Ajker Patrika

কেউ ৫০০ টাকাও দেয়, আবার কেউ চার আনাও দেয় না

তাছনিম চাকলাদার
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, ২২: ৩৪
কেউ ৫০০ টাকাও দেয়, আবার কেউ চার আনাও দেয় না

আজ সকালে কর্মব্যস্ত শহর থেকে যখন কিছুদিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছিলাম, সকাল থেকেই মনটা খুব ভালো ছিল। বেশ তাড়াহুড়ো করে কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে যখন পৌঁছালাম, তখন ট্রেনটা স্টেশনেই দাঁড়িয়েছিল। ট্রেনে উঠে বসলাম জানালার পাশের সিটটায়। বরাবরই আমার জানালার পাশের সিটে বসতে ভালো লাগে। ট্রেনটা জোরে হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল। গন্তব্য—জামালপুর, সরিষাবাড়ী।

ট্রেনটা এক–দুটি স্টেশন পেরিয়ে গন্তব্যের দিক এগোতে থাকে। ট্রেন জামালপুর স্টেশনে আসার কিছু সময় পর দু–তিন সিট পর থেকে একটা বাজনার আওয়াজ পেলাম। বাজনাটা পরিচিত। শুনেই বোঝা যাচ্ছে কোথাও বেজে চলেছে মন্দিরা। সঙ্গে কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায় ভারি সুন্দর গানও শোনা যাচ্ছে। সিট থেকে উঠে একটু এগিয়ে গেলাম কী হচ্ছে দেখার জন্য। দেখি, ষাটোর্ধ্ব এক লোক গান গাইছেন গলা ছেড়ে। দেরি না করে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে গানটা রেকর্ড করে ফেললাম। এই বেশ ভালো হয়েছে। আগে হলে হয়তো এই সুর মাথায় বা মনে গুঁজে বাড়ি ফিরতে হতো। স্মৃতির ওপরই নির্ভর করত ফের সেই সুর শোনার বিষয়টি। এখন প্রযুক্তি কত কিছু সহজ করে দিয়েছে।

বেশ দরদ দিয়ে গান গাইছেন। খালি গা। কী মধুর তাঁর গানের কণ্ঠ। বয়সের কারণে মাঝেমধ্যে সুর ছুটে যাচ্ছে বলে মনে হলো। কিন্তু দরদের অভাব নেই। এ এক অন্য রকম বিষয়।

গান শুনতে শুনতেই চোখ গেল তাঁর পিঠ ও পেটের দিকটায়। খানিকটা জায়গাজুড়ে পোড়া দাগ। হৃদয় পুড়িয়েই সুর হয়, এ তো জানা। তাঁর সুরেও রয়েছে পোড়খাওয়া জীবনের আঁচ। কিন্তু এই পোড়া দাগ তো তেমন পোড়ার কথা বলছে না। বলছে, সত্যিই একদিন তিনি আগুনের ছোঁয়াচ নিয়েছিলেন; হয়তো অনিচ্ছায়। জানতে মন উসখুস করতে শুরু করল। কথা শুরুও হলো একসময়। নাম বললেন, ‘পোড়ামানিক’।

বললাম, ‘পোড়ামানিক কি আপনার পুরো নাম?’

‘না, আমার নাম মানিক। শরীর পুড়ে গেছে, তাই সবাই পোড়ামানিক বলে ডাকে।’

‘শরীর কীভাবে পুড়ল?’

‘ছোটবেলায় পুড়ছে, পাঁচ–সাত বছর বয়স যখন। বেশি কিছু মনে নাই আমার। ছোট ছিলাম তহন।’

‘আপনার গানের গলা তো ভারি সুন্দর। কত দিন ধরে গান করেন?’

‘গান করি বিগত নয়–দশ বছর ধরে। তারও বেশি হতে পারে।’

‘আপনি কি শুধু ট্রেনে গান শোনান? নাকি অন্য কোথাও গান শোনান?’

‘না, আমি শুধু ট্রেনেই গান শোনাই।’

‘আপনি হাতে যেটা বাজাচ্ছেন, সেটার নাম কী?’

‘এটার নাম ফুলকাঁসার ঝুড়ি।’ হাতের মন্দিরাটি দেখিয়ে বললেন।

পোড়ামানিকের চোখে এই মন্দিরাই ফুলকাঁসার ঝুড়ি। কী সুন্দর নাম!

‘আপনি আর কী করেন, মানে সংসার চলে কীভাবে?’

‘নাহ, আর কিছু করি না, এই ট্রেনে গান গেয়ে টাকা পাই, এটা দিয়েই সংসার চলে।’

‘ট্রেনে গান গেয়ে কেমন টাকা পান?’

‘পাই ভালোই। কেউ দেয় পাঁচ টাকা, কেউ দেয় ৫০ টাকা, আবার কেউ কেউ খুশি হয়ে ৫০০ টাকাও দেয়। আবার অনেকে চার আনা পয়সাও দেয় না।’

‘গান গাওয়ার আগে কী করতেন?’

‘এর আগে কিছুই করতাম না। মাঝে মাঝে লোকজন এক জায়গায় পাইলে তাগোরে মনের আনন্দে গান শুনাইতাম। এহন প্যাটের টানে ট্রেনে ট্রেনে গান গেয়ে বেড়াই।’

‘শুধু কি পেটের টানে গান করেন? নাকি নিজের মনের ইচ্ছাও আছে?’

‘না, পেটের টান তো আছেই। কিন্তু গান গাইতে আমার ভালোও লাগে, আর দুই কাজ একসঙ্গে হয়ে যায়। মনেরও শান্তি, পেটেরও শান্তি।’

আলাপ আরও এগোনো যেত হয়তো। কিন্তু তাতে ষাটোর্ধ্ব পোড়ামানিকের মন ও পেটের শান্তি বিঘ্নিত হতে পারত। আর নাগরিক জীবনে সময়ের অভাব বলে তো একটা কথা আছেই।

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত