Ajker Patrika

বিড়াল নিজেদের ‘তরল পদার্থ’ ভাবে, বলছেন গবেষক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ১৩
Thumbnail image

বিড়ালকে কখনো ভালোমতো লক্ষ করলে দেখে থাকবেন প্রাণীটির দেহ খুবই নমনীয়, এমনকি ছোট গর্তের ভেতর দিয়েও অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। বিড়ালের এই নমনীয়তা ‘তরল’ পদার্থের মতোই। তরলের মতোই প্রবাহিত হতে পারে এরা। বিভিন্ন গবেষণায় এমনই তত্ত্বই প্রমাণিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিড়াল নিজেও নাকি নিজেদের ‘তরল পদার্থ’ ভাবে!

বিজ্ঞান এখন কার্যকরভাবে প্রমাণ করেছে যে, যখন বিড়ালের সামনে ক্রমাগত ছোট হতে থাকা গর্তের সারি আসে তখন এরা তরল পদার্থের মতো নিজেকে প্রবাহিত করে সেই গর্তের মধ্যে ঢুকে যেতে পারে। অবশ্য যখন গর্তটা আরামদায়ক নয় বলে মনে হয়, তখন কিছুটা দ্বিধায় থাকে।

তরল দ্রব্যের কিছু গুণাবলি প্রদর্শনের পাশাপাশি বিড়ালদের নিজের শরীরের আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট মাত্রার সচেতনতাও রয়েছে!

এই তথ্য আবিষ্কার করেছেন হাঙ্গেরির ইৎভশ লোরান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এথোলজিস্ট পিটার পংগ্রাকজ। নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে বিড়াল কী ভাবে তা এই গবেষণা আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে। এই তথ্য কোনো প্রজাতির কগনেটিভ বা জ্ঞানীয় সক্ষমতা মূল্যায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। 

বিড়ালেরা নিজেদের শরীর সম্পর্কে সচেতন কি না, তা জানতে গবেষণাটি করেন পিটার। ২০১৯ সালে তিনি কুকুরের ওপরও একই ধরনের গবেষণা করেন। সেই গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, কুকুরেরা শরীরের আকারের চেয়ে বেশি ছোট গর্তে ঢোকার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করে। কুকুরও তাদের শরীরের আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন এবং সেই জ্ঞানের ভিত্তিতে এরা সিদ্ধান্ত নেয়। 

বিড়াল নিয়ে গবেষণা করা একটু কঠিন, কারণ এরা অনেক বেশি অবাধ্য। কুকুর সাধারণত মানুষের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতে পারলে বেশ খুশি হয়। তবে বিড়াল শুধু তখনই কাজ করে, যখন এদের ইচ্ছে হয়। এ ছাড়া বিড়াল গবেষণাগারের পরিবেশ পছন্দ করে না। 

বিষয়টি মাথায় রেখে একটি নতুন পরীক্ষার ডিজাইন মডেল তৈরি করেন গবেষক। এই মডেলে পরীক্ষা করার সময় বিড়ালটিকে বেশ আরামদায়ক পরিবেশ দেওয়া হয়। এ জন্য গবেষক বুদাপেস্টের বিড়ালদের নিজ নিজ বাড়িতে গিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেন। 

পরীক্ষার জন্য তিনি কিছু বোর্ডের মধ্যে গর্ত করেন। প্রথম সিরিজের পরীক্ষায় বিভিন্ন আকারের গর্ত ও দ্বিতীয় সিরিজে ছিল বিভিন্ন উচ্চতার গর্ত। যদিও নির্বাচিত ৩৮টি বিড়ালের মধ্যে শুধু ৩০টি এই পরীক্ষায় উতরে গিয়েছিল। অবশ্য সবার অংশগ্রহণের ফলাফল ছিল অত্যন্ত তথ্যবহুল।

গবেষণায় দেখা যায়, বেশির ভাগ গর্তের ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা ছাড়াই বিড়ালগুলো গর্তের ভেতরে প্রবেশ করে ও অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে তাদের মালিকের কাছে পৌঁছে যায়। এমনকি গর্তের আকার তাদের শরীরের প্রস্থের অর্ধেক হলেও বিড়ালেরা এই কাজটি অনায়াসে করেছে। তবে উচ্চতার ভিন্নতা থাকা গর্তের ক্ষেত্রে বিড়ালরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। যদি গর্তটি তাদের কাঁধের উচ্চতার থেকে নিচে হতো, তখন তারা বিকল্প সমাধানও খুঁজত। যেমন: বোর্ডটি সম্পূর্ণরূপে লাফ দিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করত। 

লম্বা বিড়ালদের মধ্যে এই আচরণ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এর থেকে বোঝা যায়, নিজের দেহের আকার সম্পর্কে বিড়ালদের সচেতনতা এদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রাখে।

পরীক্ষাগুলো বিড়ালের নিজের বাড়িতে হওয়ায় তারা নিরাপদ বোধ করে। সুতরাং গর্তের অন্য পাশে কী থাকতে পারে তা নিয়ে বিড়ালদের ভয় পাওয়া বা সতর্ক থাকার সম্ভাবনা কম। 

গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, গর্তের প্রস্থ এবং উচ্চতা বিড়ালেরা আলাদাভাবে বুঝতে পারে। সংকীর্ণ বা ছোট গর্ত বিড়ালের জন্য বেশি একটা চিন্তার বিষয় নয়। বিড়াল সেগুলোর মধ্যে নিজেকে এমনভাবে প্রবাহিত করে যেন মনে হয় টিউব থেকে টুথপেস্ট বের হচ্ছে! কোনো দ্বিধা ছাড়াই বিড়াল এই কাজটি করতে পারে। 

তবে গর্তের উচ্চতা নিয়ে বিড়ালদের বেশি ভাবতে হয়। কারণ গর্তের মধ্যে দিয়ে ঢুকতে হলে হামাগুড়ি দিতে হতে পারে। 

এদিকে বিড়ালের জন্য একটি ছোট গর্তের মধ্যে প্রবেশ করা, একটি লম্বা কিন্তু সংকীর্ণ গর্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হওয়ার চেয়ে কঠিন হতে পারে। বিড়ালদের নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য এই তত্ত্বকে সমর্থন করে বলে জানান গবেষক। 

আরও কঠিন পরিস্থিতিতে শরীরের আকার ও ওজন সম্পর্কে বিড়ালের সচেতনতা পরীক্ষা করার জন্য নতুন পরীক্ষণ পদ্ধতি ডিজাইন করার পরিকল্পনা করেছেন গবেষক। এই সচেতনতা কীভাবে এদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে তা বিশ্লেষণ করবেন তিনি। 

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত