Ajker Patrika

‘আমরা মরলেই কি আর বাঁচলেই কি’

মো. আল আমিন টিটু, ভৈরব
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২১, ২০: ২৮
‘আমরা মরলেই কি আর বাঁচলেই কি’

দুপুর প্রায় ১২টা। রেলওয়ে স্টেশনটিতে নেই যাত্রীর আনাগোনা। প্রধান গেট তালাবদ্ধ। টিকিট কাউন্টারের সামনে শুয়ে আছেন ভাসমান দুজন মধ্যবয়সী পুরুষ ও এক নারী। এর বিপরীত পাশে বসে আছেন ভাসমান দোকানি ষাটোর্ধ্ব আব্দুল হামিদ। কাঁধের বাক্সে কিছু পান ও সিগারেট নিয়ে বসে আছেন তিনি। কিন্তু ক্রেতা নেই। কারণ কঠোর লকডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ। তাঁর সামনে দাঁড়াতেই তিনি বললেন, ‘কী দিমু চাচা।’ ‘কিছু লাগবে না চাচা।’ এমন উত্তরে মনটা খারাপ হয়ে গেল তাঁর। বেচাকেনা আছে কি না, জানতে চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘মানুষ কই আর বেচুম কই। গতকাইল ৭৫ টেহা বেইচছিলাম। আইজকা এহনও ৫০ টেহা বেইচতাম পারছি না।’

প্রতিদিন তাঁর খরচ আছে থাকা-খাওয়া বাবদ দেড় শ টাকা। কিন্তু যে বেচাকেনা তাঁর খরচের টাকাই হয় না। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে দেশে সরকার লকডাউন দিছে। আর লকডাউনে আমাদের জীবনডা শ্যাষ। আমরা মরলেই কি আর বাঁচলেই কি।’

আব্দুল হামিদের বাড়ি কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায়। তিন মেয়ে ও দুই ছেলেসন্তানের জনক। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। সবাই এখন নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ঘরে অসুস্থ স্ত্রী। তাঁকে নিয়ে দুজনের সংসার নিজেই চালান। আগে কৃষিকাজ করতেন। এখন আর পারেন না। মানুষের কাছে হাতপাততে শরম লাগে। তাই যতই ছোট হোক, অল্প পুঁজি দিয়েই ব্যবসা করে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেতে চান তাঁরা।

তিনি আরও জানান, স্টেশনে তাঁর মতো আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ জনের ভাসমান দোকান রয়েছে। কেউ পিঠা বিক্রি করেন, কেউবা পান-সিগারেট আবার কেউ চা–চানাচুর বিক্রি করেন। নীরব স্টেশনে তিনি এলেও অনেকেই এখন আসেন না। এসেই কী করবেন, ট্রেন চলাচল যে বন্ধ। আর ট্রেন না চললে তো স্টেশনে মানুষ আসে না। আর মানুষ চলাচল না করলে তো বেচাকেনাও হয় না।

আব্দুল হামিদ আরও জানান, যাঁরা ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন, দিন শেষে কারও বেচাকেনা ৭০০-৮০০ টাকা, কারও বা আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। আর সারা দিনে যাঁদের মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয়ে সংসার চলত। কঠোর লকডাউনে কেমন আছেন তাঁরা। পরিবার-পরিজন নিয়ে কেমন করে চলছে তাঁদের জীবন-সংসার, খেয়ে আছেন নাকি না খেয়ে আছেন, এ খবর কেউ নেয় না। 

স্টেশনের পাবলিক বুথ কফি হাউসের মালিক সবুজ সারওয়ার জানান, মহামারি করোনার কারণে রেলওয়ে স্টেশনে ভাসমান দোকানিদের পাশাপাশি আমাদেরও জীবন শেষ। গেল এক বছরে বেশ কয়েকবার লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকার কারণে পুঁজি শেষ হয়েছে আরও আগেই। এখন ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে।’ এককথায় করোনায় তাঁর মতো অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জীবন তছনছ হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষের কাছে হাত পেতে চাইতে না পারার কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কিংবা সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা বা সংগঠন থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতায় পান না তাঁরা।

সবুজ সারওয়ার আরও জানান, করোনার প্রথম দিকে সমাজের অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে বিত্তবানরা দাড়াঁলেও এবার এসব মানুষের পাশে কেউ নেই। বিষয়টি ভাবতে অবাক লাগে।

এ প্রসঙ্গে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুবনা ফারজানা বলেন, ‘ভাসমান ও কর্মহীন মানুষের পাশে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত। আমার কাছে এসে কেউ যদি খাদ্যসহায়তা চায়, তাহলে অবশ্যই তার জন্য খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত