Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন

রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন
রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৫: ০৩

২ টেস্টে ১৫৫ রান, সিরিজের সর্বোচ্চ ১০ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজের সেরা খেলোয়াড় মেহেদী হাসান মিরাজ। সিরিজটা তাঁর অলরাউন্ডার পরিচয়ের সেরা উদাহরণ হয়ে রইল। মিরাজ কাল বিকেলে তাঁর মিরপুরের বাসায় আজকের পত্রিকাকে লম্বা সময় দিলেন নিজের কীর্তি, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, ক্যারিয়ার, সামনের ভারত সিরিজ নিয়ে বিস্তারিত বলতে। তাঁর দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রানা আব্বাস। 

প্রশ্ন: চার মাস আগে বিশ্বকাপের আগে টি-টোয়েন্টি থেকে বাদ পড়েই কি ভালো করার জেদ চেপেছিল মনে? 
মেহেদী হাসান মিরাজ: জেদ ঠিক না। আমি যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলাম না, তখন আমার সঙ্গে বিসিবি সভাপতির (নাজমুল হাসান পাপন) কথা হয়েছিল। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, দলের সঙ্গে যেতে চাও কি না। আমি তখন পরিষ্কার হতে চাইলাম, ১৫ জনের দলে আমাকে রাখা হচ্ছে কি না। আমাকে বলেছিলেন, ১৭ জনের দলে সদস্য হতে; দলের সঙ্গে থাকতে। ১৭ জনের সদস্য হয়ে যেতে চাইনি। মনে হয়েছে, ওটা আমার জন্য ক্ষতি হবে। এই যে পাঁচটা মাস সুযোগ পেয়েছি, এ সময় নিজের ফিটনেস, স্কিল নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেটারই ফল পেয়েছি। 

প্রশ্ন: প্রস্তুতির এই সময়ে স্কিলে কোথায় বেশি উন্নতি করতে চেয়েছেন? 
মিরাজ: প্রস্তুতির শুরুতে বোলিংয়ে খুব খারাপ অবস্থায় ছিলাম। সোহেল স্যার (সোহেল ইসলাম) বারবার আমাকে নিয়ে টেনশন করছিলেন। এরপর কাজ করেছি। পরে যখন ঠিক হলো, তিনি অনেক স্বস্তি পেলেন। বাবুল স্যারের (মিজানুর রহমান) সঙ্গে ট্রিগার মুভমেন্ট, ব্যাটিং নিয়ে কাজ করেছি। দুজনের সঙ্গে কাজ করার ফল পেয়েছি। 

প্রশ্ন: ওয়ানডে ও টেস্টে আপনি নিয়মিত, তিন সংস্করণেই নিয়মিত হতে আপনার আসলে আর কী করণীয়? 
মিরাজ: আমি তিন ফরম্যাটেই খেলতে চাই। আমি যখন টি-টোয়েন্টিতে বাদ পড়েছি, ওটা যৌক্তিক ছিল। আমি এই সংস্করণে ভালো খেলতে পারিনি। চার বছর আগে যখন ফিরে এলাম এবং ওই সময়ে যখন বাদ পড়লাম, বাদ পড়ার অবস্থায় ছিলাম না। ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচসেরা, এশিয়া কাপে ওপেন করানো হয়েছে, একটাতে ৩৮ রানের ইনিংস খেলেছিলাম, আরব আমিরাতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ ম্যাচসেরা হয়েছিলাম—সব মিলিয়ে যখন টি­-টোয়েন্টিতে বাদ পড়ি, তখন আমি আসলে বাদ পড়ার পজিশনে ছিলাম না। এটা জানি না, কেন আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে বলেছিল যে ওয়ানডে ও টেস্টে বেশি মনোযোগ রাখতে বাদ পড়েছি। 

প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ে আপনাকে নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে এত দিন, আপনি খুব ইতিবাচক, সহজেই ‘না’ করেন না। এ কারণেই কি আপনাকে নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে? 
মিরাজ: ঠিক বলেছেন। যেখানেই বলে, সেখানেই রাজি হয়ে যাই খেলতে। আমি সব সময় দলের জন্য খেলি। দলের জন্য অনেক বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি, নিজের ক্যারিয়ারও বিসর্জন দেওয়ার চেষ্টা করি। রাজি হচ্ছি শুধু দলের জন্যই। একটা পজিশনে যদি খেলা যায়, সেই পজিশন সম্পর্কে ভালো জানা-বোঝা যায়। আমি আটে ব্যাটিং করি লম্বা সময়। ওখানকার ভূমিকা সম্পর্কে আমি খুব ভালো বুঝি। 

প্রশ্ন: আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করার কথা অনেকবার বলেছেন। আপনার সবচেয়ে পছন্দের পজিশন আসলে কোনটি? 
মিরাজ: যদি পাঁচ-ছয়ে ব্যাটিং করতে পারি, অনেক ভালো। এই মুহূর্তে এখানে ব্যাটিং করা কঠিন। এখানে প্রতিষ্ঠিত যারা, অনেক দিন ধরে ভালো খেলছে, দীর্ঘদিন দলকে সার্ভিস দিচ্ছে। ওখানে এখন ব্যাটিং করার দাবি করব না, করাটা অযৌক্তিক হবে। তবে যখন সুযোগ আসবে, ওখানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ভালো লাগবে। 

প্রশ্ন: আট নম্বর পজিশন মানে বেশির ভাগ সময়ে ব্যাটিং করতে হয় চাপের মধ্যে। বেশির ভাগ ইনিংস মেরামত করার কাজ করতে হয়। আর যেদিন আপনার একটু নির্ভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ মেলে, তখন দলের ৩০০-৪০০ রান হয়ে যায়, দল তখন ইনিংস ঘোষণার কাছাকাছি এসে যায়। এটা ভেবে একটু দুর্ভাগা মনে হয় কি না—সাকিব আল হাসানের মতো আরেকটু ওপরে ব্যাটিং করতে পারলে হয়তো এত দিনে নিজেকে দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন?
মিরাজ: না। সবশেষ দুই-তিন বছর ভালো ব্যাটিং করার চেষ্টা করছি। আমি বোলিংয়ে মনোযোগী ছিলাম। দুর্ভাগা না, প্রথম দিকে নিজেকে ওভাবে প্রমাণ করতে পারিনি। এখন ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে ব্যাটিং। 

প্রশ্ন: পাকিস্তান সিরিজের আগে ভাবনাটা কী ছিল? ভেবেছিলেন, এভাবে দাপটের সঙ্গে সিরিজ জিতবেন? 
মিরাজ: আমরা সিরিজ জিতব, এটা কখনো ভাবিনি, চিন্তা করিনি। তবে হ্যাঁ, চিন্তা করেছিলাম, আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। আমরা পাকিস্তানে গিয়ে ভালো রান করতে পারি, উইকেট নিতে পারি, আমরা ওদের সঙ্গে ফাইট দিতে পারি। একটা রেজাল্ট তখনই আসে, যখন ফাইট দেবেন। আমরা যদি ফাইটই দিতে না পারি, তখন কোনো রেজাল্ট আসবে না। এই মানসিকতা আমাদের দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ছিল, আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে ফাইট দিতে চাই। এবং ফাইট দিতে দিতে একটা সময় কিন্তু আপনি জিতে যাবেন। 

প্রশ্ন: এই সিরিজে দুটি বড় জুটির সঙ্গে আপনার নাম জড়িয়ে। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে দলের অবস্থান ভালো ছিল। কিন্তু ২৬ রানে ৬ উইকেট—মানে খুব বিপর্যয়ের মধ্যে কোন বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগোতে সহায়তা করেছে? 
মিরাজ: লিটন আর আমি যখন ব্যাটিং শুরু করেছিলাম, তখন অবশ্য চাপ কাজ করেছে। তবে আমরা ওই মুহূর্তকে উপভোগের চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি, একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে। মুহূর্তটা উপভোগ করতে, এই পরিস্থিতিতে কীভাবে একেকটা বল খেলা যায়, আমরা গল্প করেছি। ওকে বলছিলাম, এশিয়া কাপে (২০১৮ সালের ফাইনাল) মনে আছে, তুমি আর আমি ওপেন করেছিলাম। ওই পরিস্থিতিটা কী রকম ছিল। হালকা হতে বিভিন্ন দুষ্টুমি করছিলাম। কারণ, আমাদের চাপ কমানোর প্রয়োজন ছিল। যখন আমরা দুজন খেলাটা ধরতে পারলাম, তখন আমরা সিরিয়াসনেস বাড়িয়ে দিলাম এবং গেমের মধ্যে ঢুকে গেলাম—কীভাবে খেলব, কীভাবে বড় ইনিংস করব, গেমকে সাজাব ইত্যাদি। 

প্রশ্ন: যখন ওদের ডমিনেট করছিলেন, পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? 
মিরাজ: পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি, এটা বিশাল ব্যাপার। বিশেষ করে টেস্টে। একটা জিতেছেন, হয়তো অনেকে মনে করবেন, এমনি হয়ে গেছে। দুটি জয়—এটা কোনো মজার বিষয় নয়। আপনি দেখেন, আমরা ৯ দিনই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এ জন্যই জিতেছি। পাকিস্তানে যেটা ভালো লেগেছে, ওখানে প্রত্যেক মানুষ শ্রদ্ধা করেছে। 

প্রশ্ন: কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? 
মিরাজ: তিনি পরিকল্পনা খুব ভালো করেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে যখন কথা বলেন, ক্রিকেটীয় জ্ঞান খুবই ভালো। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করেন। সবশেষ টেস্টের এক লাঞ্চের পরে বলেছিল, সায়েম আইয়ুব ব্যাটিং করছিল (দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে), আমি দুটি ফিল্ডার পেছনে নিয়েছিলাম। দুজন ফিল্ডার পেছনে থাকলে ব্যাটার ঝুঁকি নিয়ে মারতে পারবে। তিনি বললেন, তুমি মিড অনটা সামনে রেখে মিড অফটা হাফওয়েতে রাখলে আর অফ স্টাম্পের বাইরে বল করলে ও একটা ভুল করলে তোমার সুযোগ থাকবে উইকেট নেওয়ার। ওভাবে ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করার চেষ্টা করেছি। তখনই ডাউন দ্য উইকেটে সে আউট হয়েছে। এই যে ছোট একটা পরিকল্পনা দিয়েছে, এগুলো তাঁর মধ্যে আছে। 

প্রশ্ন: সামনে ভারত সফর, এবার সেখানেও দুর্দান্ত কিছু করতে কতটা আত্মবিশ্বাসী? 
মিরাজ: শুরুটা ভালো হয়েছে, লড়াই করার মানসিকতা আছে। সে ধরনের বোলার, ব্যাটার আছে। বিশ্ব ক্রিকেটকে আমরা জানান দিয়েছি, ভালোভাবে আসছি। এটা শুরু মাত্র। ধরে রাখতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট লম্বা প্রক্রিয়া। প্রতিটি প্রজন্মকে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হবে। ভারতের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজে (২০২২) ওদের প্রায় হারিয়েই দিয়েছিলাম। ওরাও জানে, আমাদের সামর্থ্য আছে, আমরা ওদের যেকোনো সময় ধরতে পারি। আমরা ভালো করব ইনশা আল্লাহ। 

প্রশ্ন: সাকিব আল হাসানের পর দেশের আরেকজন সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার পথে মিরাজ কতটা এগোলেন? 
মিরাজ: আমাকে অলরাউন্ডার হতে গেলে আরও অনেক কষ্ট করতে হবে। অনেক ভালো করতে হবে, ব্যাটিং-বোলিং দুটিতেই। আমি ভালো করার চেষ্টা করছি। যাতে বাংলাদেশ উপকৃত হয়। সাকিব ভাইকে দেখে আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি বাংলাদেশ দলকে অনেক দিন ধরে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। যখন মানুষ বলে, আমি অলরাউন্ডার হচ্ছি, শুনে খুব ভালো লাগে। এখন যেহেতু ভালো ব্যাটিংটা করছি; আরেকটু ওপরে দিকে নামতে পারলে আমার জন্য আরও ভালো হবে। 

প্রশ্ন: ক্রিকেটের বাইরে যদি আসি, গত কিছুদিনে দেশে বড় একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ছোঁয়া বিসিবিতেও, নতুন সভাপতি এসেছেন। তাদের কাছে ক্রিকেটার হিসেবে আপনার চাওয়া কী? 
মিরাজ: টেস্ট ক্রিকেট আমরা ভালো খেলতে পারি না, এত দিন এটাই বলা হতো। কিন্তু এখন সময় টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের আরও এগিয়ে নেওয়ার। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামো আরও ভালো করা; ভালো ভালো উইকেটে আরও বেশি বেশি ম্যাচ খেলা; দেশের বাইরে বেশি ম্যাচ খেলা; ‘এ’ দল, এইচপি, বয়সভিত্তিক দলকেও বাইরে খেলার সুযোগ করে দেওয়া। আগে যে বাইরে খেলার সুযোগ ছিল না, তা নয়, কিন্তু এটা আরও বেশি করা দরকার। যত বেশি এটা করা যাবে, ততই এগিয়ে যাবে দেশের ক্রিকেট। ভালোর তো আর শেষ নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হারমার ঘূর্ণিতে বিপদে পাকিস্তান

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯: ২০
হারমার ঘূর্ণিতে বিপদে পাকিস্তান
হারমার ঘূর্ণিতে বিপদে পাকিস্তান

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের তৃতীয় দিন দুই দল মিলে হারিয়েছে ১০ উইকেট। এর মধ্যে চারটা পাকিস্তানের। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ২ উইকেট কম হারালেও বিপদে আছে স্বাগতিক দল। শেষ বিকেলে অফস্পিনার সাইমন হারমানের ঘূর্ণিতে স্বস্তিতে নেই শান মাসুদের দল।

পাকিস্তানের করা ৩৩৩ রানের জবাবে ৪০৪ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৭১ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে স্বাগতিকরা। এদিন ৩৫ ওভার ব্যাট করেছে তারা। শুরুতেই ধাক্কা খায় পাকিস্তান। দলীয় ১২ রানে ফেরেন ইমাম উল হক। ৯ রান করা এই ওপেনারকে এলবিডব্লু করেন হারমার। ১৬ রানে জোড়া ধাক্কায় খায় পাকিস্তান। রানের খাতা না খোলা মাসুদকেও একইভাবে আউট করেন এই স্পিনার। ৬ রান করা আব্দুল্লাহ শফিককে ফেরান কাগিসো রাবাদা।

বিপদ সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন বাবর আজম ও সৌদ শাকিল। দলীয় ৬০ রানে ১১ রান করে শাকিল ফিরে গেলে চতুর্থ উইকেট হারায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে দিনের বাকি অংশ নির্বিঘ্নে পার করে দেন বাবর। তৃতীয় দিন শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ ৯৪ রান। ২৩ রানের লিড পেয়েছে তারা। বাবর ৪৯ ও রিজওয়ান ১৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিন ব্যাট করতে নামবেন।

বাকি ৬ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে স্কোরবোর্ড ভারী করতে না পারলে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের ভাগ্যে খারাপ কিছুই যে আছে তা বলা বাহুল্য। স্বাগতিকদের পতন হওয়া ৪ উইকেটের মধ্যে তিনটাই নিয়েছেন হারমার। ১৩ ওভার তাঁর খরচ ২৬ রান।

প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা লিড নিতে পেরেছে মূলত সেনুরান মুথুসামি ও কাগিসো রাবাদার ব্যাটিং দৃঢ়তায়। দশম উইকেটে ৯৮ রান করেন দুজন। ৭১ রান করে রাবাদার বিদায়ে এই জুটি ভাঙে। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট ইতিহাসে ১১ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে এর চেয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি আর কেউ। রেকর্ড গড়ার পর রাবাদা আউট হওয়ায় ৮৯ রানে অপরাজিত থেকে মাঠে ছাড়েন মুথুসামি।

৭৯ রানে ৬ উইকেট নেন অভিষিক্ত আসিফ আফ্রিদি। পাকিস্তানের টেস্ট জার্সি গায়ে জড়ানোর সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৮ বছর ২৯৯ দিন। টেস্টের সুদীর্ঘ ১৪৮ বছরের ইতিহাসে এত বেশি বয়সে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখাতে পারেননি আর কেউ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জিম্বাবুয়ের কাছে ইনিংস ব্যবধানে হারল আফগানিস্তান

ক্রীড়া ডেস্ক    
বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে লজ্জার হারের সাক্ষী হলো আফগানিস্তান। ছবি: ক্রিকইনফো
বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে লজ্জার হারের সাক্ষী হলো আফগানিস্তান। ছবি: ক্রিকইনফো

হারারে টেস্টে দুই দলের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের পর ম্যাচের ভবিষ্যত একরকম স্পষ্ট হয়ে উঠে। আফগানিস্তানের বাজে ব্যাটিংয়ের পর লিড নেয় জিম্বাবুয়ে। নাটকীয় সমাপ্তির জন্য দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়াতে হতো সফরকারী দলকে।

সেটা করে দেখাতে পারেনি আফগানিস্তান। দ্বিতীয় ইনিংসেও তাদের বাজে ব্যাটিং প্রদর্শনী অব্যাহত ছিল। তাই আর ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি জিম্বাবুয়েকে। একমাত্র টেস্টে আফগানদের ইনিংস ও ৭৩ রানে হারিয়েছে ক্রেইগ আরভিনের দল। দাপুটে জয়ে জিম্বাবুয়ে যেন বুঝিয়ে দিল, ওয়ানডে, টি–টোয়েন্টিতে দারুণ করলেও টেস্টে এখনো অনেক পথ হাঁটা বাকি আফগানিস্তানের।

একমাত্র ইনিংসে ১২১ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন বেন কারান। সিকান্দার রাজার অবদান ৬৫ রান। নিক ওয়েলচ এনে দেন ৪৯ রান। এছাড়া ব্র্যাড ইভান্স ৩৫ ও ব্রেন্ডন টেলরের ব্যাট থেকে আসে ৩২ রান। দল হারলেও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখলেন জিয়াউর রহমান। অভিষেক ম্যাচেই ৭ উইকেট নেন এই ডানহাতি পেসার। তবে ব্যাটারদের ব্যর্থতার কারণে বিফলে গেল তাঁর দারুণ বোলিং।

জিয়ার মতো কেউ ৭ উইকেট নিতে না পারলেও দুই ইনিংসেই বেশ ধারাবাহিক ছিলেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। ব্লেসিং মুজারাবানি, ইভান্স, রিচার্ড এনগারাভাদের বোলিং তোপে মুখ থুবড়ে পড়ে আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইন। প্রথম ইনিংসে ১২৭ রানে অলআউট হয় তারা। ফিফটি পাননি কেউ। সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন রমমানুল্লাহ গুরবাজ। ৩০ রান আসে আব্দুল মালিকের ব্যাট থেকে। ২২ রানে ৫ ব্যাটারকে ফেরান ইভান্স। মুজারাবানির শিকার তিনটি।

ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে আফগানিস্তান। ২৩২ রানে পিছিয়ে ছিল অতিথিরা। এ যাত্রায় তারা গুটিয়ে যায় ১৫৯ রানে। ইবরাহিম জাদরান খেলেন সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস। বাহির শাহ করেন ৩২ রান। ৩৭ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার এনগারাভা। এবারও ৩ উইকেট ঝুলিতে পুরেন মুজারাবানি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হ্যাটট্রিক করে রিয়ালকে ‘হুমকি’ দিয়ে রাখলেন বার্সা তারকা

ক্রীড়া ডেস্ক    
অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছেন লোপেজ। এটা তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। ছবি: এক্স
অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছেন লোপেজ। এটা তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। ছবি: এক্স

উয়ফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে বার্সেলোনার ৬–১ গোলের জয়ের নায়ক ফারমিন লোপেজ। দারুণ এক হ্যাটট্রিকে ম্যাচের পুরো আলো নিজের দিকে টেনে নেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কাম উইঙ্গার। এবার রিয়াল মাদ্রিদকে হারানোর হুমকি দিয় রাখলেন এই স্প্যানিশ তারকা।

নিউক্যাসল ইউনাইটেডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের যাত্রা শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে পিএসজির কাছে হেরে বসে বার্সা। তাই ঘুরে দাঁড়ানোর দরকার ছিল স্প্যানিশ জায়ান্টদের। অলিম্পিয়াকোসকে উড়িয়ে সে কাজটা বেশ ভালোভাবেই করেছে কাতালানরা।

সম্প্রতি হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে ম্যাচটা আরও একটা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বার্সার জন্য। লা লিগায় আগামী ২৬ অক্টোবর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের আতিথেয়তা নেবে তারা। মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোর আগে এই জয়ের আত্মবিশ্বাস বেশ কাজে দেবে হান্সি ফ্লিকের দলের জন্য।

অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর লোপেজ বলেন, ‘দারুণ অনুভূতি নিয়ে আমরা এল ক্লাসিকোতে খেলতে নামব। এই ম্যাচটা সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি রিয়ালের বিপক্ষে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে পারব এবং জয় তুলে নেব। আমি সব সময় চেষ্টা করি মাঠে নিজের সেরাটা দেওয়ার। যেন আমি আরও বেশি সুযোগ পাই।’

প্রথমবারের মতো হ্যাটট্রিক করায় একটু বেশিই খুশি লোপেজ। সামনের দিনগুলোতেও দলের জয়ে অবদান রাখতে চান তিনি, ‘আমি সত্যিই খুব খুশি। আমাদের এমন একটা জয়ের প্রয়োজন ছিল। ম্যাচটা আমরা ভালোভাবেই শেষ করেছি। আমাদের নজর এখন এল ক্লাসিকোর দিকে। এখন আমরা ক্লাসিকোর দিকে তাকিয়ে আছি। এটা আমার প্রথম হ্যাটট্রিক। হ্যাটট্রিক করে আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। আমি সামনের ম্যাচগুলোতেও আমার কাজ চালিয়ে যাব।’

দুটি পজিশনে খেলতে পারলেও নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না লোপেজ। কোচ যেখানে চাইবেন সেখানেই খেলতে প্রস্তুত তিনি, ‘নিজেদের গতি ধরে রাখার জন্য আমি পুরো দলের প্রতি খুবই কৃতজ্ঞ। আমি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার কাজ হলো পারফরম্যান্সের উন্নতি করা। কোচ যেখানে চাইবে আমি সেখানেই খেলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এশিয়া কাপ ট্রফি নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের এবার আরেক ‘নাটক’

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৬
ভারতের হাতে এশিয়া কাপের ট্রফি দেওয়ার নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন এসিসি প্রধান মহসিন নাকভি। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের হাতে এশিয়া কাপের ট্রফি দেওয়ার নতুন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন এসিসি প্রধান মহসিন নাকভি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের এশিয়া কাপ জয়ের এক মাস হতে চলল। দুবাইয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে নবম এশিয়া কাপের শিরোপা ঘরে তোলে সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বাধীন ভারত। কিন্তু সেই ট্রফি যে এখনো বুঝেই পায়নি সূর্যকুমারের দল।

টেলিকম এশিয়া স্পোর্ট নামে এক ওয়েবসাইটের গতকালের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রধান মহসিন নাকভি নভেম্বরে দুবাইয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছেন। সেখানে ভারতের প্রাপ্য এশিয়া কাপ ট্রফি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ১০ নভেম্বর হতে যাচ্ছে এই অনুষ্ঠান। ভারতের বার্তা সংস্থা আইএএনএস-এর বরাতে নাকভি বলেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ও এসিসির মধ্যে চিঠি আদানপ্রদান হয়েছে। এসিসি সূর্যকুমার যাদব ও তাঁর দলকে ট্রফি দিয়ে দেবে। বিসিসিআই কর্মকর্তা রাজীব শুক্লা সেখানে থাকবেন।’

এশিয়া কাপের ট্রফি দুবাইয়ে আইসিসির সদর দপ্তরে রাখা হয়েছে। সেই ট্রফি বিসিসিআইয়ের দপ্তরে পাঠিয়ে দিতে হবে বলে দাবি ভারতের। বিসিসিআইয়ের এক সূত্রের বরাতে এনডিটিভি গতকাল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নাকভির এমন শর্তে বোর্ড রাজি নয়। এসিসি প্রধানের হাত থেকে কিছুতেই ট্রফি নেবেন না বিসিসিআই কর্মকর্তারা। এখন তাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) ওপর নির্ভর করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এদিকে মহসিন নাকভি একই সঙ্গে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান ও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

২৮ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ২০২৫ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ভারতের হাতে ট্রফি তুলে দিতে চেয়েছিলেন নাকভি। কিন্তু এসিসি প্রধান মঞ্চে থাকলে শিরোপা নেবেন না সূর্যকুমার, জসপ্রীত বুমরা, হার্দিক পান্ডিয়ারা—এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছিল ভারত। কিন্তু নাকভি যে ছিলেন নাছোড়বান্দা। যার ফলে ট্রফি ছাড়া উদযাপন করে ক্রিকেটে বিরল এক ঘটনার জন্ম দিয়েছিল সূর্যকুমারের দল।

এ বছরের এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে পর্যটক নিহতের ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত। মে মাসে যখন দুই দেশ সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছিল, তখন ভারত এর নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। ২৮ সেপ্টেম্বর ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সূর্যকুমার যাদব-তিলক ভার্মাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছিলেন, ‘মাঠের ক্রিকেটেও অপারেশন সিঁদুর। সেই একই ফল। এবারও জিতল ভারত।’ নাকভিও তখন পাল্টা দিয়েছিলেন। পিসিবি চেয়ারম্যান তখন লিখেছিলেন, ‘যদি যুদ্ধেই তোমাদের গর্ব করার মানদণ্ড হয়, তাহলে ইতিহাসের পাতায় এরই মধ্যে পাকিস্তানের কাছে তোমাদের লজ্জাজনক পরাজয়ের কথা লেখা হয়ে গেছে। ক্রিকেট দিয়ে সেটা বদলানো সম্ভব না।’

এশিয়া কাপ শেষে ভারত-পাকিস্তান দুই দলই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। ভারত নিজেদের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তারা ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাই করেছিল। এবার ভারতীয় ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছে তিন ওয়ানডে ও পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। আর পাকিস্তান আতিথেয়তা দিচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। রাওয়ালপিন্ডিতে আজ চলছে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত