জিনাতুন নূর
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।
এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।
জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।
প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।
চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।
এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।
জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।
প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।
চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।
জিনাতুন নূর
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।
এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।
জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।
প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।
চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়। গ্রিকরা আধুনিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার সূচনা করলেও তাঁদের আগেও মানুষ ব্যবহারিক বিজ্ঞান চর্চা করতেন।
প্রাচীন মিসরীয়রা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও চিকিৎসাবিদ্যায় অসাধারণ উন্নতি সাধন করেছিলেন। এই জ্ঞান তাঁদের পিরামিড, মন্দির নির্মাণ, ক্যালেন্ডার তৈরি এবং সমাজ পরিচালনায়ও সহায়তা করে। যদিও প্রাচীন মিসরীয়দের বিজ্ঞান অনেকাংশেই আজকের দিনে জাদু বা কল্পকাহিনির মতো মনে হতে পারে, তবু এর কিছু কিছু দিক আধুনিক বিশ্বে এখনো প্রাসঙ্গিক।
মিসরীয়দের গণিতর্চচা
প্রাচীন মিসরীয়দের হিসাবের খাতা দেখলে একজন আধুনিক মানুষের কাছে খুব অচেনা মনে হবে। কারণ, মিসরীয়রা আধুনিক আরবি সংখ্যাপদ্ধতি তো নয়ই, প্রাচীন রোমান সংখ্যাপদ্ধতিও ব্যবহার করতেন না। তাঁরা হায়ারোগ্লিফিকস নামে একধরনের চিত্রলিপি ব্যবহার করে সংখ্যা বোঝাতেন। তাঁদের সংখ্যা পদ্ধতিতে দশমিকভিত্তিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক। ১, ১০, ১০০০, ১০০০০, ১০০০০০ ও ১,০০০,০০০ এমন র্নিদিষ্ট কিছু সংখ্যার জন্য তাঁরা আলাদা চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করতেন।
তাঁদের সংখ্যাগুলো ছোট থেকে বড় ক্রম অনুযায়ী লেখা হতো। লেখার দিক হতো বাঁ থেকে ডানে, আবার কখনো ডান থেকে বাঁয়ে, তবে তা পাঠ্য অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারত। মিসরীয়দের মধ্যে কোনো ‘শূন্য’র ধারণা ছিল না। তাই তাঁরা শূন্য ব্যবহার করতেন না। তবে মাঝে মাঝে তাঁরা ফাঁকা জায়গা দিয়ে শূন্য বোঝাতেন। মিসরীয় গণিতসংক্রান্ত যে চারটি প্যাপিরাস (প্রাচীন কাগজে লেখা দলিল) এখনো টিকে আছে, সেগুলো হলো—মস্কো, বার্লিন, কাহুন ও রাইন্ড প্যাপিরাস।
আধুনিক গবেষণায় রাইন্ড প্যাপিরাসকে সবচেয়ে বেশি উদ্ধৃত করা হয়। এই সংখ্যাপদ্ধতি জটিল হলেও ব্যবহারের দিক থেকে ছিল সহজ। যোগের ক্ষেত্রে লেখক শুধু একটি সংখ্যার পর আরেকটি সংখ্যা লিখে দিতেন। যাঁরা ভাষা জানতেন, তাঁরা বুঝতে পারতেন, কোথায় একটি সংখ্যা শেষ হয়ে অন্য সংখ্যাটি শুরু হয়েছে। গুণের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদি হলেও এখনো বোঝা সহজ। ছোট সংখ্যাগুলো গুণ করা হতো পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে (যেমন: ১, ১, ১, ১ = ৪), আর ১০,০০০ এর বেশি সংখ্যার ক্ষেত্রের প্রথমে বড় সংখ্যাটি লেখা হতো এবং নিচে এক এক করে গুণনীয়ক লেখা থাকত। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০০,০০০ এর নিচে চারটি এক লেখা থাকত, তাহলে এর মান হতো ৪ গুণ ১০০,০০০ = ৪০০,০০০।
‘r’ ধ্বনির জন্য ব্যবহৃত চিহ্নটি ছিল মানুষের মুখের মতো এবং এটি কোনো সংখ্যার ওপরে লেখা হলে তা ভগ্নাংশ বোঝাত। যেমন ‘r’ চিহ্ন যদি চারটি একের (১) ওপর লেখা হতো, তাহলে তা ১/৪ বোঝাত। গুণের বিপরীত প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে ভাগফল নির্ধারণ করা হতো। মিসরীয়রা জ্যামিতিরও বিকাশ ঘটায়। আধুনিককালেও প্রচলিত ৩.১৬ সংখ্যা এবং বৃত্তের ব্যাসার্ধের ৮/৯ বা আট নবমাংশকে বর্গ করে পাই (π) এর মান নির্ধারণ করেছিলেন মিসরীয়রা। উল্লেখ্য, মিসরীয়রা তাত্ত্বিক গণিতের বিকাশ ঘটাতে পারেননি। তাঁরা বাস্তব প্রয়োজনে হিসাব-নিকাশ, প্রকৌশল ও মুদ্রা ব্যবস্থাপনার মতো প্রায়োগিক ক্ষেত্রে গণিত ব্যবহার করতেন।
মিসরীয়দের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা
সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় প্রাচীন মিসরীয়রা জ্যোতির্বিজ্ঞানে কম মনোযোগ দিলেও তাঁরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। মিসরীয়রা অ্যাস্ট্রোল্যাবের মতো ‘মেরখেট’ নামের একটি যন্ত্রের সাহায্যে ঊর্ষা মেজর বা সপ্তর্ষিমণ্ডল এবং অরিয়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করতেন। তাঁরা মেরখেটের সঙ্গে পামগাছের পাতার মাঝখানের শিরা বা তন্তু দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনির্দেশক যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এসব যন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ—এই চার দিক বরাবর পুরোনো আমলের পিরামিড ও সূর্যমন্দিরগুলোর অবস্থান নির্ধারণ করেছিলেন প্রাচীন মিসরের গবেষকেরা।
মধ্য রাজবংশ (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) এবং পরবর্তী সময়ে (৬৬৪–৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) আকাশ পর্যবেক্ষণ কফিনে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন মিসরীয়রা। এসব নক্ষত্রচিত্রকে নক্ষত্রঘড়ি বা তির্যক ক্যালেন্ডার বলা হয়। কারণ, মিসরীয়রা পুরো রাতের আকাশের নক্ষত্রগুলোকে ৩৬টি লম্বে ভাগ করতেন, প্রতিটি লম্বে ৩৬ ধরনের নক্ষত্র থাকত। এটি সময় গণনা পদ্ধতি, যা থেকে রাতে কোন সময়ে কোন নক্ষত্র আকাশে উঠবে, তা বোঝা যেত। এটা ছিল মিসরীয়দের রাতের সময় পরিমাপের পদ্ধতি।
এসব নক্ষত্রের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সিরিয়াস নামের নক্ষত্র, এটিকে মিসরীয়রা সোপদেত নামে চিনতেন। এটি ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র এবং প্রতিবছরের জুলাই মাসে নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সময় এর দেখা মিলত। মধ্য রাজত্বকাল (২০৫৫–১৬৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) পর্যন্ত মিসরীয় বিজ্ঞানীরা পাঁচটি গ্রহ চিহ্নিত করেন। বৃহস্পতি, মঙ্গল, বুধ, শনি ও শুক্র নামকরণ হয় এগুলোর।
প্রাচীন মিসরীয়দের প্রকৌশল দক্ষতা
প্রাচীন মিসরীয়রা তাঁদের প্রকৌশল দক্ষতা, কার্যক্রম এবং কাজের টেকসই ফলের কারণে বেশি পরিচিত। মিসরীয় প্রকৌশলবিদ্যার আলোচনা করতে গেলে ইমহোটেপের কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ছিলেন মিসরের প্রথম পরিচিত স্থপতি, প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। ইমহোটেপের কর্ম ও জীবন সম্পর্কে প্রাচীন মিসরীয় লিপিতে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তিনি যে খ্রিষ্টপূর্ব ২৬৬৭-২৬৪৮ আমলের রাজা জোসারের ‘ভিজিয়ার’ বা প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, সেটুকু জানা যায়।
প্রাচীন রাজশাসনে ভিজিয়ারদের অনেক গুরুত্ব ছিল। কারণ, তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন চালাতেন। ইমহোটেপকে জোসার অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। তাঁকে শুধু ভিজিয়ারই নিযুক্ত করেননি তিনি, পাশাপাশি নিজের এক স্থাপত্যে ইমহোটেপের নাম খোদাই করেন। কিছু জীবনীমূলক লেখা থেকে জানা যায়, ইমহোটেপের পূর্বপুরুষ স্থপতি ও প্রকৌশলী ছিলেন।
সেই উত্তরাধিকার তিনি ও তাঁর সন্তানেরাও চর্চা করেছেন। নির্দিষ্ট একটি পিরামিড নির্মাণে অবদানের কারণে মিসরীয় প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানীর মধ্যে ইমহোটেপ সবচেয়ে বেশি খ্যাতি অর্জন করেন। রাজা জোসার তাঁর একটি পিরামিড নকশার দায়িত্ব ইমহোটেপকে দিয়েছিলেন। প্রকৌশলী ইমহোটেপ রাজার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এমন এক নকশা উদ্ভাবন করেন, যা ছিল পিরামিড তৈরির একেবারে আদি ধাপ।
জোসারের আগে প্রথম ও দ্বিতীয় রাজবংশের রাজারা সমাহিত হতেন ‘মাস্তাবা’ নামের কবরে। মাস্তাবা ছিল আয়তাকার কাদামাটির তৈরি সমাধি, যার নিচে ছিল কবরকক্ষ। প্রথম দুটি রাজবংশের জন্য মাস্তাবা যথেষ্ট কার্যকর ছিল। কিন্তু রাজা জোসার আরও বিশাল, জাঁকজমকপূর্ণ ও চিরস্থায়ী কিছু একটা চেয়েছিলেন। মাস্তাবার নকশা পুরো বাদ না দিয়ে তাঁর ওপর ছোট আরেকটি মাস্তাবা বসিয়ে এটিকে আরও উন্নত করেন।
নির্মাণ শেষ হলে দেখা যায়, ওই নকশায় স্টেপ পিরামিডের ছয়টি ধাপ এবং নেক্রপলিসের ওপর ১৯৬ ফুট উচ্চতায় দণ্ডায়মান ছিল। স্থায়ী স্টেপ পিরামিড পাথরের তৈরি ও কাদামাটির মাস্তাবার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই হওয়ায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয় ওঠে। ইমহোটেপের ধারণাকে আরও উন্নত করে চতুর্থ রাজবংশের সত্যিকারের পিরামিড নির্মাণ করা হয়। তবে ইমহোটেপের অনুপ্রেরণা ছাড়া তাঁদের এ কাজ কখনো সম্ভব হতো না।
ইমহোটেপ কেবল প্রকৌশলী বা স্থপতিই নন, চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর কৃতিত্ব ছিল। ইমহোটেমের মৃত্যুর অনেক পরে (মধ্য রাজত্বকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময় পর্যন্ত) মিসরীয় লিপিতে ইমহোটেপকে নিয়ে এমন দাবি করা হয়। সম্ভবত তাঁকে ‘র্সবশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে পরে চিকিৎসা দক্ষতাও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রাচীন চিকিৎসাবিষয়ক পাণ্ডু লিপি ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ ভিত্তি করে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, ইমহোটেপ সত্যিই একজন চিকিৎসক ছিলেন।
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিদ্যা
এক ডজনের বেশি প্রাচীন চিকিৎসাসংক্রান্ত পাণ্ডুলিপি প্যাপিরাস থেকে প্রাচীন মিসরতত্ত্ববিদেরা প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’। এডউইন স্মিথ নামের এক ব্যক্তি ১৮৬২ সালে পাণ্ডুলিপিটি কিনে নেন, তাঁরই নামে পাণ্ডুলিপির নামকরণ করা হয়। এই প্যাপিরাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো, প্রাচীন মিসরে জাদু ও চিকিৎসা গভীরভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু এতে কোনো জাদুবিদ্যার উল্লেখ নেই, যা প্রাচীন মিসরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক; বরং এটি যৌক্তিকতানির্ভর এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা অনুসরণ করে।
এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিকে খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১৫৫০ সালে নতুন রাজবংশের আমলের হিসেবে ধরা হয়। তবে অনেক মিসরতত্ত্ববিদ মনে করেন, এর শব্দভান্ডার ও ব্যাকরণ প্রমাণ করে, ‘এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস’ পুরাতন রাজবংশ যুগের কোনো গ্রন্থের ভিত্তিতে লেখা। সত্যি তাই হলে ইমহোটেপ হবেন এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসের মূল লেখক।
যখন চিকিৎসাবিষয়ক সকল প্যাপিরাস একসঙ্গে বিবেচনা করা হয়, তখন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নজরে রাখা দরকার। প্রথমত, এডউইন স্মিথ প্যাপিরাস প্রাচীনতম আর লন্ডন ও লাইডেন প্যাপিরাস সর্বশেষ—যেগুলো ২৫০ খ্রিষ্টাব্দের। এটি গুরুত্বপূর্ণ; কারণ, সে সময় মিসর প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রথমে গ্রিক ও পরে রোমানদের শাসনাধীনে ছিল। যাঁরা এই প্যাপিরাসগুলো লিখেছিলেন, তাঁরা নিশ্চয় গ্রিক-রোমান তত্ত্ব ও পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, অনেক প্যাপিরাসই সাধারণ চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে লেখা, আবার কিছু কিছু ছিল বিশেষায়িত। যেমন ‘কাহুন প্যাপিরাস’ মূলত স্ত্রীরোগসংক্রান্ত চিকিৎসা (গাইনোকোলজিক্যাল মেডিসিন) নিয়ে লেখা, ‘ব্রুকলিন প্যাপিরাস’ সাপের দংশনসম্পর্কিত ও ‘লন্ডন প্যাপিরাস’ জাদুবিদ্যাবিষয়ক।
উল্লেখ্য, প্রাচীন মিসরের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিরা সাধারণত একাধিক ভূমিকা পালন করতেন। এসবের মধ্যে ধর্মীয় পুরোহিত হওয়া প্রায় সাধারণ ব্যাপার ছিল।
মমি তৈরির চর্চার কারণে সমসাময়িক মেসোপটেমীয়দের তুলনায় মানবদেহের গঠন সম্পর্কে মিসরীয়রা অনেক ভালো ধারণা রাখতেন। তাঁরা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অনেক অঙ্গের নাম জানতেন। মমি তৈরির সময় তাঁরা ফুসফুস, যকৃৎ, পাকস্থলী, অন্ত্রসমূহ বের করে দেবতার মুখখচিত কাঠের তৈরি বয়ামে সংরক্ষণ করতেন। তবে হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সাধারণত অক্ষত অবস্থায় রাখা হতো। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক বের করে ফেলা হতো। গবেষকদের ধারণা, সম্ভবত মিসরীয়রা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ভালো বুঝতেন না। মাথায় আঘাত লাগলে মানুষের যে মৃত্যু হতে পারে, শুধু এটুকু জানতেন।
প্রাচীন মিসরীয় ওষুধবিজ্ঞান
প্রাচীন মিসরে রোগের উৎস বা কারণ ও ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে রোগ নির্ণয় করার ধারণা বিকশিত ছিল না। তাই তাঁদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগের মূল কারণ নির্ণয় না করে বরং রোগের লক্ষণ চিকিৎসা করা হতো। খনিজ, প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ—এই তিনটি উৎসের একক বা মিলিত উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। সাধারণত ন্যাট্রন নামের একটি খনিজ পদার্থ মমি তৈরির সময় শরীর শুকানোর জন্য ব্যবহার করা হতো। সেই সঙ্গে ক্ষত থেকে পুঁজ বের করার জন্যও ব্যবহার করা হতো।
প্রাণিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল প্রস্রাব ও গোবর—এগুলো সাধারণত শরীরের বাইরের অংশে অর্থাৎ চামড়ায় ব্যবহার করা হতো। উদ্ভিজ্জ উপাদানের মধ্যে ছিল এমার নামে একধরনের প্রাচীন গম, হেম্প নামের এক জাতের গাঁজা ও রেড়ির তেল অর্থাৎ ভেন্নাগাছের বিচি থেকে তৈরি তেল—এই উপাদানগুলো সাধারণত মুখে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এসব ওষুধের কার্যকারিতা অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হলেও ব্যথানাশক হিসেবে কার্যকর ছিল।
এবার্স প্যাপিরাসে শিশুদের কান্নার প্রতিষেধক হিসেবে সম্ভাব্য আফিমজাতীয় ওষুধের উল্লেখ আছে। তাতে বিশেষভাবে বলা আছে, ‘অতিরিক্ত কান্না থামানোর প্রতিষেধক’: শেপেন বা আফিম, দেয়ালের ওপর থাকা মাছির মল—এই উপাদানগুলোর মিশ্রণ তৈরি করে চার দিন খেতে হবে, সঙ্গে সঙ্গে কান্না বন্ধ হয়ে যাবে।’
গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় আফিমগাছ বোঝাতে শেপেন শব্দটি ব্যবহৃত হতো। মিসরীয়রা আরও কিছু নেশাজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করতেন। সেগুলোর মধ্যে ছিল গাঁজা, যার মিসরীয় নাম ছিল (শেমশেমেট)। এটি দড়ি তৈরিতে এবং সম্ভবত ব্যথা উপশমেও ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিসরীয়রা ম্যানড্রেক—প্রাচীন ঔষধি গাছ, যার শিকড়ে ব্যথানাশক ও নেশাজাতীয় উপাদান থাকে এবং নিমফিয়া নামে নেশাজাতীয় জলজ উদ্ভিদ ব্যবহার করতেন।
চিকিৎসাপদ্ধতি
মিসরীয় চিকিৎসাপদ্ধতির অনেকাংশই ওষুধের নিয়মকানুনসহ প্যাপিরাস বা পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে। স্ত্রীরোগের চিকিৎসা সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে লেখা আছে।
এসব লেখায় দেখা যায়, শরীর সম্পর্কে মিসরীয়দের জ্ঞান মোটামুটি উন্নতই ছিল। কিন্তু অনেক রোগেরই চিকিৎসা তাঁরা জানতেন না। যেমন ইবার্স প্যাপিরাসে নারীদের মাসিক বন্ধ হওয়া রোগ ঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ওষুধ বা চিকিৎসা কী হবে, তার উল্লেখ নেই।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘অনেক বছর ধরে মাসিক বন্ধ থাকা নারীকে পরীক্ষার সময় যদি তিনি বিশেষ ধরনের বমি করেন এবং যদি তাঁর পেট আগুনের মতো জ্বলতে থাকে; কিন্তু বমির পর জ্বালাভাব কমে যায়। তখন জরায়ুতে রক্ত উঠেছে বলে ধরে নিতে হবে।’
চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে চার দিন ধরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন একটি তরল ওষুধ খেতে বলা হতো। যদিও এই ওষুধ খুব বেশি উপকারে আসত না, তারপরও লেখা থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিসরীয়দের মানবদেহ সম্পর্কে উন্নত জ্ঞান ছিল। মিসরীয়রা মানব দেহসম্পর্কিত জ্ঞান ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারও করতেন।
চিকিৎসাবিষয়ক বেশির ভাগ মিসরীয় প্যাপিরাসে হাড় ভাঙার সচরাচর উল্লেখ আছে। পিরামিড, মন্দির বা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির মতো খাটুনির কাজে থাকা পুরুষদের হাড় ভাঙার ঘটনা খুবই সাধারণ ছিল। তাই মিসরীয় চিকিৎসকদের হাড় ভাঙার চিকিৎসার অনেক সুযোগ হয়েছিল। এডউইন স্মিথ প্যাপিরাসে সাধারণ হাড় ভাঙা কীভাবে জোড়া লাগানো যাবে, তার নানা পদ্ধতির বর্ণনা দেওয়া আছে।
কাঁধের হাড় ভাঙলে কীভাবে তার চিকিৎসা করতে হবে, তার একটি উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে, ‘পিঠের ওপর চিত করে শোয়াতে হবে, দুই কাঁধের মাঝখানে ভাঁজ করা কাপড় রাখতে হবে। এরপর দুই কাঁধ ছড়িয়ে দিতে হবে, দুই কাঁধ টান টান রাখতে হবে; যাতে ভাঙা হাড়টি নিজের জায়গায় চলে আসে। এরপর লিনেন কাপড় দিয়ে স্প্লিন্ট বানাতে হবে, একটি রাখতে হবে বাহুর ওপরের অংশের ভেতরের দিকে, আরেকটি নিচের দিকে। তারপর এটি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং প্রতিদিন মধু দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে পুরো সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।’
প্রাচীন মিসরীয় চিকিৎসাবিষয়ক প্যাপিরাসে ওপরের বিষয়গুলো ছাড়াও পশুর কামড় ও প্রাণীর দংশন এবং দাঁতের চিকিৎসার কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য কিছুটা কম পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো যন্ত্র পাওয়া যায়নি, যা বিশেষভাবে অস্ত্রোপচার বা অন্যান্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে বলে শনাক্ত করা যায়। মিসরীয় বিজ্ঞান ছিল বহুমুখী, বেশ কার্যকর ও বাস্তবভিত্তিক। প্রাচীন মিসরীয়রা তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ না করলেও তাঁদের সৃষ্ট জ্ঞান প্রয়োজন মেটাত—হোক সেটা গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রকৌশল কিংবা চিকিৎসা।
‘ইভেন্টউড’ নামে একটি মার্কিন কোম্পানি এমন এক ধরনের কাঠ তৈরি করেছে, যার শক্তি ইস্পাতের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি এবং ওজন ছয় গুণ কম। এই কাঠের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারউড’। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এই কাঠের উৎপাদন শুরু করেছে।
৬ দিন আগেআন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান রসায়নবিদ ড. ওমর ইয়াঘি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি দ্বিতীয় মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে রসায়নে নোবেল জয় করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শুষ্ক অঞ্চল থেকে পানীয় জল সংগ্রহের প্রযুক্তিতে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
১৩ দিন আগেচলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম ইয়াঘি। আজ বুধবার সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছে। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাঁরা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের বিকাশ’ ঘটানোর জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
১৩ দিন আগেপদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হলো—কত বড় ব্যবস্থার (system) মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব দৃশ্যমান করা সম্ভব? এ বছরের নোবেল বিজয়ীরা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্যবহার করে এমন একটি ব্যবস্থায় কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও কোয়ান্টাইজড শক্তির স্তর প্রমাণ করেছেন—যেটির আকার রীতিমতো...
১৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
‘ইভেন্টউড’ নামে একটি মার্কিন কোম্পানি এমন এক ধরনের কাঠ তৈরি করেছে, যার শক্তি ইস্পাতের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি এবং ওজন ছয় গুণ কম। এই কাঠের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারউড’। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এই কাঠের উৎপাদন শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, ইভেন্টউড কোম্পানিটি সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন উপাদান বিজ্ঞানী লিয়াংবিং হু। বর্তমানে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করছেন।
দশ বছরেরও বেশি সময় আগে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর মেটেরিয়াল ইনোভেশান’-এ কাজ করার সময় লিয়াংবিং হু প্রচলিত কাঠকে নতুনভাবে পুনর্গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। এমনকি তিনি কাঠের মূল উপাদান ‘লিগনিন’ সরিয়ে সেটিকে স্বচ্ছও করেছিলেন। তবে তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল, কাঠকে এর প্রধান উপাদান সেলুলোজ ব্যবহার করে আরও শক্তিশালী করা।
২০১৭ সালে হু প্রথমবারের মতো কাঠের সেলুলোজ রসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে এর শক্তি বহুগুণ বাড়াতে সক্ষম হন। এই প্রক্রিয়ায় কাঠকে পানির সঙ্গে নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থে প্রথমে সেদ্ধ করা হয়। এরপর তাপ ও চাপ প্রয়োগ করে কাঠের কোষের স্তর ঘন করা হয়। এতে কাঠের ঘনত্ব ও দৃঢ়তা এতটাই বেড়ে যায় যে, গবেষণায় দেখা যায়—এর শক্তি অধিকাংশ ধাতু ও সংকর ধাতুর চেয়েও বেশি।
এরপর বহু বছর ধরে হু প্রক্রিয়াটি আরও উন্নত করেন এবং ১৪০ টিরও বেশি পেটেন্ট নেন। এখন সেই গবেষণার ধারাবাহিকতায় ‘সুপারউড’ বাজারে এসেছে।
ইন্টারউড-এর প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স লাউ বলেন, ‘রাসায়নিক দিক থেকে এটি কাঠই। কিন্তু এর গুণাবলি সাধারণ কাঠের তুলনায় বহুগুণ উন্নত।’ তিনি জানান, সুপারউড দিয়ে তৈরি ভবনগুলো চার গুণ হালকা হতে পারে, ফলে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ও নির্মাণে সহজ হবে।
সুপারউডের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এটি ২০ গুণ পর্যন্ত শক্তিশালী এবং ১০ গুণ বেশি দাগ ও ক্ষয় প্রতিরোধে সক্ষম। এই কাঠের প্রাকৃতিক ছিদ্রযুক্ত গঠন সংকুচিত হয়ে ঘন ও শক্ত হওয়ায় এটি ছত্রাক, পোকামাকড় এবং এমনকি আগুনও প্রতিরোধ করে।
ইন্টারউড বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ফ্রেডেরিক শহরে সুপারউডের উৎপাদন শুরু করেছে। শুরুতে এটিকে স্থাপনার বহিরাংশের জন্য—যেমন দেয়াল প্যানেল, ডেকিং ও ক্ল্যাডিংয়ে ব্যবহার করা হবে। আগামী বছর থেকে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও আসবাবেও এর ব্যবহার শুরু হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি।
সুপারউডের উৎপাদন খরচ এখনো সাধারণ কাঠের চেয়ে বেশি। তবে ইস্পাতের তুলনায় এর কার্বন নিঃসরণ প্রায় ৯০ শতাংশ কম। লাউ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কাঠের চেয়ে সস্তা হওয়া নয়; বরং ইস্পাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা।’
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের অধ্যাপক ফিলিপ ওল্ডফিল্ড মত দিয়েছেন, কাঠ পরিবেশবান্ধব কারণ এটি উৎপাদনের সময় কার্বন ধরে রাখে। তিনি বলেন, ‘সুপারউডের মতো শক্তিশালী কাঠ স্থপতিদের নতুন নকশা ও বড় কাঠামো তৈরিতে অনুপ্রাণিত করবে। এর ফলে নির্মাণশিল্পে কাঠের ব্যবহার আরও বাড়াতে পারে।’
‘ইভেন্টউড’ নামে একটি মার্কিন কোম্পানি এমন এক ধরনের কাঠ তৈরি করেছে, যার শক্তি ইস্পাতের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি এবং ওজন ছয় গুণ কম। এই কাঠের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারউড’। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এই কাঠের উৎপাদন শুরু করেছে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, ইভেন্টউড কোম্পানিটি সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন উপাদান বিজ্ঞানী লিয়াংবিং হু। বর্তমানে তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করছেন।
দশ বছরেরও বেশি সময় আগে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর মেটেরিয়াল ইনোভেশান’-এ কাজ করার সময় লিয়াংবিং হু প্রচলিত কাঠকে নতুনভাবে পুনর্গঠনের চেষ্টা শুরু করেন। এমনকি তিনি কাঠের মূল উপাদান ‘লিগনিন’ সরিয়ে সেটিকে স্বচ্ছও করেছিলেন। তবে তাঁর আসল লক্ষ্য ছিল, কাঠকে এর প্রধান উপাদান সেলুলোজ ব্যবহার করে আরও শক্তিশালী করা।
২০১৭ সালে হু প্রথমবারের মতো কাঠের সেলুলোজ রসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে এর শক্তি বহুগুণ বাড়াতে সক্ষম হন। এই প্রক্রিয়ায় কাঠকে পানির সঙ্গে নির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থে প্রথমে সেদ্ধ করা হয়। এরপর তাপ ও চাপ প্রয়োগ করে কাঠের কোষের স্তর ঘন করা হয়। এতে কাঠের ঘনত্ব ও দৃঢ়তা এতটাই বেড়ে যায় যে, গবেষণায় দেখা যায়—এর শক্তি অধিকাংশ ধাতু ও সংকর ধাতুর চেয়েও বেশি।
এরপর বহু বছর ধরে হু প্রক্রিয়াটি আরও উন্নত করেন এবং ১৪০ টিরও বেশি পেটেন্ট নেন। এখন সেই গবেষণার ধারাবাহিকতায় ‘সুপারউড’ বাজারে এসেছে।
ইন্টারউড-এর প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স লাউ বলেন, ‘রাসায়নিক দিক থেকে এটি কাঠই। কিন্তু এর গুণাবলি সাধারণ কাঠের তুলনায় বহুগুণ উন্নত।’ তিনি জানান, সুপারউড দিয়ে তৈরি ভবনগুলো চার গুণ হালকা হতে পারে, ফলে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ও নির্মাণে সহজ হবে।
সুপারউডের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এটি ২০ গুণ পর্যন্ত শক্তিশালী এবং ১০ গুণ বেশি দাগ ও ক্ষয় প্রতিরোধে সক্ষম। এই কাঠের প্রাকৃতিক ছিদ্রযুক্ত গঠন সংকুচিত হয়ে ঘন ও শক্ত হওয়ায় এটি ছত্রাক, পোকামাকড় এবং এমনকি আগুনও প্রতিরোধ করে।
ইন্টারউড বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের ফ্রেডেরিক শহরে সুপারউডের উৎপাদন শুরু করেছে। শুরুতে এটিকে স্থাপনার বহিরাংশের জন্য—যেমন দেয়াল প্যানেল, ডেকিং ও ক্ল্যাডিংয়ে ব্যবহার করা হবে। আগামী বছর থেকে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা ও আসবাবেও এর ব্যবহার শুরু হবে বলে আশা করছে কোম্পানিটি।
সুপারউডের উৎপাদন খরচ এখনো সাধারণ কাঠের চেয়ে বেশি। তবে ইস্পাতের তুলনায় এর কার্বন নিঃসরণ প্রায় ৯০ শতাংশ কম। লাউ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য কাঠের চেয়ে সস্তা হওয়া নয়; বরং ইস্পাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা।’
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের অধ্যাপক ফিলিপ ওল্ডফিল্ড মত দিয়েছেন, কাঠ পরিবেশবান্ধব কারণ এটি উৎপাদনের সময় কার্বন ধরে রাখে। তিনি বলেন, ‘সুপারউডের মতো শক্তিশালী কাঠ স্থপতিদের নতুন নকশা ও বড় কাঠামো তৈরিতে অনুপ্রাণিত করবে। এর ফলে নির্মাণশিল্পে কাঠের ব্যবহার আরও বাড়াতে পারে।’
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান রসায়নবিদ ড. ওমর ইয়াঘি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি দ্বিতীয় মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে রসায়নে নোবেল জয় করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শুষ্ক অঞ্চল থেকে পানীয় জল সংগ্রহের প্রযুক্তিতে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
১৩ দিন আগেচলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম ইয়াঘি। আজ বুধবার সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছে। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাঁরা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের বিকাশ’ ঘটানোর জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
১৩ দিন আগেপদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হলো—কত বড় ব্যবস্থার (system) মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব দৃশ্যমান করা সম্ভব? এ বছরের নোবেল বিজয়ীরা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্যবহার করে এমন একটি ব্যবস্থায় কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও কোয়ান্টাইজড শক্তির স্তর প্রমাণ করেছেন—যেটির আকার রীতিমতো...
১৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান রসায়নবিদ ড. ওমর ইয়াঘি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি দ্বিতীয় মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে রসায়নে নোবেল জয় করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শুষ্ক অঞ্চল থেকে পানীয় জল সংগ্রহের প্রযুক্তিতে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
রসায়নে প্রথম মুসলিম নোবেল বিজয়ী হলেন মিসরীয়-আমেরিকান রসায়নবিদ ড. আহমেদ জেওয়াইল। তিনি ১৯৯৯ সালে তাঁর কাজের জন্য পুরস্কৃত হন।
ড. ইয়াঘি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে-তে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তাঁর প্রধান গবেষণা ক্ষেত্র হলো ‘রেটিকুলার কেমিস্ট্রি’ নামে রসায়নের একটি নতুন শাখা, যার পথিকৃৎ তিনি। তিনি এই ক্ষেত্রটিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: ‘শক্তিশালী বন্ধনের মাধ্যমে আণবিক বিল্ডিং ব্লকগুলোকে বিস্তৃত কাঠামোর মধ্যে জুড়ে দেওয়া’।
এই ক্ষেত্রে তিনি তিন ধরনের যুগান্তকারী পদার্থের আবিষ্কার ও নকশা প্রণয়নের জন্য সুপরিচিত। এগুলো হলো: মেটাল-অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস (এমওএফ), কোভ্যালেন্ট অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস (সিওএফ) এবং জিউলিটিক ইমিডাজোলেট ফ্রেমওয়ার্কস (জেডআইএফ)। মেটাল-অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস-এর জন্য অপর দুই বিজ্ঞানীর সঙ্গে এবার রসায়নে নোবেল জিতেছেন ওমর।
এই বস্তুগুলো পৃথিবীর জ্ঞাত পদার্থগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠতল এলাকা ধারণ করে। ফলে এগুলো প্রয়োগ বহুবিধ এবং মানবকল্যাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন:
মরুভূমি বা শুষ্ক অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্প শোষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল আহরণ
কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ ও রূপান্তর
হাইড্রোজেন ও মিথেন সংরক্ষণ
অনুঘটক (Catalysis) হিসেবে ব্যবহার।
তাঁর কাজের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। তাঁর কাজের ভিত্তিতে ৩ শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যা মোট আড়াই লাখের বার সাইটেশন পেয়েছে এবং তাঁর এইচ-সূচক ১৯০।
শরণার্থী জীবন থেকে শীর্ষস্থান
ড. ওমর ইয়াঘি ১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির সীমিত সুবিধা নিয়ে একটি মাত্র ঘরে গাদাগাদি করে থেকে কেটেছে তাঁর শৈশব। বাবার অনুপ্রেরণায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে না জানা সত্ত্বেও তিনি হাডসন ভ্যালি কমিউনিটি কলেজ থেকে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে ইউনিভার্সিটি অ্যাট আলবানি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, আরবানা-শ্যাম্পেইন থেকে রসায়নে পিএইচডি (১৯৯০) অর্জন করেন, যেখানে তাঁর উপদেষ্টা ছিলেন ড. ওয়াল্টার জি. ক্লেমপারার। পরবর্তীতে তিনি রিচার্ড এইচ. হোম-এর অধীনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে গবেষণা সম্পন্ন করেন।
সৌদি নাগরিকত্ব ও বৈশ্বিক গবেষণা কেন্দ্র
ড. ওমর ইয়াঘি তাঁর বৈজ্ঞানিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি নাগরিকত্ব লাভ করেন। এটি সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০ ’-এর লক্ষ্য পূরণে দেশের উন্নয়নে প্রতিভাবান বিশেষজ্ঞদের আকৃষ্ট করার একটি অংশ।
ড. ইয়াঘি বর্তমানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বার্কলে গ্লোবাল সায়েন্স ইনস্টিটিউট: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ এবং তরুণ গবেষকদের সুযোগ দেওয়াই এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।
কাভলি এনার্জি ন্যানো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট: আণবিক স্তরে শক্তির রূপান্তরের মৌলিক বিজ্ঞানের ওপর জোর দেয়।
বাকার ইনস্টিটিউট অব ডিজিটাল ম্যাটেরিয়ালস ফর দ্য প্ল্যানেট: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সাশ্রয়ী, সহজে স্থাপনযোগ্য এমওএফ এবং সিওএফ-এর মতো সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত উপকরণ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।
নোবেল ছাড়াও, ড. ওমর ইয়াঘি তাঁর বৈজ্ঞানিক অর্জনের জন্য বিশ্বজুড়ে বহু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে—উলফ প্রাইজ ইন কেমিস্ট্রি (২০১৮), কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন সায়েন্স (২০১৫), সলভয় প্রাইজ (২০২৪), তাং প্রাইজ (২০২৪) এবং বলজান প্রাইজ (২০২৪)।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান রসায়নবিদ ড. ওমর ইয়াঘি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি দ্বিতীয় মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে রসায়নে নোবেল জয় করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শুষ্ক অঞ্চল থেকে পানীয় জল সংগ্রহের প্রযুক্তিতে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
রসায়নে প্রথম মুসলিম নোবেল বিজয়ী হলেন মিসরীয়-আমেরিকান রসায়নবিদ ড. আহমেদ জেওয়াইল। তিনি ১৯৯৯ সালে তাঁর কাজের জন্য পুরস্কৃত হন।
ড. ইয়াঘি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে-তে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তাঁর প্রধান গবেষণা ক্ষেত্র হলো ‘রেটিকুলার কেমিস্ট্রি’ নামে রসায়নের একটি নতুন শাখা, যার পথিকৃৎ তিনি। তিনি এই ক্ষেত্রটিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে: ‘শক্তিশালী বন্ধনের মাধ্যমে আণবিক বিল্ডিং ব্লকগুলোকে বিস্তৃত কাঠামোর মধ্যে জুড়ে দেওয়া’।
এই ক্ষেত্রে তিনি তিন ধরনের যুগান্তকারী পদার্থের আবিষ্কার ও নকশা প্রণয়নের জন্য সুপরিচিত। এগুলো হলো: মেটাল-অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস (এমওএফ), কোভ্যালেন্ট অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস (সিওএফ) এবং জিউলিটিক ইমিডাজোলেট ফ্রেমওয়ার্কস (জেডআইএফ)। মেটাল-অরগানিক ফ্রেমওয়ার্কস-এর জন্য অপর দুই বিজ্ঞানীর সঙ্গে এবার রসায়নে নোবেল জিতেছেন ওমর।
এই বস্তুগুলো পৃথিবীর জ্ঞাত পদার্থগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠতল এলাকা ধারণ করে। ফলে এগুলো প্রয়োগ বহুবিধ এবং মানবকল্যাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন:
মরুভূমি বা শুষ্ক অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্প শোষণের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানীয় জল আহরণ
কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণ ও রূপান্তর
হাইড্রোজেন ও মিথেন সংরক্ষণ
অনুঘটক (Catalysis) হিসেবে ব্যবহার।
তাঁর কাজের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। তাঁর কাজের ভিত্তিতে ৩ শতাধিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে, যা মোট আড়াই লাখের বার সাইটেশন পেয়েছে এবং তাঁর এইচ-সূচক ১৯০।
শরণার্থী জীবন থেকে শীর্ষস্থান
ড. ওমর ইয়াঘি ১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে এক ফিলিস্তিনি শরণার্থী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির সীমিত সুবিধা নিয়ে একটি মাত্র ঘরে গাদাগাদি করে থেকে কেটেছে তাঁর শৈশব। বাবার অনুপ্রেরণায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে না জানা সত্ত্বেও তিনি হাডসন ভ্যালি কমিউনিটি কলেজ থেকে পড়াশোনা শুরু করেন এবং পরে ইউনিভার্সিটি অ্যাট আলবানি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়, আরবানা-শ্যাম্পেইন থেকে রসায়নে পিএইচডি (১৯৯০) অর্জন করেন, যেখানে তাঁর উপদেষ্টা ছিলেন ড. ওয়াল্টার জি. ক্লেমপারার। পরবর্তীতে তিনি রিচার্ড এইচ. হোম-এর অধীনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল ফেলো হিসেবে গবেষণা সম্পন্ন করেন।
সৌদি নাগরিকত্ব ও বৈশ্বিক গবেষণা কেন্দ্র
ড. ওমর ইয়াঘি তাঁর বৈজ্ঞানিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে সৌদি নাগরিকত্ব লাভ করেন। এটি সৌদি আরবের ‘ভিশন ২০৩০ ’-এর লক্ষ্য পূরণে দেশের উন্নয়নে প্রতিভাবান বিশেষজ্ঞদের আকৃষ্ট করার একটি অংশ।
ড. ইয়াঘি বর্তমানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বার্কলে গ্লোবাল সায়েন্স ইনস্টিটিউট: উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গবেষণা কেন্দ্র নির্মাণ এবং তরুণ গবেষকদের সুযোগ দেওয়াই এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।
কাভলি এনার্জি ন্যানো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট: আণবিক স্তরে শক্তির রূপান্তরের মৌলিক বিজ্ঞানের ওপর জোর দেয়।
বাকার ইনস্টিটিউট অব ডিজিটাল ম্যাটেরিয়ালস ফর দ্য প্ল্যানেট: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সাশ্রয়ী, সহজে স্থাপনযোগ্য এমওএফ এবং সিওএফ-এর মতো সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত উপকরণ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।
নোবেল ছাড়াও, ড. ওমর ইয়াঘি তাঁর বৈজ্ঞানিক অর্জনের জন্য বিশ্বজুড়ে বহু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে—উলফ প্রাইজ ইন কেমিস্ট্রি (২০১৮), কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ইন সায়েন্স (২০১৫), সলভয় প্রাইজ (২০২৪), তাং প্রাইজ (২০২৪) এবং বলজান প্রাইজ (২০২৪)।
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫‘ইভেন্টউড’ নামে একটি মার্কিন কোম্পানি এমন এক ধরনের কাঠ তৈরি করেছে, যার শক্তি ইস্পাতের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি এবং ওজন ছয় গুণ কম। এই কাঠের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারউড’। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এই কাঠের উৎপাদন শুরু করেছে।
৬ দিন আগেচলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম ইয়াঘি। আজ বুধবার সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছে। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাঁরা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের বিকাশ’ ঘটানোর জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
১৩ দিন আগেপদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হলো—কত বড় ব্যবস্থার (system) মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব দৃশ্যমান করা সম্ভব? এ বছরের নোবেল বিজয়ীরা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্যবহার করে এমন একটি ব্যবস্থায় কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও কোয়ান্টাইজড শক্তির স্তর প্রমাণ করেছেন—যেটির আকার রীতিমতো...
১৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম ইয়াঘি। আজ বুধবার সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছে। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাঁরা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের বিকাশ’ ঘটানোর জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এই তিন বিজ্ঞানী একধরনের নতুন আণবিক কাঠামো তৈরি করেছেন। তাঁদের উদ্ভাবিত মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের ভেতরে বড় বড় ফাঁকা জায়গা থাকে। সেই ফাঁক দিয়ে বিভিন্ন অণু ভেতরে-বাইরে আসা–যাওয়া করতে পারে।
গবেষকেরা এ কাঠামো ব্যবহার করে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করেছেন। দূষিত পানি থেকে ক্ষতিকর পদার্থ আলাদা করেছেন। আবার কার্বন ডাই-অক্সাইড আটকে রাখা এবং হাইড্রোজেন সংরক্ষণেও এ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়েছে।
সুসুমু কিতাগাওয়া ১৯৫১ সালে জাপানের কিয়োটোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। রিচার্ড রবসন ১৯৩৭ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসবার্নে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। ওমর এম ইয়াঘি ১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পরিবারের মূল শিকড় ফিলিস্তিনে প্রোথিত। তিনি ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলেতে অধ্যাপনা করছেন।
এর আগে গত বছর রসায়নে নোবেল বিজয়ী হলেন—ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার। প্রোটিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার কারণে তাঁদের গত বছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
চলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম ইয়াঘি। আজ বুধবার সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছে। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাঁরা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের বিকাশ’ ঘটানোর জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
নোবেল কমিটি জানিয়েছে, এই তিন বিজ্ঞানী একধরনের নতুন আণবিক কাঠামো তৈরি করেছেন। তাঁদের উদ্ভাবিত মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের ভেতরে বড় বড় ফাঁকা জায়গা থাকে। সেই ফাঁক দিয়ে বিভিন্ন অণু ভেতরে-বাইরে আসা–যাওয়া করতে পারে।
গবেষকেরা এ কাঠামো ব্যবহার করে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করেছেন। দূষিত পানি থেকে ক্ষতিকর পদার্থ আলাদা করেছেন। আবার কার্বন ডাই-অক্সাইড আটকে রাখা এবং হাইড্রোজেন সংরক্ষণেও এ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়েছে।
সুসুমু কিতাগাওয়া ১৯৫১ সালে জাপানের কিয়োটোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। রিচার্ড রবসন ১৯৩৭ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসবার্নে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। ওমর এম ইয়াঘি ১৯৬৫ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর পরিবারের মূল শিকড় ফিলিস্তিনে প্রোথিত। তিনি ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় আর্বানা-শ্যাম্পেইন থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলেতে অধ্যাপনা করছেন।
এর আগে গত বছর রসায়নে নোবেল বিজয়ী হলেন—ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস ও জন এম জাম্পার। প্রোটিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করার কারণে তাঁদের গত বছর নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫‘ইভেন্টউড’ নামে একটি মার্কিন কোম্পানি এমন এক ধরনের কাঠ তৈরি করেছে, যার শক্তি ইস্পাতের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি এবং ওজন ছয় গুণ কম। এই কাঠের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারউড’। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এই কাঠের উৎপাদন শুরু করেছে।
৬ দিন আগেআন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান রসায়নবিদ ড. ওমর ইয়াঘি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি দ্বিতীয় মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে রসায়নে নোবেল জয় করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শুষ্ক অঞ্চল থেকে পানীয় জল সংগ্রহের প্রযুক্তিতে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
১৩ দিন আগেপদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হলো—কত বড় ব্যবস্থার (system) মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব দৃশ্যমান করা সম্ভব? এ বছরের নোবেল বিজয়ীরা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্যবহার করে এমন একটি ব্যবস্থায় কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও কোয়ান্টাইজড শক্তির স্তর প্রমাণ করেছেন—যেটির আকার রীতিমতো...
১৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
পদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হলো—কত বড় ব্যবস্থার (system) মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব দৃশ্যমান করা সম্ভব? এ বছরের নোবেল বিজয়ীরা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্যবহার করে এমন একটি ব্যবস্থায় কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও কোয়ান্টাইজড শক্তির স্তর প্রমাণ করেছেন—যেটির আকার রীতিমতো হাতে ধরে রাখার মতো বড়।
এ বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, যেমন কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও কোয়ান্টাম সেন্সরের পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার সুযোগ তৈরি করেছে।
এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস, বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কারের জন্য জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ ডেভোরে ও জন এম মার্টিনিসের নাম ঘোষণা করেছে। তাঁরা যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
বিজয়ীরা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, কোয়ান্টাম জগতের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলো একটি হাতে ধরে রাখার মতো বড় ব্যবস্থাতেও স্পষ্ট দৃশ্যমান করা যেতে পারে। তাঁদের সুপারকন্ডাক্টিং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাটি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় টানেল করতে সক্ষম হয়েছে—এটি কোনো দেয়াল ভেদ করে চলাচল করার মতো একটি ঘটনা। তাঁরা আরও দেখিয়েছেন, ব্যবস্থাটি সুনির্দিষ্ট পরিমাপের শক্তিমাত্রায় শক্তি শোষণ ও বিকিরণ করে—যেটির আভাস কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে রয়েছে।
ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং ও এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন
এ দুটি অতি উন্নত ও নির্দিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা। সাধারণত জোসেফসন জংশন ও সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিটের মতো অতি নিম্ন তাপমাত্রার ইলেকট্রনিক সার্কিটগুলোতে এ ঘটনাগুলো পরিলক্ষিত হয়।
ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং (এমকিউটি)
কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় ‘টানেলিং’ বলতে বোঝায়, যখন একটি কণা (যেমন ইলেকট্রন) কোনো বাধাকে অতিক্রম করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি না থাকা সত্ত্বেও সেই বাধা ভেদ করে অন্য দিকে চলে যায়। এ ঘটনা ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্সের (ধ্রুপদি পদার্থবিদ্যা) নিয়মের পরিপন্থী।
ম্যাক্রোস্কোপিক স্কেল
সাধারণত টানেলিং শুধু আণবিক বা পারমাণবিক স্তরে ঘটে। কিন্তু একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে, যখন একটি ‘জোসেফসন জংশন’ ব্যবহার করা হয় (যা দুটি সুপারকন্ডাক্টরকে একটি পাতলা অন্তরক স্তরের মাধ্যমে পৃথক করে), তখন ‘চার্জ কোয়ান্টা’ বা ‘ফ্লাক্স কোয়ান্টা’ পুরো জংশনে টানেল করতে পারে। এই ফিজিক্যাল প্যারামিটারগুলো (যেমন কারেন্ট বা ফ্লাক্স) লাখ লাখ ইলেকট্রনের সমতুল্য হওয়া সত্ত্বেও কোয়ান্টাম আচরণ দেখায়, তাই এটিকে ‘ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং’ বলা হয়।
এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন
একটি সাধারণ বৈদ্যুতিক সার্কিটে শক্তি অবিচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু যখন সার্কিটটিকে খুব কম তাপমাত্রায় (প্রায় পরম শূন্যের কাছাকাছি) সুপারকন্ডাক্টিং উপাদান ও নির্দিষ্ট জ্যামিতি ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয় (যেমন একটি ‘কিউবিট’), তখন এর শক্তি পরমাণুর মতোই বিচ্ছিন্ন স্তর বা কোয়ান্টার মতো আচরণ করে।
সার্কিটে কোয়ান্টাইজেশন
এ ধরনের সার্কিটকে সাধারণত ‘কোয়ান্টাম হারমোনিক অসিলেটর’ বা অন্যান্য কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল সিস্টেমের সমতুল্য মনে করা হয়। জংশন ও ক্যাপাসিট্যান্সের মাধ্যমে তৈরি এই সার্কিটগুলোতে ‘চার্জ বা ফ্লাক্স’ সুনির্দিষ্ট ও বিচ্ছিন্ন শক্তির স্তরে আবদ্ধ থাকে। এই শক্তির স্তরগুলোর মধ্যে পরিবর্তন কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি (একটি ফোটন) শোষণ বা নির্গমনের মাধ্যমে ঘটতে পারে, এটিই তখন ‘এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন’ প্রদর্শন করে।
ব্যবহার
কোয়ান্টাইজড এনার্জি স্টেটগুলোই সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিটের ‘০’ ও ‘১’ দশা হিসেবে কাজ করে। এটিই কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মূল ভিত্তি।
সংক্ষেপে, এই তিন বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা শুধু ক্ষুদ্র কণার জন্য নয়, বরং উপযুক্ত পরিস্থিতিতে বড় আকারের (ম্যাক্রোস্কোপিক) বৈদ্যুতিক সার্কিটের গতিবিধিকেও নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গত বছর জেফ্রি হিন্টন, যাঁকে প্রায়শই ‘এআইয়ের গডফাদার’ বলা হয় এবং জন হপফিল্ডকে মেশিন লার্নিংয়ে মৌলিক আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁদের আবিষ্কার আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করেছে।
২০২৩ সালে, ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের একটি ত্রয়ী এই পুরস্কার পান, যাঁরা ইলেকট্রনের দ্রুত গতিবিধি বোঝার জন্য লেজার ব্যবহার করেছিলেন, যা আগে অসম্ভব বলে মনে করা হতো।
পুরস্কারের জন্য নগদ ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১০ লাখ মার্কিন ডলার) দেওয়া হয়।
পদার্থবিজ্ঞানের একটি অন্যতম প্রধান প্রশ্ন হলো—কত বড় ব্যবস্থার (system) মধ্যে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রভাব দৃশ্যমান করা সম্ভব? এ বছরের নোবেল বিজয়ীরা একটি বৈদ্যুতিক সার্কিট ব্যবহার করে এমন একটি ব্যবস্থায় কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও কোয়ান্টাইজড শক্তির স্তর প্রমাণ করেছেন—যেটির আকার রীতিমতো হাতে ধরে রাখার মতো বড়।
এ বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, যেমন কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও কোয়ান্টাম সেন্সরের পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করার সুযোগ তৈরি করেছে।
এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের জন্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস, বৈদ্যুতিক সার্কিটে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং ও এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন আবিষ্কারের জন্য জন ক্লার্ক, মিশেল এইচ ডেভোরে ও জন এম মার্টিনিসের নাম ঘোষণা করেছে। তাঁরা যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
বিজয়ীরা একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, কোয়ান্টাম জগতের অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলো একটি হাতে ধরে রাখার মতো বড় ব্যবস্থাতেও স্পষ্ট দৃশ্যমান করা যেতে পারে। তাঁদের সুপারকন্ডাক্টিং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাটি এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় টানেল করতে সক্ষম হয়েছে—এটি কোনো দেয়াল ভেদ করে চলাচল করার মতো একটি ঘটনা। তাঁরা আরও দেখিয়েছেন, ব্যবস্থাটি সুনির্দিষ্ট পরিমাপের শক্তিমাত্রায় শক্তি শোষণ ও বিকিরণ করে—যেটির আভাস কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানে রয়েছে।
ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং ও এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন
এ দুটি অতি উন্নত ও নির্দিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা। সাধারণত জোসেফসন জংশন ও সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিটের মতো অতি নিম্ন তাপমাত্রার ইলেকট্রনিক সার্কিটগুলোতে এ ঘটনাগুলো পরিলক্ষিত হয়।
ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং (এমকিউটি)
কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় ‘টানেলিং’ বলতে বোঝায়, যখন একটি কণা (যেমন ইলেকট্রন) কোনো বাধাকে অতিক্রম করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি না থাকা সত্ত্বেও সেই বাধা ভেদ করে অন্য দিকে চলে যায়। এ ঘটনা ক্ল্যাসিক্যাল ফিজিক্সের (ধ্রুপদি পদার্থবিদ্যা) নিয়মের পরিপন্থী।
ম্যাক্রোস্কোপিক স্কেল
সাধারণত টানেলিং শুধু আণবিক বা পারমাণবিক স্তরে ঘটে। কিন্তু একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটে, যখন একটি ‘জোসেফসন জংশন’ ব্যবহার করা হয় (যা দুটি সুপারকন্ডাক্টরকে একটি পাতলা অন্তরক স্তরের মাধ্যমে পৃথক করে), তখন ‘চার্জ কোয়ান্টা’ বা ‘ফ্লাক্স কোয়ান্টা’ পুরো জংশনে টানেল করতে পারে। এই ফিজিক্যাল প্যারামিটারগুলো (যেমন কারেন্ট বা ফ্লাক্স) লাখ লাখ ইলেকট্রনের সমতুল্য হওয়া সত্ত্বেও কোয়ান্টাম আচরণ দেখায়, তাই এটিকে ‘ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম টানেলিং’ বলা হয়।
এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন
একটি সাধারণ বৈদ্যুতিক সার্কিটে শক্তি অবিচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু যখন সার্কিটটিকে খুব কম তাপমাত্রায় (প্রায় পরম শূন্যের কাছাকাছি) সুপারকন্ডাক্টিং উপাদান ও নির্দিষ্ট জ্যামিতি ব্যবহার করে ডিজাইন করা হয় (যেমন একটি ‘কিউবিট’), তখন এর শক্তি পরমাণুর মতোই বিচ্ছিন্ন স্তর বা কোয়ান্টার মতো আচরণ করে।
সার্কিটে কোয়ান্টাইজেশন
এ ধরনের সার্কিটকে সাধারণত ‘কোয়ান্টাম হারমোনিক অসিলেটর’ বা অন্যান্য কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল সিস্টেমের সমতুল্য মনে করা হয়। জংশন ও ক্যাপাসিট্যান্সের মাধ্যমে তৈরি এই সার্কিটগুলোতে ‘চার্জ বা ফ্লাক্স’ সুনির্দিষ্ট ও বিচ্ছিন্ন শক্তির স্তরে আবদ্ধ থাকে। এই শক্তির স্তরগুলোর মধ্যে পরিবর্তন কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি (একটি ফোটন) শোষণ বা নির্গমনের মাধ্যমে ঘটতে পারে, এটিই তখন ‘এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন’ প্রদর্শন করে।
ব্যবহার
কোয়ান্টাইজড এনার্জি স্টেটগুলোই সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিটের ‘০’ ও ‘১’ দশা হিসেবে কাজ করে। এটিই কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের মূল ভিত্তি।
সংক্ষেপে, এই তিন বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা শুধু ক্ষুদ্র কণার জন্য নয়, বরং উপযুক্ত পরিস্থিতিতে বড় আকারের (ম্যাক্রোস্কোপিক) বৈদ্যুতিক সার্কিটের গতিবিধিকেও নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা যেতে পারে।
গত বছর জেফ্রি হিন্টন, যাঁকে প্রায়শই ‘এআইয়ের গডফাদার’ বলা হয় এবং জন হপফিল্ডকে মেশিন লার্নিংয়ে মৌলিক আবিষ্কারের জন্য পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁদের আবিষ্কার আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারের পথ প্রশস্ত করেছে।
২০২৩ সালে, ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের একটি ত্রয়ী এই পুরস্কার পান, যাঁরা ইলেকট্রনের দ্রুত গতিবিধি বোঝার জন্য লেজার ব্যবহার করেছিলেন, যা আগে অসম্ভব বলে মনে করা হতো।
পুরস্কারের জন্য নগদ ১ কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার (১০ লাখ মার্কিন ডলার) দেওয়া হয়।
গণিত, প্রকৌশল, জ্যোতির্বিদ্যা ও চিকিৎসাবিদ্যার মতো বিষয়ে উচ্চতর বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ছিল প্রাচীন মিসরীয়দের। তাঁরা তাত্ত্বিক জ্ঞানের চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানকে বেশি প্রাধান্য দিতেন। অনেকের ধারণা, বিজ্ঞান আধুনিককালের আবিষ্কার, যার শিকড় প্রাচীন গ্রিক সভ্যতায়।
২২ জুন ২০২৫‘ইভেন্টউড’ নামে একটি মার্কিন কোম্পানি এমন এক ধরনের কাঠ তৈরি করেছে, যার শক্তি ইস্পাতের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি এবং ওজন ছয় গুণ কম। এই কাঠের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুপারউড’। কোম্পানিটি ইতিমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে এই কাঠের উৎপাদন শুরু করেছে।
৬ দিন আগেআন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতিমান রসায়নবিদ ড. ওমর ইয়াঘি রসায়নে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি দ্বিতীয় মুসলিম বিজ্ঞানী হিসেবে রসায়নে নোবেল জয় করলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শুষ্ক অঞ্চল থেকে পানীয় জল সংগ্রহের প্রযুক্তিতে তাঁর যুগান্তকারী গবেষণার জন্য তিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
১৩ দিন আগেচলতি বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন বিজ্ঞানী—সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম ইয়াঘি। আজ বুধবার সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস এ পুরস্কারের বিজয়ী হিসেবে তাঁদের নাম ঘোষণা করেছে। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, তাঁরা ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কসের বিকাশ’ ঘটানোর জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন।
১৩ দিন আগে