের কোষে কোষে অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে শরীরের জন্য অতি জরুরি কিছু উপাদান বহনের কাজটি এই রক্তকণিকা করে। বাকি থাকে অণুচক্রিকা। এই রক্তকণিকা হচ্ছে সেই জরুরি সেবা ইউনিট, যে ক্ষত সারাতে এবং শরীরের শুশ্রূষা দিতে নিযুক্ত থাকে সব সময়।
করোনাভাইরাস থেকে শুরু করে যেকোনো ভাইরাস বা জীবাণু প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যে মুখ্য ভূমিকাটি রাখে, সে হলো শ্বেত রক্তকণিকা। এই শ্বেত রক্তকণিকারও আবার আছে নানা প্রকারভেদ। এগুলো হলো নিউট্রোফিল, লিম্ফোসাইট, ইওসিনোফিল, মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। এদের একেকজনের দক্ষতা একেক রকম। এদের লড়াইয়ের কৌশলও আলাদা। অনেকটা ওই যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সেনা সমাবেশের মতো বিষয়।
স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের তথ্যমতে, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাককে নিকেশ করার দায়িত্বটি নিউট্রোফিলের ওপর। বাইরে থেকে কোনো শত্রু শরীরে প্রবেশ করতে চাইলে শ্বেত রক্তকণিকার এই অগণিত সেনা সমাবেশকে ডিঙিয়েই যেতে হবে। এর পরেই রয়েছে লিম্ফোসাইটের প্রাচীর। এরা অ্যান্টিবডি তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ সম্ভাব্য সব ক্ষতিকর কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। রয়েছে ইওসিনোফিলের মতো অভিজ্ঞ কোষেরা, যারা বিভিন্ন অণুজীব ও ক্যানসার কোষকে হত্যা করে। বাকি থাকল মনোসাইট ও ব্যাসোফিল। শ্বেতকণিকায় থাকা পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ আয়ুষ্কাল রয়েছে মনোসাইটের। এরা মুখ্যত ব্যাকটেরিয়া প্রতিহতে কাজ করে। আর ব্যাসোফিল মূলত সেই ঘণ্টাবাদক, যে যেকোনো বহিঃশত্রুর অণুপ্রবেশ টের পেলেই নিজের সবটা শক্তি দিয়ে সতর্ক সংকেতটি বাজায়।
তাহলে এই যে শরীর, তা এই বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা হলো কী প্রকারে? এই শরীরে ভেতরে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরাও কাজ করে চেনা পৃথিবীর অন্যসব নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো করেই। বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্তকোষ বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্বেত রক্তকণার লিম্ফোসাইট কোষগুলোই সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। সঙ্গে মনোসাইট ও নিউট্রোফিলসের ব্যস্ততাও কম নয়। এই মূল পাঁচ ধরনের কোষের মধ্যে কিছু কোষ আবার বহিঃশত্রুকে একেবারে গিলে ফেলতে ভালোবাসে। এরা হলো ম্যাক্রোফাজ।
জীবাণুর সঙ্গে লড়াই–টড়াই নয়, ম্যাক্রাফাজ জীবাণুকে একেবারে গিলে ফেলে। এখানেই ক্ষান্ত হয় না তারা। জীবাণুর একটি উপাদানকে রক্তে ছড়িয়ে দেয় ম্যাক্রোফাজ, যাকে বলা হয় অ্যান্টিজেন। শরীর অ্যান্টিজেনকে বিপজ্জনক বিবেচনা করে এর বিপক্ষে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য অ্যান্টিবডিগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। আর এই সক্রিয় করার কাজটি করে বি লিম্ফোসাইট। রক্তে ছড়িয়ে পড়া অ্যান্টিজেনকে ধ্বংসের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে বি–লিম্ফোসাইট। এই কাজ যখন চলে, ঠিক তখন গোটা দেহে সাঁড়াশি অভিযান চালায় টি–লিম্ফোসাইট। এটি এরই মধ্যে আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলে।
আমরা কখন কোনো একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে কাবু হই? এর উত্তর খুব সোজা। এই বি–লিম্ফোসাইট ও টি–লিম্ফোসাইট কোষগুলো যদি অ্যান্টিজেন ও ভাইরাসের কারণে আক্রান্ত কোষগুলোকে চিনতে না পারে, তবেই আমরা কাবু হই। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছে। অধিকাংশ মানুষের শরীরের সুরক্ষা প্রাচীরকে ফাঁকি দিতে পেরেছে এই নতুন করোনাভাইরাস। ফলে শরীরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা কোষগুলোকে এখন প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। এই প্রশিক্ষণের কাজটি করার জন্যই আনা হচ্ছে ভ্যাকসিন।
ভ্যাকসিন বা টিকা কীভাবে কাজ করে?
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার জন্য একেক ধরনের ভ্যাকসিন একেকভাবে কাজ করে। তবে সব ধরনের ভ্যাকসিন একটি সাধারণ কাজ করে। সেই সাধারণ কাজটি হলো– ভ্যাকসিন শরীরে মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমরি বি–লিম্ফোাসাইট কোষ তৈরি করে রাখে। ফলে ভাইরাসটির বিপক্ষে ভবিষ্যতে কীভাবে লড়াই করতে হবে, তা শরীরের জানা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টিকা নেওয়ার পর শরীরের টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে। ফলে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার কিছু আগে বা কিছু পরেও করোনা হতে পারে। কারণ ভ্যাকসিন শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় তখনো পায়নি। অনেক সময় প্রতিরক্ষা তৈরির সময় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। যেমন জ্বর হতে পারে। এটা নির্দেশ করে যে শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে। তাই টিকা নেওয়ার পর গা–ব্যথা বা জ্বর হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
কত ধরনের ভ্যাকসিন?
কর্মপদ্ধতি ভেদে ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত চার ধরনের ভ্যাকসিন এসেছে। গোটা বিশ্বে করোনা টিকাগুলোর মধ্যে ভেক্টর ভ্যাকসিনই এখন সবচেয়ে বেশি অনুমোদন পেয়েছে এবং প্রয়োগও হচ্ছে।
ভেক্টর ভ্যাকসিন
এ ধরনের ভ্যাকসিন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের রূপান্তরিত ধরন ধারণ করে। কোভিড–১৯ রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল এই মডিফায়েড ভার্সনের ভাইরাসের শেলের মধ্যে থাকে। একে বলা হয় ভাইরাল ভেক্টর। সিডিসি বলছে, টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই ভাইরাল ভেক্টর আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এটি শরীরের এক–একটি কোষের কোষীয় জৈব প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং কোভিড–১৯ সৃষ্টিকারী স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন কোষটির গায়ে লেবেল আকারে যুক্ত হয়ে যায়। এই চিহ্ন দেখে শরীরের প্রতিরক্ষা কোষগুলো একে বহিঃশত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে।
এই স্মৃতি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে পেয়ে শরীরে তৈরি হয় মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষ। ফলে ভবিষ্যতে যখন স্পাইক প্রোটিনসমৃদ্ধ কোভিড–১৯ ভাইরাস আক্রমণ করে, তখন এই কোষগুলো তা প্রতিহত করে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, রাশিয়ার স্পুটনিক–ভি, জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি টিকা— এ সবগুলোই ভাইরাল ভেক্টর ধরনের।
এদিকে চীনের সিনোফার্মের তৈরি সিনোভ্যাক টিকাটি মূলত মৃত ভাইরাসের সমষ্টি। শরীরে মৃত ভাইরাস ঢুকিয়ে এর তথ্যটি নিরাপত্তারক্ষীদের জানা দেওয়া হয়। ভারতের ভারত বায়োটেক কোম্পানির তৈরি কোভ্যাকসিনও মৃত ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোও আদতে ভাইরাল ভেক্টর ধরনের ভ্যাকসিন।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন
মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রযুক্তি তুলনামূলক বেশ নতুন। ফাইজার এবং মডার্নার তৈরি কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনই প্রথম এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন হিসেবে মানুষের শরীরে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে।
এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিলে এটি কোষের মধ্যে ঢুকে চাতুরি করে শরীরকে নির্দোষ বা নিরীহ স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে উৎসাহিত করে। এই প্রোটিন কোষের গায়ে লেবেল আকারে থাকে। প্রতিরক্ষা কোষগুলো তখন একে বহিরাগত পদার্থ (ফরেন বডি) হিসেবে বিবেচনা করে এবং এই প্রোটিনগুলোকে ধ্বংসের জন্য শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট তৈরি করে। যেহেতু কোষটির গায়ে লেবেল আকারে প্রোটিনগুলো থাকে, তাই টি–লিম্ফোসাইট ও বি–লিম্ফোসাইট সংশ্লিষ্ট কোষটিকে ধ্বংস করে। এই কার্যক্রমের স্মৃতি আবার মেমোরি টি–লিম্ফোসাইট ও মেমোরি বি–লিম্ফোসাইট কোষে সংরক্ষিত থাকে, যা ভাইরাসটির পরবর্তী সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
ফাইজার–বায়োএনটেক, মডার্না এবং বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গটেক এমআরএনএ প্রযুক্তির ভ্যাকসিন।
প্রোটিন সাব–ইউনিট ভ্যাকসিন
এই ভ্যাকসিন ভাইরাসের সেই প্রোটিন দিয়ে তৈরি, যা কোনো ক্ষতি করে না। টিকার মধ্য দিয়ে শরীরে এই প্রোটিন ঢুকে যায়। তখন শরীর সিদ্ধান্ত নেয় এই প্রোটিন শরীরে থাকা যাবে না। ফলে শরীর টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই টি–লিম্ফোসাইট ও অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতিরক্ষা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের নোভাভ্যাক্স হচ্ছে প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ভ্যাকসিন। সানোফি–গ্লাক্সোস্মিথক্লাইনের যৌথ উদ্যোগে আরেকটি প্রোটিনভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে।
তবুও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে
নিজেকে ও অন্যকে কোভিড–১৯ থেকে সুরক্ষিত রাখতে ভ্যাকসিনেশন অনেকগুলো উপায়ের একটি। টিকা নিলেও ভিড় এড়ানো, নিয়মিত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ, এই কোভিড–১৯ বিষয়টি এখনো নতুন। মানুষ গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই শিখছে এই রোগটির বিষয়ে। তাই টিকা নেওয়ার পরও সব ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিভিন্ন নতুন ধরনের (ভ্যারিয়েন্ট) বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কাজ করে কি?
আরএনএ কোড, ভাইরাসের জেনেটিক কোড, প্রোটিনের কোড— এই পুরো ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়ায় সম্মিলিতভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলে ভাইরাস ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের জেনেটিক কোড বা সিকোয়েন্সে পরিবর্তন হয়। ফলে এই পুরো প্রক্রিয়া তখন ব্যাহত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভাইরাসটির বিপক্ষে টিকার কার্যকারিতা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনটি একেবারেই অকার্যকর হয়ে পড়ে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভিডিও তৈরির নতুন টুল ‘সোরা ২’ প্রকাশের পর থেকেই প্রযুক্তি জগতে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাত্র কয়েকটি লাইনের টেক্সট লিখেই বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম এই অ্যাপটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
১ ঘণ্টা আগে
অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেনাবেচা বন্ধ করতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
৫ ঘণ্টা আগে
একসময় বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোই ছিল ভারতের আউটসোর্সিং আইটি হাব। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এখন তাদের কাজ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং অফিসের খরচ তুলনামূলক কম।
৮ ঘণ্টা আগে
অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধ চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভিডিও তৈরির নতুন টুল ‘সোরা ২’ প্রকাশের পর থেকেই প্রযুক্তি জগতে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাত্র কয়েকটি লাইনের টেক্সট লিখেই বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম এই অ্যাপটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এর পাশাপাশি বাড়ছে সমালোচনার ঝড়—বিশেষ করে, কপিরাইট লঙ্ঘন, ভুয়া ভিডিও ছড়ানো ও নৈতিকতার প্রশ্নে ওপেনএআইকে এখন কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে এই টুল।
২০২৪ সালের সীমিত সংস্করণের পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ‘সোরা ২’ উন্মোচন করে ওপেনএআই। নতুন সংস্করণে ব্যবহারকারীরা নিজেদের মুখের ছবি ও কণ্ঠের রেকর্ড আপলোড করে পছন্দের যে কোনো দৃশ্যে নিজেদের উপস্থিত করতে পারেন। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতা যেমন সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয়, তেমনি এটি অপব্যবহারের আশঙ্কাও বাড়িয়েছে।
অল্প সময়েই দেখা গেছে, ‘সোরা ২’ ব্যবহার করে কেউ কেউ ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে নিয়ে বর্ণবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও তৈরি করেছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাঁর পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে ওপেনএআইয়ের কাছে দাবি জানায়। একইভাবে, ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এর অভিনেতা ব্রায়ান ক্র্যানস্টন অভিযোগ করেছেন, তাঁর মুখ ও কণ্ঠ ব্যবহার করে অনুমতি ছাড়াই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।
বিতর্ক বাড়তে থাকায় ওপেনএআই দ্রুত নীতি পরিবর্তন করে। শুরুতে সংস্থাটি কপিরাইটকৃত কনটেন্ট ব্যবহার করতে দিত, যদি কপিরাইটধারীরা আপত্তি না জানায়। কিন্তু সমালোচনার মুখে এখন সেই নীতি বদলে দিয়ে বলা হয়েছে—কোনো কনটেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই কপিরাইটধারীর ‘অপ্ট-ইন’ অনুমতি লাগবে। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, ভবিষ্যতে তারা আরও সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যোগ করবেন যাতে ব্যক্তির চেহারা বা কণ্ঠ ব্যবহার নিয়ে কারও অধিকার লঙ্ঘিত না হয়।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক এলিসা রেডমাইলস বলেছেন, ‘এই প্রযুক্তি এখনো অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এটি সহজেই ডিপফেক তৈরি করতে সক্ষম, যেখানে কাউকে তাঁর অমতে ব্যবহার করা হতে পারে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘সোরা ২’ এর মতো টুল শিশু ও তরুণীদের প্রতি অপব্যবহারের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।
আরেক অধ্যাপক সারা বারগাল মনে করেন, এই প্রযুক্তি পূর্বের যে কোনো ফটো এডিটিং সফটওয়্যারের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী ও বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ‘আগে ছবি সম্পাদনার জন্য দক্ষতা দরকার হতো, এখন শুধু কয়েকটি বাক্য লিখেই এমন ভিডিও তৈরি করা যায়, যা অভিজ্ঞরাও আসল বলে ভুল করতে পারেন।’
ভবিষ্যতে ভুয়া ভিডিও শনাক্তের প্রযুক্তি উন্নত হবে বলে আশা করা হলেও বারগাল সতর্ক করেছেন—আইন, নৈতিকতা ও সামাজিক সচেতনতা সেই গতিতে এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজ এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে ভিডিও আর প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না।’
এদিকে বিতর্কের মধ্যেও ‘সোরা ২’ অ্যাপ স্টোরের শীর্ষে উঠে এসেছে। স্যাম অল্টম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, ইন্টারনেটে এখন অনেক ভুয়া ভিডিও থাকবে—কিন্তু সমাজকে এই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’
প্রযুক্তি কি তবে সত্যের সীমা মুছে দিচ্ছে, নাকি আমরা এক নতুন বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছি—‘সোরা ২’ সেই প্রশ্নই সামনে এনে দিয়েছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভিডিও তৈরির নতুন টুল ‘সোরা ২’ প্রকাশের পর থেকেই প্রযুক্তি জগতে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাত্র কয়েকটি লাইনের টেক্সট লিখেই বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম এই অ্যাপটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে এর পাশাপাশি বাড়ছে সমালোচনার ঝড়—বিশেষ করে, কপিরাইট লঙ্ঘন, ভুয়া ভিডিও ছড়ানো ও নৈতিকতার প্রশ্নে ওপেনএআইকে এখন কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে এই টুল।
২০২৪ সালের সীমিত সংস্করণের পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ‘সোরা ২’ উন্মোচন করে ওপেনএআই। নতুন সংস্করণে ব্যবহারকারীরা নিজেদের মুখের ছবি ও কণ্ঠের রেকর্ড আপলোড করে পছন্দের যে কোনো দৃশ্যে নিজেদের উপস্থিত করতে পারেন। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতা যেমন সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয়, তেমনি এটি অপব্যবহারের আশঙ্কাও বাড়িয়েছে।
অল্প সময়েই দেখা গেছে, ‘সোরা ২’ ব্যবহার করে কেউ কেউ ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রকে নিয়ে বর্ণবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও তৈরি করেছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাঁর পরিবার তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিতে ওপেনএআইয়ের কাছে দাবি জানায়। একইভাবে, ‘ব্রেকিং ব্যাড’-এর অভিনেতা ব্রায়ান ক্র্যানস্টন অভিযোগ করেছেন, তাঁর মুখ ও কণ্ঠ ব্যবহার করে অনুমতি ছাড়াই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।
বিতর্ক বাড়তে থাকায় ওপেনএআই দ্রুত নীতি পরিবর্তন করে। শুরুতে সংস্থাটি কপিরাইটকৃত কনটেন্ট ব্যবহার করতে দিত, যদি কপিরাইটধারীরা আপত্তি না জানায়। কিন্তু সমালোচনার মুখে এখন সেই নীতি বদলে দিয়ে বলা হয়েছে—কোনো কনটেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই কপিরাইটধারীর ‘অপ্ট-ইন’ অনুমতি লাগবে। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, ভবিষ্যতে তারা আরও সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যোগ করবেন যাতে ব্যক্তির চেহারা বা কণ্ঠ ব্যবহার নিয়ে কারও অধিকার লঙ্ঘিত না হয়।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক এলিসা রেডমাইলস বলেছেন, ‘এই প্রযুক্তি এখনো অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এটি সহজেই ডিপফেক তৈরি করতে সক্ষম, যেখানে কাউকে তাঁর অমতে ব্যবহার করা হতে পারে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘সোরা ২’ এর মতো টুল শিশু ও তরুণীদের প্রতি অপব্যবহারের অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।
আরেক অধ্যাপক সারা বারগাল মনে করেন, এই প্রযুক্তি পূর্বের যে কোনো ফটো এডিটিং সফটওয়্যারের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী ও বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ‘আগে ছবি সম্পাদনার জন্য দক্ষতা দরকার হতো, এখন শুধু কয়েকটি বাক্য লিখেই এমন ভিডিও তৈরি করা যায়, যা অভিজ্ঞরাও আসল বলে ভুল করতে পারেন।’
ভবিষ্যতে ভুয়া ভিডিও শনাক্তের প্রযুক্তি উন্নত হবে বলে আশা করা হলেও বারগাল সতর্ক করেছেন—আইন, নৈতিকতা ও সামাজিক সচেতনতা সেই গতিতে এগোচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজ এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে যেখানে ভিডিও আর প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় না।’
এদিকে বিতর্কের মধ্যেও ‘সোরা ২’ অ্যাপ স্টোরের শীর্ষে উঠে এসেছে। স্যাম অল্টম্যান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, ইন্টারনেটে এখন অনেক ভুয়া ভিডিও থাকবে—কিন্তু সমাজকে এই বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’
প্রযুক্তি কি তবে সত্যের সীমা মুছে দিচ্ছে, নাকি আমরা এক নতুন বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছি—‘সোরা ২’ সেই প্রশ্নই সামনে এনে দিয়েছে।

মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে ম
১২ মে ২০২১
অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেনাবেচা বন্ধ করতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
৫ ঘণ্টা আগে
একসময় বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোই ছিল ভারতের আউটসোর্সিং আইটি হাব। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এখন তাদের কাজ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং অফিসের খরচ তুলনামূলক কম।
৮ ঘণ্টা আগে
অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধ চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেনাবেচা বন্ধ করতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এনইআইআর সিস্টেম আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালু হবে। এনইআইআর এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত আইএমইআই নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ব্যবহৃত সিমের সঙ্গে যুক্ত করে নিবন্ধিত করবে। ফলে বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এই সিস্টেম চালু হলে অবৈধভাবে আমদানি করা বা নকল মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিভিন্ন সংস্থার তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে এনইআইআর কার্যকর করার বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি ঘটে অবৈধ বা অনিবন্ধিত ডিভাইস থেকে। এনইআইআর চালু হলে নেটওয়ার্কে আর এ ধরনের ডিভাইস কাজ করবে না।
বিটিআরসি ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইকেওয়াইসি জালিয়াতির ৮৫ শতাংশ ঘটেছিল অনিবন্ধিত বা পুনঃপ্রোগ্রাম করা হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১ দশমিক ৮ লাখ ফোন চুরি সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। এনইআইআর চালু হলে এসব ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর অনুমান অনুযায়ী, অবৈধ ফোন আমদানির কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এনইআইআর কার্যকর হলে এই ক্ষতি রোধ সম্ভব বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
তৈয়্যব আশা প্রকাশ করে বলেন, এনইআইআরের মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরও সুরক্ষিত হবে। একই সঙ্গে এটি অপরাধ দমনেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারণ, চুরি বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইস সহজেই শনাক্ত ও ব্লক করা সম্ভব হবে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এনইআইআর শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নয়, এটি নাগরিকের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি জাতীয় অঙ্গীকার।
বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, এনইআইআরের মাধ্যমে মোবাইলে যে সিম ব্যবহার করা হবে, তার তথ্যও পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ট্রেস করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেনাবেচা বন্ধ করতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এনইআইআর সিস্টেম আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালু হবে। এনইআইআর এমন একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা, যা প্রতিটি মোবাইল হ্যান্ডসেটের আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত আইএমইআই নম্বরকে ব্যবহারকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ব্যবহৃত সিমের সঙ্গে যুক্ত করে নিবন্ধিত করবে। ফলে বৈধ ও অবৈধ হ্যান্ডসেট সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এই সিস্টেম চালু হলে অবৈধভাবে আমদানি করা বা নকল মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বিভিন্ন সংস্থার তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে এনইআইআর কার্যকর করার বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ ডিজিটাল জালিয়াতি ঘটে অবৈধ বা অনিবন্ধিত ডিভাইস থেকে। এনইআইআর চালু হলে নেটওয়ার্কে আর এ ধরনের ডিভাইস কাজ করবে না।
বিটিআরসি ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যৌথ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ইকেওয়াইসি জালিয়াতির ৮৫ শতাংশ ঘটেছিল অনিবন্ধিত বা পুনঃপ্রোগ্রাম করা হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১ দশমিক ৮ লাখ ফোন চুরি সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। এনইআইআর চালু হলে এসব ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লক করা যাবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর অনুমান অনুযায়ী, অবৈধ ফোন আমদানির কারণে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়। এনইআইআর কার্যকর হলে এই ক্ষতি রোধ সম্ভব বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
তৈয়্যব আশা প্রকাশ করে বলেন, এনইআইআরের মাধ্যমে সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প আরও সুরক্ষিত হবে। একই সঙ্গে এটি অপরাধ দমনেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারণ, চুরি বা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত ডিভাইস সহজেই শনাক্ত ও ব্লক করা সম্ভব হবে।
ফয়েজ আহমদ বলেন, এনইআইআর শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নয়, এটি নাগরিকের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা এবং টেলিযোগাযোগ খাতের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার একটি জাতীয় অঙ্গীকার।
বিটিআরসি (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী জানান, এনইআইআরের মাধ্যমে মোবাইলে যে সিম ব্যবহার করা হবে, তার তথ্যও পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ট্রেস করা সম্ভব হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর ও মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে ম
১২ মে ২০২১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভিডিও তৈরির নতুন টুল ‘সোরা ২’ প্রকাশের পর থেকেই প্রযুক্তি জগতে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাত্র কয়েকটি লাইনের টেক্সট লিখেই বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম এই অ্যাপটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
১ ঘণ্টা আগে
একসময় বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোই ছিল ভারতের আউটসোর্সিং আইটি হাব। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এখন তাদের কাজ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং অফিসের খরচ তুলনামূলক কম।
৮ ঘণ্টা আগে
অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধ চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

একসময় বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোই ছিল ভারতের আউটসোর্সিং আইটি হাব। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এখন তাদের কাজ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং অফিসের খরচ তুলনামূলক কম। এই নতুন প্রবণতাটি ‘ক্লাউড ফার্মিং’ নামে পরিচিত, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর আগমন এই ধারায় নতুন গতি এনেছে।
মোহান কুমারের মতো কর্মীরা এই পরিবর্তনের সুফল পাচ্ছেন। তামিলনাড়ুর ছোট শহর টিএন পালায়ামের বাসিন্দা তিনি। তাঁর কাজ হলো এআই অ্যানোটেশন।
মোহান কুমার বলেন, ‘আমার কাজ হলো এআই অ্যানোটেশন। আমি বিভিন্ন সোর্স থেকে ডেটা সংগ্রহ করি, সেগুলোতে লেবেল লাগাই এবং মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ দিই, যাতে তারা বস্তুকে চিনতে পারে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মডেলগুলো স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে।’
মেট্রো শহরে না থাকার কারণে কোনো পেশাগত ক্ষতি হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেশাগতভাবে কোনো পার্থক্য নেই। ছোট শহরে থেকেও আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একই বৈশ্বিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করি। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার মানও একই।’
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ডেসিক্রু হলো ক্লাউড ফার্মিং-এর অন্যতম পথিকৃৎ। চেন্নাইয়ে সদর দপ্তর থাকলেও এই প্রতিষ্ঠান প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ ছড়িয়ে দিয়েছে।
ডেসিক্রুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মান্নিভান্নান জে কে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, চাকরির খোঁজে মানুষকে শহরে যেতে বাধ্য করার বদলে, যেখানে মানুষ থাকে সেখানেই কাজ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে সুযোগগুলো কেবল শহরেই কেন্দ্রীভূত ছিল, যার ফলে গ্রামের যুবসমাজ পিছিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের লক্ষ্য সব সময়ই ছিল মানুষের দোরগোড়ায় বিশ্বমানের ক্যারিয়ার তৈরি করা।’
ডেসিক্রুর মোট কাজের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই বর্তমানে এআই সম্পর্কিত। মান্নিভান্নান জে কে আশা করেন, খুব শিগগিরই তা বেড়ে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশে পৌঁছাবে। এই কাজগুলোর একটি বড় অংশ হলো ট্রান্সক্রিপশন বা অডিও থেকে টেক্সটে রূপান্তর, যা মানুষের কথা বলার বৈচিত্র্য বুঝতে এআইকে সহায়তা করে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘অনেকেই ধরে নেন যে গ্রাম মানেই অনুন্নত। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রগুলো শহুরে আইটি হাবগুলোর মতোই—সুরক্ষিত ডেটা অ্যাকসেস, নির্ভরযোগ্য সংযোগ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রয়েছে। পার্থক্য কেবল ভৌগোলিক অবস্থানে।’ তাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী, যাদের জন্য এটি আর্থিক নিরাপত্তা এনে দিয়েছে।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নেক্সটওয়েলথ ক্লাউড ফার্মিংয়ে আরও একটি অগ্রণী সংস্থা। বেঙ্গালুরুতে সদর দপ্তর থাকা সত্ত্বেও, ভারতের ছোট শহরগুলোতে তাদের ১১টি অফিসে ৫ হাজার কর্মী কাজ করেন।
নেক্সটওয়েলথ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিথিলি রমেশের মতে, ‘ভারতের ৬০ শতাংশ স্নাতক ছোট শহর থেকে আসে, অথচ বেশির ভাগ আইটি কোম্পানি শুধু মেট্রো শহর থেকে নিয়োগ করে। এটি বিপুলসংখ্যক স্মার্ট স্নাতকের সম্ভাবনাকে অব্যবহৃত রেখে দেয়।’ তিনি জানান, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অ্যালগরিদমগুলো ভারতের ছোট শহরগুলোতেই প্রশিক্ষণ ও যাচাই করা হচ্ছে।
মিথিলি রমেশের অনুমান, আগামী ৩ থেকে ৫ বছরে এআই এবং জেনারেটিভ এআই প্রশিক্ষণ, যাচাই এবং রিয়েল-টাইম হ্যান্ডলিং-এর ক্ষেত্রে প্রায় ১০ কোটি নতুন কাজের সৃষ্টি করবে। ভারতের ছোট শহরগুলো এই বিশাল কর্মবাহিনীর মেরুদণ্ড হতে পারে। তিনি মনে করেন, এআই আউটসোর্সিংয়ে ভারতের প্রাথমিক সূচনা এবং কাজের বিশাল ব্যাপ্তি দেশটিকে পাঁচ থেকে সাত বছরের সুবিধা দিয়েছে।
এআই-এর জন্য সিলিকন ভ্যালি ইঞ্জিন তৈরি করলেও, সেই ইঞ্জিনকে সচল রাখার দৈনন্দিন কাজ এখন ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতের ক্লাউড ফার্মিং শিল্প থেকে আসছে বলে মনে করেন প্রযুক্তি উপদেষ্টা কে এস বিশ্বনাথন। তিনি এটিকে একটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে এই সাফল্যের পথ চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। ডেসিক্রু ও নেক্সটওয়েলথ নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগের কথা বললেও, বিশ্বনাথন স্বীকার করেন, ভারতের ছোট শহরগুলোতে উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং সুরক্ষিত ডেটা সেন্টারের মান এখনো মেট্রো শহরগুলোর সমতুল্য নয়।
এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে ছোট শহরগুলো ডেটা সুরক্ষার মান পূরণ করতে পারবে না। এই ধারণা কাটিয়ে ওঠা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
নেক্সটওয়েলথ-এর কর্মী ধনলক্ষ্মী বিজয়, যিনি এআই ‘ফাইন টিউন’ করার কাজ করেন (যেমন, নীল ডেনিম জ্যাকেট এবং নেভি শার্টের মতো দেখতে দুটি কাছাকাছি বস্তুকে চিনিয়ে দেওয়া), তিনি বলেন, ‘এই সংশোধনগুলো সিস্টেমে পাঠানো হয়, যা মডেলটিকে আরও নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে। আপনার অনলাইন শপিংয়ের অভিজ্ঞতা সহজ ও ঝামেলামুক্ত করার জন্য পরোক্ষভাবে আমার দলই এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’

একসময় বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোই ছিল ভারতের আউটসোর্সিং আইটি হাব। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এখন তাদের কাজ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং অফিসের খরচ তুলনামূলক কম। এই নতুন প্রবণতাটি ‘ক্লাউড ফার্মিং’ নামে পরিচিত, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর আগমন এই ধারায় নতুন গতি এনেছে।
মোহান কুমারের মতো কর্মীরা এই পরিবর্তনের সুফল পাচ্ছেন। তামিলনাড়ুর ছোট শহর টিএন পালায়ামের বাসিন্দা তিনি। তাঁর কাজ হলো এআই অ্যানোটেশন।
মোহান কুমার বলেন, ‘আমার কাজ হলো এআই অ্যানোটেশন। আমি বিভিন্ন সোর্স থেকে ডেটা সংগ্রহ করি, সেগুলোতে লেবেল লাগাই এবং মডেলগুলোকে প্রশিক্ষণ দিই, যাতে তারা বস্তুকে চিনতে পারে এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মডেলগুলো স্বয়ংক্রিয় হয়ে ওঠে।’
মেট্রো শহরে না থাকার কারণে কোনো পেশাগত ক্ষতি হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেশাগতভাবে কোনো পার্থক্য নেই। ছোট শহরে থেকেও আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একই বৈশ্বিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করি। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার মানও একই।’
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ডেসিক্রু হলো ক্লাউড ফার্মিং-এর অন্যতম পথিকৃৎ। চেন্নাইয়ে সদর দপ্তর থাকলেও এই প্রতিষ্ঠান প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ ছড়িয়ে দিয়েছে।
ডেসিক্রুর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মান্নিভান্নান জে কে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে, চাকরির খোঁজে মানুষকে শহরে যেতে বাধ্য করার বদলে, যেখানে মানুষ থাকে সেখানেই কাজ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে সুযোগগুলো কেবল শহরেই কেন্দ্রীভূত ছিল, যার ফলে গ্রামের যুবসমাজ পিছিয়ে যাচ্ছিল। আমাদের লক্ষ্য সব সময়ই ছিল মানুষের দোরগোড়ায় বিশ্বমানের ক্যারিয়ার তৈরি করা।’
ডেসিক্রুর মোট কাজের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই বর্তমানে এআই সম্পর্কিত। মান্নিভান্নান জে কে আশা করেন, খুব শিগগিরই তা বেড়ে ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশে পৌঁছাবে। এই কাজগুলোর একটি বড় অংশ হলো ট্রান্সক্রিপশন বা অডিও থেকে টেক্সটে রূপান্তর, যা মানুষের কথা বলার বৈচিত্র্য বুঝতে এআইকে সহায়তা করে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘অনেকেই ধরে নেন যে গ্রাম মানেই অনুন্নত। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রগুলো শহুরে আইটি হাবগুলোর মতোই—সুরক্ষিত ডেটা অ্যাকসেস, নির্ভরযোগ্য সংযোগ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রয়েছে। পার্থক্য কেবল ভৌগোলিক অবস্থানে।’ তাঁদের প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মীই নারী, যাদের জন্য এটি আর্থিক নিরাপত্তা এনে দিয়েছে।
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নেক্সটওয়েলথ ক্লাউড ফার্মিংয়ে আরও একটি অগ্রণী সংস্থা। বেঙ্গালুরুতে সদর দপ্তর থাকা সত্ত্বেও, ভারতের ছোট শহরগুলোতে তাদের ১১টি অফিসে ৫ হাজার কর্মী কাজ করেন।
নেক্সটওয়েলথ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিথিলি রমেশের মতে, ‘ভারতের ৬০ শতাংশ স্নাতক ছোট শহর থেকে আসে, অথচ বেশির ভাগ আইটি কোম্পানি শুধু মেট্রো শহর থেকে নিয়োগ করে। এটি বিপুলসংখ্যক স্মার্ট স্নাতকের সম্ভাবনাকে অব্যবহৃত রেখে দেয়।’ তিনি জানান, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত অ্যালগরিদমগুলো ভারতের ছোট শহরগুলোতেই প্রশিক্ষণ ও যাচাই করা হচ্ছে।
মিথিলি রমেশের অনুমান, আগামী ৩ থেকে ৫ বছরে এআই এবং জেনারেটিভ এআই প্রশিক্ষণ, যাচাই এবং রিয়েল-টাইম হ্যান্ডলিং-এর ক্ষেত্রে প্রায় ১০ কোটি নতুন কাজের সৃষ্টি করবে। ভারতের ছোট শহরগুলো এই বিশাল কর্মবাহিনীর মেরুদণ্ড হতে পারে। তিনি মনে করেন, এআই আউটসোর্সিংয়ে ভারতের প্রাথমিক সূচনা এবং কাজের বিশাল ব্যাপ্তি দেশটিকে পাঁচ থেকে সাত বছরের সুবিধা দিয়েছে।
এআই-এর জন্য সিলিকন ভ্যালি ইঞ্জিন তৈরি করলেও, সেই ইঞ্জিনকে সচল রাখার দৈনন্দিন কাজ এখন ক্রমবর্ধমানভাবে ভারতের ক্লাউড ফার্মিং শিল্প থেকে আসছে বলে মনে করেন প্রযুক্তি উপদেষ্টা কে এস বিশ্বনাথন। তিনি এটিকে একটি ‘টিপিং পয়েন্ট’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তবে এই সাফল্যের পথ চ্যালেঞ্জমুক্ত নয়। ডেসিক্রু ও নেক্সটওয়েলথ নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগের কথা বললেও, বিশ্বনাথন স্বীকার করেন, ভারতের ছোট শহরগুলোতে উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং সুরক্ষিত ডেটা সেন্টারের মান এখনো মেট্রো শহরগুলোর সমতুল্য নয়।
এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে ছোট শহরগুলো ডেটা সুরক্ষার মান পূরণ করতে পারবে না। এই ধারণা কাটিয়ে ওঠা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
নেক্সটওয়েলথ-এর কর্মী ধনলক্ষ্মী বিজয়, যিনি এআই ‘ফাইন টিউন’ করার কাজ করেন (যেমন, নীল ডেনিম জ্যাকেট এবং নেভি শার্টের মতো দেখতে দুটি কাছাকাছি বস্তুকে চিনিয়ে দেওয়া), তিনি বলেন, ‘এই সংশোধনগুলো সিস্টেমে পাঠানো হয়, যা মডেলটিকে আরও নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য করে তোলে। আপনার অনলাইন শপিংয়ের অভিজ্ঞতা সহজ ও ঝামেলামুক্ত করার জন্য পরোক্ষভাবে আমার দলই এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’

মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে ম
১২ মে ২০২১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভিডিও তৈরির নতুন টুল ‘সোরা ২’ প্রকাশের পর থেকেই প্রযুক্তি জগতে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাত্র কয়েকটি লাইনের টেক্সট লিখেই বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম এই অ্যাপটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
১ ঘণ্টা আগে
অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেনাবেচা বন্ধ করতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
৫ ঘণ্টা আগে
অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধ চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধী চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় তিনজন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরও ৯ জনকে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ (এএফপি) কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট জানিয়েছেন, এই নতুন ও উদ্বেগজনক ‘লিঙ্গভিত্তিক’ সহিংসতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার এক ভাষণে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন তিনি।
টার্গেট করা কিশোরীদের দিয়ে কী ধরনের কাজ করানো হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কমিশনার ব্যারেট বলেছেন, অভিযুক্ত অপরাধীরা সহিংস উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং ‘মজা করার জন্য’ মানুষকে আঘাত করতে চায়।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিশের ঘরে থাকা তরুণ। যাদের বেশির ভাগ পশ্চিমা পটভূমি থেকে এসেছে। তারা রোবলক্সের মতো গেমিং প্ল্যাটফর্ম বা ডিসকর্ড ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে কিশোরী বা প্রাক্-কিশোরী মেয়েদের টার্গেট করে।
কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট এদের ‘ক্রাইমফ্লুয়েন্সার’ (crimefluencer) বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিরা নানা ধরনের মতাদর্শে বিশ্বাসী, যার মধ্যে নিহিলিজম (জীবনের অর্থ অস্বীকার), স্যাডিজম (অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া), নাৎসিবাদ ও শয়তানবাদ অন্তর্ভুক্ত।
ব্যারেট বলেন, এই দলগুলোর সংস্কৃতি অনেকটা মাল্টিপ্লেয়ার বা অনলাইন গেমিং সংস্কৃতির মতো। তারা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিকার খোঁজে, অনুসরণ করে এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের টেনে আনে।। তারা হয়তো তাদের আচরণের পরিণতি পুরোপুরি বোঝে না।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই নেটওয়ার্কগুলোর সদস্যদের প্রেরণা অর্থনৈতিক নয়, যৌন তৃপ্তির জন্যও নয়, একেবারেই তাদের বিনোদনের জন্য, মজা করার জন্য কিংবা অনলাইনে জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তারা এসব করছে।’
কমিশনার ব্যারেট জানান, শুধু অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৬০ জন সন্দেহভাজন অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ ফাইভ আইজ (Five Eyes) জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মিলে এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময়ে এই ঘোষণা এল। তবে ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিষেধাজ্ঞা থেকে বাইরে থাকবে গেমিং ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলো।

অনলাইন অপরাধী চক্রের শিকারে পরিণত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীরা। দেশটির পুলিশ সতর্ক করেছে, অনলাইন অপরাধী চক্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার কিশোরীদের নিজেদের, ভাইবোনের বা পোষা প্রাণীর ওপর সহিংসতা এবং নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ করতে বাধ্য করছে। পুলিশ একে ‘বিকৃত গেমিফিকেশন’ বলে অভিহিত করেছে।
এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় তিনজন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরও ৯ জনকে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ (এএফপি) কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট জানিয়েছেন, এই নতুন ও উদ্বেগজনক ‘লিঙ্গভিত্তিক’ সহিংসতার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার এক ভাষণে এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবেন তিনি।
টার্গেট করা কিশোরীদের দিয়ে কী ধরনের কাজ করানো হচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে কমিশনার ব্যারেট বলেছেন, অভিযুক্ত অপরাধীরা সহিংস উগ্রবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী এবং ‘মজা করার জন্য’ মানুষকে আঘাত করতে চায়।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিশের ঘরে থাকা তরুণ। যাদের বেশির ভাগ পশ্চিমা পটভূমি থেকে এসেছে। তারা রোবলক্সের মতো গেমিং প্ল্যাটফর্ম বা ডিসকর্ড ও টেলিগ্রামের মতো মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে কিশোরী বা প্রাক্-কিশোরী মেয়েদের টার্গেট করে।
কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট এদের ‘ক্রাইমফ্লুয়েন্সার’ (crimefluencer) বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিরা নানা ধরনের মতাদর্শে বিশ্বাসী, যার মধ্যে নিহিলিজম (জীবনের অর্থ অস্বীকার), স্যাডিজম (অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাওয়া), নাৎসিবাদ ও শয়তানবাদ অন্তর্ভুক্ত।
ব্যারেট বলেন, এই দলগুলোর সংস্কৃতি অনেকটা মাল্টিপ্লেয়ার বা অনলাইন গেমিং সংস্কৃতির মতো। তারা বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিকার খোঁজে, অনুসরণ করে এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের টেনে আনে।। তারা হয়তো তাদের আচরণের পরিণতি পুরোপুরি বোঝে না।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই নেটওয়ার্কগুলোর সদস্যদের প্রেরণা অর্থনৈতিক নয়, যৌন তৃপ্তির জন্যও নয়, একেবারেই তাদের বিনোদনের জন্য, মজা করার জন্য কিংবা অনলাইনে জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই তারা এসব করছে।’
কমিশনার ব্যারেট জানান, শুধু অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৬০ জন সন্দেহভাজন অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ ফাইভ আইজ (Five Eyes) জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মিলে এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের নিচের শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এমন সময়ে এই ঘোষণা এল। তবে ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নিষেধাজ্ঞা থেকে বাইরে থাকবে গেমিং ও মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলো।

মানুষের দেহ এমন এক দুর্গ, যেখানে বাইরে থেকে আসা যেকোনো কিছুকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়; চেষ্টা করা হয় প্রতিহতের। কিন্তু যদি এমন কোনো শত্রু এসে ঢুকে পড়ে, যার সম্পর্কে আগে থেকে জানা–বোঝা নেই, তবে পড়তে হয় বিপাকে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটিই হয়েছে। পাহারাদারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ভাইরাস ঢুকে পড়েছে ম
১২ মে ২০২১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর ভিডিও তৈরির নতুন টুল ‘সোরা ২’ প্রকাশের পর থেকেই প্রযুক্তি জগতে তুমুল আলোচনার সৃষ্টি করেছে। মাত্র কয়েকটি লাইনের টেক্সট লিখেই বাস্তবসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম এই অ্যাপটি দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
১ ঘণ্টা আগে
অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেটের কেনাবেচা বন্ধ করতে এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্ট্রার) ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
৫ ঘণ্টা আগে
একসময় বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলোই ছিল ভারতের আউটসোর্সিং আইটি হাব। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই চিত্র পাল্টেছে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এখন তাদের কাজ এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে কর্মীর বেতন এবং অফিসের খরচ তুলনামূলক কম।
৮ ঘণ্টা আগে