অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।
বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রবেশের শুরুর দিকে ওয়েবে বাংলা লেখা বা বাংলায় কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। ওই সময় ওয়েবসাইটে কোনো বাংলা লেখা ছবি কিংবা পিডিএফ করে দিতে হতো। ই–মেইল করার ক্ষেত্রে বাংলা লেখা একেবারেই অসম্ভব ছিল।
তখন কম্পিউটারে বাংলা লেখার জনপ্রিয় সফটওয়্যার বিজয়। কিন্তু ইন্টারনেটে বাংলা লেখার জন্য সেটি কোনো কাজের ছিল না। ইউনিকোড না থাকায় বিজয় ক্রমেই অকেজো হয়ে পড়ছিল। সেই নতুন সময়ের দাবিতেই এল ‘অভ্র’। মেহদী হাসান খান নামের এক তরুণ সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করলেন অভ্র সফটওয়্যার। প্রথম ইউনিকোড বাংলা লেখার সফটওয়্যার এটি। শুধু তা–ই নয়, সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে তিনি এটি ছড়িয়ে দিলেন। এ ছাড়া এটি ওপেন সোর্স। অর্থাৎ এর সোর্সকোড উন্মুক্ত। যে কেউ এটির পরিবর্তন ও ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারেন।
অভ্রর জনপ্রিয়তা এখন আকাশচুম্বী। মূলত ইউনিকোড ভিত্তিক হওয়ায় ইন্টারনেটে লেখালেখির সুবিধা আর ফোনেটিক পদ্ধতিতে (কি–বোর্ডে রোমান হরফ লিখে বাংলায় পরিবর্তনের সুবিধা) লেখার সুযোগ—এই দুটি কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে অভ্রর জনপ্রিয়তার ধারেকাছে কোনো বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নেই। এখন ব্লগ, ফেসবুকসহ সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে অভ্র দিয়ে বাংলা লেখা হচ্ছে।
অভ্র তৈরির শুরুর গল্প
আজকের অভ্র কি–বোর্ড নামের সফটওয়্যারটি বিশেষ করে এক ব্যক্তির ১০ বছরের পরিশ্রমের ফল। মেহদী হাসান খান ৯ম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামিংয়ের বই কিনে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতেন।
১৯৮৬ সালের ২৩ জুলাই ঢাকায় জন্ম মেহদী হাসান খানের। ঢাকার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন মেহদী। ২০০১ সালে মাধ্যমিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে। ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ভর্তি হন। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় গিয়েছিলেন মেহদী। সেখানে বাংলা ইনোভেশন থ্রু ওপেন সোর্স—বায়োসের স্টলে গিয়ে তাঁর ভাষায় ‘প্রথম খাঁটি বাংলা’ ওয়েবসাইট দেখলেন। ইউনিকোডে বাংলা লেখাও দেখলেন। ইউনিবাংলা নামে তারা পুরো একটা অপারেটিং সিস্টেমও তৈরি করেছিল। অবশ্য সেটি ছিল মূলত লিনাক্স–এরই একটি সংস্করণ। বাসায় ফিরে তাদের ওপেন টাইপ ফন্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করেন। কিন্তু এটি শুধু বাংলা ভাষায় কাস্টমাইজ করা লিনাক্সের জন্য। ক্যারেক্টার চার্টে মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে বাংলা লিখতে হয়। জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের জন্য এই সুবিধা ছিল না।
তখনই মেহদী সিদ্ধান্ত নেন উইন্ডোজের জন্য বাংলা লেখার সফটওয়্যার বানাবেন। তিনি বাংলা লিনাক্সের ওই ফন্টটি নিজের কম্পিউটারে ইনস্টল করেন। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ভাষা ভিজ্যুয়াল বেসিক ডটনেট দিয়ে লিখে ফেলেন ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা সফটওয়্যার। ফোনেটিক পদ্ধতিও তৈরি করে ফেলেন। সেটি ছিল উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন।
পরে ভারতের একটি বাংলা ফন্ট প্রতিযোগিতায় ই–মেইল করে নিজের বানানো প্রোটোটাইপ পাঠান মেহদী হাসান। তারা জানাল, অ্যাপ্লিকেশনটি ঘন ঘন ক্র্যাশ করেছে।
আবার রাত জেগে প্রোটোটাইপের বাগ সারানোর কাজ করেন মেহদী হাসান। ডটনেট বাদ দিয়ে ক্ল্যাসিক ভিজুয়াল বেসিকে সবগুলো কোড নতুন করে লিখেন মেহদী। পরবর্তীতে আবারও একেবারে নতুন করে কোড লেখা হয় Delphi/Object Pascal–এ। বর্তমানে অভ্র এই ফ্রেমওয়ার্কেই আছে।
মেহদী হাসান ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশ করেন অভ্র নামের সফটওয়্যারটি। অভিধান ঘেঁটে ‘অভ্র’ শব্দ পছন্দ হয় মেহদীর। অভ্র মানে আকাশ। ইউনিকোডের পাশাপাশি বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, তাই উন্মুক্ত আকাশের প্রতিশব্দ বেছে নেন মেহদী। সবাই যাতে অভ্র ইন্টারনেট থেকে সরাসরি সংগ্রহ করতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইটও প্রকাশ করেন মেহদী। সেটির নাম ওমিক্রনল্যাব ডটকম। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’ বই থেকে ওমিক্রন নামটি নিয়েছিলেন তিনি।
অভ্রর প্রথম সংস্করণে লেখার জন্য বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট ছিল। অনেকে কি–বোর্ড মুখস্থ করার ভয়ে রোমান হরফে বাংলা লিখতেন। তাঁদের জন্য সহজে বাংলা টাইপ করতে মেহদী নিজেই বানিয়ে ফেলেন অভ্র ইজি। অনলাইন ফোরামের যুগ সে সময়। তাই ওমিক্রনের ওয়েবসাইটে ফোরাম খোলা হলো। ফোরামে অভ্র’র ব্যবহারকারীরা ফিডব্যাক দিতেন, বাগ রিপোর্ট করতেন, প্রশ্নোত্তর চলতো। পরে অভ্রের সঙ্গে যুক্ত হন—রিফাত উন নবী, তানবিন ইসলাম, শাবাব মুস্তাফা, ওমর ওসমান—আরও পরে সারিম খান। তাঁরা সবাই অভ্রের জন্য কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে।
ধীরে ধীরে অভ্রতে যোগ হয় অভ্র ইজি, ন্যাশনাল, প্রভাত, মুনীর অপটিমা, ইউনি বিজয় (২০১১ সাল থেকে এটি নেই) বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট। বর্তমানে অভ্রের ৫.৬. ০ সংস্করণ ওমিক্রনের ওয়েবসাইট থেকে নামানো যায়। এখনো এটি বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়। অভ্রের স্লোগান হলো, ‘ভাষা হোক উন্মুক্ত।’
অভ্র দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময়ের জনপ্রিয় প্রযুক্তি বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘কম্পিউটার টুমোরো’ মেহদীর অভ্রকে নিয়ে ফিচার প্রতিবেদন করে। ম্যাগাজিনটির সেই সংখ্যার সঙ্গে অভ্রের সিডির একটি করে কপি ফ্রি দেওয়া হয়।
২০০৭ সালে ‘অভ্র কি–বোর্ড পোর্টেবল এডিশন’ বিনা মূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। অভ্রের সোর্স কোড উন্মুক্ত, অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই গিটহাব রিপোজিটরি থেকে এর উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।
উল্লেখ্য, ভার্সন ৫–এর পর থেকে অভ্রকে ফ্রিওয়্যার থেকে ওপেন সোর্সে রূপান্তর করা হয় এবং এটি ‘মজিলা পাবলিক লাইসেন্স’ (এমপিএল)–এর অধীনে লাইসেন্সকৃত।
ওপেন সোর্স হওয়ায় অভ্র সফটপিডিয়াতে শতভাগ স্পাইওয়্যার/অ্যাডওয়্যার/ভাইরাস মুক্ত সফটওয়্যার হিসেবে স্বীকৃত। মাইক্রোসফটের অনলাইন সংগ্রহশালায় ইন্ডিক ভাষাগুলোর সমাধানের তালিকায় অভ্র কি–বোর্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অভ্র ব্যবহার করে।
এ ছাড়া অভ্রকে বাংলা কি–বোর্ড রিসোর্স হিসেবে ইউনিকোড সংস্থার ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস বা বেসিস বাংলা তথ্য প্রযুক্তিতে বিশেষ অবদানের জন্য অভ্র টিমকে ২০১১ সালে ‘বিশেষ অবদান পুরস্কার’ (Special Contribution Award) দেয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২৫ সালের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে একুশে পদকের জন্য মেহদী হাসান খানের নাম ঘোষণা করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
ডা. মেহদী হাসান খান এখন পুরো দস্তুর প্রোগ্রামার। প্রোগ্রামিং নিয়েই তাঁর ব্যস্ততা। অবসর ছেলে অর্ক হাসান খানের সঙ্গে।
এক নজরে ‘অভ্র’:
মূল উদ্ভাবক: ডা. মেহদী হাসান খান
উন্নয়নকারী: ওমিক্রনল্যাব
প্রাথমিক সংস্করণ: ২৬ মার্চ ২০০৩
স্থায়ী মুক্তি: ৫.৬. ০ / ২৭ আগস্ট ২০১৯
প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ: সি++, ডেলফি
অপারেটিং সিস্টেম: উইন্ডোজ এক্স পি, ভিস্তা, ৭, ৮,৮. ১,১০, লিনাক্স, ম্যাক।
প্ল্যাটফর্ম: উইন্ডোজ (অভ্র), লিনাক্স (ibus-avro), ম্যাক ওএস (iAvro), অ্যান্ড্রয়েড (রিদমিক), আইওএস (রিদমিক)।
লাইসেন্স: ওপেন সোর্স, মোজিলা পাবলিক লাইসেন্স।
লে–আউট: প্রভাত, মুনির অপটিমা, অভ্র ইজি (ওমিক্রন ল্যাব প্রকাশিত সহজ একটি লে–আউট), বর্ণনা, জাতীয় (বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল প্রকাশিত বাংলা লে–আউট)
মেহদী হাসান খান অভ্র নিয়ে কখনো বাণিজ্যিক চিন্তা করেননি। শখের বসে তৈরি করা অভ্র বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থায় ব্যবহার করেছে। যার কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে নির্বাচন কমিশনের ৫ কোটি টাকার মতো বেঁচে যায়। ভারতীয় বাঙালিদের মধ্যে অভ্র এখন ব্যাপক জনপ্রিয়।
অভ্র ও বিজয় দ্বন্দ্ব
কম্পিউটারে বাংলা লেখার সূচনা হয় ১৯৮৬ সালে। আর শুরুটা হয় ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারের হাত ধরে। সে সময় শহীদ লিপির মাধ্যমে ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে বাংলা লেখা শুরু হয়। প্রথম বাংলা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক ছিলেন ড. সাইফ উদ দোহা শহীদ। তবে বেশি দূর এগোতে পারেনি শহীদ লিপি। দ্রুতই তাঁর অবস্থান দখল করে বিজয়।
বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের শুরু ১৯৮৭ সালের ১৬ মে। আনন্দ কম্পিউটারস কি–বোর্ড উন্মোচন করে ১৯৮৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আনন্দ কম্পিউটারসের প্রতিষ্ঠাতা এবং স্বত্বাধিকারী মোস্তাফা জব্বার। বিজয় বাংলা কম্পিউটিং প্রকাশনা শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। ১৯৯৩ সালের আগে পর্যন্ত ডস ও উইন্ডোজভিত্তিক প্ল্যাটফর্মের জন্য আলাদা সফটওয়্যার চালু ছিল। ১৯৯৩ সালের ২৬ মার্চ পারসোনাল কম্পিউটারের জন্য বিজয় সফটওয়্যারের উন্নয়ন করা হয়। আর এ সময় থেকে উইন্ডোজ ও ম্যাকিনটোশে সমানভাবে বাংলা ব্যবহার চলতে থাকে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা ভাষার ব্যবহার সহজ করতে ইউনিকোড প্রযুক্তি সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। ইউনিকোডভিত্তিক সফটওয়্যার হওয়ায় বাংলা কম্পিউটিংয়ে অভ্র শক্তিশালী ভূমিকা রেখে চলেছে।
কিন্তু বিজয়ের স্বত্বাধিকারী ও বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার দৈনিক জনকণ্ঠে ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ‘সাইবার যুদ্ধের যুগে প্রথম পা। একুশ শতক’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লেখেন। নিবন্ধের মূল বক্তব্য ছিল ওই সময় সরকারি অনেক ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের ঘটনা। তবে লেখার মধ্যে অভ্র কি–বোর্ড, জাতিসংঘের ইউএনডিপি এবং নির্বাচন কমিশনকে টেনে আনেন। অভ্রকে ‘পাইরেটেড সফটওয়্যার’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেটেড সংস্করণ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই হ্যাকাররা চরম পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছে। এ হ্যাকার ও পাইরেটদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির নামও যুক্ত আছে। অভ্র নামক একটি পাইরেটেড বাংলা সফটওয়্যারকে নির্বাচন কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ইউএনডিপির অবদান সবচেয়ে বেশি।
তাঁর এই লেখার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভ্র ব্যবহারকারীরা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। ফেসবুক, ব্লগ ও বিভিন্ন ফোরামে এ নিয়ে নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। কিছু কিছু সাইট প্রতিবাদে তাদের ব্যানারও পরিবর্তন করে।
কিন্তু মোস্তাফা জব্বার ক্ষান্ত হননি। তিনি কপিরাইট অফিসে লিখিত অভিযোগ করেন অভ্র সফটওয়্যারের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওমিক্রন ল্যাবের প্রধান নির্বাহী মেহদী হাসান খানের বিরুদ্ধে। কপিরাইট অফিস মেহদীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। পরবর্তীতে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে সমঝোতা হয়। অভ্র কি–বোর্ড সফটওয়্যার থেকে ইউনিবিজয় লে–আউট সরিয়ে নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নে নির্বাচন কমিশন ‘বাণিজ্যিক বিজয়’–এর পরিবর্তে বিনা মূল্যে অভ্র ব্যবহার করে। বেঁচে যায় রাষ্ট্রের ৫ কোটি টাকা। অনেকে বলেন, অভ্র একটি ইউনিকোড, বিনা মূল্যের ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও মোস্তাফা জব্বারের এমন আচরণের পেছনে রয়েছে এই প্রকল্প হাতছাড়া হওয়া। নির্বাচন কমিশনে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্পে বিজয়ের পরিবর্তে অভ্র ব্যবহার করায় প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলেও জনকণ্ঠের ওই নিবন্ধে উল্লেখ করেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয়–রিদমিক বিতর্ক
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৯ তারিখে গুগল প্লে স্টোরে উন্মুক্ত করা হয় বিজয় বাংলা সফটওয়্যারের অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ। এরপর এই অ্যাপটি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফা জব্বার। সেই স্ট্যাটাসে এই জাতীয় অ্যাপগুলোর বিরুদ্ধে বিজয় বাংলা কি–বোর্ড লে–আউট অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে গুগলের পক্ষ থেকে রিদমিক এবং ইউনিবিজয় কি–বোর্ডের ডেভেলপারের কাছে পৃথক ই–মেইল নোটিশ পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, মোস্তাফা জব্বার অ্যাপ দুটির বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়েছেন গুগলের কাছে। আর এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই গুগল যুক্তরাষ্ট্রের DMCA আইন অনুসারে অ্যাপ দুটি অপসারণ করেছে।
পরে নতুন লে–আউট করে প্লেস্টোরে আবারও রিদমিক কি–বোর্ড প্রকাশ করা হয়।
মূলত অভ্রের বিরুদ্ধে কি–বোর্ডের লে–আউট কপি করার অভিযোগ করে থাকেন মোস্তাফা জব্বার। যদিও বিজয়ের কপিরাইট (১৯৮৮) নাকি পেটেন্ট (২০০৮) কোনটি নিয়ে অভিযোগ তা পরিষ্কার করা হয়নি। বিজয়ের পেটেন্ট দাবি করার বিষয়টি দুর্বল কারণ ২০০৮ নাগাদ এমন প্রচুর পেটেন্ট আছে। বিজয়ের লে–আউট কপিরাইটের বিষয়টিও বিতর্কিত। অনেকে মনে করেন, মুনীর লে–আউটের সঙ্গে বিজয়ের পার্থক্য সামান্যই। অথচ একই যুক্তিতে অভ্রতে ইউনিবিজয় কি–বোর্ড যুক্ত করা হয়েছিল, যেটিতে বিজয়ের লে–আউটের কয়েকটি অক্ষর এদিক–সেদিক করা ছিল। এ ছাড়া ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হওয়ায় এর লে–আউট ইচ্ছেমতো পরিবর্তন করে নেওয়া যায়।
বিশ্বের প্রযুক্তির ইতিহাসে ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল ছিল এক বিশাল পরিবর্তনের যুগ। দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দেওয়ার পাশাপাশি সমাজ, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির কাঠামোকেই নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছে এই দশকের বেশ কিছু উদ্ভাবন। দুনিয়া কাঁপানো সেই প্রযুক্তিগুলো এক নজরে দেখে নেওয়া যাক...
৭ ঘণ্টা আগেকম্পিউটারভিত্তিক ৭০ শতাংশ পেশা বিলুপ্ত করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি। যুক্তরাজ্যের নতুন এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এআই প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন এবং এর ব্যবহারের ওপর সরকারের আরও নজরদারি প্রয়োজন।
৯ ঘণ্টা আগেচীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপসিকের তৈরি ‘ডিপসিক এআই’ মডেল উন্মোচনের মাধ্যমে এআই খাতে খরচ কমানোর বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এই মুহূর্তে আমাজন এক বিস্ফোরক ঘোষণা দিয়ে সবাইকে অবাক করেছে। প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরেই এআই খাতে ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি খরচ করার পরিকল্পনা ঘোষণা...
১১ ঘণ্টা আগেঅ্যাপলের সাশ্রয়ী মূল্যের আইফোন মডেল এসই ৪ উন্মোচন হতে পারে আগামী সপ্তাহে। আর মডেলটির বিক্রি শুরু হবে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে। অ্যাপল বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ব্লুমবার্গের প্রতিবেদক মার্ক গুরম্যান সম্প্রতি এ তথ্য জানিয়েছেন।
১৩ ঘণ্টা আগে