Ajker Patrika

বাংলাদেশকে সেরা তিন-চারে দেখতে চাই

প্রিন্স রাসেল, ঢাকা
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ৪৮
বাংলাদেশকে সেরা তিন-চারে দেখতে চাই

প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার আনন্দ। জিম্বাবুয়ে থেকে জটিল ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে হোটেলে কোয়ারেন্টিন। কোয়ারেন্টিন শেষ হতেই আবার করোনার হানা—অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতাই হচ্ছে বাংলাদেশ নারী দলের। গত পরশু রোববার আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ নারী ওয়ানডে দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি বললেন সাম্প্রতিক সাফল্যসহ মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে অনেক কিছুই। 

প্রশ্ন: অনেক ধকল পেরিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার আনন্দ, জটিল ভ্রমণ, এখন কোয়ারেন্টিন-জীবন—সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা কেমন? 
নিগার সুলতানা: আমরা জানতাম হয়তো দুই দিন লাগবে বাংলাদেশে আসতে। ওমানে এসে শুনলাম, আমাদের নাকি পাঁচ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। আসলে মিশ্র এক অনুভূতি। দেশে ফেরার উত্তেজনা কিংবা বিশ্বকাপের মূল পর্বে ওঠার আনন্দ—ওমানে সবার মন খারাপ হয়ে গেছে। এখন যদি বাসায় যেতে পারতাম বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে সময় কাটাতে পারতাম, অনেক ভালো লাগত।

প্রশ্ন: প্রথমবারের মতো আইসিসি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এত বড় একটা অর্জনের অনুভূতি নিশ্চয়ই অন্য রকম? 
নিগার: সত্যি বলতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। জানতাম, আফ্রিকার অবস্থা ভালো নয় (করোনায়)। ভেবেছিলাম টুর্নামেন্ট বাতিল হবে কিংবা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে। তবে আমাদের অফিশিয়ালরা জানিয়েছিলেন, অবস্থা যেমনই হোক, খেলতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে। সেদিন আমরা লাঞ্চ করছিলাম। যখন আমরা শুনলাম, তখন বুঝতে পারছিলাম না এটা সত্যি নাকি মজা হচ্ছে! হোটেলের লবিতে সবাই উত্তেজনায় চেঁচামেচি করছিল। এটার জন্য আমরা লম্বা অপেক্ষা করছিলাম। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে জেদ ছিল যে পরেরবার যখন বাছাই খেলতে যাব, যেন বাধা উতরে যেতে পারি। আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। 

প্রশ্ন: এবার আপনারা কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন? 
নিগার: আমরা যখন ওখানে (জিম্বাবুয়ে) যাই, সবার মুখে একটাই কথা ছিল—সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের দলটা ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। ভালো খেলার তাড়না ছিল সবার মধ্যে। 

প্রশ্ন: এই সাফল্য পেতে নতুন এমন কিছু ছিল, যেটা আপনাদের স্বপ্নপূরণে সহায়ক হয়েছে? 
নিগার: এবার সবাই অবদান রেখেছে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার পর একটা লম্বা বিরতি ছিল (করোনার কারণে)। ওই সময়টায় সবাই নিজের ঘাটতি নিয়ে কাজ করেছে। জিম্বাবুয়ে যাওয়ার আগে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি, অনুশীলন করেছি। এ কারণে ওখানে গিয়ে আমাদের সুবিধা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের প্রস্তুতিটা ভালো ছিল। 

প্রশ্ন: বড় দল পাকিস্তানকে হারানোর পর ড্রেসিংরুমের চিত্রটা কেমন হয়েছিল, আরেকবার শুনতে চাই। 
নিগার: আমাদের লক্ষ্য ছিল বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাব। কেন যেন পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা একটু বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী মেজাজে থাকি। সব ম্যাচেই থাকি। কিন্তু ওদের বিপক্ষে একটু বেশিই। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারটা আমরা মানতে পারি না। আমরা জেতার পর কাঁদি, হারার পরও কাঁদি। গ্রুপের প্রথম ম্যাচ যখন জিতবেন, তখন ওই ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আরও ভালো করতে পারবেন। 

প্রশ্ন: মেয়েদের ক্রিকেটে আগেও বড় সাফল্য এসেছে। এবারও এল। এটা দিয়ে কি আপনাদের নতুন একটা শুরু হলো? 
নিগার: অবশ্যই। আমাদের বিশ্বকাপে যাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন আইসিসি আমাদের চার বছরের একটা ক্যালেন্ডার দেবে। আমরা অনেক ম্যাচ খেলতে পারব। যখন আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তখন ক্রিকেট বোর্ডও চাইবে যে ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নতি হোক। দলের পাইপলাইনে আরও খেলোয়াড় আসবে। আমাদের ক্ষোভ ছিল, আমরা বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পাই না। যত বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব, তত শিখব। 

প্রশ্ন: সুযোগ-সুবিধায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে পুরুষ ও নারী দলের ব্যবধান নিয়ে আলোচনাটা পুরোনো। এই ব্যবধান এখন কতটা কমেছে? 
নিগার: ২০০৭ সালে যখন বাংলাদেশে মেয়েদের ক্রিকেট শুরু হয়, ওই সময়ের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা বা আর্থিক বিষয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৮ এশিয়া কাপের (চ্যাম্পিয়ন) পর থেকে আমাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। সব সময়ই বিসিবির প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। এখানে তুলনার কিছু নেই যে ছেলেদের ক্রিকেট কী করছে, কোথায় যাচ্ছে...। 

করোনাবিধি মেনে মাঠে ফেরাটা একটু কঠিনই ছিল নিগারের

প্রশ্ন: তুলনার কারণ, আপনারা সীমিত সুযোগের মধ্যেই বড় দুটি সাফল্য পেয়েছেন। সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে আরও ভালো করার সুযোগ বাড়ত কি না? 
নিগার: তা তো অবশ্যই। দেখেন, এ পর্যন্ত আমাদের যতটুকু সাফল্য এসেছে, ততটুকুর জন্য বিসিবি সুযোগ-সুবিধা দিয়েই আসছে। হয়তো-বা কম আছে। কিন্তু তারা চেষ্টা করে। আমাদের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হয় না এবং আমরা যে প্রিমিয়ার লিগ খেলি, তা থেকে অত টাকা পাই না। ক্রিকেট বোর্ডকে দায়ী করলে হবে না। কারণ, আমাদের পৃষ্ঠপোষক নেই। ক্রিকেট বোর্ড আমাদের পৃষ্ঠপোষক পেতে অনেক চেষ্টা করে। আমাদের কোনো লিগে বা খেলায় পৃষ্ঠপোষকেরা আগ্রহ দেখায় না। এমনকি সংবাদমাধ্যমও আমাদের খেলা নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এটা নিয়ে আমরা চিন্তিতও নই। আমরা দিনে দিনে ভালো করায় এটা (বৈষম্য) কমে এসেছে এবং আরও কমবে। আপনারা ভালোই জানেন, আমাদের ‘এ’ প্লাস ক্যাটাগরির বেতন কত আর ছেলেদের কত। সত্যি বলতে, তুলনায় বিশ্বাসী নই। আমার কাছে মনে হয়, কর্মই ফল। 

প্রশ্ন: মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেট তো এখনো বলার মতো এগোল না। 
নিগার: দুই বছর ধরে প্রিমিয়ার লিগ হচ্ছে না। এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। আমরা জাতীয় দলে খেলছি, আর যারা বাইরে (লিগে) খেলছে, তারা হয়তো আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকতে পারছে। সবাই কিন্তু সচ্ছল পরিবার থেকে আসে না। তাদের জন্য প্রিমিয়ার লিগটা খুব জরুরি। আগে আমাদের তিনটা টুর্নামেন্ট হতো। জেলা ক্রিকেট, বিভাগীয় ক্রিকেট এবং প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট। অনেক বছর ধরে জেলা ক্রিকেট হচ্ছে না। আমি নিজে জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট খেলে বিভাগে এসে প্রিমিয়ার লিগ খেলে জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি। হয়তো আমার মতো এমন আরও অনেকে আসতে পারে। এই টুর্নামেন্টগুলো যত হবে, ততই জাতীয় দলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হবে। 
 
প্রশ্ন: সামনে কমনওয়েলথ গেমস বাছাই, এরপর বিশ্বকাপ। দুই প্রতিযোগিতা নিয়ে আপনাদের লক্ষ্য কী থাকবে? 
নিগার: প্রত্যেকের প্রথম লক্ষ্য, ফিট থাকা। আপনি খেলতে পারবেন কি না, এটা আগে নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে, আমরা ইভেন্ট ধরে ধরে চিন্তা করছি। সামনে কমনওয়েলথ গেমসে কীভাবে পরিকল্পনা করলে আমরা ইতিবাচক ফল পাব, সেটা নিয়ে আমরা কাজ করব। ওটা ঠিকঠাকভাবে হলে এরপর আমাদের প্রধান লক্ষ্য, বিশ্বকাপে ভালো কিছু করা। কমনওয়েলথে আমরা অবশ্যই কোয়ালিফাই করতে চাই। আর আমরা ইতিমধ্যে একটা ধাপ পেরিয়ে এসেছি। আমাদের লক্ষ্য এখন বিশ্বকাপেও ভালো করা। ওটা এমন একটা মঞ্চ, আমরা ভালো করলে অন্যরা আমাদের সঙ্গে খেলতে চাইবে। আমরা বেশি বেশি ম্যাচ পাব। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশ নারী দলও টেস্ট মর্যাদা পেয়েছে। আপনাদের মধ্যে টেস্ট খেলার মানসিকতা কতটা গড়ে উঠেছে? 
নিগার: যখন আমরা টেস্ট মর্যাদা পাই, ওই মুহূর্তে আমরা অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম। সাদা পোশাকের চেয়ে সুন্দর ফরম্যাট আর নেই। আমি ব্যক্তিগতভাবে টেস্ট খুব পছন্দ করি। ইচ্ছে আছে খেলার। যখন সুযোগ হবে, তখন টেস্টের জন্য প্রস্তুতি নেব এবং চিন্তা করব। 

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সাফল্যে আপনাদের ঘিরে প্রত্যাশা বেড়েছে। এটাকে কীভাবে দেখছেন? 
নিগার: আমরা ক্রিকেটের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছি। যখন আপনি মন অন্য দিকে দেবেন তখন মূল জায়গা থেকে সরে আসবেন। আমরা এ বিষয় নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। এতে পারফর্ম করতে সুবিধা হয় এবং বাড়তি চাপ আসে না। বিষয়গুলো মাথায় আনলেই চাপ বাড়তে থাকে। তখন আপনার মন এবং লক্ষ্য স্থরি থাকে না। পরে দুটোর কিছুই হয় না। এগুলো মাথায় নেওয়া উচিত না। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলকে অনেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের কয়েকজন এখন আপনার অধীনে খেলছে। এই অধিনায়কত্ব কতটা উপভোগ করছেন আর এটা কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে? 
নিগার: আমার মনে হয়, আমার কাজটা অনেক সহজ। দলে যখন সিনিয়ররা থাকবেন, যাঁরা সাবেক অধিনায়ক এবং অনেক অভিজ্ঞ, তাঁরা জানেন, তাঁদের কাজটা কী। যখন দলের খেলোয়াড়েরা আলাদাভাবেই জানে, কার কোন ভূমিকা রাখা দরকার, তখন আপনার কাজটা সহজ হয়ে যায়। যদি তাদের বল দিই, তাদের বলতে হবে না এই পরিস্থিতিতে তাদের করণীয় কী। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়াটা সহজ হয়ে যায়। আসলে নেতৃত্ব বিষয় না, একজন খেলোয়াড় আরেকজন খেলোয়াড়ের কাজটা সহজ করে দিচ্ছে। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশ নারী দল নিয়ে আপনার স্বপ্নটা কী? 
নিগার: বাংলাদেশকে সেরা তিন-চারে দেখতে চাই। যেন বাংলাদেশকে কখনো বাছাইপর্ব খেলতে না হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বৃষ্টিতে ম্যাচ বাতিলের আগে জ্যোতিদের হতাশার ব্যাটিং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার আগে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন মারুফা আক্তাররা। ছবি: আইসিসি
বৃষ্টিতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার আগে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন মারুফা আক্তাররা। ছবি: আইসিসি

বৃষ্টি বাগড়া দিল কয়েকবার। তাতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ২৭ ওভারে। মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে বৃষ্টির মতো আরেকটি দৃশ্য খুব পরিচিত হয়ে উঠেছে। সেটা বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হতাশা। এমনকি শেষ ম্যাচেও তা এড়ানো গেল না।

মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেটে ১১৯ রান করেছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। দুই অঙ্কের ছোঁয়া পেয়েছেন মাত্র ৪ ব্যাটার। প্রথম ওভারে সুমাইয়া আক্তারকে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন রেনুকা সিং। আরেক ওপেনার রুবাইয়া হায়দারও (১৩) থিতু হতে পারেননি।

তিনে নেমে বড় ইনিংস খেলার সুবাস দিচ্ছিলেন শারমিন আক্তার সুপ্তা। কিন্তু দলীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রানে ফিরতে হয় তাঁকে। সোবহানা মোস্তারি এসে আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন। তাঁর ২১ বলে ৪ চারে ২৬ রানের ইনিংস থামান রাধা যাদব। এরপর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ। দিন শেষে অলআউট না হওয়ার স্বস্তি নিয়ে শেষ হয় ইনিংস।

ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন রাধা যাদব। দুটি উইকেট শিকার শ্রী চারানির। ডিএলএস মেথডে ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২৬ রান। যে লক্ষ্যে ব্যাট করে ৮.৪ ওভারে বিনা উইকেটে ৫৭ রান করে ভারত।। এরপর বৃষ্টি আবার বাগড়া দলে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। ম্যাচ বাতিল হওয়ার আগে স্মৃতি মান্ধনা ৩৪ ও আমানজোতে কৌর ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।

ম্যাচ বাতিল হওয়ায় ৭ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করলেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। আর সমান ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে শেষ দল হিসেবে সেমিফাইনালেম উঠল ভারত। ভারতের আগে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েরা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এমবাপ্পে-বেলিংহামের গোলে রিয়ালের এল ক্লাসিকো জয়

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১১
গোলের পর এমবাপ্পেকে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
গোলের পর এমবাপ্পেকে ঘিরে সতীর্থদের উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি

খেলার শেষ মিনিটে পেদ্রিকে রেফারি লাল কার্ড দেখানোর সঙ্গে সঙ্গেই উত্তপ্ত হয়ে উঠল দুই দলের ডাগআউট। খেলা শেষেও তর্কে জড়িয়ে পড়েন খেলোয়াড়েরা। আপনি হয়তো বলতে পারেন এ আর নতুন কি! এল ক্লাসিকো বলে কথা। মাঠের লড়াইয়ে যেখানে থাকে যুদ্ধের ভাব। থিয়েটারে রিলিজ করলেও বক্স অফিসে সহজেই হিট তকমা পেয়ে যাবে এই ম্যাচ।

তবে সেই সিনেমায় তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন কেবল রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তরাই। আজ বার্সেলোনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে তাদের জয় উপহার দিয়েছেন এমবাপ্পে-বেলিংহামরা। তাও টানা ৪ এল ক্লাসিকো হারের পর।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে পেনাল্টি পায় রিয়াল। কিন্তু ভিএআরে দেখা যায় লামিনে ইয়ামাল নন উল্টো ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই ফাউল করে বসেন। ১২ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে দারুণ এক ভলিতে কাঁপান জাল। অফসাইডের সংকেত নিয়ে এবারও বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভিএআর।

২২ মিনিটে রিয়ালকে আর কোনোকিছুই আটকাতে পারেনি। আটকাতে পারেনি এমবাপ্পেকেও। জুড বেলিংহামের দুর্দান্ত এক থ্রু বল খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে নেন তিনি। সামনে যখন শুধু গোলরক্ষক ভয়চেক সেজনি। তখন এমবাপ্পে আর ভুল করতে পারেন কী করে! অসাধারণ শটে বল জালে ঠেলে সোজা চলে যান উদ্যাপনে। এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে টানা ৪ ম্যাচে গোল করা তৃতীয় ফুটবলার তিনি।

এরপর বল বার্সার দখলে বেশি থাকলেও রিয়াল শানাচ্ছিল একের পর এক আক্রমণ। আর বার্সা ছিল রিয়ালের একটি ভুলের অপেক্ষায়। সেই ভুল করে বসেন আর্দা গুলের। বক্সের সামনে পেদ্রির কাছে বল হারান তিনি। সেখান থেকে আলেহান্দ্রো বালদে বল পেয়ে তা বাড়ান মার্কাস রাশফোর্ডকে। তাঁর কাটব্যাক থেকে সুযোগ সন্ধানী ফরোয়ার্ডের মতোই জাল খুঁজে নেন ফেরমিন লোপেস। সমতায় ফেরার স্বস্তি নিয়ে বার্সা বিরতিতে যাওয়ার সম্ভাবনা তখনো খুব একটা বেশি ছিল। রিয়াল বল পেলেই যে ছুটছিল আক্রমণের দিকে। ৪২ মিনিটে স্বাগতিকদের ফের এগিয়ে দেন বেলিংহাম। ২১ শতাব্দীতে এল ক্লাসিকোর এক ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করা সর্বকনিষ্ঠ ফুটবরার তিনি (২২ বছর ১১৯ দিন)। ছাড়িয়ে গেছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে (২২ বছর ২৬৭ দিন)।

বিরতির পর ম্যাচের ফিরে আসতে মরিয়া হয়ে ওঠে বার্সা। রিয়ালের রক্ষণ দুর্গ ভেঙে তেমন কোনো সুযোগই পাচ্ছিল না। তাদের হাইলাইন ডিফেন্সের সুযোগ নিয়ে এমবাপ্পেও বেশ কিছু পাল্টা আক্রমণে ত্রাস সৃষ্টি করেন। কিন্তু একটি সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি। এমনকি পেনাল্টিও না। ৬২ মিনিটে স্পটকিক থেকে তাঁর নেওয়া শট খুব সহজেই ঠেকান সেজনি। যোগ করা সময়ের নবম মিনিটে অরেলিয়ে চুয়োমেনিকে ফাউল করে পেদ্রি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখলে ১০ জনের দলে নামে বার্সা। হতাশার সঙ্গে তাই ক্ষোভ নিয়েও মাঠ ছাড়তে হলো তাদের।

এই জয়ে ১০ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগায় শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল রিয়াল। ৫ পয়েন্ট দূরে থেকে দুইয়ে বার্সা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাফুফের সভা হয়েছে, কিন্তু ‘আলোচনা’ হয়নি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ২৩
বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির ৫ম সভা। ছবি: বাফুফে
বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির ৫ম সভা। ছবি: বাফুফে

এক বছর পূর্তিতে আজ বাফুফে ভবনে হয়েছে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির পঞ্চম সভা। যেখানে আসেনি উল্লেখযোগ্য কোনো সিদ্ধান্ত। বেলা ২টায় শুরু হওয়া সভার চার ঘণ্টায় এক বছর নারী ফুটবল দলের সাফল্য ও গঠনতন্ত্রের সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অথচ অ্যাজেন্ডা থাকলেও বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশ-হংকং ম্যাচের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে আলোচনাই হয়নি।

সভা শেষে বাফুফের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আজ তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে বাফুফে নির্বাহী কমিটি এক বছর অতিক্রম করল। আমরা এক বছর অনেক ফুটবল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছি। নারী দল সাফ চ্যাম্পিয়ন, প্রথমবারের মতো নারী দলের এশিয়া কাপের মূল পর্বে কোয়ালিফাই করেছে, ফুটসাল এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে খেলেছে, হামজা-শমিতের মতো ফুটবলার বাংলাদেশের হয়ে খেলছে, এ রকম অনেক সফলতাই আমাদের এসেছে। ব্যর্থতা থাকলে সেটা আপনারা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।’

নারী ফুটবল দল সাফ জেতার পর দেড় কোটি টাকা বোনাসের ঘোষণা দেয় বাফুফে। সেই অর্থ এখনো দেওয়া হয়নি। বাবু বলেন, ‘আজকে এটা নিয়ে আলোচনা হয়নি। আমরা সামনে আলোচনার মাধ্যমে এটা তাদের প্রদানের ব্যবস্থা করব।’

সবশেষ দুই ম্যাচে হংকংয়ের কাছে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে জিততে পারেনি পুরুষ ফুটবল দল। সেই প্রসঙ্গ কেউ তোলেননি বলে দাবি বাবুর, ‘না, আমাদের এ রকম আলোচনা হয়নি। হলে তো অবশ্যই বলতাম। জাতীয় দলের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এটি জাতীয় দল কমিটির বিষয়, সভাপতি নিজেই এটার চেয়ারম্যান। এই (আয়-ব্যয়ের) বিষয়টি আলোচনায় ওঠেনি। গঠনতন্ত্র ও এক বছরের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক আলোচনা হওয়ায় দুটি বিষয় আলোচনা হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘরের মাঠে খেলতে না পারার আক্ষেপ বাংলাদেশ কোচের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
অনুশীলনে ফুটবলারদের নিয়ে বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। ছবি: বাফুফে
অনুশীলনে ফুটবলারদের নিয়ে বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। ছবি: বাফুফে

ফুটবলে দিন শেষে ফলই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল আজ থাইল্যান্ডকে কি হারাতে পারবেন ঋতুপর্ণা-আফঈদারা? জবাবে বাটলার পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ শেষ কবে জিতেছিল?

দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। হেরেছে ৩-০ গোলে। কাল লড়াইটা তাই ঘুরে দাঁড়ানোর। ব্যাংককের চালেম ফ্রা কিয়াত স্পোর্টস সেন্টারে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায়।

খেলায় যেকোনো দলই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে। তবে প্রতিপক্ষ যখন র‍্যাঙ্কিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা থাইল্যান্ড। দুবার বিশ্বকাপ খেলা দলটির বিপক্ষে তখন বাটলারও খুব একটা উচ্চাশা দেখার সুযোগ পান না। আগের ম্যাচের ভুল শুধরে স্বাগতিকদের চ্যালেঞ্জে ফেলার সাহস অবশ্য তিনি করছেন। আজ বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘আমরা সিস্টেমে কিছুটা পরিবর্তন এনেছি। কিছু কিছু জায়গা ঘাটতি রয়েছে আমাদের, সেটা পূরণ করতে হবে। আগের ম্যাচে আমরা মৌলিক কিছু ভুল করেছি—যেমন প্রথম ৪৫ সেকেন্ডে গোল হজম করা এবং তা সবসময় পাহাড়সম চাপ বয়ে আনে।’

ঘরের মাঠে বাংলাদেশ সবশেষ খেলেছে গত বছরের জুনে চায়নিজ তাইপের বিপক্ষে। এরপর সবগুলো ম্যাচ শুধু দেশের বাইরে খেলেছে। বাটলারও খানিকটা আক্ষেপ ভরা কণ্ঠে বলেন, ‘খেলার মধ্যে অনেক কিছুই থাকে, যা ফলাফলে প্রভাব ফেলে। আমি কাউকে দোষ দিতে পছন্দ করি না এবং অজুহাতও দিই না। তবে দেশের বাইরে জেতার চেয়ে ঘরের মাঠে ম্যাচ জেতা অনেক সহজ।’

প্রথম ম্যাচে হারের পর ফুটবলারদের আচরণ ও মানসিকতা ক্ষুব্ধ করেছিল বাটলারকে, ‘কয়েকজনের সঙ্গে আমি আলাদাভাবে কথা বলেছি। তাদের অ্যাপ্রোচ ও মাইন্ডসেট নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। বিশেষ করে এক-দুজন আছে, যাদের আমি সত্যিকারের ম্যাচ উইনার মনে করি এবং আগের ম্যাচে তারা তাদের সামর্থ্যটা মেলে ধরতে পারেনি।’

থাইল্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে বাটলার বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ডের লেভেলে নেই। তারা খুবই ভালো দল এবং সেটা তারা দেখাবেও। তারা সম্ভবত পুরো ভিন্ন এক দল মাঠে নামাবে (আজ)। অনেক সময় বেঞ্চ দেখে দলের শক্তি বোঝা যায়। তাদের বেঞ্চ দেখে মনে হলো এখানে আরকটা দল বসে আছে। তাই আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে।’

এই সফরের আগে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচই খেলেছে বাংলাদেশ। এক যুগ আগের ম্যাচে হারতে হয়েছিল ৯-০ গোলে। বাটলার বলেন, ‘যদি আমরা মানদণ্ড দাঁড় করানোর ও আরও পেশাদার হওয়ার কথা বলি, বড় কিছু কল্পনা করার আগে আমাদের সেই জায়গায় পৌঁছাতে হবে। যেখানে আমরা থাইল্যান্ডের মতো জায়গায় এসে ম্যাচ জেতার কথা ভাবতে পারি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমরা একটা মোমেন্টাম তৈরি করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত