Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

শচীনের ১০০ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যাবে কোহলি

Thumbnail Image

শৈশবে যাঁর সান্নিধ্যে পেয়েছেন, যাঁর পরিচর্যায় বিকশিত হয়েছে বিরাট কোহলির ক্রিকেট সত্তা, তিনি কোচ রাজকুমার শর্মা। মোবাইল ফোনে দিল্লির এই অভিজ্ঞ কোচ আজকের পত্রিকাকে শুনিয়েছেন কোহলির সাফল্যের গল্প, বলেছেন তাঁর ক্রিকেটীয় দর্শন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্ভাবনা নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ রিয়াদ। 

প্রশ্ন: কোহলি আরও কিছুদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি চালিয়ে যেতে পারতেন কি না? 
রাজকুমার শর্মা: হ্যাঁ, আমি মনে করি, বিরাট সহজেই আরও কয়েক বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি চালিয়ে যেতে পারত। তার ফিটনেস এবং খেলার প্রতি নিবেদন এমন যে, সে যেকোনো ফরমেটে সেরা পারফরম করতে পারে। তবে আমি মনে করি, সে দল এবং নিজের ক্যারিয়ারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখেই টি-টোয়েন্টি ছেড়েছে। 

প্রশ্ন: বিশ্বকাপ জেতার পর আপনার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে কোহলি কী বলেছিলেন আপনাকে? 
রাজকুমার: বিশ্বকাপ জেতার পর বিরাটের সঙ্গে আমার খুব আবেগময় কথা হয়েছিল। সে বলেছিল, ‘স্যার, আমরা এটা করেছি!’ তার চোখে আনন্দের অশ্রু ছিল। সে সব সময় দলকে বিশ্বকাপ জেতানোর স্বপ্ন দেখত এবং এই অর্জন তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে আরও বলেছিল, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য আরও বড়।’ বিরাট সব সময় নতুন লক্ষ্য স্থির করে এবং সাফল্যের পরও সে আরও উচ্চতায় পৌঁছাতে চায়। 

প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শচীনের ১০০ সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যেতে পারবে কোহলি? 
রাজকুমার: বিরাটের সম্ভাবনা নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। শচীনের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড অবশ্যই বিশাল, তবে বিরাটের দক্ষতা, ফিটনেস এবং ধারাবাহিকতা তাকে এই মাইলফলকে পৌঁছানোর ভালো সুযোগ দিয়েছে। এরই মধ্যে ৮০টি সেঞ্চুরি করে ফেলেছে বিরাট। টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেও টেস্ট ও ওয়ানডেতে যদি সে আরও কয়েক বছর খেলে এবং ফিটনেস ও মানসিক দৃঢ়তা অটুট থাকে, আমার বিশ্বাস শচীনের ১০০ সেঞ্চুরি সে ছাড়িয়ে যেতে পারবে। 

প্রশ্ন: কোহলিকে নিয়ে আপনার কি কোনো চাওয়া আছে? 
রাজকুমার: তাঁকে নিয়ে আমার আরও একটি প্রত্যাশা—খেলোয়াড়ি জীবন শেষ হওয়ার আগে যেন সে একটি টেস্ট কিংবা আরও একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিততে পারে। আমি চাই সে তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য একজন আদর্শ হয়ে উঠুক, যেভাবে শচীন কিংবা দ্রাবিড় একটা প্রজন্মের আদর্শ ছিলেন। 

প্রশ্ন: আপনার কোচিংয়ে কোহলির বড় পরিবর্তন বা উন্নতি কোথায় বলে মনে করেন আপনি? 
রাজকুমার: বিরাটের সবচেয়ে বড় উন্নতি হয়েছে তার মানসিক স্থিতিশীলতায়। শুরুর দিকে তার খেলা বেশ আক্রমণাত্মক ছিল এবং সে সব সময় বড় শট খেলতে চাইত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে শিখেছে কখন আক্রমণ করতে হবে এবং কখন ধৈর্য ধরে খেলা চালিয়ে যেতে হবে। এর পাশাপাশি তার ফোকাসের মাত্রা এবং চাপের মধ্যে পারফর্ম করার ক্ষমতায় অসাধারণ উন্নতি করেছে। বড় ম্যাচগুলোয় বিরাট সব সময় সেরা হয়ে উঠতে চেয়েছে। সে সময়ের সঙ্গে শিখেছে প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা কীভাবে ভেঙে দিতে হয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে মানিয়ে নিতে হয়। তার স্ট্র্যাটেজিক চিন্তাধারা এবং পরিস্থিতির প্রয়োজন অনুযায়ী খেলার ক্ষমতাই তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের খেলা আপনার ভালো লাগে? 
রাজকুমার: বাংলাদেশের বেশ কিছু ক্রিকেটার আছে, যারা দারুণ প্রতিভাবান। বিশেষ করে আমি সাকিব আল হাসানের খেলা দেখেছি। বেশ কয়েক বছর আগে আইপিএলেও খেলেছে। ওর ভারতে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ভালো একজন অলরাউন্ডার এবং বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অসাধারণ পারফর্ম করেছে। মোস্তাফিজও দারুণ পেসার। তবে নিজেকে আরও সামনে দেখতে চাইলে তাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে, বোলিংয়ে অ্যাকুরেসি ও ভেরিয়েশন বাড়াতে হবে। 

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের রুগ্ণদশার কারণ কী বলে মনে করেন? 
রাজকুমার: অনেক কিছুই কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, ধারাবাহিকতার অভাব। দল হিসেবে যদি ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফর্ম করা না যায়, তাহলে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, পরিকল্পনার অভাবও একটি বড় কারণ। প্রতিটি খেলোয়াড়ের ভূমিকা এবং দায়িত্ব সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা দরকার। এ ছাড়া মানসিকভাবে দৃঢ় থাকার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। চাপের মুহূর্তে খেলোয়াড়দের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং শান্ত থাকা শিখতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ দলে অনেক প্রতিভা আছে এবং সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত