ইমরান খান

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার শাহবাগ মোড় জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
কেমন আছেন? পয়লা বৈশাখে পতাকা দিছেন?
সালামত: এই আছি ভাই। হয়, সকালে দিছি শাহবাগে। চারুকলায় যাই নাই। হেরা কইছে প্রোগ্রাম হইবো না।
প্রোগ্রাম তো হইছে, ভেতরে ২০-২৫ জন লোক নিয়ে
সালামত: ভিতরে? বাইরে আসে নাই? ভিতরে থাকলে হইব? ভিতরে হইলে তো আমার কিছু করার নাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা হইলে না আমি যাইতাম।
এইটুক বলে তিনি কেটে পড়তে চাইলেন। বললেন—ঠিক আছে, থাহেন। নিউজ হুনতাছি। আমি পুলিশের লগে আছি। কিন্তু, আমি তো কথা চালিয়ে যেতে চাই। তাঁর সঙ্গেই এগিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্নও চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো তেমন আন্দোলন নেই, আপনার পতাকা দেওয়ার কী অবস্থা?
সালামত: পতাকা আমি একলা উড়াইলেও সারে। কিন্তু, তাগো লগে উড়াইলে ভালো হয় জিনিসটা। সব সময়ই পতাকা দিতে হয়। শাহবাগের মোড়ে তো সব সময় পতাকা ওড়ে। ওই পতাকা অইহানে আমিই উডাইছি (মেট্রোরেলের প্রাচীরের ওপর উড়ন্ত পতাকা দেখিয়ে)।
কত বছর ধরে পতাকা দেন? আসল কাহিনিটা কী?
সালামত: সাত–আট বছর ধইরা। সকাল বেলা শুরু কইরা রাইত সাড়ে ১২টায় শেষ করতে হয়। কাহিনি হইল, অনেকের মাথায় দেখপেন (দেখবেন) জট হয়। অই লোকটা জট ফালাইতে পারে না। আর যদি ফালাইতে যায়, তাইলে মারা যায়। নাইলে কোনো একটা অসুখ–বিসুখ হয়, ধ্বংস হইয়া যায়। পতাকাও ওই রকমই।
বিষয়ডা হইল সোনার বাংলাদেশ। এহন হইল ডিজিটাল বাংলাদেশ। পতাকা মানেই বাংলাদেশ, পতাকা মানেই আমি। এইডা অর্থনীতি রাজনীতিকের পতাকা।
আমাকে এই বলেই শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান সালামত। শরীরের পুরো শক্তি কণ্ঠে এনে চিৎকার করেন–‘এবারেএএএএএর সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, জয় বাংলা জঅঅঅঅঅয় বঙ্গবন্ধু, স্বাস্থ্যবিধিইইইইই মেনে চলুন।’ এ সময় বাম হাতে পতাকা উঁচিয়ে ধরে ডান হাতের তর্জনি বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে তুলে ধরেন সালামত। আমিও চট করে এই মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে ফেলি।
স্লোগান শেষ করে আবার গল্পে ফেরেন সালামত। বলেন—এই যে চিল্লানিডি দিছি। মাথায় রক্ত উইঠা যায়। এইভাবে ধইরা রাখছি আরকি, অর্থনীতি, বুঝছেন? আপনে এইগুলা ছাইড়া দিয়েন নেটে। আমারে বিদেশি মিডিয়া কাভার করে। পত্রিকায় আহে। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে এইটা আহে।
এতদিন তো কেউ পতাকা দেয়নি, আপনি একা কেন দেন?
সালামত: ভাই, অইডা যার ওপর পড়ে, সে বুঝে। মজিব এমনে হইয়া গ্যাছেগা? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সংগ্রামী জীবন, এই রাজপথে থেকেই মনে করেন যে, সংগ্রাম করছেন। শিক্ষামন্ত্রী কন, অই মহিলা এই রাজপথে থাইকা সংগ্রাম করছে। পুলিশের অত্যাচারের শরিলেত্তে কাপড় ছাইড়া দিছে। এডি এইভাবেই হয়। পরে মানুষ দেখব যে—এএএই রাস্তায় পতাকা উড়াইছে।
বাংলাদেশ কেমন চলছে ভাই?
সালামত: করোনার লইগা সব শেষ হইয়া গেছে। সংগ্রামে চলমান রাখছি এই আরকি।
দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির কী অবস্থা?
সালামত: ভাই, এইগুলা করতে করতে আমি পাগল হইয়া গেছিগা। রাইত–দিন কোনো ঘুম নাই, খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। আমি এই জায়গায় আইছি মনে করেন যে, মাথার মধ্যে অনেক শাপ লইয়া। এই জায়গায় দাঁড়ানোডারে আপনি কী বুঝতাছেন? সকালবেলা প্রশাসনের উপর যুদ্ধ কইরা পতাকা উড়ান লাগছে। সিপাই আইছে। কইলাম, ধুর মিয়া সরেন। অফিসার আইছেনি? তদন্তরে ডাহেন।
এই পতাকার উপরে দেশটা চলতাছে। আপনারা কেডা কী বোঝেন, কইতারি না। একটা পোলা পতাকা লইয়া দাঁড়াইয়া আছি। আপনেরা দেখতাছেন। দেইখাও বোঝেন না। আমি খুব হিমশিম খাইতাছি। এইডা ধরতে গেলে পিথিবি (পৃথিবী), এইডা মানেই পিথিবি। এইডা মানচিত্র একটা। এই জিনিসটা লইয়া লাড়তাছি, পিথিবীডা লাড়তাছি। পিথিবিডা আমার মাথার উপরে চাপ পইড়া রইছে।
আর কতদিন পতাকা দিতে চান?
সালামত: সংগ্রাম চলছে, চলবে। আমাদের মুক্তি পাইতে হইব, আমারে মুক্তি দিতে হইব। তাইলে আমি পতাকা ছাড়া হাঁটতে পারমু। আর মনে হয় ৩-৪ বছর আছে।
বাংলাদেশকে কি মুক্ত মনে হয় না?
সালামত: আমি তো মুক্তি পাই নাইকা। বাংলাদেশ মুক্ত হয় নাইকা। বৈষম্য আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যর বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম। এইগুলা শেষ হইলে ওইদিন মুক্তি পামু। মুক্তি যেদিন পামু, ওইদিন আমি আসল স্বাধীন হমু। সবাই নিজেরে মুক্ত মনে করে, আসলে মুক্ত না। মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইব। বঙ্গবন্ধু ভিক্ষুকের রাষ্ট্ররে সোনার বাংলা কইরা দিয়া গেছে। আবার সোনার বাংলারে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াইছি ২০২১-৪১ চ্যালেঞ্জ নিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আপনি খুশি না? কীভাবে মুক্তি মিলবে?
সালামত: দেশের মানুষ খুশি থাকলেই হইছে। আমার ভাই সময় আয় আর যায়। কোন সময় এডি কইরা মারা যাই। মুক্তি দেওয়ার মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রর কার্যক্রম আর আমি যদি জায়গামতো থাকতে পারি, তাইলে মুক্তি মিলবে।
আপনার কি রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে?
সালামত: আমি তো জাতীয় নেতা। পতাকা মানেই আমি জাতীয় নেতা। আমারে নেতাই কয়, এই দ্যাশে পুলিশ–টুলিশ যারা আছে, আমারে নেতা কয়। এবং পতাকামুন্ত্রী (মন্ত্রী) কয়। এইডা আমার প্রচার হয় গণমাধ্যমে।
আমার কোনো চাওয়া–পাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমি মন্ত্রিত্ব পাওনের লইগা রাজনীতি করি না। এই দেশের শান্তির লইগা, মানুষের লইগা রাজনীতি করি। এই সরকার একদিন আমারে বাড়ি দিব, গাড়ি দিব—অই চিন্তা আমি করি না।
আমার বাবার ৪০ লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল। অইসব বাদ দিয়া এইখানে আইছি। এই পর্যন্ত এই সরকার কোনো অনুদান দেয় নাই। বাবারডা বাদেও নিজস্ব অর্থায়নে আমি শিল্পপতি।
বললেন, ‘এডি কইরা কোনো সময় মইরা যাই’, আপনার লাইফ রিস্ক আছে?
সালামত: আমি কোন সময় মারা যাই বুঝতাছেন? আমি যে এইডা করি, এইডার কোন নিরাপত্তা নাই। আমারে পরশু দিনও থানার ভিতরে পুলিশ মারছে। কারণ, আমি ছাত্রলীগের লগে থাকি, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের লগে থাকি, বামেগো কোনো সমস্যা হইলে তাগো লগে থাকি, যত ইন্টারন্যাশনাল আন্দোলন–সংগ্রাম, সবগুলায় থাকি। এই পতাকা লইয়া আমি সংগ্রাম করি। পুলিশে বাধা দেয়, তাগো কতা মানি না।
আপনি সবার আন্দোলনে থাকেন কেন?
সালামত: সবার সাথে থাকি কারণ, আমার পতাকার ভিতরে তার অধিকার। ভাই, এই পতাকার ভিতরে সবকিছু। কতা বোঝেন? এক কথা। এইহানেই থাকেন। এই পতাকার মাঝেই সবকিছু। অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি। পররাষ্ট্রনীতি কে? জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ভাইস চেয়ারম্যান আমি। আপনি দেখতাছেন, একটা পাগল পতাকা উড়াইতাছে। আর জাতিসংঘে আমার পদ–পদবি আছে, বিশাল।
জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট কে?
সালামত: নেতানুকোচ (আন্তোনিও গুতেরেস)। ওদিক যাওন যাইব না। জাতিসংঘের যে আমি সদস্য, আমার পতাকা (তার) প্রমাণ। আমার আরও পদ–পদবি আছে; খেয়াল নাইকা। টাইটেল দেওয়া বোঝেন? এ আপনেরা জানেন, জাইনাও জিগান।
সালামতের সঙ্গে গল্প জমে উঠেছে। বললেন, ‘চলেন, চেম্বারে যাই।’ এই বলে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে শাহবাগ মোড় থেকে শাহবাগ থানার গেটের পাশে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এইটা আমার চেম্বার।’ চোখ বোলালাম ‘চেম্বারে’। ঘরটি দুই চাকার চটপটি বিক্রির দোকানের মতো। রাজনৈতিক কর্মসূচির বিলবোর্ড ঝুলিয়ে বানানো হয়েছে দরজা। ঘরে জিনিসপত্র বলতে—মাথার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। বাম পাশে একটি মিনি ম্যারাথনে দুই হাজার টাকা জেতার কার্ড। ডান পাশে একটি শার্ট, একটি প্যান্ট, দুটি গেঞ্জি ও একটি মাস্ক ঝুলতে দেখা যায়। দুটি কম্বল, দুটি কাঁথা, একটি চাদর ও একটি বালিশ নিয়েই তাঁর বিছানা।
আপনি দৌড়ান?
সালামত: হ, এই দৌড়ে আমি সেকেন্ড হইছিলাম, ক্যামেরার সেকেন্ড। পরে হেরা লিস্ট ঘুরাইয়া দিছে। (আসলে ফল কী হয়েছিল জানা নেই)।
আচ্ছা, কোটা আন্দোলনে পুলিশের মুখোমুখি আপনার একা দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি অনেক খবরে এসেছে। অই কাজটা কীভাবে করলেন?
সালামত: ওইদিন ক্যালা পুলিশ পিডাইয়া হোয়াইয়া দিছি, একলা। সব গ্যাছেগা। দেহি, গুলি আর থামে না। আমি মারা যামু। ওই সময় ঢিলাইতে ঢিলাইতে এইহানে (থানার গেট) আইয়া পড়ছি। পুলিশের ব্যারিকেটের (ব্যারিকেড) সামনে। আইয়া পরে পুলিশ সব কাইত–মাইত হইয়া গ্যাছেগা। বিল্ডিং পড়ে না কাইত হইয়া? অমনভাবে পড়তাছে। পরে মিডিয়া আমারে কাভার করল। পরদিন দেহি নিউজে সব।
আপনার ভয় লাগেনাই?
সালামত: আমি তো তাগো অধিকারের লইগা আন্দোলন করতাছি। আমি তো জানতাছি আমি মারা যামু, তাগো ছাইড়া দিয়া লাভ কী? আমি তো দেখতাছি মারা যামু। গুলি, গ্যাসে-ম্যাসে, ডাইরেক (সরাসরি) গুলিও ছাড়তাছে (ছুড়ছে); কার্টুজ ছাড়তাছে। এমনে তো মারা যামুই, যুদ্ধ কইরা মরমু। একটা ইতিহাস হইয়া যাইব। তখন আমি ওইডার বিজয় পাইছি। অইদিনকালই দেশ স্বাধীন হইছে, আবার ঘোষণা হইছে। অইডা ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
থানার সামনে থাকেন, পুলিশদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
সালামত: কিছু স্যার আছে, আমারে অনেক আদর করে। আমারে জিগায়, খাইছোনি কিছু? টাকা দেয়, খাওয়ায়। তাদেরও কিছু কথা আমি শুনি। তারা যা পারে, আমার জন্য করে।
কথা শেষ না করতেই সালামত বললেন, ‘দাঁড়ান আপনেরে দেখাই’ বলে বালিশের নিচের ২টি তক্তা সরিয়ে একটি চকচকে ব্যাগ বের করেন। বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে থাকি, আমি কিন্তু আপনেগো ভাই।’ ব্যাগ থেকে বের করেন একটি সাময়িকী ও অন্তত ৩০টি পত্রিকা। সাময়িকীটির পেছনের কভারে শুধু তাঁর একটি ছবিই শোভা পেয়েছে (৮ মার্চ ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ছবিটি)। প্রতিটি পত্রিকা খুলে দেখান বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি। প্রত্যেকটি পত্রিকা খুলে নানা কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি দেখালেন। ছবিগুলো বের করতে খুব বেশি খুঁজতেও হয়নি। পত্রিকার অই ছবিগুলোর ছবি আমার মোবাইলেও তুলতে বললেন। আমিও সবগুলো তুললাম।
এবার বললেন, ‘এই যে ছবি তুললেন। আমি মইরা গেলে এইগুলা ইতিহাস হইব।’
আপনার ছবি, কথা নিউজে দিলে সমস্যা আছে?
সালামত: না না না, আপনে মিডিয়া হইয়া গ্যাছেনগা। আপনের যা খুশি, স্ট্যাটাস দিয়া দিয়েন। আরবারে (আবরার) স্ট্যাটাস দিছে, আরবারররে (আবরার) যে মারছে, ভুল করছে সম্পূর্ণ। তাঁরে যে মারছে, ছাত্রলীগের পোলাপাইনে, ভুল করছে। স্ট্যাটাস দিছে, কী অইছে? যদি সে অপরাধ করত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। কিন্তু তারা হাত দিয়া মারল ক্যা?
ভয় পাইয়া গ্যাছেগা অহনে। অহনে ভয় পাইয়া গেছে সব। দেখছেন? কাজটা কী করছে। যারা মারছে, তারা কিন্তু ছাড় পাইব না। ছাত্র তো। সাধারণ মানুষ হইতো। আমারেও তো কেউ মাইরা শান্তি পাইব না। অর গুষ্ঠিশুদ্ধা ধ্বংস।
ছাত্ররে তো মারা ঠিক না। সে দেশের প্রদীপ। একদিন এই আরবার (আবরার) বড় কিছু হইতে পারত। তার জন্য দেশের অনেক উন্নত হইত। এমপি হইত বা নেতা হইত, একটা বড় কিছুই হইত। তারে মাইরা দেশের ক্ষতি করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করল।
গল্প যেভাবে মেতে উঠেছে, কখন শেষ হবে ইয়ত্তা নেই। এদিকে আমাকেও ফিরতে হবে। তাই সালামতের সঙ্গে গল্প শেষ করতে হলো। বিদায়ের সময় আবার দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়েছে।
ফেরার পথে হাঁটছি আর ভাবছি—সালামতকে যে লোকে ‘পাগল’ বলে তা কি সত্যি?

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার শাহবাগ মোড় জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
কেমন আছেন? পয়লা বৈশাখে পতাকা দিছেন?
সালামত: এই আছি ভাই। হয়, সকালে দিছি শাহবাগে। চারুকলায় যাই নাই। হেরা কইছে প্রোগ্রাম হইবো না।
প্রোগ্রাম তো হইছে, ভেতরে ২০-২৫ জন লোক নিয়ে
সালামত: ভিতরে? বাইরে আসে নাই? ভিতরে থাকলে হইব? ভিতরে হইলে তো আমার কিছু করার নাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা হইলে না আমি যাইতাম।
এইটুক বলে তিনি কেটে পড়তে চাইলেন। বললেন—ঠিক আছে, থাহেন। নিউজ হুনতাছি। আমি পুলিশের লগে আছি। কিন্তু, আমি তো কথা চালিয়ে যেতে চাই। তাঁর সঙ্গেই এগিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্নও চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো তেমন আন্দোলন নেই, আপনার পতাকা দেওয়ার কী অবস্থা?
সালামত: পতাকা আমি একলা উড়াইলেও সারে। কিন্তু, তাগো লগে উড়াইলে ভালো হয় জিনিসটা। সব সময়ই পতাকা দিতে হয়। শাহবাগের মোড়ে তো সব সময় পতাকা ওড়ে। ওই পতাকা অইহানে আমিই উডাইছি (মেট্রোরেলের প্রাচীরের ওপর উড়ন্ত পতাকা দেখিয়ে)।
কত বছর ধরে পতাকা দেন? আসল কাহিনিটা কী?
সালামত: সাত–আট বছর ধইরা। সকাল বেলা শুরু কইরা রাইত সাড়ে ১২টায় শেষ করতে হয়। কাহিনি হইল, অনেকের মাথায় দেখপেন (দেখবেন) জট হয়। অই লোকটা জট ফালাইতে পারে না। আর যদি ফালাইতে যায়, তাইলে মারা যায়। নাইলে কোনো একটা অসুখ–বিসুখ হয়, ধ্বংস হইয়া যায়। পতাকাও ওই রকমই।
বিষয়ডা হইল সোনার বাংলাদেশ। এহন হইল ডিজিটাল বাংলাদেশ। পতাকা মানেই বাংলাদেশ, পতাকা মানেই আমি। এইডা অর্থনীতি রাজনীতিকের পতাকা।
আমাকে এই বলেই শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান সালামত। শরীরের পুরো শক্তি কণ্ঠে এনে চিৎকার করেন–‘এবারেএএএএএর সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, জয় বাংলা জঅঅঅঅঅয় বঙ্গবন্ধু, স্বাস্থ্যবিধিইইইইই মেনে চলুন।’ এ সময় বাম হাতে পতাকা উঁচিয়ে ধরে ডান হাতের তর্জনি বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে তুলে ধরেন সালামত। আমিও চট করে এই মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে ফেলি।
স্লোগান শেষ করে আবার গল্পে ফেরেন সালামত। বলেন—এই যে চিল্লানিডি দিছি। মাথায় রক্ত উইঠা যায়। এইভাবে ধইরা রাখছি আরকি, অর্থনীতি, বুঝছেন? আপনে এইগুলা ছাইড়া দিয়েন নেটে। আমারে বিদেশি মিডিয়া কাভার করে। পত্রিকায় আহে। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে এইটা আহে।
এতদিন তো কেউ পতাকা দেয়নি, আপনি একা কেন দেন?
সালামত: ভাই, অইডা যার ওপর পড়ে, সে বুঝে। মজিব এমনে হইয়া গ্যাছেগা? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সংগ্রামী জীবন, এই রাজপথে থেকেই মনে করেন যে, সংগ্রাম করছেন। শিক্ষামন্ত্রী কন, অই মহিলা এই রাজপথে থাইকা সংগ্রাম করছে। পুলিশের অত্যাচারের শরিলেত্তে কাপড় ছাইড়া দিছে। এডি এইভাবেই হয়। পরে মানুষ দেখব যে—এএএই রাস্তায় পতাকা উড়াইছে।
বাংলাদেশ কেমন চলছে ভাই?
সালামত: করোনার লইগা সব শেষ হইয়া গেছে। সংগ্রামে চলমান রাখছি এই আরকি।
দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির কী অবস্থা?
সালামত: ভাই, এইগুলা করতে করতে আমি পাগল হইয়া গেছিগা। রাইত–দিন কোনো ঘুম নাই, খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। আমি এই জায়গায় আইছি মনে করেন যে, মাথার মধ্যে অনেক শাপ লইয়া। এই জায়গায় দাঁড়ানোডারে আপনি কী বুঝতাছেন? সকালবেলা প্রশাসনের উপর যুদ্ধ কইরা পতাকা উড়ান লাগছে। সিপাই আইছে। কইলাম, ধুর মিয়া সরেন। অফিসার আইছেনি? তদন্তরে ডাহেন।
এই পতাকার উপরে দেশটা চলতাছে। আপনারা কেডা কী বোঝেন, কইতারি না। একটা পোলা পতাকা লইয়া দাঁড়াইয়া আছি। আপনেরা দেখতাছেন। দেইখাও বোঝেন না। আমি খুব হিমশিম খাইতাছি। এইডা ধরতে গেলে পিথিবি (পৃথিবী), এইডা মানেই পিথিবি। এইডা মানচিত্র একটা। এই জিনিসটা লইয়া লাড়তাছি, পিথিবীডা লাড়তাছি। পিথিবিডা আমার মাথার উপরে চাপ পইড়া রইছে।
আর কতদিন পতাকা দিতে চান?
সালামত: সংগ্রাম চলছে, চলবে। আমাদের মুক্তি পাইতে হইব, আমারে মুক্তি দিতে হইব। তাইলে আমি পতাকা ছাড়া হাঁটতে পারমু। আর মনে হয় ৩-৪ বছর আছে।
বাংলাদেশকে কি মুক্ত মনে হয় না?
সালামত: আমি তো মুক্তি পাই নাইকা। বাংলাদেশ মুক্ত হয় নাইকা। বৈষম্য আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যর বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম। এইগুলা শেষ হইলে ওইদিন মুক্তি পামু। মুক্তি যেদিন পামু, ওইদিন আমি আসল স্বাধীন হমু। সবাই নিজেরে মুক্ত মনে করে, আসলে মুক্ত না। মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইব। বঙ্গবন্ধু ভিক্ষুকের রাষ্ট্ররে সোনার বাংলা কইরা দিয়া গেছে। আবার সোনার বাংলারে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াইছি ২০২১-৪১ চ্যালেঞ্জ নিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আপনি খুশি না? কীভাবে মুক্তি মিলবে?
সালামত: দেশের মানুষ খুশি থাকলেই হইছে। আমার ভাই সময় আয় আর যায়। কোন সময় এডি কইরা মারা যাই। মুক্তি দেওয়ার মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রর কার্যক্রম আর আমি যদি জায়গামতো থাকতে পারি, তাইলে মুক্তি মিলবে।
আপনার কি রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে?
সালামত: আমি তো জাতীয় নেতা। পতাকা মানেই আমি জাতীয় নেতা। আমারে নেতাই কয়, এই দ্যাশে পুলিশ–টুলিশ যারা আছে, আমারে নেতা কয়। এবং পতাকামুন্ত্রী (মন্ত্রী) কয়। এইডা আমার প্রচার হয় গণমাধ্যমে।
আমার কোনো চাওয়া–পাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমি মন্ত্রিত্ব পাওনের লইগা রাজনীতি করি না। এই দেশের শান্তির লইগা, মানুষের লইগা রাজনীতি করি। এই সরকার একদিন আমারে বাড়ি দিব, গাড়ি দিব—অই চিন্তা আমি করি না।
আমার বাবার ৪০ লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল। অইসব বাদ দিয়া এইখানে আইছি। এই পর্যন্ত এই সরকার কোনো অনুদান দেয় নাই। বাবারডা বাদেও নিজস্ব অর্থায়নে আমি শিল্পপতি।
বললেন, ‘এডি কইরা কোনো সময় মইরা যাই’, আপনার লাইফ রিস্ক আছে?
সালামত: আমি কোন সময় মারা যাই বুঝতাছেন? আমি যে এইডা করি, এইডার কোন নিরাপত্তা নাই। আমারে পরশু দিনও থানার ভিতরে পুলিশ মারছে। কারণ, আমি ছাত্রলীগের লগে থাকি, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের লগে থাকি, বামেগো কোনো সমস্যা হইলে তাগো লগে থাকি, যত ইন্টারন্যাশনাল আন্দোলন–সংগ্রাম, সবগুলায় থাকি। এই পতাকা লইয়া আমি সংগ্রাম করি। পুলিশে বাধা দেয়, তাগো কতা মানি না।
আপনি সবার আন্দোলনে থাকেন কেন?
সালামত: সবার সাথে থাকি কারণ, আমার পতাকার ভিতরে তার অধিকার। ভাই, এই পতাকার ভিতরে সবকিছু। কতা বোঝেন? এক কথা। এইহানেই থাকেন। এই পতাকার মাঝেই সবকিছু। অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি। পররাষ্ট্রনীতি কে? জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ভাইস চেয়ারম্যান আমি। আপনি দেখতাছেন, একটা পাগল পতাকা উড়াইতাছে। আর জাতিসংঘে আমার পদ–পদবি আছে, বিশাল।
জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট কে?
সালামত: নেতানুকোচ (আন্তোনিও গুতেরেস)। ওদিক যাওন যাইব না। জাতিসংঘের যে আমি সদস্য, আমার পতাকা (তার) প্রমাণ। আমার আরও পদ–পদবি আছে; খেয়াল নাইকা। টাইটেল দেওয়া বোঝেন? এ আপনেরা জানেন, জাইনাও জিগান।
সালামতের সঙ্গে গল্প জমে উঠেছে। বললেন, ‘চলেন, চেম্বারে যাই।’ এই বলে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে শাহবাগ মোড় থেকে শাহবাগ থানার গেটের পাশে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এইটা আমার চেম্বার।’ চোখ বোলালাম ‘চেম্বারে’। ঘরটি দুই চাকার চটপটি বিক্রির দোকানের মতো। রাজনৈতিক কর্মসূচির বিলবোর্ড ঝুলিয়ে বানানো হয়েছে দরজা। ঘরে জিনিসপত্র বলতে—মাথার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। বাম পাশে একটি মিনি ম্যারাথনে দুই হাজার টাকা জেতার কার্ড। ডান পাশে একটি শার্ট, একটি প্যান্ট, দুটি গেঞ্জি ও একটি মাস্ক ঝুলতে দেখা যায়। দুটি কম্বল, দুটি কাঁথা, একটি চাদর ও একটি বালিশ নিয়েই তাঁর বিছানা।
আপনি দৌড়ান?
সালামত: হ, এই দৌড়ে আমি সেকেন্ড হইছিলাম, ক্যামেরার সেকেন্ড। পরে হেরা লিস্ট ঘুরাইয়া দিছে। (আসলে ফল কী হয়েছিল জানা নেই)।
আচ্ছা, কোটা আন্দোলনে পুলিশের মুখোমুখি আপনার একা দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি অনেক খবরে এসেছে। অই কাজটা কীভাবে করলেন?
সালামত: ওইদিন ক্যালা পুলিশ পিডাইয়া হোয়াইয়া দিছি, একলা। সব গ্যাছেগা। দেহি, গুলি আর থামে না। আমি মারা যামু। ওই সময় ঢিলাইতে ঢিলাইতে এইহানে (থানার গেট) আইয়া পড়ছি। পুলিশের ব্যারিকেটের (ব্যারিকেড) সামনে। আইয়া পরে পুলিশ সব কাইত–মাইত হইয়া গ্যাছেগা। বিল্ডিং পড়ে না কাইত হইয়া? অমনভাবে পড়তাছে। পরে মিডিয়া আমারে কাভার করল। পরদিন দেহি নিউজে সব।
আপনার ভয় লাগেনাই?
সালামত: আমি তো তাগো অধিকারের লইগা আন্দোলন করতাছি। আমি তো জানতাছি আমি মারা যামু, তাগো ছাইড়া দিয়া লাভ কী? আমি তো দেখতাছি মারা যামু। গুলি, গ্যাসে-ম্যাসে, ডাইরেক (সরাসরি) গুলিও ছাড়তাছে (ছুড়ছে); কার্টুজ ছাড়তাছে। এমনে তো মারা যামুই, যুদ্ধ কইরা মরমু। একটা ইতিহাস হইয়া যাইব। তখন আমি ওইডার বিজয় পাইছি। অইদিনকালই দেশ স্বাধীন হইছে, আবার ঘোষণা হইছে। অইডা ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
থানার সামনে থাকেন, পুলিশদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
সালামত: কিছু স্যার আছে, আমারে অনেক আদর করে। আমারে জিগায়, খাইছোনি কিছু? টাকা দেয়, খাওয়ায়। তাদেরও কিছু কথা আমি শুনি। তারা যা পারে, আমার জন্য করে।
কথা শেষ না করতেই সালামত বললেন, ‘দাঁড়ান আপনেরে দেখাই’ বলে বালিশের নিচের ২টি তক্তা সরিয়ে একটি চকচকে ব্যাগ বের করেন। বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে থাকি, আমি কিন্তু আপনেগো ভাই।’ ব্যাগ থেকে বের করেন একটি সাময়িকী ও অন্তত ৩০টি পত্রিকা। সাময়িকীটির পেছনের কভারে শুধু তাঁর একটি ছবিই শোভা পেয়েছে (৮ মার্চ ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ছবিটি)। প্রতিটি পত্রিকা খুলে দেখান বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি। প্রত্যেকটি পত্রিকা খুলে নানা কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি দেখালেন। ছবিগুলো বের করতে খুব বেশি খুঁজতেও হয়নি। পত্রিকার অই ছবিগুলোর ছবি আমার মোবাইলেও তুলতে বললেন। আমিও সবগুলো তুললাম।
এবার বললেন, ‘এই যে ছবি তুললেন। আমি মইরা গেলে এইগুলা ইতিহাস হইব।’
আপনার ছবি, কথা নিউজে দিলে সমস্যা আছে?
সালামত: না না না, আপনে মিডিয়া হইয়া গ্যাছেনগা। আপনের যা খুশি, স্ট্যাটাস দিয়া দিয়েন। আরবারে (আবরার) স্ট্যাটাস দিছে, আরবারররে (আবরার) যে মারছে, ভুল করছে সম্পূর্ণ। তাঁরে যে মারছে, ছাত্রলীগের পোলাপাইনে, ভুল করছে। স্ট্যাটাস দিছে, কী অইছে? যদি সে অপরাধ করত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। কিন্তু তারা হাত দিয়া মারল ক্যা?
ভয় পাইয়া গ্যাছেগা অহনে। অহনে ভয় পাইয়া গেছে সব। দেখছেন? কাজটা কী করছে। যারা মারছে, তারা কিন্তু ছাড় পাইব না। ছাত্র তো। সাধারণ মানুষ হইতো। আমারেও তো কেউ মাইরা শান্তি পাইব না। অর গুষ্ঠিশুদ্ধা ধ্বংস।
ছাত্ররে তো মারা ঠিক না। সে দেশের প্রদীপ। একদিন এই আরবার (আবরার) বড় কিছু হইতে পারত। তার জন্য দেশের অনেক উন্নত হইত। এমপি হইত বা নেতা হইত, একটা বড় কিছুই হইত। তারে মাইরা দেশের ক্ষতি করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করল।
গল্প যেভাবে মেতে উঠেছে, কখন শেষ হবে ইয়ত্তা নেই। এদিকে আমাকেও ফিরতে হবে। তাই সালামতের সঙ্গে গল্প শেষ করতে হলো। বিদায়ের সময় আবার দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়েছে।
ফেরার পথে হাঁটছি আর ভাবছি—সালামতকে যে লোকে ‘পাগল’ বলে তা কি সত্যি?
ইমরান খান

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার শাহবাগ মোড় জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
কেমন আছেন? পয়লা বৈশাখে পতাকা দিছেন?
সালামত: এই আছি ভাই। হয়, সকালে দিছি শাহবাগে। চারুকলায় যাই নাই। হেরা কইছে প্রোগ্রাম হইবো না।
প্রোগ্রাম তো হইছে, ভেতরে ২০-২৫ জন লোক নিয়ে
সালামত: ভিতরে? বাইরে আসে নাই? ভিতরে থাকলে হইব? ভিতরে হইলে তো আমার কিছু করার নাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা হইলে না আমি যাইতাম।
এইটুক বলে তিনি কেটে পড়তে চাইলেন। বললেন—ঠিক আছে, থাহেন। নিউজ হুনতাছি। আমি পুলিশের লগে আছি। কিন্তু, আমি তো কথা চালিয়ে যেতে চাই। তাঁর সঙ্গেই এগিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্নও চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো তেমন আন্দোলন নেই, আপনার পতাকা দেওয়ার কী অবস্থা?
সালামত: পতাকা আমি একলা উড়াইলেও সারে। কিন্তু, তাগো লগে উড়াইলে ভালো হয় জিনিসটা। সব সময়ই পতাকা দিতে হয়। শাহবাগের মোড়ে তো সব সময় পতাকা ওড়ে। ওই পতাকা অইহানে আমিই উডাইছি (মেট্রোরেলের প্রাচীরের ওপর উড়ন্ত পতাকা দেখিয়ে)।
কত বছর ধরে পতাকা দেন? আসল কাহিনিটা কী?
সালামত: সাত–আট বছর ধইরা। সকাল বেলা শুরু কইরা রাইত সাড়ে ১২টায় শেষ করতে হয়। কাহিনি হইল, অনেকের মাথায় দেখপেন (দেখবেন) জট হয়। অই লোকটা জট ফালাইতে পারে না। আর যদি ফালাইতে যায়, তাইলে মারা যায়। নাইলে কোনো একটা অসুখ–বিসুখ হয়, ধ্বংস হইয়া যায়। পতাকাও ওই রকমই।
বিষয়ডা হইল সোনার বাংলাদেশ। এহন হইল ডিজিটাল বাংলাদেশ। পতাকা মানেই বাংলাদেশ, পতাকা মানেই আমি। এইডা অর্থনীতি রাজনীতিকের পতাকা।
আমাকে এই বলেই শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান সালামত। শরীরের পুরো শক্তি কণ্ঠে এনে চিৎকার করেন–‘এবারেএএএএএর সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, জয় বাংলা জঅঅঅঅঅয় বঙ্গবন্ধু, স্বাস্থ্যবিধিইইইইই মেনে চলুন।’ এ সময় বাম হাতে পতাকা উঁচিয়ে ধরে ডান হাতের তর্জনি বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে তুলে ধরেন সালামত। আমিও চট করে এই মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে ফেলি।
স্লোগান শেষ করে আবার গল্পে ফেরেন সালামত। বলেন—এই যে চিল্লানিডি দিছি। মাথায় রক্ত উইঠা যায়। এইভাবে ধইরা রাখছি আরকি, অর্থনীতি, বুঝছেন? আপনে এইগুলা ছাইড়া দিয়েন নেটে। আমারে বিদেশি মিডিয়া কাভার করে। পত্রিকায় আহে। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে এইটা আহে।
এতদিন তো কেউ পতাকা দেয়নি, আপনি একা কেন দেন?
সালামত: ভাই, অইডা যার ওপর পড়ে, সে বুঝে। মজিব এমনে হইয়া গ্যাছেগা? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সংগ্রামী জীবন, এই রাজপথে থেকেই মনে করেন যে, সংগ্রাম করছেন। শিক্ষামন্ত্রী কন, অই মহিলা এই রাজপথে থাইকা সংগ্রাম করছে। পুলিশের অত্যাচারের শরিলেত্তে কাপড় ছাইড়া দিছে। এডি এইভাবেই হয়। পরে মানুষ দেখব যে—এএএই রাস্তায় পতাকা উড়াইছে।
বাংলাদেশ কেমন চলছে ভাই?
সালামত: করোনার লইগা সব শেষ হইয়া গেছে। সংগ্রামে চলমান রাখছি এই আরকি।
দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির কী অবস্থা?
সালামত: ভাই, এইগুলা করতে করতে আমি পাগল হইয়া গেছিগা। রাইত–দিন কোনো ঘুম নাই, খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। আমি এই জায়গায় আইছি মনে করেন যে, মাথার মধ্যে অনেক শাপ লইয়া। এই জায়গায় দাঁড়ানোডারে আপনি কী বুঝতাছেন? সকালবেলা প্রশাসনের উপর যুদ্ধ কইরা পতাকা উড়ান লাগছে। সিপাই আইছে। কইলাম, ধুর মিয়া সরেন। অফিসার আইছেনি? তদন্তরে ডাহেন।
এই পতাকার উপরে দেশটা চলতাছে। আপনারা কেডা কী বোঝেন, কইতারি না। একটা পোলা পতাকা লইয়া দাঁড়াইয়া আছি। আপনেরা দেখতাছেন। দেইখাও বোঝেন না। আমি খুব হিমশিম খাইতাছি। এইডা ধরতে গেলে পিথিবি (পৃথিবী), এইডা মানেই পিথিবি। এইডা মানচিত্র একটা। এই জিনিসটা লইয়া লাড়তাছি, পিথিবীডা লাড়তাছি। পিথিবিডা আমার মাথার উপরে চাপ পইড়া রইছে।
আর কতদিন পতাকা দিতে চান?
সালামত: সংগ্রাম চলছে, চলবে। আমাদের মুক্তি পাইতে হইব, আমারে মুক্তি দিতে হইব। তাইলে আমি পতাকা ছাড়া হাঁটতে পারমু। আর মনে হয় ৩-৪ বছর আছে।
বাংলাদেশকে কি মুক্ত মনে হয় না?
সালামত: আমি তো মুক্তি পাই নাইকা। বাংলাদেশ মুক্ত হয় নাইকা। বৈষম্য আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যর বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম। এইগুলা শেষ হইলে ওইদিন মুক্তি পামু। মুক্তি যেদিন পামু, ওইদিন আমি আসল স্বাধীন হমু। সবাই নিজেরে মুক্ত মনে করে, আসলে মুক্ত না। মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইব। বঙ্গবন্ধু ভিক্ষুকের রাষ্ট্ররে সোনার বাংলা কইরা দিয়া গেছে। আবার সোনার বাংলারে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াইছি ২০২১-৪১ চ্যালেঞ্জ নিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আপনি খুশি না? কীভাবে মুক্তি মিলবে?
সালামত: দেশের মানুষ খুশি থাকলেই হইছে। আমার ভাই সময় আয় আর যায়। কোন সময় এডি কইরা মারা যাই। মুক্তি দেওয়ার মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রর কার্যক্রম আর আমি যদি জায়গামতো থাকতে পারি, তাইলে মুক্তি মিলবে।
আপনার কি রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে?
সালামত: আমি তো জাতীয় নেতা। পতাকা মানেই আমি জাতীয় নেতা। আমারে নেতাই কয়, এই দ্যাশে পুলিশ–টুলিশ যারা আছে, আমারে নেতা কয়। এবং পতাকামুন্ত্রী (মন্ত্রী) কয়। এইডা আমার প্রচার হয় গণমাধ্যমে।
আমার কোনো চাওয়া–পাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমি মন্ত্রিত্ব পাওনের লইগা রাজনীতি করি না। এই দেশের শান্তির লইগা, মানুষের লইগা রাজনীতি করি। এই সরকার একদিন আমারে বাড়ি দিব, গাড়ি দিব—অই চিন্তা আমি করি না।
আমার বাবার ৪০ লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল। অইসব বাদ দিয়া এইখানে আইছি। এই পর্যন্ত এই সরকার কোনো অনুদান দেয় নাই। বাবারডা বাদেও নিজস্ব অর্থায়নে আমি শিল্পপতি।
বললেন, ‘এডি কইরা কোনো সময় মইরা যাই’, আপনার লাইফ রিস্ক আছে?
সালামত: আমি কোন সময় মারা যাই বুঝতাছেন? আমি যে এইডা করি, এইডার কোন নিরাপত্তা নাই। আমারে পরশু দিনও থানার ভিতরে পুলিশ মারছে। কারণ, আমি ছাত্রলীগের লগে থাকি, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের লগে থাকি, বামেগো কোনো সমস্যা হইলে তাগো লগে থাকি, যত ইন্টারন্যাশনাল আন্দোলন–সংগ্রাম, সবগুলায় থাকি। এই পতাকা লইয়া আমি সংগ্রাম করি। পুলিশে বাধা দেয়, তাগো কতা মানি না।
আপনি সবার আন্দোলনে থাকেন কেন?
সালামত: সবার সাথে থাকি কারণ, আমার পতাকার ভিতরে তার অধিকার। ভাই, এই পতাকার ভিতরে সবকিছু। কতা বোঝেন? এক কথা। এইহানেই থাকেন। এই পতাকার মাঝেই সবকিছু। অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি। পররাষ্ট্রনীতি কে? জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ভাইস চেয়ারম্যান আমি। আপনি দেখতাছেন, একটা পাগল পতাকা উড়াইতাছে। আর জাতিসংঘে আমার পদ–পদবি আছে, বিশাল।
জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট কে?
সালামত: নেতানুকোচ (আন্তোনিও গুতেরেস)। ওদিক যাওন যাইব না। জাতিসংঘের যে আমি সদস্য, আমার পতাকা (তার) প্রমাণ। আমার আরও পদ–পদবি আছে; খেয়াল নাইকা। টাইটেল দেওয়া বোঝেন? এ আপনেরা জানেন, জাইনাও জিগান।
সালামতের সঙ্গে গল্প জমে উঠেছে। বললেন, ‘চলেন, চেম্বারে যাই।’ এই বলে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে শাহবাগ মোড় থেকে শাহবাগ থানার গেটের পাশে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এইটা আমার চেম্বার।’ চোখ বোলালাম ‘চেম্বারে’। ঘরটি দুই চাকার চটপটি বিক্রির দোকানের মতো। রাজনৈতিক কর্মসূচির বিলবোর্ড ঝুলিয়ে বানানো হয়েছে দরজা। ঘরে জিনিসপত্র বলতে—মাথার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। বাম পাশে একটি মিনি ম্যারাথনে দুই হাজার টাকা জেতার কার্ড। ডান পাশে একটি শার্ট, একটি প্যান্ট, দুটি গেঞ্জি ও একটি মাস্ক ঝুলতে দেখা যায়। দুটি কম্বল, দুটি কাঁথা, একটি চাদর ও একটি বালিশ নিয়েই তাঁর বিছানা।
আপনি দৌড়ান?
সালামত: হ, এই দৌড়ে আমি সেকেন্ড হইছিলাম, ক্যামেরার সেকেন্ড। পরে হেরা লিস্ট ঘুরাইয়া দিছে। (আসলে ফল কী হয়েছিল জানা নেই)।
আচ্ছা, কোটা আন্দোলনে পুলিশের মুখোমুখি আপনার একা দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি অনেক খবরে এসেছে। অই কাজটা কীভাবে করলেন?
সালামত: ওইদিন ক্যালা পুলিশ পিডাইয়া হোয়াইয়া দিছি, একলা। সব গ্যাছেগা। দেহি, গুলি আর থামে না। আমি মারা যামু। ওই সময় ঢিলাইতে ঢিলাইতে এইহানে (থানার গেট) আইয়া পড়ছি। পুলিশের ব্যারিকেটের (ব্যারিকেড) সামনে। আইয়া পরে পুলিশ সব কাইত–মাইত হইয়া গ্যাছেগা। বিল্ডিং পড়ে না কাইত হইয়া? অমনভাবে পড়তাছে। পরে মিডিয়া আমারে কাভার করল। পরদিন দেহি নিউজে সব।
আপনার ভয় লাগেনাই?
সালামত: আমি তো তাগো অধিকারের লইগা আন্দোলন করতাছি। আমি তো জানতাছি আমি মারা যামু, তাগো ছাইড়া দিয়া লাভ কী? আমি তো দেখতাছি মারা যামু। গুলি, গ্যাসে-ম্যাসে, ডাইরেক (সরাসরি) গুলিও ছাড়তাছে (ছুড়ছে); কার্টুজ ছাড়তাছে। এমনে তো মারা যামুই, যুদ্ধ কইরা মরমু। একটা ইতিহাস হইয়া যাইব। তখন আমি ওইডার বিজয় পাইছি। অইদিনকালই দেশ স্বাধীন হইছে, আবার ঘোষণা হইছে। অইডা ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
থানার সামনে থাকেন, পুলিশদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
সালামত: কিছু স্যার আছে, আমারে অনেক আদর করে। আমারে জিগায়, খাইছোনি কিছু? টাকা দেয়, খাওয়ায়। তাদেরও কিছু কথা আমি শুনি। তারা যা পারে, আমার জন্য করে।
কথা শেষ না করতেই সালামত বললেন, ‘দাঁড়ান আপনেরে দেখাই’ বলে বালিশের নিচের ২টি তক্তা সরিয়ে একটি চকচকে ব্যাগ বের করেন। বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে থাকি, আমি কিন্তু আপনেগো ভাই।’ ব্যাগ থেকে বের করেন একটি সাময়িকী ও অন্তত ৩০টি পত্রিকা। সাময়িকীটির পেছনের কভারে শুধু তাঁর একটি ছবিই শোভা পেয়েছে (৮ মার্চ ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ছবিটি)। প্রতিটি পত্রিকা খুলে দেখান বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি। প্রত্যেকটি পত্রিকা খুলে নানা কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি দেখালেন। ছবিগুলো বের করতে খুব বেশি খুঁজতেও হয়নি। পত্রিকার অই ছবিগুলোর ছবি আমার মোবাইলেও তুলতে বললেন। আমিও সবগুলো তুললাম।
এবার বললেন, ‘এই যে ছবি তুললেন। আমি মইরা গেলে এইগুলা ইতিহাস হইব।’
আপনার ছবি, কথা নিউজে দিলে সমস্যা আছে?
সালামত: না না না, আপনে মিডিয়া হইয়া গ্যাছেনগা। আপনের যা খুশি, স্ট্যাটাস দিয়া দিয়েন। আরবারে (আবরার) স্ট্যাটাস দিছে, আরবারররে (আবরার) যে মারছে, ভুল করছে সম্পূর্ণ। তাঁরে যে মারছে, ছাত্রলীগের পোলাপাইনে, ভুল করছে। স্ট্যাটাস দিছে, কী অইছে? যদি সে অপরাধ করত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। কিন্তু তারা হাত দিয়া মারল ক্যা?
ভয় পাইয়া গ্যাছেগা অহনে। অহনে ভয় পাইয়া গেছে সব। দেখছেন? কাজটা কী করছে। যারা মারছে, তারা কিন্তু ছাড় পাইব না। ছাত্র তো। সাধারণ মানুষ হইতো। আমারেও তো কেউ মাইরা শান্তি পাইব না। অর গুষ্ঠিশুদ্ধা ধ্বংস।
ছাত্ররে তো মারা ঠিক না। সে দেশের প্রদীপ। একদিন এই আরবার (আবরার) বড় কিছু হইতে পারত। তার জন্য দেশের অনেক উন্নত হইত। এমপি হইত বা নেতা হইত, একটা বড় কিছুই হইত। তারে মাইরা দেশের ক্ষতি করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করল।
গল্প যেভাবে মেতে উঠেছে, কখন শেষ হবে ইয়ত্তা নেই। এদিকে আমাকেও ফিরতে হবে। তাই সালামতের সঙ্গে গল্প শেষ করতে হলো। বিদায়ের সময় আবার দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়েছে।
ফেরার পথে হাঁটছি আর ভাবছি—সালামতকে যে লোকে ‘পাগল’ বলে তা কি সত্যি?

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার শাহবাগ মোড় জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
কেমন আছেন? পয়লা বৈশাখে পতাকা দিছেন?
সালামত: এই আছি ভাই। হয়, সকালে দিছি শাহবাগে। চারুকলায় যাই নাই। হেরা কইছে প্রোগ্রাম হইবো না।
প্রোগ্রাম তো হইছে, ভেতরে ২০-২৫ জন লোক নিয়ে
সালামত: ভিতরে? বাইরে আসে নাই? ভিতরে থাকলে হইব? ভিতরে হইলে তো আমার কিছু করার নাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা হইলে না আমি যাইতাম।
এইটুক বলে তিনি কেটে পড়তে চাইলেন। বললেন—ঠিক আছে, থাহেন। নিউজ হুনতাছি। আমি পুলিশের লগে আছি। কিন্তু, আমি তো কথা চালিয়ে যেতে চাই। তাঁর সঙ্গেই এগিয়ে যাই। হাঁটতে হাঁটতে প্রশ্নও চলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তো তেমন আন্দোলন নেই, আপনার পতাকা দেওয়ার কী অবস্থা?
সালামত: পতাকা আমি একলা উড়াইলেও সারে। কিন্তু, তাগো লগে উড়াইলে ভালো হয় জিনিসটা। সব সময়ই পতাকা দিতে হয়। শাহবাগের মোড়ে তো সব সময় পতাকা ওড়ে। ওই পতাকা অইহানে আমিই উডাইছি (মেট্রোরেলের প্রাচীরের ওপর উড়ন্ত পতাকা দেখিয়ে)।
কত বছর ধরে পতাকা দেন? আসল কাহিনিটা কী?
সালামত: সাত–আট বছর ধইরা। সকাল বেলা শুরু কইরা রাইত সাড়ে ১২টায় শেষ করতে হয়। কাহিনি হইল, অনেকের মাথায় দেখপেন (দেখবেন) জট হয়। অই লোকটা জট ফালাইতে পারে না। আর যদি ফালাইতে যায়, তাইলে মারা যায়। নাইলে কোনো একটা অসুখ–বিসুখ হয়, ধ্বংস হইয়া যায়। পতাকাও ওই রকমই।
বিষয়ডা হইল সোনার বাংলাদেশ। এহন হইল ডিজিটাল বাংলাদেশ। পতাকা মানেই বাংলাদেশ, পতাকা মানেই আমি। এইডা অর্থনীতি রাজনীতিকের পতাকা।
আমাকে এই বলেই শাহবাগ মোড়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যান সালামত। শরীরের পুরো শক্তি কণ্ঠে এনে চিৎকার করেন–‘এবারেএএএএএর সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, জয় বাংলা জঅঅঅঅঅয় বঙ্গবন্ধু, স্বাস্থ্যবিধিইইইইই মেনে চলুন।’ এ সময় বাম হাতে পতাকা উঁচিয়ে ধরে ডান হাতের তর্জনি বঙ্গবন্ধুর অনুকরণে তুলে ধরেন সালামত। আমিও চট করে এই মুহূর্তের কিছু ছবি তুলে ফেলি।
স্লোগান শেষ করে আবার গল্পে ফেরেন সালামত। বলেন—এই যে চিল্লানিডি দিছি। মাথায় রক্ত উইঠা যায়। এইভাবে ধইরা রাখছি আরকি, অর্থনীতি, বুঝছেন? আপনে এইগুলা ছাইড়া দিয়েন নেটে। আমারে বিদেশি মিডিয়া কাভার করে। পত্রিকায় আহে। আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে এইটা আহে।
এতদিন তো কেউ পতাকা দেয়নি, আপনি একা কেন দেন?
সালামত: ভাই, অইডা যার ওপর পড়ে, সে বুঝে। মজিব এমনে হইয়া গ্যাছেগা? এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের সংগ্রামী জীবন, এই রাজপথে থেকেই মনে করেন যে, সংগ্রাম করছেন। শিক্ষামন্ত্রী কন, অই মহিলা এই রাজপথে থাইকা সংগ্রাম করছে। পুলিশের অত্যাচারের শরিলেত্তে কাপড় ছাইড়া দিছে। এডি এইভাবেই হয়। পরে মানুষ দেখব যে—এএএই রাস্তায় পতাকা উড়াইছে।
বাংলাদেশ কেমন চলছে ভাই?
সালামত: করোনার লইগা সব শেষ হইয়া গেছে। সংগ্রামে চলমান রাখছি এই আরকি।
দেশের রাজনীতি, অর্থনীতির কী অবস্থা?
সালামত: ভাই, এইগুলা করতে করতে আমি পাগল হইয়া গেছিগা। রাইত–দিন কোনো ঘুম নাই, খাওয়া নাই, দাওয়া নাই। আমি এই জায়গায় আইছি মনে করেন যে, মাথার মধ্যে অনেক শাপ লইয়া। এই জায়গায় দাঁড়ানোডারে আপনি কী বুঝতাছেন? সকালবেলা প্রশাসনের উপর যুদ্ধ কইরা পতাকা উড়ান লাগছে। সিপাই আইছে। কইলাম, ধুর মিয়া সরেন। অফিসার আইছেনি? তদন্তরে ডাহেন।
এই পতাকার উপরে দেশটা চলতাছে। আপনারা কেডা কী বোঝেন, কইতারি না। একটা পোলা পতাকা লইয়া দাঁড়াইয়া আছি। আপনেরা দেখতাছেন। দেইখাও বোঝেন না। আমি খুব হিমশিম খাইতাছি। এইডা ধরতে গেলে পিথিবি (পৃথিবী), এইডা মানেই পিথিবি। এইডা মানচিত্র একটা। এই জিনিসটা লইয়া লাড়তাছি, পিথিবীডা লাড়তাছি। পিথিবিডা আমার মাথার উপরে চাপ পইড়া রইছে।
আর কতদিন পতাকা দিতে চান?
সালামত: সংগ্রাম চলছে, চলবে। আমাদের মুক্তি পাইতে হইব, আমারে মুক্তি দিতে হইব। তাইলে আমি পতাকা ছাড়া হাঁটতে পারমু। আর মনে হয় ৩-৪ বছর আছে।
বাংলাদেশকে কি মুক্ত মনে হয় না?
সালামত: আমি তো মুক্তি পাই নাইকা। বাংলাদেশ মুক্ত হয় নাইকা। বৈষম্য আছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যর বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম। এইগুলা শেষ হইলে ওইদিন মুক্তি পামু। মুক্তি যেদিন পামু, ওইদিন আমি আসল স্বাধীন হমু। সবাই নিজেরে মুক্ত মনে করে, আসলে মুক্ত না। মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে হইব। বঙ্গবন্ধু ভিক্ষুকের রাষ্ট্ররে সোনার বাংলা কইরা দিয়া গেছে। আবার সোনার বাংলারে ভিক্ষুকের রাষ্ট্রে পরিণত করছে। আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াইছি ২০২১-৪১ চ্যালেঞ্জ নিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আপনি খুশি না? কীভাবে মুক্তি মিলবে?
সালামত: দেশের মানুষ খুশি থাকলেই হইছে। আমার ভাই সময় আয় আর যায়। কোন সময় এডি কইরা মারা যাই। মুক্তি দেওয়ার মালিক রাষ্ট্র। রাষ্ট্রর কার্যক্রম আর আমি যদি জায়গামতো থাকতে পারি, তাইলে মুক্তি মিলবে।
আপনার কি রাজনীতি করার ইচ্ছা আছে?
সালামত: আমি তো জাতীয় নেতা। পতাকা মানেই আমি জাতীয় নেতা। আমারে নেতাই কয়, এই দ্যাশে পুলিশ–টুলিশ যারা আছে, আমারে নেতা কয়। এবং পতাকামুন্ত্রী (মন্ত্রী) কয়। এইডা আমার প্রচার হয় গণমাধ্যমে।
আমার কোনো চাওয়া–পাওয়ার ইচ্ছা নাই। আমি মন্ত্রিত্ব পাওনের লইগা রাজনীতি করি না। এই দেশের শান্তির লইগা, মানুষের লইগা রাজনীতি করি। এই সরকার একদিন আমারে বাড়ি দিব, গাড়ি দিব—অই চিন্তা আমি করি না।
আমার বাবার ৪০ লাখ টাকার সম্পত্তি ছিল। অইসব বাদ দিয়া এইখানে আইছি। এই পর্যন্ত এই সরকার কোনো অনুদান দেয় নাই। বাবারডা বাদেও নিজস্ব অর্থায়নে আমি শিল্পপতি।
বললেন, ‘এডি কইরা কোনো সময় মইরা যাই’, আপনার লাইফ রিস্ক আছে?
সালামত: আমি কোন সময় মারা যাই বুঝতাছেন? আমি যে এইডা করি, এইডার কোন নিরাপত্তা নাই। আমারে পরশু দিনও থানার ভিতরে পুলিশ মারছে। কারণ, আমি ছাত্রলীগের লগে থাকি, মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের লগে থাকি, বামেগো কোনো সমস্যা হইলে তাগো লগে থাকি, যত ইন্টারন্যাশনাল আন্দোলন–সংগ্রাম, সবগুলায় থাকি। এই পতাকা লইয়া আমি সংগ্রাম করি। পুলিশে বাধা দেয়, তাগো কতা মানি না।
আপনি সবার আন্দোলনে থাকেন কেন?
সালামত: সবার সাথে থাকি কারণ, আমার পতাকার ভিতরে তার অধিকার। ভাই, এই পতাকার ভিতরে সবকিছু। কতা বোঝেন? এক কথা। এইহানেই থাকেন। এই পতাকার মাঝেই সবকিছু। অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি। পররাষ্ট্রনীতি কে? জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ভাইস চেয়ারম্যান আমি। আপনি দেখতাছেন, একটা পাগল পতাকা উড়াইতাছে। আর জাতিসংঘে আমার পদ–পদবি আছে, বিশাল।
জাতিসংঘের প্রেসিডেন্ট কে?
সালামত: নেতানুকোচ (আন্তোনিও গুতেরেস)। ওদিক যাওন যাইব না। জাতিসংঘের যে আমি সদস্য, আমার পতাকা (তার) প্রমাণ। আমার আরও পদ–পদবি আছে; খেয়াল নাইকা। টাইটেল দেওয়া বোঝেন? এ আপনেরা জানেন, জাইনাও জিগান।
সালামতের সঙ্গে গল্প জমে উঠেছে। বললেন, ‘চলেন, চেম্বারে যাই।’ এই বলে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে শাহবাগ মোড় থেকে শাহবাগ থানার গেটের পাশে তাঁর ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এইটা আমার চেম্বার।’ চোখ বোলালাম ‘চেম্বারে’। ঘরটি দুই চাকার চটপটি বিক্রির দোকানের মতো। রাজনৈতিক কর্মসূচির বিলবোর্ড ঝুলিয়ে বানানো হয়েছে দরজা। ঘরে জিনিসপত্র বলতে—মাথার কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি। বাম পাশে একটি মিনি ম্যারাথনে দুই হাজার টাকা জেতার কার্ড। ডান পাশে একটি শার্ট, একটি প্যান্ট, দুটি গেঞ্জি ও একটি মাস্ক ঝুলতে দেখা যায়। দুটি কম্বল, দুটি কাঁথা, একটি চাদর ও একটি বালিশ নিয়েই তাঁর বিছানা।
আপনি দৌড়ান?
সালামত: হ, এই দৌড়ে আমি সেকেন্ড হইছিলাম, ক্যামেরার সেকেন্ড। পরে হেরা লিস্ট ঘুরাইয়া দিছে। (আসলে ফল কী হয়েছিল জানা নেই)।
আচ্ছা, কোটা আন্দোলনে পুলিশের মুখোমুখি আপনার একা দাঁড়িয়ে থাকার একটি ছবি অনেক খবরে এসেছে। অই কাজটা কীভাবে করলেন?
সালামত: ওইদিন ক্যালা পুলিশ পিডাইয়া হোয়াইয়া দিছি, একলা। সব গ্যাছেগা। দেহি, গুলি আর থামে না। আমি মারা যামু। ওই সময় ঢিলাইতে ঢিলাইতে এইহানে (থানার গেট) আইয়া পড়ছি। পুলিশের ব্যারিকেটের (ব্যারিকেড) সামনে। আইয়া পরে পুলিশ সব কাইত–মাইত হইয়া গ্যাছেগা। বিল্ডিং পড়ে না কাইত হইয়া? অমনভাবে পড়তাছে। পরে মিডিয়া আমারে কাভার করল। পরদিন দেহি নিউজে সব।
আপনার ভয় লাগেনাই?
সালামত: আমি তো তাগো অধিকারের লইগা আন্দোলন করতাছি। আমি তো জানতাছি আমি মারা যামু, তাগো ছাইড়া দিয়া লাভ কী? আমি তো দেখতাছি মারা যামু। গুলি, গ্যাসে-ম্যাসে, ডাইরেক (সরাসরি) গুলিও ছাড়তাছে (ছুড়ছে); কার্টুজ ছাড়তাছে। এমনে তো মারা যামুই, যুদ্ধ কইরা মরমু। একটা ইতিহাস হইয়া যাইব। তখন আমি ওইডার বিজয় পাইছি। অইদিনকালই দেশ স্বাধীন হইছে, আবার ঘোষণা হইছে। অইডা ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
থানার সামনে থাকেন, পুলিশদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন?
সালামত: কিছু স্যার আছে, আমারে অনেক আদর করে। আমারে জিগায়, খাইছোনি কিছু? টাকা দেয়, খাওয়ায়। তাদেরও কিছু কথা আমি শুনি। তারা যা পারে, আমার জন্য করে।
কথা শেষ না করতেই সালামত বললেন, ‘দাঁড়ান আপনেরে দেখাই’ বলে বালিশের নিচের ২টি তক্তা সরিয়ে একটি চকচকে ব্যাগ বের করেন। বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রামে থাকি, আমি কিন্তু আপনেগো ভাই।’ ব্যাগ থেকে বের করেন একটি সাময়িকী ও অন্তত ৩০টি পত্রিকা। সাময়িকীটির পেছনের কভারে শুধু তাঁর একটি ছবিই শোভা পেয়েছে (৮ মার্চ ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের ছবিটি)। প্রতিটি পত্রিকা খুলে দেখান বিভিন্ন কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি। প্রত্যেকটি পত্রিকা খুলে নানা কর্মসূচীতে তাঁর পতাকা দেওয়ার ছবি দেখালেন। ছবিগুলো বের করতে খুব বেশি খুঁজতেও হয়নি। পত্রিকার অই ছবিগুলোর ছবি আমার মোবাইলেও তুলতে বললেন। আমিও সবগুলো তুললাম।
এবার বললেন, ‘এই যে ছবি তুললেন। আমি মইরা গেলে এইগুলা ইতিহাস হইব।’
আপনার ছবি, কথা নিউজে দিলে সমস্যা আছে?
সালামত: না না না, আপনে মিডিয়া হইয়া গ্যাছেনগা। আপনের যা খুশি, স্ট্যাটাস দিয়া দিয়েন। আরবারে (আবরার) স্ট্যাটাস দিছে, আরবারররে (আবরার) যে মারছে, ভুল করছে সম্পূর্ণ। তাঁরে যে মারছে, ছাত্রলীগের পোলাপাইনে, ভুল করছে। স্ট্যাটাস দিছে, কী অইছে? যদি সে অপরাধ করত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে। কিন্তু তারা হাত দিয়া মারল ক্যা?
ভয় পাইয়া গ্যাছেগা অহনে। অহনে ভয় পাইয়া গেছে সব। দেখছেন? কাজটা কী করছে। যারা মারছে, তারা কিন্তু ছাড় পাইব না। ছাত্র তো। সাধারণ মানুষ হইতো। আমারেও তো কেউ মাইরা শান্তি পাইব না। অর গুষ্ঠিশুদ্ধা ধ্বংস।
ছাত্ররে তো মারা ঠিক না। সে দেশের প্রদীপ। একদিন এই আরবার (আবরার) বড় কিছু হইতে পারত। তার জন্য দেশের অনেক উন্নত হইত। এমপি হইত বা নেতা হইত, একটা বড় কিছুই হইত। তারে মাইরা দেশের ক্ষতি করল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বদনাম করল।
গল্প যেভাবে মেতে উঠেছে, কখন শেষ হবে ইয়ত্তা নেই। এদিকে আমাকেও ফিরতে হবে। তাই সালামতের সঙ্গে গল্প শেষ করতে হলো। বিদায়ের সময় আবার দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়েছে।
ফেরার পথে হাঁটছি আর ভাবছি—সালামতকে যে লোকে ‘পাগল’ বলে তা কি সত্যি?

প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলছিল শেফালী বেগমের সংসার। হঠাৎ করেই একদিন উধাও তাঁর স্বামী আলম হোসেন। এরপরই পাল্টে যায় শেফালীর জীবন।
২৯ জানুয়ারি ২০২৫
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪
ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪
কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪শাহীন রহমান, পাবনা

প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলছিল শেফালী বেগমের সংসার। হঠাৎ করেই একদিন উধাও তাঁর স্বামী আলম হোসেন। এরপরই পাল্টে যায় শেফালীর জীবন। কী করবেন ভেবে না পেয়ে বেছে নেন এক অদ্ভুত আয়ের জীবন। চুম্বকের সাহায্যে লোহার টুকরো কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে চলে তাঁর একার সংসার। শেফালী বেগমের (৭০) এই অবস্থায় কেউ নেই পাশে। পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তর পাশে বড়াল নদের পাড়ে ছোট্ট ভাঙাচোরা এক ঝুপড়িঘরে শেফালীর বসবাস। স্বামী, সন্তান, আত্মীয়রা কেউ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
চাটমোহর পৌর সদরে কথা হয় শেফালী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। তাঁর পৈতৃক নিবাস চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামে। বাবা মৃত আব্দুর রহমান প্রামাণিক। শেফালীরা ছিলেন চার ভাই, দুই বোন। মা-বাবাসহ বড় পরিবার পরিচালনা করতে হিমশিম খেতেন শেফালীর মৎস্যজীবী বাবা আব্দুর রহমান। শেফালী যখন ছোট, তখন তাঁর বাবা মারা যান। তাই অভাবের সংসারে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি।
একপর্যায়ে কাজের সন্ধানে চলে যান পাশের ঈশ্বরদী উপজেলায়। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে থাকতেন তিনি। যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সেখানে। জিআরপি থানার তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা তাঁর অসহায়ের কথা ভেবে আলম হোসেন নামে রংপুরের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। অন্ধকার জীবনে নতুন সংসার হয় শেফালীর। স্বামীর সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে সুখে-দুঃখে ভালোই দিন কাটছিল তাঁদের। প্রায় পনেরো বছর সংসার করার পর একদিন শেফালীকে ছেড়ে হঠাৎ পালিয়ে যান আলম। অনেক খুঁজেও স্বামীকে আর ফিরে পাননি তিনি। পরে শুনেছেন অন্য কাউকে বিয়ে করে তাঁর সঙ্গে সংসার করছেন।
কী করবেন, কীভাবে চলবেন ভেবে না পেয়ে অভিমানে ঈশ্বরদী ছেড়ে জন্মভূমি চাটমোহরে ফিরে আসেন শেফালী। পৌর সদরে সুলতান হোসেন নামের এক ব্যক্তির সহায়তায় তাঁর জায়গায় একটি ঝুপড়িঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। সেখান থেকে নিমতলা এলাকায় বড়াল নদের পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে সরকারি জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় শেফালীর। কয়েক বছর পর সেখান থেকেও সরে যেতে হয় তাঁকে।
প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তর পাশে বড়ালের পাড়ে ছোট্ট ভাঙাচোরা এক ঝুপড়ি ঘরে।

শেফালী বেগম বলেন, খেয়ে-পরে জীবন চালানোর জন্য কিছু না কিছু তো করতে হবে। চেয়েচিন্তে, ভিক্ষা করে পেট চলে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয় চুম্বকের সাহায্যে লোহা সংগ্রহের কাজ। ভোর হলে বেরিয়ে পড়তে হয়।
তিনি জানান, মাঝারি আকৃতির একটা চুম্বকের সঙ্গে রশি বাঁধা থাকে। চুম্বকটি রাস্তায় ফেলে রশির অপর প্রান্ত ধরে টেনে টেনে হেঁটে চলেন তিনি। চুম্বকের আকর্ষণে চুম্বকের সঙ্গে আটকে আসে লোহার টুকরো, পুরোনো ব্লেড ও অন্যান্য লৌহজাত দ্রব্য। বিক্রি হয় না বলে ধারালো ব্লেডগুলো চুম্বক থেকে টেনে খুলে ফেলে দেন তিনি।
লোহার টুকরোগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে যে টাকা পান, তাতেই চলে শেফালীর জীবিকা। প্রায় সারা দিন চলে লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহের কাজ। সংগৃহীত লোহা, প্লাস্টিকের বোতল চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের বারান্দায় জমান। কিছুদিন পরপর বিক্রি করেন। যে টাকা পান, তা দিয়েই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় তাঁকে।
শেফালী আরও জানান, বাড়িঘর, বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। ভাত-কাপড়ের পাশাপাশি লাগে ওষুধপত্রও। তাই জীবন চালাতে কাজ করতে হচ্ছে। ভাঙা ঘরে শেয়াল-কুকুর ঢোকে। রান্না করা ভাত কুকুরে খেয়ে যায়। বৃষ্টির সময় পানি পড়ে ঘরের চাল দিয়ে। একটি ঘর থাকলে সেখানে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন তিনি। সরকারিভাবে একটা ঘর চান তিনি।
চাটমোহর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘শেফালীর ব্যাপারটি আমি আপনার থেকে জানলাম। তিনি যদি চাটমোহরের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে সমাজসেবা অফিস থেকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। আর সরকারি প্রকল্পের ঘর খালি থাকা সাপেক্ষে তাকে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না, সেটি দেখা হবে।’

প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলছিল শেফালী বেগমের সংসার। হঠাৎ করেই একদিন উধাও তাঁর স্বামী আলম হোসেন। এরপরই পাল্টে যায় শেফালীর জীবন। কী করবেন ভেবে না পেয়ে বেছে নেন এক অদ্ভুত আয়ের জীবন। চুম্বকের সাহায্যে লোহার টুকরো কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে চলে তাঁর একার সংসার। শেফালী বেগমের (৭০) এই অবস্থায় কেউ নেই পাশে। পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তর পাশে বড়াল নদের পাড়ে ছোট্ট ভাঙাচোরা এক ঝুপড়িঘরে শেফালীর বসবাস। স্বামী, সন্তান, আত্মীয়রা কেউ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
চাটমোহর পৌর সদরে কথা হয় শেফালী বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। তাঁর পৈতৃক নিবাস চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামে। বাবা মৃত আব্দুর রহমান প্রামাণিক। শেফালীরা ছিলেন চার ভাই, দুই বোন। মা-বাবাসহ বড় পরিবার পরিচালনা করতে হিমশিম খেতেন শেফালীর মৎস্যজীবী বাবা আব্দুর রহমান। শেফালী যখন ছোট, তখন তাঁর বাবা মারা যান। তাই অভাবের সংসারে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি।
একপর্যায়ে কাজের সন্ধানে চলে যান পাশের ঈশ্বরদী উপজেলায়। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে থাকতেন তিনি। যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সেখানে। জিআরপি থানার তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা তাঁর অসহায়ের কথা ভেবে আলম হোসেন নামে রংপুরের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন। অন্ধকার জীবনে নতুন সংসার হয় শেফালীর। স্বামীর সঙ্গে ভাড়াবাড়িতে সুখে-দুঃখে ভালোই দিন কাটছিল তাঁদের। প্রায় পনেরো বছর সংসার করার পর একদিন শেফালীকে ছেড়ে হঠাৎ পালিয়ে যান আলম। অনেক খুঁজেও স্বামীকে আর ফিরে পাননি তিনি। পরে শুনেছেন অন্য কাউকে বিয়ে করে তাঁর সঙ্গে সংসার করছেন।
কী করবেন, কীভাবে চলবেন ভেবে না পেয়ে অভিমানে ঈশ্বরদী ছেড়ে জন্মভূমি চাটমোহরে ফিরে আসেন শেফালী। পৌর সদরে সুলতান হোসেন নামের এক ব্যক্তির সহায়তায় তাঁর জায়গায় একটি ঝুপড়িঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। সেখান থেকে নিমতলা এলাকায় বড়াল নদের পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের পাশে সরকারি জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় শেফালীর। কয়েক বছর পর সেখান থেকেও সরে যেতে হয় তাঁকে।
প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তর পাশে বড়ালের পাড়ে ছোট্ট ভাঙাচোরা এক ঝুপড়ি ঘরে।

শেফালী বেগম বলেন, খেয়ে-পরে জীবন চালানোর জন্য কিছু না কিছু তো করতে হবে। চেয়েচিন্তে, ভিক্ষা করে পেট চলে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য পেশা হিসেবে বেছে নিতে হয় চুম্বকের সাহায্যে লোহা সংগ্রহের কাজ। ভোর হলে বেরিয়ে পড়তে হয়।
তিনি জানান, মাঝারি আকৃতির একটা চুম্বকের সঙ্গে রশি বাঁধা থাকে। চুম্বকটি রাস্তায় ফেলে রশির অপর প্রান্ত ধরে টেনে টেনে হেঁটে চলেন তিনি। চুম্বকের আকর্ষণে চুম্বকের সঙ্গে আটকে আসে লোহার টুকরো, পুরোনো ব্লেড ও অন্যান্য লৌহজাত দ্রব্য। বিক্রি হয় না বলে ধারালো ব্লেডগুলো চুম্বক থেকে টেনে খুলে ফেলে দেন তিনি।
লোহার টুকরোগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে যে টাকা পান, তাতেই চলে শেফালীর জীবিকা। প্রায় সারা দিন চলে লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহের কাজ। সংগৃহীত লোহা, প্লাস্টিকের বোতল চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের বারান্দায় জমান। কিছুদিন পরপর বিক্রি করেন। যে টাকা পান, তা দিয়েই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় তাঁকে।
শেফালী আরও জানান, বাড়িঘর, বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। ভাত-কাপড়ের পাশাপাশি লাগে ওষুধপত্রও। তাই জীবন চালাতে কাজ করতে হচ্ছে। ভাঙা ঘরে শেয়াল-কুকুর ঢোকে। রান্না করা ভাত কুকুরে খেয়ে যায়। বৃষ্টির সময় পানি পড়ে ঘরের চাল দিয়ে। একটি ঘর থাকলে সেখানে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন তিনি। সরকারিভাবে একটা ঘর চান তিনি।
চাটমোহর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ‘শেফালীর ব্যাপারটি আমি আপনার থেকে জানলাম। তিনি যদি চাটমোহরের নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে সমাজসেবা অফিস থেকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।’
চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। আর সরকারি প্রকল্পের ঘর খালি থাকা সাপেক্ষে তাকে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না, সেটি দেখা হবে।’

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
১৮ এপ্রিল ২০২১
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪
ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪
কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪আব্দুল্লাহ আল গালিব, ঢাকা

ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলোর পক্ষে প্রতিদিনের খাবারের খরচ চালানোও যেন আজ এক অসম্ভব সংগ্রামের।
আজ শুক্রবার এই হাটে প্রায় ৪০ জন পুরুষ এবং ২৫ জন নারী শ্রমিক এসেছেন। তাঁদের মধ্যে কাজ পেয়েছেন ২৫-২৬ জন। যা ৫০ শতাংশেরও কম। তবে তাঁরা জানান, আগে কাজ পাওয়ার হার ৮০ শতাংশ বা এরও বেশি ছিল। সম্প্রতি সরকার বদল ও বিরাজমান অস্থিরতার কারণে বর্তমানে তাঁরা আগের তুলনায় কম কাজ পাচ্ছেন।
কথা হয় ৫৩ বছর বয়সী আব্দুস সালামের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। এক হাতে কোদাল আর অন্য হাতে বস্তা নিয়ে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকেন কাজের আশায়। আগে মাসে ২০-২২ দিন কাজ পেলেও এখন পান সর্বোচ্চ ১০-১৫ দিন। দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা। বর্তমান বাজারে এই টাকা দিয়ে পর্যাপ্ত খাবার কেনাই সম্ভব হয় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে বহুগুণ; চাল, ডাল, তেল, সবকিছুর দাম বাড়ায় মাস শেষে পরিবারের জন্য খাবার কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন আব্দুস সালাম। তবুও, তিনি আশা ছাড়েন না। প্রতিদিন নিজেকে প্রস্তুত করেন নতুন উদ্যমে।
৪৩ বছরের ফজলুল হক একাই সংসার চালান। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে আসা এই মানুষটি পাঁচ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালান। একসময় দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরি পেলেও এখন পাচ্ছেন ৫০০-৬০০ টাকা। এই সামান্য আয়ে পরিবারের জন্য দিনরাত খেটে যাচ্ছেন। নিজের কথা ভুলে গিয়ে ফজলুল হক কেবল ভাবেন, তাঁর পরিবারের মুখে অন্তত একটু খাবার তুলে দেওয়ার কথা। চলমান সংকটে তাঁর এই লড়াই এখন কেবল টিকে থাকার সংগ্রাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৫ বছরের রবিউল ইসলামও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা। কোনোমতে ভরণপোষণ জোগাড় করছেন পরিবারের। তিনি বলেন, ‘জানি না বাবা, আল্লায় চালাচ্ছেন। নইলে যে কয় টাকা পাই তাতে কোনোভাবেই সংসার চালানো সম্ভব না। এখন তাও ছেলেটা একটু সাহায্য করে বলে, তা না হলে আমি একা পারতামই না।’
নারায়ণগঞ্জের শুক্কুর আলী, ৬০ বছর বয়সেও সংসারের ভার তাঁর কাঁধে। তাঁর দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা আয় দিয়ে পরিবার চালানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘জিনিসের দাম বাড়ে, আর আমাদের মজুরি শুধু কমে। তাহলে খেয়ে পরে বাঁচব কীভাবে?’ তাঁর মতো একজন বয়স্ক মানুষ প্রতিদিনের এই যুদ্ধে কোনোমতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনেক নারী শ্রমিকদের সঙ্গেও দেখা হয় সেখানে। তাঁদেরই একজন আসমা আক্তার, বয়স ৪০। স্বামী অসুস্থ, তাই সংসারের পুরো খরচ চালাতে তাঁকে কাজ করতে হয়। মাটি কাটা, ঝাড়ু মোছার মতো কাজ করেন, কখনো রাজমিস্ত্রি সহযোগীর কাজও করেন তিনি। আয় এতটাই সীমিত যে প্রতিদিন পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা তাঁর জন্য একটা দুঃস্বপ্নের মতো। মাত্র ৪০০-৫০০ টাকায় এত কিছুর জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তবুও আসমা প্রতিদিন নতুন করে সংগ্রামে নামেন, সন্তানদের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দিতে।
এই হাটে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ দ্রব্যমূল্যের চাপে আজ নুইয়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা সামান্য, শুধু একটু খাবারের নিশ্চয়তা। তবে আজকের অর্থনৈতিক সংকটে তাঁদের এই মৌলিক চাহিদাটুকু পূরণ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু তাঁদের আশায় বুক বাঁধা—একদিন হয়তো এই সংগ্রামের শেষ হবে, আর তাঁদের জীবনে খাদ্যের জন্য এই কঠিন লড়াই থেকে মুক্তি মিলবে।
দিন যায়, দিন আসে। তবু খেটে খাওয়া শ্রমজীবী এসব মানুষের ভাগ্যের ফের নেই; তাঁদের জীবনে এখনো অন্ধকার। দ্রব্যমূল্যের করালগ্রাসে প্রতিনিয়ত তাঁরা নিষ্পেষিত, লড়াই করছে জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চাহিদার জন্য। তাঁদের কণ্ঠে কোনো আর্তনাদ নেই, কিন্তু বোবা ব্যথা যেন হৃদয় বিদীর্ণ করে তুলছে।

ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। স্বল্প আয়ের এই মানুষগুলোর পক্ষে প্রতিদিনের খাবারের খরচ চালানোও যেন আজ এক অসম্ভব সংগ্রামের।
আজ শুক্রবার এই হাটে প্রায় ৪০ জন পুরুষ এবং ২৫ জন নারী শ্রমিক এসেছেন। তাঁদের মধ্যে কাজ পেয়েছেন ২৫-২৬ জন। যা ৫০ শতাংশেরও কম। তবে তাঁরা জানান, আগে কাজ পাওয়ার হার ৮০ শতাংশ বা এরও বেশি ছিল। সম্প্রতি সরকার বদল ও বিরাজমান অস্থিরতার কারণে বর্তমানে তাঁরা আগের তুলনায় কম কাজ পাচ্ছেন।
কথা হয় ৫৩ বছর বয়সী আব্দুস সালামের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। এক হাতে কোদাল আর অন্য হাতে বস্তা নিয়ে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকেন কাজের আশায়। আগে মাসে ২০-২২ দিন কাজ পেলেও এখন পান সর্বোচ্চ ১০-১৫ দিন। দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা। বর্তমান বাজারে এই টাকা দিয়ে পর্যাপ্ত খাবার কেনাই সম্ভব হয় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে বহুগুণ; চাল, ডাল, তেল, সবকিছুর দাম বাড়ায় মাস শেষে পরিবারের জন্য খাবার কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন আব্দুস সালাম। তবুও, তিনি আশা ছাড়েন না। প্রতিদিন নিজেকে প্রস্তুত করেন নতুন উদ্যমে।
৪৩ বছরের ফজলুল হক একাই সংসার চালান। চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থেকে আসা এই মানুষটি পাঁচ মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালান। একসময় দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরি পেলেও এখন পাচ্ছেন ৫০০-৬০০ টাকা। এই সামান্য আয়ে পরিবারের জন্য দিনরাত খেটে যাচ্ছেন। নিজের কথা ভুলে গিয়ে ফজলুল হক কেবল ভাবেন, তাঁর পরিবারের মুখে অন্তত একটু খাবার তুলে দেওয়ার কথা। চলমান সংকটে তাঁর এই লড়াই এখন কেবল টিকে থাকার সংগ্রাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৫ বছরের রবিউল ইসলামও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা। কোনোমতে ভরণপোষণ জোগাড় করছেন পরিবারের। তিনি বলেন, ‘জানি না বাবা, আল্লায় চালাচ্ছেন। নইলে যে কয় টাকা পাই তাতে কোনোভাবেই সংসার চালানো সম্ভব না। এখন তাও ছেলেটা একটু সাহায্য করে বলে, তা না হলে আমি একা পারতামই না।’
নারায়ণগঞ্জের শুক্কুর আলী, ৬০ বছর বয়সেও সংসারের ভার তাঁর কাঁধে। তাঁর দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা আয় দিয়ে পরিবার চালানো খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘জিনিসের দাম বাড়ে, আর আমাদের মজুরি শুধু কমে। তাহলে খেয়ে পরে বাঁচব কীভাবে?’ তাঁর মতো একজন বয়স্ক মানুষ প্রতিদিনের এই যুদ্ধে কোনোমতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
অনেক নারী শ্রমিকদের সঙ্গেও দেখা হয় সেখানে। তাঁদেরই একজন আসমা আক্তার, বয়স ৪০। স্বামী অসুস্থ, তাই সংসারের পুরো খরচ চালাতে তাঁকে কাজ করতে হয়। মাটি কাটা, ঝাড়ু মোছার মতো কাজ করেন, কখনো রাজমিস্ত্রি সহযোগীর কাজও করেন তিনি। আয় এতটাই সীমিত যে প্রতিদিন পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা তাঁর জন্য একটা দুঃস্বপ্নের মতো। মাত্র ৪০০-৫০০ টাকায় এত কিছুর জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। তবুও আসমা প্রতিদিন নতুন করে সংগ্রামে নামেন, সন্তানদের মুখে একমুঠো খাবার তুলে দিতে।
এই হাটে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষ দ্রব্যমূল্যের চাপে আজ নুইয়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রত্যাশা সামান্য, শুধু একটু খাবারের নিশ্চয়তা। তবে আজকের অর্থনৈতিক সংকটে তাঁদের এই মৌলিক চাহিদাটুকু পূরণ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু তাঁদের আশায় বুক বাঁধা—একদিন হয়তো এই সংগ্রামের শেষ হবে, আর তাঁদের জীবনে খাদ্যের জন্য এই কঠিন লড়াই থেকে মুক্তি মিলবে।
দিন যায়, দিন আসে। তবু খেটে খাওয়া শ্রমজীবী এসব মানুষের ভাগ্যের ফের নেই; তাঁদের জীবনে এখনো অন্ধকার। দ্রব্যমূল্যের করালগ্রাসে প্রতিনিয়ত তাঁরা নিষ্পেষিত, লড়াই করছে জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র চাহিদার জন্য। তাঁদের কণ্ঠে কোনো আর্তনাদ নেই, কিন্তু বোবা ব্যথা যেন হৃদয় বিদীর্ণ করে তুলছে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
১৮ এপ্রিল ২০২১
প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলছিল শেফালী বেগমের সংসার। হঠাৎ করেই একদিন উধাও তাঁর স্বামী আলম হোসেন। এরপরই পাল্টে যায় শেফালীর জীবন।
২৯ জানুয়ারি ২০২৫
ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪
কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪ইশতিয়াক হাসান

ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয় হওয়া এক গাড়িচালকের।
কয়েকটা বছর পেছনে চলে যাই। সালটা ২০১৭, ডিসেম্বর শুরুর এক সকাল। রাতভর ট্রেনভ্রমণ শেষে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিংগামী একটা শেয়ার জিপে চেপে বসি। দলেবলে আমরা পাঁচজন। মাঝখানের চারটা সিটে গাদাগাদি করে বসেছিলাম আমি, পুনম, আমার শাশুড়ি এবং মুনা খালামণি (আমার খালা শাশুড়ি)। পুনমের কোলে তিন ছুঁই ছুঁই ওয়াফিকা। মানে তখন ওয়াফিকার বয়স এটাই ছিল।
দার্জিলিং পৌঁছার পথে একটা ঝামেলা হয়েছিল। তবে সেটা কিংবা পরের দিন কী করেছিলাম, তা আজ বলব না। কারণ, আগেই বলেছি এটি গোটা দার্জিলিং ঘুরে বেড়ানোর গল্প নয়।
দার্জিলিং ভ্রমণের তৃতীয় দিন বিকেলে, ওয়াফিকা ও আমার শাশুড়িকে হোটেলে রেখেই বের হলাম। ওয়াফিকার উচ্চতা আর শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু ঝামেলা হওয়ায় ওকে একটু বিশ্রাম দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। গন্তব্য রক গার্ডেন নামের একটি জায়গা। শহর থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার।
একটি গাড়ি ঠিক করেছিলাম। চালক নেপালি। বেচারা ভয়ানক রকম গোমড়ামুখো। ফরসা মুখটা অন্ধকার করে রাখাই যেন পছন্দ তাঁর। ইংরেজি জানত না তেমন একটা, আর আমার হিন্দি জ্ঞান তথৈবচ। ঘুম নামের জায়গাটিতে পৌঁছার আগেই ডানে ঢালু এক পথ ধরে নামতে শুরু করল গাড়ি। পথ ভয়ানক খাড়া, আর একটু পরপর সে কী বাঁক। পুনম আর খালামণি একজন আরেকজনকে শক্ত করে ধরে রাখলেন। এক দিকে পাহাড়ের গায়ে গাছপালা, আরেক দিকে খাদ, মাঝেমধ্যে পাথরের স্ল্যাব বসানো হয়েছে রাস্তার কিনারে, কোনোভাবে ভারসাম্য হারালে এই স্ল্যাব আটকানোর জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। তবে পাহাড়ের গায়ে চা–বাগান, গাছপালা দেখতে দেখতে চড়াই-ওতরাই উপভোগই করছিলাম।
পাকদণ্ডী এই পথ শেষে যখন রক গার্ডেনে এলাম. তখন খুশি হয়ে উঠল আমার সঙ্গীরাও। বড় একটা জায়গা নিয়ে পাহাড়ের মধ্যে একটা বাগানের মতো। এখানে সেখানে হাতি, বানরসহ নানা প্রাণীর মূর্তি, বসার ব্যবস্থা। রেলিং দেওয়া আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে যেতে হয়। রক গার্ডেনের সেরা আকর্ষণ একটি ছোট জলপ্রপাত। প্রাকৃতিক জলপ্রপাতটিকে নিয়ন্ত্রণ করে পাথরের মাঝখান দিয়ে ধাপে ধাপে প্রবাহিত করা হয়েছে।
আমরা এক ঘণ্টা থাকলাম জায়গাটিতে। আরও বেশি সময় কাটাতে পারলে ভালো হতো। তবে ঘড়ির কাঁটা যেন ছুটছে, এদিকে আমাদের আজকের ভ্রমণ লিস্টিতে আরও একটি জায়গা আছে। এবার গন্তব্য গঙ্গামায়া পার্ক, কয়েক কিলোমিটার ভেতরের দিকে।
গাড়িটায় উঠে বসলাম। চালক যথারীতি চুপচাপ। বুঝতে পারছিলাম না বিষয়টা। আমাদের পছন্দ হয়নি, নাকি এমনিতেই সে কথা বলে, কম না কি ভাষাই মূল সমস্যা।
পথটা ঢালু, এবড়োখেবড়ো, তবে সুন্দর। স্থানীয়দের কয়েকটা বসতি পেরোলাম। সুন্দর সুন্দর বাড়ি, ক্যাফে, হোম স্টেগুলো নজর কাড়ল। খুব ইচ্ছা করছিল এখানকার সুনসান কোনো হোম স্টেতে অন্তত একটি রাত কাটাতে। তবে সঙ্গীদের বেশি নীরব জায়গার প্রতি একটু অস্বস্তি কাজ করছিল।
একসময় পৌঁছালাম গাছপালা ঘেরা গঙ্গামায়া পার্কে। পাহাড়ের পাশে চত্বর মতো একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করালেন চালক। আবিষ্কার করলাম আশ্চর্য রকম নীরব এক এলাকায় চলে এসেছি। পার্কের বাঁপাশে ছোট-বড় পাথরের মাঝখান দিয়ে তরতর করে বয়ে চলেছে একটা জলের ধারা। চারপাশে সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে আছে। আমাদের থেকে বেশ কতকটা নিচে ওই ঝরনা, বাগান।
ভারি ভালো লাগছিল পরিবেশটা। পাখি ডাকছিল, হরেক জাতের। তবে সন্ধ্যা ঘনাচ্ছিল, এদিকে আর একজনও পর্যটক নেই। ফেরার তাড়া দিল পুনম ও মুনা খালামণি। তখনই আবিষ্কার করলাম চালক হাওয়া। আশপাশে তাকিয়ে কোথাও দেখতে পেলাম না।
একটার পর একটা মিনিট কাটছে, কিন্তু তাঁর টিকিটারও দেখা নেই। এভাবে মোটামুটি মিনিট ১৫ কেটে গেল। মুনা খালামণির দিকে তাকিয়েই বুঝলাম খুব ভয় পেয়ে গেছেন। বললেন, এই নীরব জায়গায় আসা উচিত হয়নি, মৃত্যুপুরীর মতো লাগছে।
আমার স্ত্রী পুনম এমনিতে বেশ সাহসী। দেখলাম সেও টেনশন করতে শুরু করেছে। ওয়ফিকাকে রেখে আসার দুশ্চিন্তার সঙ্গে বিদেশ বিভুঁইয়ে নির্জন এক জায়গায় চালক নিরুদ্দেশ, দুজনের চেহারাই ঘন কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে। খালামণি পারলে কান্নাকাটি শুরু করে দেন।
ভয়, টেনশন—এগুলো বড়ই সংক্রামক। আমার একটু অস্বস্তি লাগছিল। ঘটনাটা যখনকার, এর কিছুদিন আগে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল স্থানীয় গোর্খা নেপালিরা। খুব উত্তপ্ত ছিল পরিস্থিতি। যদি সেই রাগ পর্যটকের ওপর ঝাড়ে। ফেলুদাও তো নেই দার্জিলিংয়ে, কিছু হলে রহস্যভেদ করবে কে?
আরও পাঁচ মিনিট কাটল। এবার ভয় ভয় করতে লাগল আমারও। এদিকে ক্রমেই অন্ধকার হয়ে আসছে চরাচর। তবুও ভাগ্য ভালো, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ওই আন্দোলনের কথা বলিনি বাকি দুজনকে। তাহলে অন্তত খালামণি যে ফিট যেতেন তাতে সন্দেহ নেই। চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম নেপালি লোকটিকে। শুরুতে চারপাশের পাহাড়ে কেবল নিজের ডাকের প্রতিধ্বনি শুনলাম। কিছুক্ষণ পর হঠাৎই সাড়া মিলল, পাশের এক পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে।
নেমে এসে কিছুই ঘটেনি—এমন একটা ভাব করে হিন্দিতে যা বলল তার অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিল। টয়লেট একটু দূরে হওয়াতেই বিপত্তিটা বাধে।
যাক ভালোয় ভালোয় সেদিন ফিরে আসি ম্যালের ধারে আমাদের হোটেলে। পরে বুঝতে পারি, গোমড়ামুখো হলেও নিতান্ত ভালো মানুষ আমাদের এই নেপালি ড্রাইভার। কারণ, তাঁকে নিয়েই পরের দিন কালিম্পং যাই। সে আমাদের থেকে তুলনামূলক কম ভাড়াই নিয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, মনোমুগ্ধকর দার্জিলিং টু কালিম্পং পথের যেখানে চেয়েছি, সেখানেই থেমেছি। হয়তো পথের মাঝখানে একটা জঙ্গল চোখে পড়ল। দেখতে চাইলাম। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কখনো আবার নিজেই কোনো জায়গায় গাড়ি রেখে বলেছে, সামনে ভিউ পয়েন্ট আছে। সেখান থেকে চারপাশের দৃশ্য দারুণ দেখা যাবে।
আজ লেখাটি তৈরি করতে গিয়ে আমার মনে পড়ল সেই গাড়িচালকের কথা। তার গোমড়া মুখটাই বড় দেখতে ইচ্ছা করছে! জানি না সে কেমন আছে, আর কোনো দিন দেখা হবে কি না! তাঁর নাম-ঠিকানা কিছুই যে জানা নেই।

ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয় হওয়া এক গাড়িচালকের।
কয়েকটা বছর পেছনে চলে যাই। সালটা ২০১৭, ডিসেম্বর শুরুর এক সকাল। রাতভর ট্রেনভ্রমণ শেষে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে দার্জিলিংগামী একটা শেয়ার জিপে চেপে বসি। দলেবলে আমরা পাঁচজন। মাঝখানের চারটা সিটে গাদাগাদি করে বসেছিলাম আমি, পুনম, আমার শাশুড়ি এবং মুনা খালামণি (আমার খালা শাশুড়ি)। পুনমের কোলে তিন ছুঁই ছুঁই ওয়াফিকা। মানে তখন ওয়াফিকার বয়স এটাই ছিল।
দার্জিলিং পৌঁছার পথে একটা ঝামেলা হয়েছিল। তবে সেটা কিংবা পরের দিন কী করেছিলাম, তা আজ বলব না। কারণ, আগেই বলেছি এটি গোটা দার্জিলিং ঘুরে বেড়ানোর গল্প নয়।
দার্জিলিং ভ্রমণের তৃতীয় দিন বিকেলে, ওয়াফিকা ও আমার শাশুড়িকে হোটেলে রেখেই বের হলাম। ওয়াফিকার উচ্চতা আর শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু ঝামেলা হওয়ায় ওকে একটু বিশ্রাম দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। গন্তব্য রক গার্ডেন নামের একটি জায়গা। শহর থেকে দূরত্ব ১০ কিলোমিটার।
একটি গাড়ি ঠিক করেছিলাম। চালক নেপালি। বেচারা ভয়ানক রকম গোমড়ামুখো। ফরসা মুখটা অন্ধকার করে রাখাই যেন পছন্দ তাঁর। ইংরেজি জানত না তেমন একটা, আর আমার হিন্দি জ্ঞান তথৈবচ। ঘুম নামের জায়গাটিতে পৌঁছার আগেই ডানে ঢালু এক পথ ধরে নামতে শুরু করল গাড়ি। পথ ভয়ানক খাড়া, আর একটু পরপর সে কী বাঁক। পুনম আর খালামণি একজন আরেকজনকে শক্ত করে ধরে রাখলেন। এক দিকে পাহাড়ের গায়ে গাছপালা, আরেক দিকে খাদ, মাঝেমধ্যে পাথরের স্ল্যাব বসানো হয়েছে রাস্তার কিনারে, কোনোভাবে ভারসাম্য হারালে এই স্ল্যাব আটকানোর জন্য মোটেই যথেষ্ট নয়। তবে পাহাড়ের গায়ে চা–বাগান, গাছপালা দেখতে দেখতে চড়াই-ওতরাই উপভোগই করছিলাম।
পাকদণ্ডী এই পথ শেষে যখন রক গার্ডেনে এলাম. তখন খুশি হয়ে উঠল আমার সঙ্গীরাও। বড় একটা জায়গা নিয়ে পাহাড়ের মধ্যে একটা বাগানের মতো। এখানে সেখানে হাতি, বানরসহ নানা প্রাণীর মূর্তি, বসার ব্যবস্থা। রেলিং দেওয়া আঁকাবাঁকা পথ ধরে এগিয়ে যেতে হয়। রক গার্ডেনের সেরা আকর্ষণ একটি ছোট জলপ্রপাত। প্রাকৃতিক জলপ্রপাতটিকে নিয়ন্ত্রণ করে পাথরের মাঝখান দিয়ে ধাপে ধাপে প্রবাহিত করা হয়েছে।
আমরা এক ঘণ্টা থাকলাম জায়গাটিতে। আরও বেশি সময় কাটাতে পারলে ভালো হতো। তবে ঘড়ির কাঁটা যেন ছুটছে, এদিকে আমাদের আজকের ভ্রমণ লিস্টিতে আরও একটি জায়গা আছে। এবার গন্তব্য গঙ্গামায়া পার্ক, কয়েক কিলোমিটার ভেতরের দিকে।
গাড়িটায় উঠে বসলাম। চালক যথারীতি চুপচাপ। বুঝতে পারছিলাম না বিষয়টা। আমাদের পছন্দ হয়নি, নাকি এমনিতেই সে কথা বলে, কম না কি ভাষাই মূল সমস্যা।
পথটা ঢালু, এবড়োখেবড়ো, তবে সুন্দর। স্থানীয়দের কয়েকটা বসতি পেরোলাম। সুন্দর সুন্দর বাড়ি, ক্যাফে, হোম স্টেগুলো নজর কাড়ল। খুব ইচ্ছা করছিল এখানকার সুনসান কোনো হোম স্টেতে অন্তত একটি রাত কাটাতে। তবে সঙ্গীদের বেশি নীরব জায়গার প্রতি একটু অস্বস্তি কাজ করছিল।
একসময় পৌঁছালাম গাছপালা ঘেরা গঙ্গামায়া পার্কে। পাহাড়ের পাশে চত্বর মতো একটি জায়গায় গাড়ি দাঁড় করালেন চালক। আবিষ্কার করলাম আশ্চর্য রকম নীরব এক এলাকায় চলে এসেছি। পার্কের বাঁপাশে ছোট-বড় পাথরের মাঝখান দিয়ে তরতর করে বয়ে চলেছে একটা জলের ধারা। চারপাশে সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটে আছে। আমাদের থেকে বেশ কতকটা নিচে ওই ঝরনা, বাগান।
ভারি ভালো লাগছিল পরিবেশটা। পাখি ডাকছিল, হরেক জাতের। তবে সন্ধ্যা ঘনাচ্ছিল, এদিকে আর একজনও পর্যটক নেই। ফেরার তাড়া দিল পুনম ও মুনা খালামণি। তখনই আবিষ্কার করলাম চালক হাওয়া। আশপাশে তাকিয়ে কোথাও দেখতে পেলাম না।
একটার পর একটা মিনিট কাটছে, কিন্তু তাঁর টিকিটারও দেখা নেই। এভাবে মোটামুটি মিনিট ১৫ কেটে গেল। মুনা খালামণির দিকে তাকিয়েই বুঝলাম খুব ভয় পেয়ে গেছেন। বললেন, এই নীরব জায়গায় আসা উচিত হয়নি, মৃত্যুপুরীর মতো লাগছে।
আমার স্ত্রী পুনম এমনিতে বেশ সাহসী। দেখলাম সেও টেনশন করতে শুরু করেছে। ওয়ফিকাকে রেখে আসার দুশ্চিন্তার সঙ্গে বিদেশ বিভুঁইয়ে নির্জন এক জায়গায় চালক নিরুদ্দেশ, দুজনের চেহারাই ঘন কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে। খালামণি পারলে কান্নাকাটি শুরু করে দেন।
ভয়, টেনশন—এগুলো বড়ই সংক্রামক। আমার একটু অস্বস্তি লাগছিল। ঘটনাটা যখনকার, এর কিছুদিন আগে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে বিক্ষোভ করেছিল স্থানীয় গোর্খা নেপালিরা। খুব উত্তপ্ত ছিল পরিস্থিতি। যদি সেই রাগ পর্যটকের ওপর ঝাড়ে। ফেলুদাও তো নেই দার্জিলিংয়ে, কিছু হলে রহস্যভেদ করবে কে?
আরও পাঁচ মিনিট কাটল। এবার ভয় ভয় করতে লাগল আমারও। এদিকে ক্রমেই অন্ধকার হয়ে আসছে চরাচর। তবুও ভাগ্য ভালো, গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ওই আন্দোলনের কথা বলিনি বাকি দুজনকে। তাহলে অন্তত খালামণি যে ফিট যেতেন তাতে সন্দেহ নেই। চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম নেপালি লোকটিকে। শুরুতে চারপাশের পাহাড়ে কেবল নিজের ডাকের প্রতিধ্বনি শুনলাম। কিছুক্ষণ পর হঠাৎই সাড়া মিলল, পাশের এক পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে।
নেমে এসে কিছুই ঘটেনি—এমন একটা ভাব করে হিন্দিতে যা বলল তার অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিল। টয়লেট একটু দূরে হওয়াতেই বিপত্তিটা বাধে।
যাক ভালোয় ভালোয় সেদিন ফিরে আসি ম্যালের ধারে আমাদের হোটেলে। পরে বুঝতে পারি, গোমড়ামুখো হলেও নিতান্ত ভালো মানুষ আমাদের এই নেপালি ড্রাইভার। কারণ, তাঁকে নিয়েই পরের দিন কালিম্পং যাই। সে আমাদের থেকে তুলনামূলক কম ভাড়াই নিয়েছিল। শুধু তা–ই নয়, মনোমুগ্ধকর দার্জিলিং টু কালিম্পং পথের যেখানে চেয়েছি, সেখানেই থেমেছি। হয়তো পথের মাঝখানে একটা জঙ্গল চোখে পড়ল। দেখতে চাইলাম। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। কখনো আবার নিজেই কোনো জায়গায় গাড়ি রেখে বলেছে, সামনে ভিউ পয়েন্ট আছে। সেখান থেকে চারপাশের দৃশ্য দারুণ দেখা যাবে।
আজ লেখাটি তৈরি করতে গিয়ে আমার মনে পড়ল সেই গাড়িচালকের কথা। তার গোমড়া মুখটাই বড় দেখতে ইচ্ছা করছে! জানি না সে কেমন আছে, আর কোনো দিন দেখা হবে কি না! তাঁর নাম-ঠিকানা কিছুই যে জানা নেই।

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
১৮ এপ্রিল ২০২১
প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলছিল শেফালী বেগমের সংসার। হঠাৎ করেই একদিন উধাও তাঁর স্বামী আলম হোসেন। এরপরই পাল্টে যায় শেফালীর জীবন।
২৯ জানুয়ারি ২০২৫
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪
কথায় আছে না—‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি...
২৬ মে ২০২৪আশিকুর রিমেল, ঢাকা

রাতটা প্রায় নির্ঘুম কাটিয়েছেন রিকশাচালক আলমগীর হোসেন (৪২)। কয়েক বছর আগে বড় মেয়ের বিয়ের টাকা জোগাড় করতে রাত-দিন রিকশা চালিয়েছেন। তখন ঘুম আর জেগে থাকার ফারাক তেমন করেননি। কিন্তু গত রাতে তাঁর মনে মাতঙ্গী নেচেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ আতঙ্ক। কষ্টার্জিত অর্থে গড়া বাড়িটার থেকেও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় কাটছে তাঁর সময়।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর। সাগরের পার্শ্ববর্তী এই গ্রামে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা এসেছিলেন। দুপুরের মধ্যে সবাইকে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশের সঙ্গে অনুরোধও করে গেছেন। রোববার সকাল থেকে পাঁচবার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করছেন। জেনেছেন, সকাল থেকেই আকাশে মুখ কালো করে আছে মেঘ।
জীবিকার তাগিদে সাত বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান আলমগীর হোসেন। জানা গেল, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ ওই এলাকাসহ উপকূলে আঘাত, হেনেছিল তাঁর চোখের সামনেই। যে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, সেই মেয়ে তখন সংসারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। টিনের ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল। ভয়ানক রাত কাটিয়েছেন সপরিবারে। সম্পদ নয়, জীবনটাই ছিল অনিশ্চয়তার মধ্যে।
আলমগীর হোসেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত স্বরে বললেন, ‘কথায় আছে না—‘‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি।’
রিকশার প্যাডেল মারতে মারতে জানালেন—এমন পরিস্থিতিতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মনে কষ্ট হয়। গবাদি পশু-পাখিগুলো নিরাপদ জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা হয় প্রশাসন থেকেই। এই অভিজ্ঞতা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের প্রবল ঝড় থেকে। এখনো ভুলতে পারেননি সর্বশেষ ওই অঞ্চলে তাণ্ডব চালানো আইলার কথা। এই ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে খুলনা ও সাতক্ষীরার উপকূলবর্তী জনজীবনকে।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে ২টা গরু, ৬টা ভেড়া, ৩টা ছাগল আর কিছু হাঁস-মুরগি আছে। ওইগুলা আব্বা-মা দেখাশোনা করেন। বাড়িতে ঘর এখন আধপাকা, কিন্তু টিনের চাল। আব্বা-আম্মার বয়স হয়ে গেছে, ওদের নিয়েই বেশি চিন্তা হইচ্চে।’
জানালেন, গবাদিপশুর জন্য নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তাঁর রিকশা থেকে নেমে যাওয়ার আগে তিনি সৃষ্টিকর্তার ওপর তাঁদের রক্ষার দায়িত্বভার দিয়ে বললেন, ‘কাল রাতে বাড়ি যাইতে চাইছিলাম। বউ নিষেধ কইরল। বইলল, অবস্থা খারাপ দেখলে আশ্রয়কেন্দ্রে চইলে যাবে।’
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার আরও শক্তিশালী হয়ে আসছে খুলনা ও বরিশাল উপকূলের দিকে। এর ফলে মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মোংলা বন্দরের জেটিসহ পশুর চ্যানেলে নোঙর করা বিদেশি ছয়টি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধসহ ওই সব জাহাজকে নিরাপদ নোঙরে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের অপারেশনাল সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজার অংশেও সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। রোববার সকাল থেকে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বেড়েছে। জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফের উপকূলীয় কয়েকটি এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সকাল থেকে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সামনের অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং এসব জেলাসংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।

রাতটা প্রায় নির্ঘুম কাটিয়েছেন রিকশাচালক আলমগীর হোসেন (৪২)। কয়েক বছর আগে বড় মেয়ের বিয়ের টাকা জোগাড় করতে রাত-দিন রিকশা চালিয়েছেন। তখন ঘুম আর জেগে থাকার ফারাক তেমন করেননি। কিন্তু গত রাতে তাঁর মনে মাতঙ্গী নেচেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ আতঙ্ক। কষ্টার্জিত অর্থে গড়া বাড়িটার থেকেও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় কাটছে তাঁর সময়।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর। সাগরের পার্শ্ববর্তী এই গ্রামে সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তা এসেছিলেন। দুপুরের মধ্যে সবাইকে স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নির্দেশের সঙ্গে অনুরোধও করে গেছেন। রোববার সকাল থেকে পাঁচবার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখার চেষ্টা করছেন। জেনেছেন, সকাল থেকেই আকাশে মুখ কালো করে আছে মেঘ।
জীবিকার তাগিদে সাত বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান আলমগীর হোসেন। জানা গেল, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’ ওই এলাকাসহ উপকূলে আঘাত, হেনেছিল তাঁর চোখের সামনেই। যে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, সেই মেয়ে তখন সংসারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। টিনের ঘরের চাল উড়ে গিয়েছিল। ভয়ানক রাত কাটিয়েছেন সপরিবারে। সম্পদ নয়, জীবনটাই ছিল অনিশ্চয়তার মধ্যে।
আলমগীর হোসেন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত স্বরে বললেন, ‘কথায় আছে না—‘‘ঘরপোড়া গরু, সিঁদুরেমেঘ দেখলেই ডরায়’! আমার হইছে এই অবস্থা। বাড়িতে এখন বাড়িআলী, বয়স্ক বাপ-মা আর ছোট মেয়ে। সকাল থেকে চার-পাঁচবার কতা বলিচি। সংসার গোচাচ্ছে। আইজকা সন্ধ্যার দিকে ঝড় আসপি শুনতিছি। চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমাতে পারিনি।’
রিকশার প্যাডেল মারতে মারতে জানালেন—এমন পরিস্থিতিতে ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় মনে কষ্ট হয়। গবাদি পশু-পাখিগুলো নিরাপদ জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা হয় প্রশাসন থেকেই। এই অভিজ্ঞতা হয়েছে বিভিন্ন সময়ের প্রবল ঝড় থেকে। এখনো ভুলতে পারেননি সর্বশেষ ওই অঞ্চলে তাণ্ডব চালানো আইলার কথা। এই ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে খুলনা ও সাতক্ষীরার উপকূলবর্তী জনজীবনকে।
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাড়িতে ২টা গরু, ৬টা ভেড়া, ৩টা ছাগল আর কিছু হাঁস-মুরগি আছে। ওইগুলা আব্বা-মা দেখাশোনা করেন। বাড়িতে ঘর এখন আধপাকা, কিন্তু টিনের চাল। আব্বা-আম্মার বয়স হয়ে গেছে, ওদের নিয়েই বেশি চিন্তা হইচ্চে।’
জানালেন, গবাদিপশুর জন্য নিরাপদ স্থানের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তাঁর রিকশা থেকে নেমে যাওয়ার আগে তিনি সৃষ্টিকর্তার ওপর তাঁদের রক্ষার দায়িত্বভার দিয়ে বললেন, ‘কাল রাতে বাড়ি যাইতে চাইছিলাম। বউ নিষেধ কইরল। বইলল, অবস্থা খারাপ দেখলে আশ্রয়কেন্দ্রে চইলে যাবে।’
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমাল রোববার আরও শক্তিশালী হয়ে আসছে খুলনা ও বরিশাল উপকূলের দিকে। এর ফলে মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহা বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মোংলা বন্দরের জেটিসহ পশুর চ্যানেলে নোঙর করা বিদেশি ছয়টি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধসহ ওই সব জাহাজকে নিরাপদ নোঙরে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের অপারেশনাল সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে কক্সবাজার অংশেও সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। রোববার সকাল থেকে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট বেড়েছে। জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফের উপকূলীয় কয়েকটি এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সকাল থেকে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সামনের অংশ ও বায়ুচাপের পার্থক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং এসব জেলাসংলগ্ন দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় একজনকে পতাকা ওড়াতে দেখেছেন অনেকেই। নাম তাঁর মো. সালামত হোসেন। মাঝেমধ্যে তাঁর সঙ্গে দু’চার কথা হলেও এবার জমেছে দীর্ঘ আলাপ। গল্প শেষে বারবার মনে হয়েছে—‘সালামত আসলে কে?’
১৮ এপ্রিল ২০২১
প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ভালোই চলছিল শেফালী বেগমের সংসার। হঠাৎ করেই একদিন উধাও তাঁর স্বামী আলম হোসেন। এরপরই পাল্টে যায় শেফালীর জীবন।
২৯ জানুয়ারি ২০২৫
ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শ্রমজীবীদের হাটে জড়ো হন শত শত শ্রমজীবী মানুষ। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও নারী শ্রমিকেরা এই হাটে প্রতিদিন ভিড় করেন একটু কাজ পাওয়ার আশায়। তবে দিন যত যাচ্ছে, তাঁদের জীবনের লড়াই ততই কঠিন হয়ে উঠছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবনকে দুর্বিষ
২৬ অক্টোবর ২০২৪
ফেলুদার দার্জিলিং জমজমাট বইয়ে প্রথম পরিচয় দার্জিলিংয়ের সঙ্গে। তারপর অঞ্জন দত্তের গানসহ আরও নানাভাবে হিল স্টেশনটির প্রতি এক ভালোবাসা তৈরি হয়। তাই প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, শিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলোকে বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নেই। অবশ্য আজকের গল্প পুরো দার্জিলিং ভ্রমণের নয়, বরং তখন পরিচয়
২৩ অক্টোবর ২০২৪