Ajker Patrika

অন্য গ্রহে বসতি গড়ার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছিল বায়োস্ফিয়ার ২ এর গবেষণা! কারণ কী

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২২: ১৭
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত ‘বায়োস্ফিয়ার ২’। ছবি: উইকিপিডিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত ‘বায়োস্ফিয়ার ২’। ছবি: উইকিপিডিয়া

পৃথিবীর বাইরের কোনো গ্রহে যদি একদিন মানুষের বসতি গড়তে হয়, তাহলে কেমন হবে সেই পরিবেশ? সেটা বোঝার চেষ্টা থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় তৈরি হয়েছিল ‘বায়োস্ফিয়ার ২’। তিন একরের বেশি জায়গাজুড়ে নির্মিত বিশাল কাচঘেরা ভবনটি যেন এক কৃত্রিম পৃথিবী। এর মধ্যে ছিল বৃষ্টি-অরণ্য বা রেইনফরেস্ট, মরুভূমি, মহাসাগর, জলাভূমি, খামারসহ নানান পরিবেশ। প্রকল্পের নাম বায়োস্ফিয়ার ২। কারণ, আমাদের পৃথিবী বায়োস্ফিয়ার ১। এই কাচঘেরা পৃথিবীতে আটজন মানুষ দুই বছর ধরে চেষ্টা করেছেন টিকে থাকতে।

তাঁদের বেঁচে থাকার যুদ্ধ

বায়োস্ফিয়ার ২ এর ভেতরের অংশ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
বায়োস্ফিয়ার ২ এর ভেতরের অংশ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

১৯৯১ সালে আটজন মানুষ এই কাচঘেরা বায়োস্ফিয়ার ২ এ প্রবেশ করেন। তাঁরা নিজেরা নিজেদের খাবার উৎপাদন করেন, অক্সিজেন ও পানি পুনর্ব্যবহার করেন এবং বায়োস্ফিয়ার ২ এর বিশেষ প্রকৃতিতে টিকে থাকার চেষ্টা চালান। তবে কিছুদিন পর দেখা দেয় নানা সমস্যা। সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যেতে থাকে, বেড়ে যায় কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ। মাটির জীবাণু ও ছত্রাক অক্সিজেন ব্যবহার করে ফেলছিল বেশি। গাছপালা সেটা পূরণ করতে পারছিল না। এ ছাড়া কাচের ছাদ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি আটকে দেওয়ায় মৌমাছিরা ফুল চিনতে পারছিল না। ফলে পরাগায়ন বন্ধ হয়ে যায়। গাছের ফল-ফুল উৎপাদন ব্যাহত হয়।

ব্যর্থতা নয়, ছিল বিজ্ঞানচর্চা

বায়োস্ফিয়ার ২ এর ভেতরের অংশে থাকা আপার সাভানা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
বায়োস্ফিয়ার ২ এর ভেতরের অংশে থাকা আপার সাভানা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সেই সময় অনেকে এই প্রকল্পকে ব্যর্থ হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গবেষকেরা বলছেন, এটি ছিল এক সাহসী বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। অনেক কিছু ভুল হয়েছিল ঠিকই, তবে সেখান থেকেই উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা। মূল সমস্যা ছিল, মাটিতে থাকা জীবাণু ও ছত্রাকগুলো এত বেশি অক্সিজেন খাচ্ছিল যে গাছপালাও সেই ঘাটতি পূরণ করতে পারছিল না। এমনকি, কাচের ছাদ ইউভি রশ্মি আটকে দেওয়ায় মৌমাছি ও অন্য পোকাগুলো ফুল চিনতে পারছিল না, ফলে পরাগায়ন থেমে যায়। তবু গবেষকেরা গাছ কেটে নতুন চারা গজানোর চেষ্টা করেছেন, নতুন পরাগায়নকারী পোকা আনার পরিকল্পনা করেছেন। কোরাল রিফ, মরুভূমি ও খামার—সবকিছুর ভেতর দিয়ে চলতে থাকে নতুন কিছু শেখার প্রক্রিয়া।

পৃথিবীর গুরুত্ব নতুন করে বোঝা

‘এই প্রকল্পে অংশ নেওয়ার পর বুঝেছি, আমি বেঁচে আছি প্রকৃতির কারণে। প্রতিটি অক্সিজেন উৎপাদনকারী গাছের প্রতি তখন সম্মান জন্মেছিল।’ মার্ক নেলসন, বায়োস্ফিয়ার ২ প্রকল্পে অংশ নেওয়া বিজ্ঞানী
মার্ক নেলসন। ছবি: উইকিপিডিয়া
মার্ক নেলসন। ছবি: উইকিপিডিয়া

বায়োস্ফিয়ার ২ প্রকল্প আমাদের বড় যে শিক্ষা দিয়েছে, তা হলো, পৃথিবীর মতো জটিল ও ভারসাম্যপূর্ণ বাসযোগ্য পরিবেশ আর কোথাও তৈরি করা সম্ভব নয়। অন্তত এখনো মানুষ সে উপায় লাভ করতে পারেনি। জীববৈচিত্র্য, আবহাওয়া, মাটি, পানি—সবকিছু একসঙ্গে কাজ করে আমাদের টিকিয়ে রাখে। গবেষক ডেভিড টিলম্যান হিসাব করে দেখিয়েছেন, যদি এই ধরনের কৃত্রিম পৃথিবীতে মানুষকে রাখা হয়, তাহলে প্রতি মাসে একজন মানুষের জীবনধারণ ব্যয় হবে প্রায় ৮২ হাজার ডলার। তা-ও কোনো নিশ্চয়তা নেই যে মানুষ সেখানে সত্যিই টিকে থাকতে পারবে।

আজকের গবেষণায় নতুন আশার আলো

বর্তমানে বায়োস্ফিয়ার ২ ব্যবহৃত হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক গবেষণার একটি পরীক্ষাগার হিসেবে। এখানে দেখা হচ্ছে রেইনফরেস্ট কীভাবে খরা ও গরমে প্রতিক্রিয়া করছে। কোরাল রিফ কীভাবে অ্যাসিডযুক্ত মহাসাগরে টিকে থাকতে পারে, অথবা কোন উদ্ভিদ মাটির গভীর থেকে পানি টেনে নেয়। এই প্রকল্পকে গবেষকেরা আজ তুলনা করেন লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার বা জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মতো মেগা বিজ্ঞান প্রকল্পগুলোর সঙ্গে। আর এখানকার ফলাফল আমাদের প্রকৃতি রক্ষা, খাদ্যনিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিকল্পনার জন্য অমূল্য তথ্য সরবরাহ করে চলেছে।

বায়োস্ফিয়ার ২ প্রমাণ করেছে, মানবজাতির অস্তিত্ব প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আমরা প্রকৃতির অংশ। মহাকাশে বসতি গড়া যতই স্বপ্ন মনে হোক, পৃথিবী ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব। আর তাই প্রকৃতিকে ভালোবেসে, যত্ন নিয়ে, বিজ্ঞানমনস্ক পদ্ধতিতে রক্ষা করাই আমাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার একমাত্র পথ। এই পৃথিবীই আমাদের একমাত্র ঘর।

সূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত