Ajker Patrika

পাগলাটে ম্যাচে ‘শ্বাসরুদ্ধকর’ নিষ্পত্তি 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

ম্যাচে পেনাল্টি হলো তিনটি। গোলের সংখ্যা ৬। নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে গোল হলো দুইবার। ক্ষণে ক্ষণে পাল্টালো ম্যাচের মোড়। দেশের ঘরোয়া ফুটবলে এমন পাগলাটে ম্যাচ শেষ কবে হয়েছে তা রীতিমতো গবেষণা বিষয়! পাগলাটে ম্যাচের নিষ্পত্তিটাও হলো শ্বাসরুদ্ধকরভাবে। ৩-৩ গোলের সমতায় থাকা ম্যাচে টাইব্রেকারে সাইফ স্পোর্টিংকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে চার বছর পর ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনী। ৯ জানুয়ারির ফাইনালে আকাশী-নীলদের প্রতিপক্ষ রহমতগঞ্জ। 

উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে নাটকও কম হয়নি। দুইবার পেনাল্টি থেকে গোল করার পরও রেফারি সায়মুন হাসানের গোল বাতিলের সিদ্ধান্ত। পরে রেফারির চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া। দানিয়েল কলিন্দ্রেসের ম্যাচ সেরার পুরস্কার সতীর্থ শহীদুল আলম সোহেলের হাতে তুলে দেওয়ার মতো গল্পও আছে এই ম্যাচে। 

বলতে হবে দুই দলের হাল ছেড়ে না দেওয়ারও গল্প। ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে যখন ফেডারেশন কাপের টানা দ্বিতীয় ফাইনালের পথে সাইফ, তখনই শেষ সময়ে গোল করে ম্যাচটাকে বাড়তি ৩০ মিনিট পর্যন্ত নিয়েছেন আবাহনীর কোস্টারিকান ফরোয়ার্ড দানিয়েল কলিনদ্রেস। পাল্টা জবাবটা দিয়েছে সাইফও। ১২১ মিনিট পর্যন্ত ৩-২ গোলে এগিয়ে থাকা আবাহনীর জালে বল জড়িয়ে খেলাকে টাইব্রেকারে নিয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় শেষ পর্যন্ত হার মেনেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। টাইব্রেকারের সময় পেনাল্টিও মিস করেছেন সাইফ অধিনায়ক। 

টার্ফের মাঠে দুই দলের আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ছিল ম্যাচের শুরু থেকেই। ৪ মিনিটেই গোলের দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করে সাইফ। ডি-বক্সের বাইরে থেকে নাইজেরিয়ান এমফোন সানডের শট ফেরে পোস্টে লেগে। 

এরপরই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নেয় আবাহনী। ৮ মিনিটে ডি-বক্সের ভেতর রাকিব হোসেনকে ফাউল করেন মঞ্জুর রহমান, পেনাল্টির বাঁশি বাজান সায়মুন হাসান। দুই মিনিট পর স্পটকিকে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল অগুস্তো। 

এক মিনিট বাদে আবারও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল আবাহনীর সামনে। দানিয়েল কলিন্দ্রেসের ক্রস থেকে রাকিব হোসেনের শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন সাইফের রোয়ান্ডান ডিফেন্ডার এমেরি বাইসাঙ্গে। ১৭ মিনিটে সাইফ গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেনকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রাকিব। 

আবাহনীর আক্রমণ ঠেকিয়ে ২০ মিনিটে সাইফকে সমতায় ফেরান এমফোন সানডে। এমেকা ওগবাঘের কাটব্যাক থেকে প্রথমে শট নিয়েছিলেন উজবেক মিডফিল্ডার আসরার গফুরভ। তার নেওয়া শট প্রথম দফায় ফিরিয়ে দিলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেননি আবাহনী গোলরক্ষক সোহেল। ফিরতি বলে শট নিয়ে বল জালে জড়ান এমফোন। 

 ২৭ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায় আবাহনী। কলিন্দ্রেসের দারুণ এক রক্ষণচেরা পাস থেকে নাবীব নেওয়াজ জীবনের চিপ দারুণ নৈপ্যুন্যে ফিরিয়ে দেন সাইফ গোলরক্ষক পাপ্পু। আবার প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে টুটুল হোসেন বাদশার ভুল থেকে আবাহনী গোলরক্ষক সোহেলকে একা পেয়েও গোল পাননি এমফোন। 

 ৭২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান বাড়ায় সাইফ। ডি-বক্সের ভেতর সাদ্দাম হোসেনকে ফাউল করেন আবাহনীর বদলি ডিফেন্ডার মনির হোসেন। দুই মিনিট পর স্পটকিকে লক্ষ্যভেদ করেন নাইজেরিয়ান এমেকা ওগবাঘ। এর চার মিনিট পরেই আবাহনীকে বিপদে ফেলে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক রাফায়েল অগুস্তো। 

রাফায়েলের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন উইঙ্গার জুয়েল রানা। মাঠে নেমেই এমফোন সানডেকে ডি-বক্সে করে বসেন ফাউল। স্পটকিক নিতে এসেছিলেন এমেরি বাইসাঙ্গে। ৮২ মিনিটে দুবার বল জালে জড়ালেও নিয়ম মেনে শট না নেওয়ায় প্রতিবারই গোল বাতিল করেছেন রেফারি সায়মুন হাসান। একইসঙ্গে বাইসাঙ্গেকে দেখিয়েছেন হলুদ কার্ড। 

হার দেখতে থাকা আবাহনীকে অতিরিক্ত সময়ে সমতায় ফেরান কোস্টারিকান দানিয়েল কলিনদ্রেস। বামপ্রান্ত থেকে নুরুল নাইয়ুম ফয়সালের পাস থেকে ডি-বক্সে বল পান জুয়েল রানা। বল বাড়ান কলিন্দ্রেসের দিকে। বিশ্বকাপে খেলা এই ফরোয়ার্ডের শটে বল গোললাইনে থাকা সাইফের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লাগলেও ধীরে ধীরে পার হয় গোললাইন। 

ম্যাচটা অতিরিক্ত সময়ে গড়াতেই আবারও গোল আবাহনীর। ৯৪ মিনিটে জুয়েল রানার ক্রস থেকে মেহেদী হাসান রয়্যালের পা ঘুরে ফাঁকায় বল পান রাকিব হোসেন। ফাঁকা জালে রাকিবের গোলে উল্লাসে ভাসে আবাহনী ডাগআউট। 

এরপর আলোচনায় স্বয়ং রেফারি সায়মুন হাসান। শক্ত হাতে ম্যাচ পরিচালনা করতে থাকা সায়মুন ১০১ মিনিটে চোটের কারণে নিজেই হয়েছেন বদলি। তার জায়গায় বাকি সময় ম্যাচ পরিচালনা করেছেন বদলি রেফারি মাহমুদ জামাল ফারুকী নাহিদ। 

অতিরিক্ত সময়ের শেষ ভাগে এসে যখন ফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে আবাহনী তখনই ম্যাচটাকে টাইব্রেকে নিয়ে যান সাইফের বদলি ফরোয়ার্ড সাজ্জাদ হোসেন। শেষ বাঁশি বাজার ঠিক আগ মুহূর্তে ১২২ মিনিটে এমফোন সানডের নিচু ক্রস থেকে আলতো টোকায় সাইফের ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে দেন সাজ্জাদ। কিন্তু ম্যাচটাকে গেলেও এমফোন আর জামাল সুযোগ নষ্ট করলে ফাইনালে খেলা হয়নি সাইফের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত