মইনুল হাসান
২০ আগস্ট ১৮৯৭। ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রস (১৮৫৭-১৯৩২) একটি স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার পাকস্থলী ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন, সেখানে কিলবিল করছে ম্যালেরিয়ার অণুজীব। মশাটি চার দিন আগে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত এক ব্যক্তির রক্ত চুষে নিয়েছিল। তিনি নিশ্চিত হন এবং প্রমাণ করেন যে, স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ছড়ায়। তাঁর এই আবিষ্কার পরে বাঁচিয়েছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। তিনি ১৯০২ সালে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন। আর যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি বছর আগস্টের ২০ তারিখ বিশ্ব মশা দিবস পালনের সূচনা করে।
পৃথিবীতে অন্যতম ভয়াবহ প্রাণীটি হচ্ছে সন্ধিপদী ক্ষুদ্র পতঙ্গ মশা। এর কাছে মানুষ আজও বড় অসহায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মশার কারণে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস, পীতজ্বর ইত্যাদি ভয়াবহ রোগ হয়। এসব রোগে প্রতি বছর পুরো পৃথিবীতে ৫০ কোটির বেশি মানুষ সংক্রামিত হয় এবং মৃত্যু ঘটে ৭ লাখেরও বেশি মানুষের। মশাবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া হচ্ছে খুবই ভয়াবহ একটি রোগ। ভারতবর্ষে বৈদিক যুগে ম্যালেরিয়াকে বলা হতো ‘রোগের রাজা’। এতে একমাত্র বিশ শতকেই ১৫ থেকে ৩০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আজও প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় মারা যায় ৪ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়েসের শিশুর সংখ্যাই বেশি।
এ পর্যন্ত ৩,৫০০ প্রজাতির মশার বর্ণনা পাওয়া গেছে, যার মধ্যে মাত্র ২০০ প্রজাতির স্ত্রী মশা রক্ত চোষে। পুরুষ মশারা রক্ত চোষে না, ফুলের নেকটার হচ্ছে তাদের প্রধান খাদ্য। তাই বেছে বেছে স্ত্রী মশা নিধনের উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞানীরা মশা দিয়ে মশা মারার কাজে বেশ সাফল্য দেখিয়েছেন। মার্কিন মালিকানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি অক্সিটেকের বিজ্ঞানীরা ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে—এমন কিছু এলাকায় বংশগতির কলকবজা খানিকটা পরিবর্তন (রূপান্তর) করে কোটি কোটি পুরুষ এডিস মশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে এই রূপান্তরিত পুরুষ এডিস মশা মিলিত হয়ে যেসব ছানা-পোনার জন্ম দেবে, তার মধ্যে স্ত্রী মশা রক্ত চোষার মতো বয়সে পৌঁছাবার আগেই মারা যাবে।
অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা এডিস মশার দেহে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে মশাবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ রুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। আরেক দল বিজ্ঞানী মাংসাশী জলজ উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন। এই উদ্ভিদ এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারে। লার্ভা খেকো মাছের কথাও আমরা জানি। এমনই সব আশার কথা শোনাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, কোনোরকম বাছ-বিচার ছাড়া, নির্বিচারে মশা নিধন করা হচ্ছে। পরিবেশবাদীরা এমন মশা নির্মূল অভিযানের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের ভাষ্য, ঢালাওভাবে মশক নিধন বাস্তুসংস্থানের সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, মশার লার্ভা মাছের খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পাখি, বাদুড়, ফড়িংয়ের খাবার মেনুতে মশা রয়েছে। তা ছাড়া অর্থকরী ফসলের পরাগায়নে মশার ভূমিকা মোটেও কম নয়।
বিজ্ঞানীরা চিকিৎসার জন্য মশাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা মনে করেন, মশার লালায় লুকিয়ে আছে বিশ্বব্যাপী এক নম্বর ঘাতক হৃদ্রোগের মহৌষধ। মশার লালা যেহেতু রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, এই দিকে খেয়াল রেখে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মশার লালা থেকে হৃদ্রোগ সারাতে কার্যকরী ওষুধ খুঁজে পাবেন। এ ছাড়া মশা যে সুচালো শুঁড়টি দিয়ে রক্ত চুষে নেয়, বিজ্ঞানীরা তা পর্যবেক্ষণ করে হাইপোডার্মিক সুচ ডিজাইন করেছেন। এ সুচ ব্যবহারে রোগী খুব কম ব্যথা অনুভব করেন। মশার লম্বা ও সূক্ষ্ম শুঁড়টি থেকে ধারণা নিয়ে মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা যেতে পারে—এমন খুবই ছোট ইলেকট্রোড উদ্ভাবনের জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এক কথায় মশা যেমন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, তেমনি মশা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করছেন মানুষের জীবন বাঁচানোর নতুন সব উপায়।
বিশ্ব মশা দিবসে রোনাল্ড রসের সঙ্গে ফরাসি চিকিৎসক আলফনসো ল্যাভেরার (১৮৪৫-১৯২২) নাম উল্লেখ করা উচিত হবে। তিনি ৬ নভেম্বর ১৮৮০ সালে প্রথম ম্যালেরিয়ার অণুজীব শনাক্ত করেছিলেন। ১৯০৭ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান এবং পুরস্কারের পুরো অর্থ গবেষণায় দান করেন।
মইনুল হাসান: ফ্রান্স প্রবাসী গবেষক
২০ আগস্ট ১৮৯৭। ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রস (১৮৫৭-১৯৩২) একটি স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার পাকস্থলী ব্যবচ্ছেদ করতে গিয়ে অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেন, সেখানে কিলবিল করছে ম্যালেরিয়ার অণুজীব। মশাটি চার দিন আগে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত এক ব্যক্তির রক্ত চুষে নিয়েছিল। তিনি নিশ্চিত হন এবং প্রমাণ করেন যে, স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ছড়ায়। তাঁর এই আবিষ্কার পরে বাঁচিয়েছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। তিনি ১৯০২ সালে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন। আর যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন ১৯৩০ সাল থেকে প্রতি বছর আগস্টের ২০ তারিখ বিশ্ব মশা দিবস পালনের সূচনা করে।
পৃথিবীতে অন্যতম ভয়াবহ প্রাণীটি হচ্ছে সন্ধিপদী ক্ষুদ্র পতঙ্গ মশা। এর কাছে মানুষ আজও বড় অসহায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, মশার কারণে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস, পীতজ্বর ইত্যাদি ভয়াবহ রোগ হয়। এসব রোগে প্রতি বছর পুরো পৃথিবীতে ৫০ কোটির বেশি মানুষ সংক্রামিত হয় এবং মৃত্যু ঘটে ৭ লাখেরও বেশি মানুষের। মশাবাহিত রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া হচ্ছে খুবই ভয়াবহ একটি রোগ। ভারতবর্ষে বৈদিক যুগে ম্যালেরিয়াকে বলা হতো ‘রোগের রাজা’। এতে একমাত্র বিশ শতকেই ১৫ থেকে ৩০ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আজও প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় মারা যায় ৪ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়েসের শিশুর সংখ্যাই বেশি।
এ পর্যন্ত ৩,৫০০ প্রজাতির মশার বর্ণনা পাওয়া গেছে, যার মধ্যে মাত্র ২০০ প্রজাতির স্ত্রী মশা রক্ত চোষে। পুরুষ মশারা রক্ত চোষে না, ফুলের নেকটার হচ্ছে তাদের প্রধান খাদ্য। তাই বেছে বেছে স্ত্রী মশা নিধনের উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্রাজিল ও যুক্তরাষ্ট্রে ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজ্ঞানীরা মশা দিয়ে মশা মারার কাজে বেশ সাফল্য দেখিয়েছেন। মার্কিন মালিকানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক কোম্পানি অক্সিটেকের বিজ্ঞানীরা ডেঙ্গুর ঝুঁকি রয়েছে—এমন কিছু এলাকায় বংশগতির কলকবজা খানিকটা পরিবর্তন (রূপান্তর) করে কোটি কোটি পুরুষ এডিস মশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে স্ত্রী এডিস মশার সঙ্গে এই রূপান্তরিত পুরুষ এডিস মশা মিলিত হয়ে যেসব ছানা-পোনার জন্ম দেবে, তার মধ্যে স্ত্রী মশা রক্ত চোষার মতো বয়সে পৌঁছাবার আগেই মারা যাবে।
অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা এডিস মশার দেহে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটিয়ে মশাবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ রুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। আরেক দল বিজ্ঞানী মাংসাশী জলজ উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন। এই উদ্ভিদ এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে পারে। লার্ভা খেকো মাছের কথাও আমরা জানি। এমনই সব আশার কথা শোনাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, কোনোরকম বাছ-বিচার ছাড়া, নির্বিচারে মশা নিধন করা হচ্ছে। পরিবেশবাদীরা এমন মশা নির্মূল অভিযানের বিরোধিতা করছেন। তাঁদের ভাষ্য, ঢালাওভাবে মশক নিধন বাস্তুসংস্থানের সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ, মশার লার্ভা মাছের খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পাখি, বাদুড়, ফড়িংয়ের খাবার মেনুতে মশা রয়েছে। তা ছাড়া অর্থকরী ফসলের পরাগায়নে মশার ভূমিকা মোটেও কম নয়।
বিজ্ঞানীরা চিকিৎসার জন্য মশাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। তাঁরা মনে করেন, মশার লালায় লুকিয়ে আছে বিশ্বব্যাপী এক নম্বর ঘাতক হৃদ্রোগের মহৌষধ। মশার লালা যেহেতু রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়, এই দিকে খেয়াল রেখে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মশার লালা থেকে হৃদ্রোগ সারাতে কার্যকরী ওষুধ খুঁজে পাবেন। এ ছাড়া মশা যে সুচালো শুঁড়টি দিয়ে রক্ত চুষে নেয়, বিজ্ঞানীরা তা পর্যবেক্ষণ করে হাইপোডার্মিক সুচ ডিজাইন করেছেন। এ সুচ ব্যবহারে রোগী খুব কম ব্যথা অনুভব করেন। মশার লম্বা ও সূক্ষ্ম শুঁড়টি থেকে ধারণা নিয়ে মানুষের মস্তিষ্কে স্থাপন করা যেতে পারে—এমন খুবই ছোট ইলেকট্রোড উদ্ভাবনের জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এক কথায় মশা যেমন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে, তেমনি মশা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করছেন মানুষের জীবন বাঁচানোর নতুন সব উপায়।
বিশ্ব মশা দিবসে রোনাল্ড রসের সঙ্গে ফরাসি চিকিৎসক আলফনসো ল্যাভেরার (১৮৪৫-১৯২২) নাম উল্লেখ করা উচিত হবে। তিনি ৬ নভেম্বর ১৮৮০ সালে প্রথম ম্যালেরিয়ার অণুজীব শনাক্ত করেছিলেন। ১৯০৭ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান এবং পুরস্কারের পুরো অর্থ গবেষণায় দান করেন।
মইনুল হাসান: ফ্রান্স প্রবাসী গবেষক
নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের (জেডব্লিউএসটি) মাধ্যমে মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় মানচিত্র তৈরি করলেন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই মানচিত্রটি মহাবিশ্বের একটি ছোট অংশজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে প্রায় আট লাখ গ্যালাক্সি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে এমন গ্যালাক্সিও আছে, যা এত দূরে অবস্থিত যে সেগুলো মহাবিশ্বের শৈশবের সময়কার,
৬ ঘণ্টা আগেআধুনিক জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব। তবে এই বহুল ব্যবহৃত উপাদানটিই আজ পরিবেশের জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এই প্লাস্টিক জমে থাকছে নদী-নালা, সাগর ও মাটির গভীরে, যা জলজ প্রাণী থেকে শুরু করে মানবস্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে মারাত্মক প্রভাব। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা
১ দিন আগেবিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রতি মুহূর্তে ঘটছে অসংখ্য শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটছে। নক্ষত্রগুলো জ্বলছে বিশাল পরমাণু বিক্রিয়ার শক্তিতে, আর বিশাল উল্কাপিণ্ড ছুটে এসে ধাক্কা দিচ্ছে গ্রহে গ্রহে। তবে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের মহাজাগতিক বিস্ফোরণ শনাক্ত করেছেন, যা এই সব কিছুকেই পেছনে ফেলে দিয়েছে। তাদের দাবি, মহাকা
২ দিন আগেআমাদের গ্রহে প্রাণের বিকাশ ও প্রাচুর্য টিকে আছে অক্সিজেনের কল্যাণে। কিন্তু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সব সময় এমন ছিল না। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ভবিষ্যতে আমাদের বায়ুমণ্ডলে আবারও মিথেনের আধিক্য হবে এবং অক্সিজেনবিহীন অবস্থায় ফিরে যাবে। তবে এখনই ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
৩ দিন আগে