Ajker Patrika

ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের বেশ কিছু স্মরণীয় ঘটনা

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২২, ১৮: ৪৬
ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের বেশ কিছু স্মরণীয় ঘটনা

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। তারপরই কাতারে শুরু হচ্ছে ২২ তম ফুটবল বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে ৩২ দল,৮টি গ্রুপে রয়েছে ৪টি করে দল। যেখানে সবশেষ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ফ্রান্স এবং রানার্সআপ হয়েছিল ক্রোয়েশিয়া।

১৯৩০ সালে ১৩ দল নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়। প্রথম বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল উরুগুয়ে এবং রানারআপ হয়েছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৩০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ফুটবল হয়েছে ২১ বার। এই ২১ বিশ্বকাপের মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার করে শিরোপা জিতেছে জার্মানি, ইতালি। দুইবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও ফ্রান্স। আর একবার করে জিতেছে ইংল্যান্ড ও স্পেন।

১। ‘ঈশ্বরের হাত’ (১৯৮৬) 
ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ঘটনা এটি। ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৬ এর বিশ্বকাপে। মেক্সিকোর অ্যাজটেক স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য ড্র। ম্যাচের ৫১ তম মিনিটে ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে বোকা বানিয়ে হাত দিয়ে গোলটি করেছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। এক সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ডের সাবেক উইঙ্গার জন বার্নস বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই এটা দেখেছি। খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার সবাই দিনের আলোর মতো পরিষ্কার দেখলাম সে (ম্যারাডোনা) হাত দিয়ে গোল করেছে। কিন্ত কীভাবে এটা রেফারির চোখ এড়িয়েছে, সেটাই আমাদের অবাক করেছে।’ ম্যারাডোনা তাঁর আত্মজীবনী ‘এল দিয়েগো’ গোলটিকে ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে উল্লেখ করেছেন। কয়েকদিন আগে এই ‘হ্যান্ড অব গড’ বলটি বিক্রি হয়েছে ২৫ কোটি টাকায়।

২। মারাকানাজো (১৯৫০) 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ হয় ১৯৫০ সালে। আর এই বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ব্রাজিল। মারাকানার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল-উরুগুয়ে। ৭৮ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচটি ১-১ গোলে সমতায় ছিল। তবে স্বাগতিকদের কাঁদিয়ে জয়সূচক গোলটি করেন উরুগুয়ের উইঙ্গার আলসিদেস ঘিঘিয়া। ২ লাখ ২০ হাজার দর্শককে কাদিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উরুগুয়ে। ব্রাজিলিয়ানদের কাছে যা পরিচিত ‘মারাকানাজো’ নামে।

৩। হার্স্টের বিতর্কিত গোল (১৯৬৬) 
ইংল্যান্ডের ইতিহাসে একমাত্র ফুটবল বিশ্বকাপ জয় ১৯৬৬ সালে। ওয়েম্বলিতে পশ্চিম জার্মানিকে (বর্তমান জার্মানি) ৪-২ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। ফাইনালে স্যার জিওফ হার্স্টের একটা গোল নিয়ে এখনো রয়েছে বিতর্ক। যেখানে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচ ছিল ২-২ সমতায়। এরপর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ম্যাচের ১০১ তম মিনিটে অ্যালান বলের পাস থেকে গোল করেছিলেন হার্স্ট। তবে হার্স্টের এই গোল দাগ পেরিয়েছিল কি না, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছেই। কয়েক দশক পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণায় দাবি করেছিল, বলের ৯৭ শতাংশ দাগ পেরিয়েছিল। এখনকার মতো ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তি তখন থাকলে হয়তোবা ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন কিছু হতে পারত।

৪। জিদানের গুঁতো (২০০৬) 
২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে গুঁতোগুঁতির কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। বার্লিনের অলিম্পিয়া স্টেডিয়ামের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইতালি-ফ্রান্স। ম্যাচের ১১০ মিনিটে মার্কো মাতেরাজ্জিকে গুঁতো মেরে লাল কার্ড পেয়েছিলেন জিনেদিন জিদান। এই লাল কার্ডের ব্যাপারে জিদানের অভিযোগ করেছিলেন, ‘মাতারাজ্জি আমার অসুস্থ মা কে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছিল।’ মাতেরাজ্জি পরে এই দাবিকে অস্বীকার করেছিলেন। ইতালিয়ান এই ডিফেন্ডার দাবি করেছিলেন, হালকা বাজে কথা বলেছিলেন তিনি।

৫। ইনিয়েস্তার ‘ফিনিশিং টাচ’ (২০১০) 
‘ওস্তাদের মাইর শেষ রাতে’-২০১০ বিশ্বকাপে এই প্রবাদেরই যেন বাস্তব প্রমাণ দেখালেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। জোহানেসবার্গের সকার সিটিতে স্পেন-নেদারল্যান্ডস ফাইনাল ম্যাচের মূল ম্যাচটি ছিল গোলশূন্য ড্র। অতিরিক্ত সময়ের একদম শেষের দিকে এসে বাজিমাত করে স্প্যানিশরা। ১১৬ মিনিটে সেস্ক ফ্যাব্রেগাসের অ্যাসিস্টে জয়সূচক গোলটি করেন ইনিয়েস্তা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ঘরে তোলে স্প্যানিশরা।

৬। সান্তিয়াগো কেলেঙ্কারি (১৯৬২) 
বিশ্বকাপ ইতিহাসের ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে ১৯৬২ বিশ্বকাপে। বিখ্যাত ইংলিশ ধারাভাষ্যকার ডেভিড কোলম্যান এই বিশ্বকাপের চিলি-ইতালি ম্যাচটিকে ফুটবলের সবচেয়ে জঘন্য, ন্যাক্কারজনক ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই ম্যাচে মাত্র দুটি লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন রেফারি। লাল কার্ড ছাপিয়ে এই ম্যাচের আলোচ্য বিষয়বস্তু পুলিশের হস্তক্ষেপ। ম্যাচের আগেই দুই ইতালিয়ান সাংবাদিকের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা শুরু হয়ে যায়। চিলিকে অপুষ্টি, অশিক্ষিত, অ্যালকোহল এবং দরিদ্র দেশ বলে আখ্যা দেন দুই ইতালিয়ান। চিলির সমর্থকরা এরপর দাবি করেছিলেন, ইতালিয়ানরা সন্ত্রাসী, মাদকাসক্ত।

 জার্মানির বিপক্ষে ব্রাজিলের ৭-১ গোলে পরাজয় বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা৭। বিধ্বস্ত ব্রাজিল (২০১৪) 
৬৪ বছর পর ব্রাজিলে আবারও বিশ্বকাপ। ১৯৫০ এর বিশ্বকাপে মারাকানায় ফাইনাল হারের ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর সুযোগ ছিল এই বিশ্বকাপে। তবে ব্রাজিল এবার ফাইনাল তো দূরের কথা, সেমিফাইনালেই পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। বেলো হরিজন্তের মিনেইরো স্টেডিয়ামে ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারিয়েছে জার্মানি। এক সাক্ষাৎকারে ব্রাজিলের সাবেক মিডফিল্ডার মাউরো সিলভা বলেছিলেন, ‘যেকোনো জায়গাতেই বিশ্বকাপ খেলা কঠিন, কিন্তু ব্রাজিলে ভক্তদের প্রত্যাশার চাপে খেলা আরও কঠিন। সেলেসাওদের জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন ছিল এটি।’ 

বিশ্বকাপ ফুটবল সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তামিমের নেতৃত্বে আফগান সিরিজের দলে আছেন কারা

ক্রীড়া ডেস্ক    
নিজেদের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে যুবারা। ছবি: বিসিবি
নিজেদের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে যুবারা। ছবি: বিসিবি

বড় ভাইয়েরা ব্যস্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজ নিয়ে। এবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে আজিজুল হাকিম তামিমরাও। নিজেদের মাঠে আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশের যুবারা। এজন্য তামিমের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের দল দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেল।

সিরিজে তামিমের ডেপুটির ভূমিকায় থাকবেন জাওয়াদ আবরার। দলে ফেরানো হয়েছে পেসার ইকবাল হোসেন ইমন ও বাঁহাতি স্পিনার রাফিউজ্জামান রাফিকে। সবশেষ ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে বাদ পড়েছেন ফারহান শাহরিয়ার, সানজিদ মজুমদার ও শাহরিয়ার আল আমিন।

এর আগে সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক দলটি। ১১ মাস পর আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে চেনা আঙিনায় ফিরছে যুবারা।

২০২৬ সালের জানুয়ারিতে জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াতে বসবে যুব বিশ্বকাপের পরবর্তী আসর। তার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলে প্রস্তুতি নেবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে আগামী ডিসেম্বরে নেপালে যুব এশিয়া কাপ খেলতে যাবে তামিম, জাওয়াদরা।

বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচগুলো হবে বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ও রাজশাহীর কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে। ২৮ ও ৩১ অক্টোবর বগুড়াতে প্রথম ম্যাচ দুটি খেলবে তারা। এরপর ৩,৬ ও ৯ নভেম্বর সিরিজের শেষ তিন ওয়ানডেতে মাঠে নামবে দুদল। ম্যাচগুলো হবে রাজশাহীতে।

আফগানিস্তান অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্কোয়াড: আজিজুল হাকিম তামিম (অধিনায়ক), জাওয়াদ আবরার (সহ অধিনায়ক), সামিউন বসির রাতুল, দেবাশীষ সরকার দেবা, রিজান হোসেন, আল ফাহাদ, স্বাধীন ইসলাম, মোঃ আব্দুল্লাহ, ফরিদ হাসান ফয়সাল, কালাম সিদ্দিকী আলিন, রিফাত বেগ, সাদ ইসলাম রাজিন, মোঃ সুবুজ, রাফিউজ্জামান রাফি, আবদুর রহিম ও ইকবাল হোসেন ইমন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অ্যাশেজ শুরুর আগেই ছিটক গেলেন কামিন্স, নেতৃত্ব দেবেন কে

ক্রীড়া ডেস্ক    
পিঠের চোটের কারণে ছিটকে গেলেন তারকা অলরাউন্ডার। ছবি: এক্স
পিঠের চোটের কারণে ছিটকে গেলেন তারকা অলরাউন্ডার। ছবি: এক্স

শেষ পর্যন্ত আর চোটের সঙ্গে পেরে উঠলেন না প্যাট কামিন্স। অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম ম্যাচ থেকে ছিটক গেছেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক। তাঁর পরিবর্তে পার্থ টেস্টে স্বাগতিকদের নেতৃত্ব দেবেন অভিজ্ঞ ব্যাটার স্টিভ স্মিথ। অজিদের কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই কামিন্সের সঙ্গী পিঠের চোট। গত জুলাই মাসে নতুন করে এই চোটে ফিরে আসে। এরপর থেকেই মাঠের বাইরে তিনি। এজন্য প্রথম টেস্ট থেকে তাঁর ছিটকে যাওয়া একরকম নিশ্চিত ছিল। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো। চোট থাকার পরও অ্যাশেজ দিয়ে ফিরতে বদ্ধপরিকর ছিলেন কামিন্স। এজন্য সব ধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছিলেন তিনি। তাতে অবশ্য কোনো লাভই হলো না।

কামিন্স ছিটকে যাওয়ায় অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্টে সুযোগ পেতে পারেন স্কট বোল্যান্ড। ব্রিজবেনের গ্যাবায় অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে আগামী ৪ ডিসেম্বর। ম্যাকডোনাল্ডসের আশা, সে ম্যাচ দিয়ে দলে ফিরবেন কামিন্স।

ম্যাকডোনাল্ডস বলেন, ‘আগেই বলেছিলাম কামিন্সের সুস্থ হতে চার সপ্তাহ লেগে যাবে। সেই সময় পার হয়ে গেছে। দ্বিতীয় টেস্টে তাঁকে পাব এই আশায় আছি আমরা। কামিন্স কবে ফিরবে সবার সেটা জানতে চায়। দ্বিতীয় টেস্টের আগে সে ফিরবে কিনা সেটা এখনই বলা কঠিন। সে এই সপ্তাহ থেকে বোলিং শুরু করবে। এটাই আশার কথা। তাঁর ফিট হওয়ার জন্য এটা খুবই দরকার ছিল। আমরা সে পথেই এগোচ্ছি। আপাতত আমরা ব্রিজবেন টেস্টে কামিন্সকে পাওয়ার আশায় আছি।’

স্মিথ প্রসঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কোচ বলেন, ‘স্টিভ স্মিথের মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলে থাকা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। কামিন্সের সঙ্গে তাঁর দারুণ বোঝাপড়া আছে। খেলতে না পারলেও প্রথম টেস্টে কামিন্স দলের সঙ্গেই থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এল ক্লাসিকোতে সেই পুরোনো উত্তেজনা, ক্ষুব্ধ বার্সা কোচ

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ১৮
মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বাজিমাত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ছবি: এক্স
মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে বাজিমাত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ছবি: এক্স

এল ক্লাসিকো মানেই যেন ভিন্ন আমেজ। যেখানে মাঠে খেলার মতো আলোচনার খোরাক হয়ে উঠে উত্তেজনা এবং দুই দলের ফুটবলারদের শরীরী লড়াই। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের সবশেষ দ্বৈরথেও এসবের কমতি ছিল না। বরং মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে ময়দানি ছাপিয়ে সামনে চলে এসেছে বিতর্ক।

গত মৌসুমটা ভালো যায়নি রিয়ালের। চার এল ক্লাসিকোর সব কটিতেই হেরেছে তারা। দুঃস্মৃতি ভুলে নতুন মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতেই বাজিমাত করেছে লস ব্লাঙ্কোসরা। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ২-১ গোলের জয়ে তারা যেন বুঝিয়ে দিতে চাইল, এবার প্রতিশোধ নেওয়ার পালা। স্কোরবোর্ডের ছাপটা মাঠের খেলাতেও স্পষ্ট ছিল। বল দখলে বার্সা নেতৃত্ব দিলেও আক্রমণের ঝান্ডা উড়িয়েছে স্বাগতিকেরা। সব মিলিয়ে দারুণ এক এল ক্লাসিকো উপভোগ করেছে ভক্তরা।

এল ক্লাসিকোর আগে উত্তেজনার রসদ তৈরি করেছিলেন লামিনে ইয়ামাল। সম্প্রতি রিয়ালকে ‘চোর’ এবং ‘অভিযোগকারী’ বলে মন্তব্য করেন এই উইঙ্গার। এমন মন্তব্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল রিয়ালের ফুটবলার এবং সমর্থকেরা। ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামের স্পিকারে যতবারই এই স্প্যানিশ ফুটবলারের নাম উচ্চারিত হয়েছে, ততবারই দুয়ো দিয়েছেন স্বাগতিক সমর্থকেরা। এর প্রভাব ছিল ইয়ামালের পারফরম্যান্সে। এদিন নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন কাতালানদের আক্রমণভাগের তুরুপের তাস। ম্যাচ শেষেও প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের তোপের মুখে পড়েন ইয়ামাল। শেষ বাঁশি বাজতেই তাঁর দিকে তেড়ে আসেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, দানি কারভাহাল, থিবো কোর্তায়ারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসেন দুই দলের ফুটবলার, কোচিং স্টাফরা। তৈরি হয় উত্তপ্ত পরিস্থিতি।

শুধু ইয়ামালই নয়, এল ক্লাসিকোতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পেদ্রির লাল কার্ড। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের দশম মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয় দুই দলের ডাগআউটে। রিয়ালের পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজানো নিয়েও বেশ অসন্তোষ দেখা যায় বার্সার খেলোয়াড়েদর মধ্যে। সব মিলিয়ে এল ক্লাসিকো শেষ হলেও মাঠের বেশকিছু বিতর্কিত ঘটনায় এর রেশ থেকেই গেল।

ম্যাচ শেষে ইয়ামালের প্রতি রিয়ালের ফুটবলারদের বাজে আচরণের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন বার্সার সহকারী কোচ মার্কাস সর্গ। তিনি বলেন, ‘এই ম্যাচটি ইয়ামালের জন্য খুবই কঠিন ছিল। দর্শকদের বাজে আচরণের পাশাপাশি তাঁর প্রতি রিয়ালের ফুটবলারদের আচরণও ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।’

বার্সার বিপক্ষে এই জয়ে টেবিলের শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল রিয়াল। ১০ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২৭ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ২২ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অবস্থান করছে বার্সা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে উপভোগ্য সিরিজের প্রত্যাশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে দুই দলের অধিনায়ক। ছবি: বিসিবি
ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে দুই দলের অধিনায়ক। ছবি: বিসিবি

ট্রফি উন্মোচনের সময় দুই অধিনায়কের মুখেই হাসি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শাই হোপের চেয়ে হাসিটা বেশি স্পষ্ট বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাসের মুখে। ওয়ানডে সিরিজ জিতে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই আজ শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। আরব আমিরাতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে চোট নিয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়া লিটন এই সিরিজ দিয়েই ফিরছেন মাঠে, হাসি তো তাঁর একটু বেশি হবেই।

ট্রফি উন্মোচনে সিরিজের আয়োজক বিসিবি বেছে নিয়েছিল বন্দরনগরীর ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) প্রাঙ্গণকে। একদিকে ইংরেজের আমলে গড়ে ওঠা লাল বিল্ডিং, আরেক দিকে গাছগাছালি। দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরতেই ক্রিকেট পর্যটনের অংশ হিসেবেই সিআরবি প্রাঙ্গণে ট্রফির উন্মোচন; যেটা সবারই কমবেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে।

প্রশংসা কুড়িয়েছে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের উইকেটও। এখানকার উইকেট সবুজাভ; যা দেখতে মিরপুর শেরেবাংলার চেয়ে পুরোপুরি বিপরীত। আচরণটাও কি বিপরীত হবে? সে রকমই আশা করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক শাই হোপ, ‘দেখতে তো এটা মিরপুরের উইকেটের চেয়ে আলাদা। কেমন আচরণ করে, এখন এটাই দেখতে হবে।’ তবে সিরিজে খেলে ‘দেখার’ আগেই চট্টগ্রামের উইকেটকে ভালোর সনদ দিচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস, ‘সব সময়ই আমরা জেনেছি যে ক্রিকেট খেলার জন্য চট্টগ্রাম ভালো একটা গ্রাউন্ড। দুই দলই এখানে এনজয় করবে।’

আর দুই দলই ‘এনজয়’ করলে তো জমজমাট একটা সিরিজই অপেক্ষা করছে। তবে প্রথম ম্যাচের আগে মিরপুরের কালো উইকেটে দারুণ টার্ন পাওয়া বাংলাদেশের স্পিনারদের নিয়ে এখনো চিন্তিত শাই হোপ। ক্যারিবীয় অধিনায়ক বললেন, ‘রিশাদ মিরপুরে চমৎকার বোলিং করেছে, কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে আমাদের ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলেছিল। কিন্তু এটা নতুন সিরিজ, নতুন উইকেট। তবে লক্ষ্য একই, আগের ভুলগুলো থেকে শেখা।’

ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশও যে ভুল করেনি, তা নয়। শেষ ওয়ানডেতে সাইফ-সৌম্যর দেড় শ পেরোনো জুটির সুবাদে বড় ব্যবধানে জিতলেও আগের দুই ম্যাচে দলের ব্যাটিং ছিল নড়বড়ে। দুর্বল টেকনিক, বাজে শট নির্বাচন ও প্রিডিটারমাইন্ডেড শট খেলার বরাবরের প্রবণতা ছিল এই সিরিজেও। আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলের কাছে ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখতে চান লিটন। দেখতে চান ওয়ানডে থেকে টি-টোয়েন্টিতে ফেরার দক্ষতাও। অধিনায়কের ভাষায়, ‘আমাদের খেলোয়াড়েরা এই সংস্করণে যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবে, আমাদের জন্য ততই ভালো হবে।’

দলের ব্যাটিং নিয়েও বললেন লিটন, ‘কোনো কোনো সিরিজে দেখবেন টপ অর্ডার ভালো করবে না, তখন মনে হবে যে টপ অর্ডারে গ্যাপ। আবার কোনো সিরিজে দেখবেন মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডার ভালো করছে, তখন মনে হবে মিডল অর্ডার কিংবা লোয়ার অর্ডারে গ্যাপ, তবে ব্যাপারটা এমন নয়। যারাই মিডল অর্ডারে খেলছে, অনেক দিন ধরেই পরীক্ষিত, বাংলাদেশের হয়ে তারা অনেক ভালো কিছু করেছে। দু-একটা সিরিজে এটা হবেই, এটাই ক্রিকেট। বড় বড় খেলোয়াড়ও ব্যর্থ হয়। আমরাও হব। সেটা কীভাবে কাটিয়ে ওটা যায়, এটা নিয়ে কাজ করছি এবং আমার মনে হয়, শিগগির এটা কাটিয়ে উঠতে পারব।’

লিটনের কাটিয়ে ওঠার আশাটা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদেরও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত