Ajker Patrika

মহাশূন্যে যাওয়ার এলিভেটর

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
Thumbnail image

জনপ্রিয় ব্রিটিশ লেখক আর্থার সি ক্লার্ক তাঁর একটি বইয়ে স্পেস এলিভেটরের সাহায্যে মহাকাশযাত্রার ধারণাটি তুলে ধরেন। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য ফাউন্টেনস অব প্যারাডাইস’ বইটিতে স্পেস এলিভেটর সম্পর্কে অনেক কিছু উল্লেখ করেছিলেন তিনি। স্পেস এলিভেটর বলতে আক্ষরিক অর্থেই মহাকাশে যাওয়ার লিফটের কথা বলা হচ্ছে।

আর্থার সি ক্লার্কের বইয়ের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা অনেক বিজ্ঞানীকে আকৃষ্ট করেছিল। শুধু এটিই নয়, এমন অনেক বই-ই আছে যা পড়ে বিজ্ঞানীরা কল্পবিজ্ঞানকে বাস্তবে রূপায়িত করে আসছেন। স্পেস এলিভেটরও সেই তালিকার একটি নাম; যার আবিষ্কার বাস্তবায়ন নিয়ে চলে আসছে নানান বিজ্ঞানযজ্ঞ।

এরই ধারাবাহিকতায় জাপানি এক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মহাকাশে যাওয়ার জন্য একটি এলিভেটর নির্মাণের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ স্পেস এলিভেটর স্থাপনের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে জাপানি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি করপোরেশন। বাসাবাড়িতে 
ব্যবহার হওয়া এলিভেটরের মতোই মহাশূন্যে যাওয়ার জন্য এলিভেটর তৈরি করার কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে মহাকাশে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা রকেট হলেও এলিভেটরের মাধ্যমে এই যাতায়াত অনেক কম খরচে ও নিরাপদে পরিচালনা করা সম্ভব হবে বলে মনে করে ওবাইসি করপোরেশন। স্পেস এলিভেটর বলতে তাত্ত্বিকভাবে টেথার বা লম্বা বর্ধনশীল এক শিকলকে বোঝায়, যেটি পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে মহাশূন্য পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

এই পথ দিয়ে চলাচল করতে পারবে বিভিন্ন তড়িৎ চুম্বকীয় যানবাহন, মানুষ এবং বিভিন্ন ধরনের ভারী মালামাল। জাপানের ওবাইসি করপোরেশন ২০৫০ সালের মধ্যে স্পেস এলিভেটর নির্মাণ করতে বদ্ধপরিকর। তাদের দাবি, এর কারণে মহাশূন্যে পণ্য পরিবহনের খরচ কমবে ৯০ শতাংশ। রকেটের মাধ্যমে পণ্য পাঠাতে প্রতি কেজিতে খরচ হয় প্রায় ২২ হাজার ডলার। ওবাইসির স্পেস এলিভেটর ব্যবহার করলে তা নেমে আসবে ২০০ ডলারে। এ ছাড়া মহাকাশের দূরবর্তী অভিযানের জন্য এটিকে বন্দর হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

পৃথিবীর শক্তিশালী পদার্থগুলোর মধ্যে একটি হলো কার্বন ন্যানোটিউব। এটি স্টিলের চেয়েও প্রায় শত গুণ ভার বহনে সক্ষম। আর তাই স্পেস এলিভেটরের মূল অংশ তৈরি হবে কার্বন ন্যানোটিউবের ৩৬ হাজার কিলোমিটার লম্বা কেব্‌ল দিয়ে। কার্বন পরমাণুকে বিশেষভাবে সজ্জিত করে পদার্থটি তৈরি করা হয়। কেব্‌লের একটি প্রান্ত যুক্ত থাকবে পৃথিবীপৃষ্ঠে। অন্যটি থাকবে মহাশূন্যের ৩৬ হাজার কিলোমিটার ওপরে, পৃথিবীর ভূস্থির কক্ষপথে। কেব্‌ল ও এলিভেটরের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কেব্‌লের অন্য প্রান্তে যুক্ত করা হবে ১৩ হাজার টনের মহাকাশ স্টেশনের সঙ্গে।

এলিভেটর হিসেবে থাকবে বিদ্যুৎ-চালিত রোবটিক গাড়ি। কেব্‌লটি তৈরি করতেই প্রায় ২০ বছর সময়ের প্রয়োজন এবং এর জন্য খরচ হবে আকাশছোঁয়া। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি নির্মাণ হয়ে গেলে মহাশূন্য ভ্রমণ চলে আসবে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। সূচনা হবে মানুষের মহাকাশ জয়ের নতুন অধ্যায়। 

স্পেস এলিভেটর সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় ১৮৯৫ সালে। প্যারিসের আইফেল টাওয়ার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রাশিয়ান বিজ্ঞানী কনস্ট্যানটিন সিয়োলকভস্কি এর প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তখন এই আলোচনা কল্পনাতীত মনে হয়েছিল। পরে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই গবেষণায় নতুন সম্ভাবনার পথ উন্মোচন হয়। ১৯৬০ সালে আরও একজন রাশিয়ান বিজ্ঞানী য়ুরি আর্টসুতানভ স্পেস এলিভেটর নিয়ে তাঁর আধুনিক ধারণা লিখিত আকারে প্রকাশ করেন। তাঁর হাত ধরেই স্পেস এলিভেটর নিয়ে গবেষণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।

মহাকাশ যাত্রাকে একুশ শতকের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান হিসেবে দাবি করা হয়। মহাকাশ যান তৈরি, উড্ডয়ন, নভোচারীদের প্রশিক্ষণ, রকেট তৈরি, জ্বালানি খরচ, উড্ডয়ন পরিচালনা ইত্যাদির পেছনে প্রচুর শ্রম ও অর্থের প্রয়োজন। সবকিছু ছাপিয়ে তো জীবনের ঝুঁকি থাকছেই। তবু পৃথিবী থেকে মহাকাশে যাওয়ার পথ সহজ করে তুলতেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে স্পেস এলিভেটর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত