Ajker Patrika

মেটার বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা, বিক্রি হতে পারে ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ৩৫
২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনতে ১৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে মেটা। ছবি: ডেইলি জাঙ্গ
২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনতে ১৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে মেটা। ছবি: ডেইলি জাঙ্গ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট মেটার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার বিচার শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার। মামলাটি অভিযোগ হলো—প্রতিযোগিতা এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে এক দশক আগে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নিয়ে বাজারে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছে মেটা। এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে মেটাকে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করে দিতে বাধ্য করা হতে পারে।

এফটিসির আইনজীবী ড্যানিয়েল ম্যাথেসন বলেন, ‘প্রতিযোগিতা করা কঠিন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বীদের কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।’

এদিকে, মেটার পক্ষের আইনজীবী মার্ক হ্যানসেন বলেন, ‘এই মামলা বিভ্রান্তিকর। এফটিসি তখনকার নিয়ম মেনেই এই অধিগ্রহণ অনুমোদন করেছিল। মেটার দাবি, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কিনে তারা সেবাগুলো আরও উন্নত ও বিস্তৃত করেছে।

এফটিসি যদি মামলায় জয় পায়, তাহলে মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গকে কোম্পানিটি বিক্রি করতে বাধ্য করা হতে পারে। অর্থাৎ, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপকে আলাদা কোম্পানি হিসেবে গড়ে তোলা।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম কিনতে ১ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনতে ১৯ বিলিয়ন ডলার খরচ করে মেটা। এই অধিগ্রহণ ফেসবুকের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক হুমকিকে প্রতিরোধ করার কৌশল বলে উল্লেখ করেন ভ্যান্ডারবিল্ট ল স্কুলের অ্যান্টিট্রাস্ট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রেবেকা হ’অ্যালেনসওয়ার্থ।

তিনি বলেন, ‘মার্ক জাকারবার্গ নিজেই এক ই-মেইলে লিখেছিলেন—প্রতিযোগিতা না করে কিনে নেওয়া ভালো। এটি মামলার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রমাণ হতে পারে।’

মেটার দাবি, তারা এখনো টিকটক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউব ও আইমেসেজের মতো নানা প্রতিযোগীর মুখোমুখি হচ্ছে।

মামলায় জাকারবার্গ ও মেটার সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গকে সাক্ষ্য দিতে হতে পারে।

রাজনৈতিক মোড় ও সমালোচনা

ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদে দায়ের করা মামলাটি তার দ্বিতীয় মেয়াদে এসে রাজনৈতিক রূপ নিতে পারে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, জাকারবার্গ নিজে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে মামলা বন্ধ করতে লবিং করেছিলেন।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার পর মেটার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিষিদ্ধ করায় ট্রাম্প ও মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের সম্পর্ক কিছুটা খারাপ হয়ে পড়ে।

তবে সময়ের সঙ্গে সেই সম্পর্ক কিছুটা উষ্ণ হয়েছে।

মেটা সম্প্রতি ট্রাম্পের অভিষেক তহবিলে ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার পাউন্ড) অনুদান দিয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হয়েছেন ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ডিনা পাওয়েল ম্যাককরমিক এবং আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপের (ইউএফসি) প্রধান ও ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ডানা হোয়াইট।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে মেটা আরও ঘোষণা দেয়, তারা স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রাম ব্যবহার বন্ধ করছে। একই সঙ্গে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হামলার পর ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট সাময়িক স্থগিতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন এফটিসির দুই ডেমোক্র্যাট কমিশনার রেবেকা স্লটার ও আলভারো বেডোয়াকে বরখাস্ত করে। তারা বলছেন, এই পদক্ষেপ স্বাধীন সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক চাপে ফেলার চেষ্টা।

এফটিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রু ফার্গুসন ট্রাম্পের নিযুক্ত এবং তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, ‘স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলো গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুগলের বিরুদ্ধে অনলাইন সার্চে একচেটিয়াতন্ত্র প্রমাণ করা যেমন সহজ ছিল, মেটার বিরুদ্ধে এটি কঠিন হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লরা ফিলিপস-স্যায়ের মনে করেন, মেটার বিরুদ্ধে এফটিসির মামলাটি প্রমাণ করা সহজ হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এফটিসির জন্য এটা সত্যিকারের কঠিন এক লড়াই হতে যাচ্ছে। ইনস্টাগ্রাম কিংবা হোয়াটসঅ্যাপকে বিভাজনের (ডিভেস্টমেন্ট) প্রশ্নে তাদের অনেক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত