Ajker Patrika

‘কৃত্রিম মাংসপেশি’ তৈরি করলেন গবেষকেরা, নিজের ক্ষত নিজেই সারাবে রোবট

অনলাইন ডেস্ক
রোবটিক্স ও পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে এই রোবট। ছবি: প্রতীকী ছবি
রোবটিক্স ও পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে এই রোবট। ছবি: প্রতীকী ছবি

অদূর ভবিষ্যতে মানুষের ত্বকের মতো নিজের ক্ষত নিজেই সারিয়ে তুলতে পারবে রোবটও। এ জন্য একটি ‘কৃত্রিম মাংসপেশি’ তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা-লিঙ্কন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়াররা, যা নিজের ক্ষত নিজেই শনাক্ত করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা সারিয়ে তুলতে সক্ষম। । এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে রোবটিকস ও পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে।

ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক এরিক মার্কভিকা এবং তার অধীনে কাজ করা স্নাতক শিক্ষার্থী ইথান ক্রিংস ও প্যাট্রিক ম্যাকম্যানিগাল সম্প্রতি জর্জিয়ার আটলান্টায় আয়োজিত আইইইই ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন রোবোটিকস অ্যান্ড অটোমেশনে (আইসিআরএ ২০২৫) তাঁদের উদ্ভাবনের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তাঁদের গবেষণাপত্রটি ১ হাজার ৬০৬টি জমাকৃত পেপারের মধ্যে সেরা ৩৯টির তালিকায় স্থান পেয়েছে এবং ‘বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড’, ‘বেস্ট স্টুডেন্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘মেকানিজম অ্যান্ড ডিজাইন’ বিভাগে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছে।

মার্কভিকা বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটিতে নরম উপাদান দিয়ে কঠিন যন্ত্রাংশ নির্মাণের প্রবণতা রয়েছে। তবে জীববিজ্ঞানের মতো করে নিজে নিজে ক্ষত নিরাময়ের ক্ষমতা এখনো আমরা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি।’

এই ঘাটতি পূরণে দলটি নিজে নিজে ক্ষত সারাতে সক্ষম এমন কৃত্রিম মাংসপেশি তৈরি করেছে, যার তিনটি স্তর রয়েছে। নিচের স্তরে রয়েছে একটি ‘ড্যামেজ ডিটেকশন লেয়ার’, যা তরল ধাতব মাইক্রোড্রপলেট ও সিলিকন ইলাস্টোমার দিয়ে তৈরি। মাঝের স্তরটি হলো একটি কঠিন থার্মোপ্লাস্টিক ইলাস্টোমার, যা নিজে নিজে ক্ষত সারাতে পারে। ওপরের স্তরটি কাজ করে মাংসপেশির মতো। এই স্তর পানির চাপে সক্রিয় হয় এবং রোবটের মাংসপেশির মতো নড়াচড়া শুরু করে।

নিচের স্তরে পাঁচটি মনিটরিং কারেন্ট প্রবাহিত করা হয়, যা একটি মাইক্রোকন্ট্রোলার ও সেন্সিং সার্কিটের সঙ্গে যুক্ত। স্তরে কোনো ছিদ্র বা চাপ পড়লে একটি নতুন বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্ক গঠিত হয়। এই পরিবর্তন শনাক্ত করে সিস্টেমটি এবং ওই এলাকায় বিদ্যুৎ প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়।

এই বাড়তি বিদ্যুৎপ্রবাহ ওই অঞ্চলকে গরম করে ফেলে, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই থার্মোপ্লাস্টিক স্তর গলিয়ে ক্ষতস্থান নিজে নিজে জোড়া লাগিয়ে দেয়।

সবচেয়ে চমকপ্রদ অংশ হলো, একবার সারিয়ে তোলার পর সিস্টেমটি আগের অবস্থায় ফিরে যায়। এই ‘রিসেট’ প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয় ইলেক্ট্রোমাইগ্রেশন নামের একটি প্রক্রিয়া, যেখানে উচ্চ বৈদ্যুতিক প্রবাহের ফলে ধাতব পরমাণুগুলো এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যায়। সাধারণত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিতে এটি ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়, কারণ এটি সার্কিট ভেঙে দিতে পারে। তবে এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এটিকে ব্যবহার করেছেন ইতিবাচকভাবে—সারিয়ে ওঠার পর নতুন গঠিত বৈদ্যুতিক নেটওয়ার্ক মুছে ফেলতে।

মার্কভিকা বলেন, ‘ইলেক্ট্রোমাইগ্রেশন সাধারণত নেতিবাচকভাবে দেখা হয়, তবে আমরা প্রথমবারের মতো এটিকে ব্যবহার করেছি ক্ষত সারিয়ে ওঠার পর পুরোনো ক্ষতের চিহ্ন মুছে ফেলার কাজে।’

এই প্রযুক্তি কৃষিপ্রধান অঞ্চল যেমন নেব্রাস্কার মতো জায়গায় অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে, যেখানে রোবটিক যন্ত্রপাতি নিয়মিত গাছের কাঁটা, ডাল বা কাচের মতো বস্তুর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য মনিটরিং ডিভাইসের মতো পরিধানযোগ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এটি বিপ্লব আনতে পারে।

এই কৃত্রিম মাসংপেশির তিনটি স্তর রয়েছে। ছবি: টেক এক্সপ্লোরার
এই কৃত্রিম মাসংপেশির তিনটি স্তর রয়েছে। ছবি: টেক এক্সপ্লোরার

এ ছাড়া, এটি বৈশ্বিক ইলেকট্রনিক বর্জ্য সমস্যারও একটি সম্ভাব্য সমাধান। মার্কভিকা বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী প্রচুর ইলেকট্রনিক বর্জ্য তৈরি হয়, যার মধ্যে রয়েছে সিসা ও পারদজাতীয় ক্ষতিকর উপাদান। যদি নিজে নিজে ক্ষত সারাতে সক্ষম এমন উপাদান তৈরি করা যায়, তবে এটি পরিবেশগতভাবেও বড় পরিবর্তন আনবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমাদের কৃত্রিম সিস্টেমগুলো মানুষের শরীরের মতো নিজে নিজে ক্ষত শনাক্ত করে তা সারাতে পারে, তাহলে ইলেকট্রনিকস ও যন্ত্রপাতির জগতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স ডেইলি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা: উত্তপ্ত রংপুর, সেনা জিজ্ঞাসাবাদে নেতারা

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট বাজারে, পাবেন যেসব ব্যাংকে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত