Ajker Patrika

রক্ষণই ডোবাল আবাহনীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রক্ষণই ডোবাল আবাহনীকে

দানিয়েল কলিনদ্রেসের গোলটা তখন যেন আবাহনীর আশার অক্সিজেন। ম্যাচে ফিরতে হলে দরকার আরেকটি গোল। এমন সময়ই কি না ফাঁকায় বল পেয়েও বল জালে জড়াতে পারলেন না জুয়েল রানা। পারল না আবাহনীও। দুই বাংলার মর্যাদার লড়াইয়ে একপেশে ৩-১ গোলের জয় দিয়ে আকাশি-নীলদের স্বপ্ন ভাঙল মেরুন-সবুজের এটিকে মোহনবাগান।

দানিয়েল কলিনদ্রেস, রাফায়েল অগুস্তো, নাবীব নেওয়াজ জীবনদের সঙ্গে যোগ দিয়ে এএফসি কাপে আবাহনীর শক্তি বাড়িয়েছিলেন বসনিয়ান নেদো তুর্কোভিচ। দোরিয়েলটন গোমেজ না থাকলেও এই আক্রমণভাগ দিয়েই ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগানকে তাদের মাটিতেই হারানোর পরিকল্পনা করেছিলেন পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস। আক্রমণভাগে শক্তি বাড়াতে গিয়ে খানিকটা হয়তো মনোযোগের অভাব পড়েছিল রক্ষণে। চোট জর্জর, জোড়াতালির রক্ষণটা ধসে পড়ল এএফসি কাপে বাছাইপর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই! 

ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের জায়গা বের খেলতে না দেওয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন মারিও লেমোস। বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। অধিকাংশ সময় অরক্ষিত থাকলেন স্বাগতিক ফরোয়ার্ডরা, বিশেষ করে ডেভিড উইলিয়ামস। এই অস্ট্রেলিয়ান একাই ধসিয়ে দিলেন আবাহনীর রক্ষণ। হ্যাটট্রিক করে মোহনবাগানকে তুললেন এএফসি কাপের ‘ডি’ গ্রুপের মূল পর্বে।

কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়ামে আজ নিজেদের রক্ষণ গুছিয়ে ওঠার আগেই গোল হজম করে আবাহনী। ৬ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর বাড়ানো বল ধরে বাম প্রান্ত থেকে ডি-বক্সে ক্রস করেছিলেন মোহনবাগানের ফিনল্যান্ড মিডফিল্ডার জনি কাউকো। ডেভিড উইলিয়ামসকে পাহারায় রাখতে পারেনি আবাহনীর ডিফেন্ডাররা। বাতাসে ভাসা বলকে ভলি করে আবাহনীর জালে পাঠান মোহনবাগানের এই ফরোয়ার্ড। 

গোল হজম করে যখন খেলা গোছাতে যাবে আবাহনী তখনই আরেক ধাক্কা। ২৩ মিনিটের মাথায় চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক নাবীব নেওয়াজ জীবন। এর ছয় মিনিট পর ম্যাচ থেকেই ছিটকে পড়ে আবাহনী। 

ম্যান টু ম্যান মার্কিংয়ের দুর্বলতার সুযোগকে পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে ২৯ মিনিটে নিজের জোড়া গোল তুলে নেন ডেভিড উইলিয়ামস। ডান প্রান্ত থেকে প্রবীর দাসের ক্রসে বল পান ডি-বক্সের মুখে। গায়ে লেগে ছিলেন ডিফেন্ডার টুটুল হোসেন বাদশা। আবাহনী ডিফেন্ডারকে ঝেড়ে ফেলে গোলরক্ষক সোহেলকে বোকা বানান অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড। 

৩৬ মিনিটেই হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন উইলিয়ামস। আবাহনী সোহেলকে এবার একা পেয়েও সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। 

ম্যাচে আবাহনী তাদের প্রথম ও সেরা সুযোগটা পেয়েছিল ৩৯ মিনিটে। দানিয়েল কলিনদ্রেসের ফ্রি-কিকে জুয়েল রানা কিংবা নেদো তুর্কোভিচের একজনও যদি বল পায়ে ছোঁয়াতে পারতেন তাহলে প্রথমার্ধে ব্যবধানটা কমতো আবাহনীর। 

বিরতির পর গতি ফেরে আবাহনীর আক্রমণে। ৪৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া কলিনদ্রেসের শট কোনোরকমে ঠেকিয়ে দেন মোহনবাগান গোলরক্ষক অমৃন্দর সিং। ৫২ মিনিটে কলিন্দ্রেসের বাড়ানো বলে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হোন নেদো। 

কলিনদ্রেসের ৬০ মিনিটে গোলে খেলায় ফেরে আবাহনী। রাকিব হোসেনের পাসে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া কলিন্দ্রেসের শট মোহনবাগান গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে।  

৬৭ মিনিটে আবাহনীকে সমতায় ফেরানোর সেরা সুযোগ নষ্ট করেছেন জুয়েল রানা। নুরুল নাইয়ুম ফয়সালের ক্রস থেকে বক্সে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে থাকার পরও বল জালে জড়াতে পারেননি এই উইঙ্গার। 

গোল শোধের আশায় শেষ দিকে ওপরে উঠে গিয়েছিল আবাহনীর রক্ষণভাগ। নিজের হ্যাটট্রিকের জন্য ৮৫ মিনিটে এই সুযোগটাকেই কাজে লাগালেন উইলিয়ামস। নিজেদের অর্ধ থেকে হুগো বুমোসের লম্বা করে বাড়ানো শটে যখন বল পেলেন এই অস্ট্রেলিয়ান তখন তার আশপাশে নেই একজনও আবাহনী ডিফেন্ডার। সোহেলকে ফাঁকি দিয়ে আলতো করে বল জালে জড়িয়ে আবাহনীর কফিনে পেরেক ঠুকলেন উইলিয়ামস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত