Ajker Patrika

স্টিভ ওয়াহর চোখে টেস্টের উদ্ধারকর্তা জোসেফ 

স্টিভ ওয়াহর চোখে টেস্টের উদ্ধারকর্তা জোসেফ 

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ঐতিহাসিক এক জয় এনে দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন শামার জোসেফ। ব্রিসবেনের গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার নিশ্চিত জেতা টেস্ট কেড়ে নিলেন জোসেফ। উইন্ডিজকে রূপকথার এক টেস্ট জয়ে একই সঙ্গে জিতেছেন ম্যাচসেরা ও সিরিজসেরার পুরস্কার। 

ব্রিসবেনের গ্যাবায় গত ২৫ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্ট। সেখানে ম্যাচের তৃতীয় দিন মিচেল স্টার্কের ইয়র্কারে পায়ের পাতায় মারাত্মক চোট পান শামার। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৫৬ রান, হাতে ছিল ৮ উইকেট। শেষ পর্যন্ত চতুর্থ দিনে বোলিং করতে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ লন্ডভন্ড করে দেন শামার। ১১.৫ ওভার বোলিং করে ৬৮ রানে নেন ৭ উইকেট। যার মধ্যে ছিল ক্যামেরন গ্রিন, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, অ্যালেক্স ক্যারি—অস্ট্রেলিয়ার চার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। জশ হ্যাজলউডকে বোল্ড করে অজিদের ইনিংসের সমাপ্তি টেনেছেন তিনি। 

৮ রানে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন ধবলধোলাই এড়িয়েছে, একই সঙ্গে ২১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টে জিতেছে ক্যারিবীয়রা। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় এসেছে ২৭ বছর পর। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে ব্রিসবেনে নিয়েছেন ৮ উইকেট। দুই ম্যাচের সিরিজে নেন ১৩ উইকেট। শামারের এমন পারফরম্যান্স ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটকে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করেন স্টিভ ওয়াহ। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটের মতো কিছুই হতে পারে না। এই ছেলে ক্রিকেটের সবচেয়ে শুদ্ধ সংস্করণের ত্রাণকর্তা হতে পারে। সিনড্রেলার গল্প খেলাধুলার জগতে বিরল হতে পারে। তবে এটা তরুণ এক ক্রিকেটারের রূপকথার মতো ছিল। ক্যারিবীয় অঞ্চলের ক্রিকেট অনুসারীদের আবেগকে একাই পুনরুজ্জীবিত করেছে। অসংখ্য অভিনন্দন।’ 

পেশাদার ক্রিকেটে শামারের পথচলা গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বার্বাডোজের বিপক্ষে গায়ানার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা শুরু। ১১ মাসে তিনি যে খুব বেশি ম্যাচ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছেন তা নয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলেছেন ৫ ম্যাচ, দুটি করে ম্যাচ খেলেছেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে। যদিও তাঁর ক্রিকেটে আসাটাই ছিল রূপকথার মতোই। গায়ানার প্রত্যন্ত বারাকারা অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন তিনি। যা গায়ানার কানজে নদী থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নদীপথে যেতেই লাগে দুই দিন। ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধাও খুব কম। জীবিকার তাগিদে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন। লেবু, পেয়ারার পাশাপাশি টেপ বল দিয়ে বোলিং অনুশীলন করতেন। 

ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে সর্বশেষ ২০০৩ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অ্যান্টিগার সেন্ট জোন্সে অজিদের দেওয়া ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজ জিতেছিল ৩ উইকেট। সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন লারা। ২১ বছর পর এমন রোমাঞ্চে ভরপুর ঐতিহাসিক জয় দেখে লারার আবেগপ্রবণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা লারার চোখ গতকাল তাই ছলছল করছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক বাঁহাতি ব্যাটার বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। ২৭ বছর লেগেছে অস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। তরুণ, অনভিজ্ঞ এক ক্রিকেটার। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্য বড় এক দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত