Ajker Patrika

মার্কিন মুলুকে টি-টোয়েন্টি রোমাঞ্চের অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ জুন ২০২৪, ১৭: ১৩
মার্কিন মুলুকে টি-টোয়েন্টি রোমাঞ্চের অপেক্ষা

টি-টোয়েন্টি তখনো এই মর্ত্যে আসেনি। টেস্ট কিংবা ওয়ানডে নিয়ে তখনো এই উপমহাদেশের মানুষের আগ্রহের কমতি ছিল না। পাঁচ দিন ধরে টেস্ট হয়; খেলার মাঝেই চলে নাওয়া-খাওয়া! 

নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে এক যুগ আমেরিকায় কাটিয়ে দেশে ফিরে আমার এক প্রবাসী বন্ধু বলেছিলেন, ক্রিকেটে কখনোই আমেরিকানরা মজবে না। কেন? উত্তরে বলেছিলেন, তারা এতটাই কাজপাগল যে রান্নাবান্নায় সময় ব্যয় তাদের কাছে বিলাসিতা। পাউরুটি কেটে মাঝে মাংসের টুকরোর সঙ্গে চিজ, পেঁয়াজ, লেটুস, সস মিশিয়ে খেতে অভ্যস্ত; এতে অন্য কাজে বেশি সময় দিতে পারে তারা। বার্গার খাওয়ার জন্য আলাদা সময়ও ব্যয় করতে হয় না; কাজ করতে করতেও খাওয়া যায়! 

সময় নিয়ে যারা এত সচেতন, তারা পাঁচ দিনের টেস্ট কিংবা সারা দিনের ওয়ানডে খেলবে কোন দুঃখে! কিন্তু মার্কিন মুলুকে চর্চা না হলে যে জাতে ওঠে না ক্রিকেট! বিশ্বায়নের তাগিদ থেকেই ক্রিকেট আরও ছোট হয়েছে, নেমে এসেছে টি-টোয়েন্টিতে। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে দেখা যাবে টি-টোয়েন্টি। 

সেই টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় আয়োজন শুরু হতে যাচ্ছে আমেরিকায়; ডালাসে স্থানীয় সময় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ম্যাচ দিয়ে। আইসিসির সূচিতে ম্যাচটির তারিখ ১ জুন লেখা থাকলেও শুরুর বাংলাদেশ সময় আগামীকাল সকাল সাড়ে ৬টায়। এই হিসাবে বলাই যায়, আগামীকাল পর্দা উঠছে ছোট ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টের। যে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে বড় অর্জন সুপার এইট; ২০০৭ সালের সূচনা বিশ্বকাপে। এবার প্রথম গ্রুপ পর্বের বৈতরণি মাড়িয়ে সেই সুপার এইটে যেতে হলে ‘ডি’ গ্রুপের দুই শক্তিধর প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা শ্রীলঙ্কার এক দলকে পেছনে ফেলতে হবে শান্তদের! 

এবারের বিশ্বকাপের শুভেচ্ছাদূত কিংবদন্তি উসাইন বোল্টের ট্রেডমার্ক উদ্‌যাপন। ছবি: এক্সকাজটা যে সহজ নয়, গ্রুপ প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের সিরিজ হার কিংবা অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে ডাচদের কাছে লঙ্কানদের হারই তার প্রমাণ। আর অধারাবাহিকতাই যখন শান্ত-সাকিবদের ধারাবাহিকতা; তখন বুকে হাত রেখে ‘দল সুপার এইট কিংবা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে’ বলা যায় না। তাই কিছু না বলে ইচ্ছা প্রকাশ করি—আগেভাগেই যেন টুর্নামেন্টের দর্শক না হতে হয় বাংলাদেশকে। 

ছোট ক্রিকেটের এই বড় আসরে সবচেয়ে সফল ওয়েস্ট ইন্ডিজ; শিরোপা জিতেছে দুবার। ঘরের মাঠে খেলার বাড়তি সুবিধাও এবার থাকবে তাদের। তবে ক্যারিবীয়দের নয়, ক্রিকেট পণ্ডিতেরা সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের অগ্রভাগে রাখছেন তিন দলকে—ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ব্যাটিং-বোলিংয়ের গভীরতা এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলতে পারার কারণেই মূলত তাদের এগিয়ে রাখা। 

তবে ২০ ওভারে ১০ উইকেট ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে কোনো কোনো ম্যাচে ইউরোপীয় ডাচ, স্কটিশ কিংবা আইরিশরা, কিংবা কোনো ম্যাচে আফ্রিকান দেশ উগান্ডা উড়তে থাকা কোনো দলকে মাটিতে নামিয়ে আনলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! বরং সেটা হলেই টি-টোয়েন্টির রোমাঞ্চ নাড়া দেবে আমেরিকানদেরও। 

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ১৫ সারথি। ছবি: এক্সস্রেফ বিশ্বকাপ ঘিরেই অস্থায়ীভাবে নিউইয়র্কে তৈরি করা হয়েছে নাসাউ কাউন্ট্রি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। যেখানে খেলা হবে ড্রপ-ইন পিচে। ক্রিকেটের আধুনিক অবকাঠামোর সুযোগ-সুবিধা না থাকাটা আমেরিকায় পা রেখেই টের পাচ্ছেন রোহিত-কোহলিরা। সেখানকার অনুশীলনের সুযোগ-সুবিধা ভালো মানের না হওয়ায় রোহিতরা অসন্তুষ্ট বলে খবর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের। ক্রিকেটকে জাতে তুলতে বেসবল-বাস্কেটবলের দেশ আমেরিকায় ক্রিকেটের আয়োজন করলে তো এই অসুবিধাটুকু মেনে নিতেই হবে ক্রিকেটারদের! 

বিশ্বকাপে শান্ত-সাকিবদের প্রথম ম্যাচ ডালাসে, ৮ জুন। তার আগেই আজ রাত সাড়ে ৮টায় নিউইয়র্কের ড্রপ-ইন পিচে ভারতের সঙ্গে অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত