
বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।

আইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে সব সময়ই কিছুটা উদ্বেগ ও হতাশা থাকে। তবে আলট্রা-থিন আইফোন এয়ার ব্যবহার করুন বা শক্তিশালী আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক—সম্প্রতি আইওএস ২৬ অপারেটিং সিস্টেমে একটি নতুন সেটিংস যুক্ত করা হয়েছে। এই সেটিংস আইফোনের ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
অনলিফ্যানস মূলত একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নির্মাতারা সরাসরি ভক্তদের কাছ থেকে আয় করতে পারেন। তবে এটি অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো নয়। এখানে নির্মাতারা ছবি, ভিডিও, লাইভস্ট্রিম এবং বার্তা শেয়ার করে আয় করতে পারেন।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কোনো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু কাজের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করছে না, বরং শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ব্যবসায় জটিল প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং দ্রুত, নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই-এর অবদানকে একুশ শতকের বৃহত্তম...
১ দিন আগে
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ওয়েব ব্রাউজার ‘চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস’ বাজারে আসার খবর প্রকাশ হতেই যেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গুগল ক্রোমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের দুর্দিন শুরু হয়ে গেল।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে সব সময়ই কিছুটা উদ্বেগ ও হতাশা থাকে। তবে আলট্রা-থিন আইফোন এয়ার ব্যবহার করুন বা শক্তিশালী আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক—সম্প্রতি আইওএস ২৬ অপারেটিং সিস্টেমে একটি নতুন সেটিংস যুক্ত করা হয়েছে। এই সেটিংস আইফোনের ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই নতুন ফিচারের নাম হলো অ্যাডাপটিভ পাওয়ার (Adaptive Power)।
এটি লো পাওয়ার মোড থেকে যেখানে আলাদা:
আইফোনের চার্জ কমে গেলে আইওএস-এ ‘লো পাওয়ার মোড’ (Low Power Mode) নামে একটি সহায়ক টুল দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। যদিও এটি ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে সাহায্য করে, তবে এর ফলে অনেক ফিচার ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যায় এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। আইওএস ২৬ এই সমস্যার একটি সমাধান নিয়ে এসেছে।
অ্যাডাপটিভ পাওয়ার হলো ব্যাটারি সেটিংসের একটি একদম নতুন সংযোজন, যা আপনার আইফোনকে, বিশেষ করে বেশি ব্যবহার হয় যখন, তখন দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করবে। এটি লো পাওয়ার মোডের মতো পারফরম্যান্সে বড় কোনো আপস না করে ছোট ছোট উপায়ে ব্যাটারির কার্যকারিতা বাড়ায়। আপনি এটি সেটিংস অ্যাপের ‘Battery’ মেনুর মধ্যে ‘Power Mode’ সাবমেনুতে খুঁজে পাবেন।
অ্যাডাপটিভ পাওয়ার যেভাবে কাজ করে
অ্যাপল এই ফিচারটির কাজ সম্পর্কে জানিয়েছে: যখন ব্যাটারির ব্যবহার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে, তখন আইফোন ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য পারফরম্যান্সে ছোটখাটো সামঞ্জস্য করতে পারে। এর মধ্যে সামান্য ডিসপ্লে ব্রাইটনেস কমানো বা কিছু কার্যক্রমের জন্য সামান্য বেশি সময় নেওয়া—এ ধরনের কিছু সমন্বয় করে।
এর মানে হলো, ফোন যখন স্বাভাবিকভাবে চলছে, তখন এর পারফরম্যান্স বা ব্যাটারি লাইফ পরিবর্তিত হবে না। কিন্তু যখন ফোনটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হবে, তখন অ্যাডাপটিভ পাওয়ার সক্রিয় হবে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতায় ন্যূনতম প্রভাব ফেলেই ছোটখাটো সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।
যদিও অ্যাপল এই ফিচারটিকে সরাসরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ফিচার হিসেবে প্রচার করছে না, তবুও প্রযুক্তিগতভাবে এর হার্ডওয়্যার প্রয়োজনীয়তা অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর মতোই। তাই এই নতুন ব্যাটারি সেটিংসটি ব্যবহার করার জন্য আইফোনটি অবশ্যই আইফোন ১৭ বা আইফোন এয়ার, আইফোন ১৬ অথবা আইফোন ১৫ প্রো মডেলের হতে হবে।

আইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে সব সময়ই কিছুটা উদ্বেগ ও হতাশা থাকে। তবে আলট্রা-থিন আইফোন এয়ার ব্যবহার করুন বা শক্তিশালী আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক—সম্প্রতি আইওএস ২৬ অপারেটিং সিস্টেমে একটি নতুন সেটিংস যুক্ত করা হয়েছে। এই সেটিংস আইফোনের ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। এই নতুন ফিচারের নাম হলো অ্যাডাপটিভ পাওয়ার (Adaptive Power)।
এটি লো পাওয়ার মোড থেকে যেখানে আলাদা:
আইফোনের চার্জ কমে গেলে আইওএস-এ ‘লো পাওয়ার মোড’ (Low Power Mode) নামে একটি সহায়ক টুল দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। যদিও এটি ব্যাটারি লাইফ বাড়াতে সাহায্য করে, তবে এর ফলে অনেক ফিচার ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যায় এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়। আইওএস ২৬ এই সমস্যার একটি সমাধান নিয়ে এসেছে।
অ্যাডাপটিভ পাওয়ার হলো ব্যাটারি সেটিংসের একটি একদম নতুন সংযোজন, যা আপনার আইফোনকে, বিশেষ করে বেশি ব্যবহার হয় যখন, তখন দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করবে। এটি লো পাওয়ার মোডের মতো পারফরম্যান্সে বড় কোনো আপস না করে ছোট ছোট উপায়ে ব্যাটারির কার্যকারিতা বাড়ায়। আপনি এটি সেটিংস অ্যাপের ‘Battery’ মেনুর মধ্যে ‘Power Mode’ সাবমেনুতে খুঁজে পাবেন।
অ্যাডাপটিভ পাওয়ার যেভাবে কাজ করে
অ্যাপল এই ফিচারটির কাজ সম্পর্কে জানিয়েছে: যখন ব্যাটারির ব্যবহার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে, তখন আইফোন ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য পারফরম্যান্সে ছোটখাটো সামঞ্জস্য করতে পারে। এর মধ্যে সামান্য ডিসপ্লে ব্রাইটনেস কমানো বা কিছু কার্যক্রমের জন্য সামান্য বেশি সময় নেওয়া—এ ধরনের কিছু সমন্বয় করে।
এর মানে হলো, ফোন যখন স্বাভাবিকভাবে চলছে, তখন এর পারফরম্যান্স বা ব্যাটারি লাইফ পরিবর্তিত হবে না। কিন্তু যখন ফোনটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হবে, তখন অ্যাডাপটিভ পাওয়ার সক্রিয় হবে এবং ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতায় ন্যূনতম প্রভাব ফেলেই ছোটখাটো সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে।
যদিও অ্যাপল এই ফিচারটিকে সরাসরি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ফিচার হিসেবে প্রচার করছে না, তবুও প্রযুক্তিগতভাবে এর হার্ডওয়্যার প্রয়োজনীয়তা অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স-এর মতোই। তাই এই নতুন ব্যাটারি সেটিংসটি ব্যবহার করার জন্য আইফোনটি অবশ্যই আইফোন ১৭ বা আইফোন এয়ার, আইফোন ১৬ অথবা আইফোন ১৫ প্রো মডেলের হতে হবে।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অনলিফ্যানস মূলত একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নির্মাতারা সরাসরি ভক্তদের কাছ থেকে আয় করতে পারেন। তবে এটি অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো নয়। এখানে নির্মাতারা ছবি, ভিডিও, লাইভস্ট্রিম এবং বার্তা শেয়ার করে আয় করতে পারেন।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কোনো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু কাজের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করছে না, বরং শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ব্যবসায় জটিল প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং দ্রুত, নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই-এর অবদানকে একুশ শতকের বৃহত্তম...
১ দিন আগে
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ওয়েব ব্রাউজার ‘চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস’ বাজারে আসার খবর প্রকাশ হতেই যেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গুগল ক্রোমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের দুর্দিন শুরু হয়ে গেল।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কর্মীপ্রতি আয়ের দিক থেকে প্রযুক্তি শিল্পের জায়ান্টদের ছাড়িয়ে গেছে সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম অনলিফ্যানস। আর্থিক ও বিপণন সংস্থা বারচার্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রত্যেক কর্মী থেকে ৩৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪০৭ কোটি টাকা) আয় করেছে।
এর মাধ্যমে মাত্র ৪২ জন কর্মী নিয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব-দক্ষ বা রেভেনিউ-এফিশিয়েন্টে এনভিডিয়া (৩.৬ মিলিয়ন ডলার) ও অ্যাপলের (২.৪ মিলিয়ন ডলার) মতো বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি জায়ান্টদেরও ছাড়িয়ে গেছে।
২০২৪ অর্থবছরে অনলিফ্যানসের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭.২২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ১.৪১ বিলিয়ন ডলার নিট মুনাফা অর্জন করেছে। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটিতে ৪৬ লাখের বেশি কনটেন্ট নির্মাতা (ক্রিয়েটর) এবং ৩৭৭ মিলিয়ন নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে।
অনলিফ্যানস মূলত একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নির্মাতারা সরাসরি ভক্তদের কাছ থেকে আয় করতে পারেন। তবে এটি অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো নয়। এখানে নির্মাতারা ছবি, ভিডিও, লাইভস্ট্রিম এবং বার্তা শেয়ার করে আয় করতে পারেন। যদিও এটি প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টের জন্য বেশি পরিচিত, তবে এখন অনেকে ফিটনেস, সংগীত, রান্না শেখানোসহ নানা ধরনের কনটেন্ট দিয়েও আয় করছেন।
ব্যবহারকারীরা মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে কোনো ক্রিয়েটরের কনটেন্ট দেখতে পারেন। এ ছাড়া কনটেন্ট ক্রিয়েটররা টিপস ও ‘পে পার ভিউ’ কনটেন্ট থেকে বাড়তি অর্থ উপার্জন করেন। আর এই কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আয় থেকে ২০ শতাংশ কমিশন নেয় অনলিফ্যানস।
২০১৬ সালে অনলিফ্যানস প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশ উদ্যোক্তা টিম স্টোকলি। পরে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নেয় ফিনিক্স ইন্টারন্যাশনাল, যার নেতৃত্বে আছেন ইউক্রেনীয়-আমেরিকান বিলিয়নিয়ার লিওনিদ রাডভিনস্কি।
বিগত কয়েক বছরে অনলিফ্যানস দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টের জন্য। আর্থিক হিসেবে, ২০২৪ সালে অনলিফ্যানস ৬৮৪ মিলিয়ন ডলার কর-পূর্ব মুনাফা এবং ৫২০ মিলিয়ন ডলার নিট মুনাফা করেছে। একই সময়ে ক্রিয়েটরদের আয় ছিল ৫.৮ বিলিয়ন ডলার, যার ২০ শতাংশ কমিশন অনলিফ্যানসের।
চলতি বছরে ক্রিয়েটর অ্যাকাউন্ট ১৩ শতাংশ এবং ফ্যান অ্যাকাউন্ট ২৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে এর মালিক লিওনিদ রাডভিনস্কিকে ৭০১ মিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ দিয়েছে।

কর্মীপ্রতি আয়ের দিক থেকে প্রযুক্তি শিল্পের জায়ান্টদের ছাড়িয়ে গেছে সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম অনলিফ্যানস। আর্থিক ও বিপণন সংস্থা বারচার্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রত্যেক কর্মী থেকে ৩৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪০৭ কোটি টাকা) আয় করেছে।
এর মাধ্যমে মাত্র ৪২ জন কর্মী নিয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব-দক্ষ বা রেভেনিউ-এফিশিয়েন্টে এনভিডিয়া (৩.৬ মিলিয়ন ডলার) ও অ্যাপলের (২.৪ মিলিয়ন ডলার) মতো বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি জায়ান্টদেরও ছাড়িয়ে গেছে।
২০২৪ অর্থবছরে অনলিফ্যানসের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭.২২ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ১.৪১ বিলিয়ন ডলার নিট মুনাফা অর্জন করেছে। বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটিতে ৪৬ লাখের বেশি কনটেন্ট নির্মাতা (ক্রিয়েটর) এবং ৩৭৭ মিলিয়ন নিবন্ধিত ব্যবহারকারী রয়েছে।
অনলিফ্যানস মূলত একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নির্মাতারা সরাসরি ভক্তদের কাছ থেকে আয় করতে পারেন। তবে এটি অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো নয়। এখানে নির্মাতারা ছবি, ভিডিও, লাইভস্ট্রিম এবং বার্তা শেয়ার করে আয় করতে পারেন। যদিও এটি প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টের জন্য বেশি পরিচিত, তবে এখন অনেকে ফিটনেস, সংগীত, রান্না শেখানোসহ নানা ধরনের কনটেন্ট দিয়েও আয় করছেন।
ব্যবহারকারীরা মাসিক সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে কোনো ক্রিয়েটরের কনটেন্ট দেখতে পারেন। এ ছাড়া কনটেন্ট ক্রিয়েটররা টিপস ও ‘পে পার ভিউ’ কনটেন্ট থেকে বাড়তি অর্থ উপার্জন করেন। আর এই কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আয় থেকে ২০ শতাংশ কমিশন নেয় অনলিফ্যানস।
২০১৬ সালে অনলিফ্যানস প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশ উদ্যোক্তা টিম স্টোকলি। পরে ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠানটির বেশির ভাগ শেয়ার কিনে নেয় ফিনিক্স ইন্টারন্যাশনাল, যার নেতৃত্বে আছেন ইউক্রেনীয়-আমেরিকান বিলিয়নিয়ার লিওনিদ রাডভিনস্কি।
বিগত কয়েক বছরে অনলিফ্যানস দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে, বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্টের জন্য। আর্থিক হিসেবে, ২০২৪ সালে অনলিফ্যানস ৬৮৪ মিলিয়ন ডলার কর-পূর্ব মুনাফা এবং ৫২০ মিলিয়ন ডলার নিট মুনাফা করেছে। একই সময়ে ক্রিয়েটরদের আয় ছিল ৫.৮ বিলিয়ন ডলার, যার ২০ শতাংশ কমিশন অনলিফ্যানসের।
চলতি বছরে ক্রিয়েটর অ্যাকাউন্ট ১৩ শতাংশ এবং ফ্যান অ্যাকাউন্ট ২৪ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে এর মালিক লিওনিদ রাডভিনস্কিকে ৭০১ মিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ দিয়েছে।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে সব সময়ই কিছুটা উদ্বেগ ও হতাশা থাকে। তবে আলট্রা-থিন আইফোন এয়ার ব্যবহার করুন বা শক্তিশালী আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক—সম্প্রতি আইওএস ২৬ অপারেটিং সিস্টেমে একটি নতুন সেটিংস যুক্ত করা হয়েছে। এই সেটিংস আইফোনের ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কোনো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু কাজের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করছে না, বরং শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ব্যবসায় জটিল প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং দ্রুত, নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই-এর অবদানকে একুশ শতকের বৃহত্তম...
১ দিন আগে
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ওয়েব ব্রাউজার ‘চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস’ বাজারে আসার খবর প্রকাশ হতেই যেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গুগল ক্রোমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের দুর্দিন শুরু হয়ে গেল।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কোনো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু কাজের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করছে না, বরং শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ব্যবসায় জটিল প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং দ্রুত, নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই-এর অবদানকে একুশ শতকের বৃহত্তম প্রযুক্তিগত বিপ্লব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণেই পেশাজীবী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এআই-এর মৌলিক ধারণা ও প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করা এখন সময়ের দাবি।
গুগল সম্প্রতি পাঁচটি এআই কোর্স এবং প্রশিক্ষণ টুল চালু করেছে। এই টুলগুলোর ব্যবহার ইচ্ছুকদের এআই প্রযুক্তির গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে। গুগল জানিয়েছে, অনলাইন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো ব্যবহারকারীদের তাদের কাজ বা ব্যবসায় এআই-এর সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
গুগল-এর পাঁচটি প্রধান এআই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম
১. প্রম্পটিং এসেনশিয়ালস (Prompting Essentials)
(সময়: ৬ ঘণ্টা, অনলাইন ও বিনা মূল্যে)
এই বিশেষ কোর্সটি মূলত কার্যকর এআই ব্যবহার শেখানোর জন্য তৈরি। গুগল-এর এআই বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত এই প্রোগ্রামে ব্যবহারকারীকে শেখানো হবে কীভাবে সুনির্দিষ্ট, স্পষ্ট এবং কার্যকর প্রম্পট বা নির্দেশ লিখতে হয়। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী জেনারেটিভ এআই থেকে তার প্রত্যাশিত উত্তর বা ফলাফল দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বের করে আনতে পারবে।
আলোচ্য বিষয়:
কার্যকর প্রম্পট লেখার পাঁচটি মূল পদক্ষেপ এবং এর পেছনের যুক্তি—যা আপনাকে এআই-কে নিখুঁত নির্দেশ দিতে সাহায্য করবে।
দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রম্পটিং কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সময়ের সাশ্রয় এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি।
বিশেষত ডেটা বিশ্লেষণ এবং আকর্ষণীয় প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরির মতো জটিল কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রম্পটের ব্যবহার।
কথোপকথনের মাধ্যমে পরিচালিত এআই এজেন্ট ব্যবহারের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শসহ কার্যকর প্রম্পট তৈরি।
২. এআই এসেনশিয়ালস (AI Essentials)
(সময়: ৫ ঘণ্টা, স্ব-শিক্ষামূলক)
এই স্ব-শিক্ষামূলক কোর্সটি সব শিল্প এবং অভিজ্ঞতার স্তরের মানুষের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। দৈনন্দিন কাজকে আরও দ্রুত করতে এবং এআই ব্যবহার করার সময় উদ্ভাবনী উপায়ে চিন্তা করতে এই কোর্স অনুপ্রেরণা জোগাবে। এখানে শেখানো হবে কীভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এআই ব্যবহার করা যায়।
আলোচ্য বিষয়:
জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে নতুন ধারণা এবং কনটেন্ট তৈরি করার কৌশল।
উদ্দেশ্য অনুযায়ী ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রম্পটে পর্যাপ্ত বিশদ তথ্য দেওয়ার গুরুত্ব।
এআই সিস্টেমে থাকা পক্ষপাতের ঝুঁকিগুলো আবিষ্কার করা এবং তা দায়িত্বশীলভাবে পরিচালনা করা—যা এআই-এর নৈতিক ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য।
দ্রুত পরিবর্তনশীল এআই ল্যান্ডস্কেপ থেকে বর্তমান তথ্য ব্যবহার করা এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
৩. ছোট ব্যবসার জন্য এআই (AI for Small Business)
ছোট এবং মাঝারি আকারের উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে এই প্রোগ্রামটি ডিজাইন করা হয়েছে। এই কোর্স আপনাকে শেখাবে কীভাবে আপনার ব্যবসায়ের বৃদ্ধির জন্য সঠিক এআই টুলস নির্বাচন করতে হয়। এই কোর্সে গুগল এআই ব্যবহার করে বাস্তব ব্যবসায়িক সমস্যা (যেমন: গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করা বা ইনভেনটরি অপ্টিমাইজ করা) সমাধানের ব্যবহারিক সুযোগ রয়েছে।
৪. শিক্ষাবিদদের জন্য জেমিনি জেনারেটিভ এআই (Generative AI for Educators with Gemini)
(সময়: ২ ঘণ্টা)
এই সংক্ষিপ্ত কোর্সটি শিক্ষকদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানে জেমিনি মডেল ব্যবহার করে কীভাবে সম্পূর্ণরূপে নতুন কনটেন্ট (টেক্সট, ছবি, বা অন্যান্য মিডিয়া) তৈরি করা যায়, তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জেমিনি ব্যবহারের ক্ষেত্র:
সময় বাঁচানো এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা (যেমন: দ্রুত গ্রেডিং বা ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী কুইজ তৈরি)।
পাঠ পরিকল্পনা তৈরি, পুরোনো শিক্ষামূলক উপকরণ আপডেট করা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ দ্রুত শেষ করা।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে পাঠদান পদ্ধতিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য এআই (AI for Students)
শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়ালেখা এবং ভবিষ্যতের কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত হতে এআই-কে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে, তা বোঝানোর জন্যই এই কোর্সটি তৈরি। এখানে এআই ব্যবহারের চারটি প্রধান ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে:
হোমওয়ার্ক সহায়তা: দ্রুত তথ্য সংগ্রহ ও সংহত করে হোমওয়ার্কের আউটলাইন তৈরি করা এবং ধারণা স্পষ্ট করা।
পরীক্ষা প্রস্তুতি: কঠিন বিষয়বস্তু সহজে বোঝার জন্য ইন্টারেকটিভ লার্নিং টুলস হিসেবে এআই-এর সাহায্য নেওয়া।
লেখালেখি: প্রবন্ধ বা রিপোর্ট লেখার কাঠামো তৈরি করা এবং ব্যাকরণগত ভুল সংশোধনের মাধ্যমে লেখার মান উন্নত করা।
চাকরির সন্ধান: কার্যকর জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) তৈরি এবং চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য মক ইন্টারভিউ অনুশীলনের প্রস্তুতি নেওয়া।
গুগল বলেছেন, তাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো—শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং উদ্যোক্তাসহ সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য এআই-কে সহজলভ্য করা। এআই-এর জ্ঞানকে গণতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক করার এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মজীবনের নতুন সুযোগ সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে গুগল।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কোনো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু কাজের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করছে না, বরং শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ব্যবসায় জটিল প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং দ্রুত, নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই-এর অবদানকে একুশ শতকের বৃহত্তম প্রযুক্তিগত বিপ্লব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণেই পেশাজীবী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এআই-এর মৌলিক ধারণা ও প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করা এখন সময়ের দাবি।
গুগল সম্প্রতি পাঁচটি এআই কোর্স এবং প্রশিক্ষণ টুল চালু করেছে। এই টুলগুলোর ব্যবহার ইচ্ছুকদের এআই প্রযুক্তির গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে। গুগল জানিয়েছে, অনলাইন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো ব্যবহারকারীদের তাদের কাজ বা ব্যবসায় এআই-এর সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে সাহায্য করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
গুগল-এর পাঁচটি প্রধান এআই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম
১. প্রম্পটিং এসেনশিয়ালস (Prompting Essentials)
(সময়: ৬ ঘণ্টা, অনলাইন ও বিনা মূল্যে)
এই বিশেষ কোর্সটি মূলত কার্যকর এআই ব্যবহার শেখানোর জন্য তৈরি। গুগল-এর এআই বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত এই প্রোগ্রামে ব্যবহারকারীকে শেখানো হবে কীভাবে সুনির্দিষ্ট, স্পষ্ট এবং কার্যকর প্রম্পট বা নির্দেশ লিখতে হয়। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী জেনারেটিভ এআই থেকে তার প্রত্যাশিত উত্তর বা ফলাফল দ্রুত ও নির্ভুলভাবে বের করে আনতে পারবে।
আলোচ্য বিষয়:
কার্যকর প্রম্পট লেখার পাঁচটি মূল পদক্ষেপ এবং এর পেছনের যুক্তি—যা আপনাকে এআই-কে নিখুঁত নির্দেশ দিতে সাহায্য করবে।
দৈনন্দিন কাজকর্মে প্রম্পটিং কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সময়ের সাশ্রয় এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি।
বিশেষত ডেটা বিশ্লেষণ এবং আকর্ষণীয় প্রেজেন্টেশন স্লাইড তৈরির মতো জটিল কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য প্রম্পটের ব্যবহার।
কথোপকথনের মাধ্যমে পরিচালিত এআই এজেন্ট ব্যবহারের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শসহ কার্যকর প্রম্পট তৈরি।
২. এআই এসেনশিয়ালস (AI Essentials)
(সময়: ৫ ঘণ্টা, স্ব-শিক্ষামূলক)
এই স্ব-শিক্ষামূলক কোর্সটি সব শিল্প এবং অভিজ্ঞতার স্তরের মানুষের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। দৈনন্দিন কাজকে আরও দ্রুত করতে এবং এআই ব্যবহার করার সময় উদ্ভাবনী উপায়ে চিন্তা করতে এই কোর্স অনুপ্রেরণা জোগাবে। এখানে শেখানো হবে কীভাবে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এআই ব্যবহার করা যায়।
আলোচ্য বিষয়:
জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে নতুন ধারণা এবং কনটেন্ট তৈরি করার কৌশল।
উদ্দেশ্য অনুযায়ী ফলাফল পাওয়ার জন্য প্রম্পটে পর্যাপ্ত বিশদ তথ্য দেওয়ার গুরুত্ব।
এআই সিস্টেমে থাকা পক্ষপাতের ঝুঁকিগুলো আবিষ্কার করা এবং তা দায়িত্বশীলভাবে পরিচালনা করা—যা এআই-এর নৈতিক ব্যবহারের জন্য অপরিহার্য।
দ্রুত পরিবর্তনশীল এআই ল্যান্ডস্কেপ থেকে বর্তমান তথ্য ব্যবহার করা এবং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
৩. ছোট ব্যবসার জন্য এআই (AI for Small Business)
ছোট এবং মাঝারি আকারের উদ্যোক্তাদের কথা মাথায় রেখে এই প্রোগ্রামটি ডিজাইন করা হয়েছে। এই কোর্স আপনাকে শেখাবে কীভাবে আপনার ব্যবসায়ের বৃদ্ধির জন্য সঠিক এআই টুলস নির্বাচন করতে হয়। এই কোর্সে গুগল এআই ব্যবহার করে বাস্তব ব্যবসায়িক সমস্যা (যেমন: গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করা বা ইনভেনটরি অপ্টিমাইজ করা) সমাধানের ব্যবহারিক সুযোগ রয়েছে।
৪. শিক্ষাবিদদের জন্য জেমিনি জেনারেটিভ এআই (Generative AI for Educators with Gemini)
(সময়: ২ ঘণ্টা)
এই সংক্ষিপ্ত কোর্সটি শিক্ষকদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানে জেমিনি মডেল ব্যবহার করে কীভাবে সম্পূর্ণরূপে নতুন কনটেন্ট (টেক্সট, ছবি, বা অন্যান্য মিডিয়া) তৈরি করা যায়, তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
জেমিনি ব্যবহারের ক্ষেত্র:
সময় বাঁচানো এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা (যেমন: দ্রুত গ্রেডিং বা ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী কুইজ তৈরি)।
পাঠ পরিকল্পনা তৈরি, পুরোনো শিক্ষামূলক উপকরণ আপডেট করা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ দ্রুত শেষ করা।
সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে পাঠদান পদ্ধতিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য এআই (AI for Students)
শিক্ষার্থীরা কীভাবে পড়ালেখা এবং ভবিষ্যতের কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত হতে এআই-কে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে, তা বোঝানোর জন্যই এই কোর্সটি তৈরি। এখানে এআই ব্যবহারের চারটি প্রধান ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে:
হোমওয়ার্ক সহায়তা: দ্রুত তথ্য সংগ্রহ ও সংহত করে হোমওয়ার্কের আউটলাইন তৈরি করা এবং ধারণা স্পষ্ট করা।
পরীক্ষা প্রস্তুতি: কঠিন বিষয়বস্তু সহজে বোঝার জন্য ইন্টারেকটিভ লার্নিং টুলস হিসেবে এআই-এর সাহায্য নেওয়া।
লেখালেখি: প্রবন্ধ বা রিপোর্ট লেখার কাঠামো তৈরি করা এবং ব্যাকরণগত ভুল সংশোধনের মাধ্যমে লেখার মান উন্নত করা।
চাকরির সন্ধান: কার্যকর জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) তৈরি এবং চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য মক ইন্টারভিউ অনুশীলনের প্রস্তুতি নেওয়া।
গুগল বলেছেন, তাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো—শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং উদ্যোক্তাসহ সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্য এআই-কে সহজলভ্য করা। এআই-এর জ্ঞানকে গণতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক করার এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কর্মজীবনের নতুন সুযোগ সৃষ্টিতে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে গুগল।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে সব সময়ই কিছুটা উদ্বেগ ও হতাশা থাকে। তবে আলট্রা-থিন আইফোন এয়ার ব্যবহার করুন বা শক্তিশালী আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক—সম্প্রতি আইওএস ২৬ অপারেটিং সিস্টেমে একটি নতুন সেটিংস যুক্ত করা হয়েছে। এই সেটিংস আইফোনের ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
অনলিফ্যানস মূলত একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নির্মাতারা সরাসরি ভক্তদের কাছ থেকে আয় করতে পারেন। তবে এটি অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো নয়। এখানে নির্মাতারা ছবি, ভিডিও, লাইভস্ট্রিম এবং বার্তা শেয়ার করে আয় করতে পারেন।
১ দিন আগে
চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ওয়েব ব্রাউজার ‘চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস’ বাজারে আসার খবর প্রকাশ হতেই যেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গুগল ক্রোমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের দুর্দিন শুরু হয়ে গেল।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ওয়েব ব্রাউজার ‘চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস’ বাজারে আসার খবর প্রকাশ হতেই যেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গুগল ক্রোমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের দুর্দিন শুরু হয়ে গেল।
অনলাইন সার্চে গুগলকে বেআইনি একচেটিয়া আধিপত্যকারী ঘোষণার এক বছর পর ওপেনএআই এই ব্রাউজার নিয়ে এল।
গতকাল মঙ্গলবার দ্রুত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠা ওয়েব ব্রাউজারের বাজারে চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাসকে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন ওপেনএআইর সিইও স্যাম অল্টম্যান। এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই অ্যালফাবেটের শেয়ারের মূল্য ৩ শতাংশ কমে যায়।
অল্টম্যান জানান, চ্যাটজিপিটিকে কেন্দ্র করে তৈরি এই ওয়েবসাইটটি গতকাল মঙ্গলবার অ্যাপলের ম্যাকওএস অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই উইন্ডোজ ও মোবাইল ডিভাইসে এটির যাত্রা শুরু বলে আশা করছেন তিনি।
ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারী এবং এআই খাতে বিপুল বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে নতুন উপায়ে আয় বাড়াতে চাচ্ছে ওপেনএআই। সেই লক্ষ্যেই ওয়েব ব্রাউজার আনল প্রতিষ্ঠানটি। অল্টম্যান বলেন, ‘আরও অনেক কিছু যোগ করার আছে। সবেমাত্র শুরু।’
ওপেনএআই জানিয়েছে, অ্যাটলাসে একটি পেইড ‘এজেন্ট মোড’ থাকবে। এর মাধ্যমে চ্যাটবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্চ বা অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। তবে এজেন্ট মোড শুধু পেইড চ্যাটজিপিটি সাবস্ক্রাইবারদের জন্য থাকবে। এজেন্ট মোড ব্যবহারকারীর মাউস ও কীবোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম।
অল্টম্যান জানান, অ্যাটলাসের এজেন্ট মোড আপাতত শুধু প্লাস এবং প্রো ব্যবহারকারীদের জন্য সীমিত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘এই এজেন্টটি আপনার জন্য কাজ করবে, আপনাকে আরও ভালোভাবে জানবে, প্রয়োজনীয় তথ্য আগেভাগেই সংগ্রহ করবে, ইন্টারনেটে আপনি যা চাইতে পারেন তা খুঁজে বের করবে এবং সেগুলো একত্রিত করবে, যা আমরা একটু দেখিয়েছি। আমরা মনে করি, এটিকে আমরা যথেষ্ট দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পারব।’
মঙ্গলবার এই ঘোষণার আগে ওপেনএআই একাধিক চুক্তি এবং পণ্যের ঘোষণা দেয়। এনভিডিয়ার সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়ানো এবং এআই-জেনারেটেড কনটেন্টের জন্য টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপ সোরা ২-এর লঞ্চ করে তারা।
ওয়েব ব্রাউজারগুলো ক্রমেই এআইর সঙ্গে সমন্বিত হয়ে যাচ্ছে। গুগল ক্রোমসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে জেমিনি এআইকে একীভূত করার কাজ করছে। মাইক্রোসফটও এজ ব্রাউজারে এআই ফিচার যুক্ত করেছে।
এছাড়াও, পারপ্লেক্সিটির মতো অনেক এআই স্টার্টআপ এআই ব্রাউজারের অভিজ্ঞতা সরবরাহ করছে, যার মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি চালু হওয়া কমেট ব্রাউজার উল্লেখযোগ্য।
যদি কারও মনে দ্বিধা থাকে তাহলে ওপেনএআই আশা করছে, ব্যবহারকারীরা ক্রোম, সাফারি বা এজ ছেড়ে তাদের প্ল্যাটফর্মে আসবে। অ্যাটলাস স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে ডাউনলোড পেজে। তারা লিখেছে, ‘চ্যাটজিপিটিকে ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে সেট করুন এবং ৭ দিনের জন্য বুস্টেড লিমিট পান।’
চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৮০ কোটি। এই ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ই-কমার্স সাইট ইটসি ও শপিফাই এবং বুকিং পরিষেবা এক্সপিডিয়া ও বুকিং ডটকমের সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি করেছে।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত ওয়েব ব্রাউজার ‘চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাস’ বাজারে আসার খবর প্রকাশ হতেই যেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রাউজার গুগল ক্রোমের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের দুর্দিন শুরু হয়ে গেল।
অনলাইন সার্চে গুগলকে বেআইনি একচেটিয়া আধিপত্যকারী ঘোষণার এক বছর পর ওপেনএআই এই ব্রাউজার নিয়ে এল।
গতকাল মঙ্গলবার দ্রুত প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠা ওয়েব ব্রাউজারের বাজারে চ্যাটজিপিটি অ্যাটলাসকে নিয়ে আসার ঘোষণা দেন ওপেনএআইর সিইও স্যাম অল্টম্যান। এই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই অ্যালফাবেটের শেয়ারের মূল্য ৩ শতাংশ কমে যায়।
অল্টম্যান জানান, চ্যাটজিপিটিকে কেন্দ্র করে তৈরি এই ওয়েবসাইটটি গতকাল মঙ্গলবার অ্যাপলের ম্যাকওএস অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই উইন্ডোজ ও মোবাইল ডিভাইসে এটির যাত্রা শুরু বলে আশা করছেন তিনি।
ক্রমবর্ধমান ব্যবহারকারী এবং এআই খাতে বিপুল বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে নতুন উপায়ে আয় বাড়াতে চাচ্ছে ওপেনএআই। সেই লক্ষ্যেই ওয়েব ব্রাউজার আনল প্রতিষ্ঠানটি। অল্টম্যান বলেন, ‘আরও অনেক কিছু যোগ করার আছে। সবেমাত্র শুরু।’
ওপেনএআই জানিয়েছে, অ্যাটলাসে একটি পেইড ‘এজেন্ট মোড’ থাকবে। এর মাধ্যমে চ্যাটবট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্চ বা অনুসন্ধান প্রক্রিয়া পরিচালনা করবে। তবে এজেন্ট মোড শুধু পেইড চ্যাটজিপিটি সাবস্ক্রাইবারদের জন্য থাকবে। এজেন্ট মোড ব্যবহারকারীর মাউস ও কীবোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম।
অল্টম্যান জানান, অ্যাটলাসের এজেন্ট মোড আপাতত শুধু প্লাস এবং প্রো ব্যবহারকারীদের জন্য সীমিত থাকবে।
তিনি বলেন, ‘এই এজেন্টটি আপনার জন্য কাজ করবে, আপনাকে আরও ভালোভাবে জানবে, প্রয়োজনীয় তথ্য আগেভাগেই সংগ্রহ করবে, ইন্টারনেটে আপনি যা চাইতে পারেন তা খুঁজে বের করবে এবং সেগুলো একত্রিত করবে, যা আমরা একটু দেখিয়েছি। আমরা মনে করি, এটিকে আমরা যথেষ্ট দূর পর্যন্ত এগিয়ে নিতে পারব।’
মঙ্গলবার এই ঘোষণার আগে ওপেনএআই একাধিক চুক্তি এবং পণ্যের ঘোষণা দেয়। এনভিডিয়ার সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়ানো এবং এআই-জেনারেটেড কনটেন্টের জন্য টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপ সোরা ২-এর লঞ্চ করে তারা।
ওয়েব ব্রাউজারগুলো ক্রমেই এআইর সঙ্গে সমন্বিত হয়ে যাচ্ছে। গুগল ক্রোমসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে জেমিনি এআইকে একীভূত করার কাজ করছে। মাইক্রোসফটও এজ ব্রাউজারে এআই ফিচার যুক্ত করেছে।
এছাড়াও, পারপ্লেক্সিটির মতো অনেক এআই স্টার্টআপ এআই ব্রাউজারের অভিজ্ঞতা সরবরাহ করছে, যার মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি চালু হওয়া কমেট ব্রাউজার উল্লেখযোগ্য।
যদি কারও মনে দ্বিধা থাকে তাহলে ওপেনএআই আশা করছে, ব্যবহারকারীরা ক্রোম, সাফারি বা এজ ছেড়ে তাদের প্ল্যাটফর্মে আসবে। অ্যাটলাস স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে ডাউনলোড পেজে। তারা লিখেছে, ‘চ্যাটজিপিটিকে ডিফল্ট ব্রাউজার হিসেবে সেট করুন এবং ৭ দিনের জন্য বুস্টেড লিমিট পান।’
চ্যাটজিপিটির সাপ্তাহিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৮০ কোটি। এই ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ই-কমার্স সাইট ইটসি ও শপিফাই এবং বুকিং পরিষেবা এক্সপিডিয়া ও বুকিং ডটকমের সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি করেছে।

তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আইফোনের ব্যাটারির স্থায়িত্ব নিয়ে সব সময়ই কিছুটা উদ্বেগ ও হতাশা থাকে। তবে আলট্রা-থিন আইফোন এয়ার ব্যবহার করুন বা শক্তিশালী আইফোন ১৭ প্রো ম্যাক—সম্প্রতি আইওএস ২৬ অপারেটিং সিস্টেমে একটি নতুন সেটিংস যুক্ত করা হয়েছে। এই সেটিংস আইফোনের ব্যাটারি লাইফ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে।
২ ঘণ্টা আগে
অনলিফ্যানস মূলত একটি সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নির্মাতারা সরাসরি ভক্তদের কাছ থেকে আয় করতে পারেন। তবে এটি অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর মতো নয়। এখানে নির্মাতারা ছবি, ভিডিও, লাইভস্ট্রিম এবং বার্তা শেয়ার করে আয় করতে পারেন।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর কোনো ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। এটি শুধু কাজের পদ্ধতিকে পরিবর্তন করছে না, বরং শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। ব্যবসায় জটিল প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং দ্রুত, নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এআই-এর অবদানকে একুশ শতকের বৃহত্তম...
১ দিন আগে