Ajker Patrika

বিদেশি নাগরিক কীভাবে দেশের রাষ্ট্রপতি হন, প্রশ্ন বিএনপি নেতা রিপনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৪: ৩১
বিদেশি নাগরিক কীভাবে দেশের রাষ্ট্রপতি হন, প্রশ্ন বিএনপি নেতা রিপনের

বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বার্বাডোজের নাগরিক। অন্য দেশের নাগরিক কীভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন। তিনি বলেন, ‘একমাত্র বাংলাদেশেই এমন অদ্ভুত বিষয় দেখা যায়। অন্য দেশের নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া যায়। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।’ 

আজ বুধবার ইতালি বিএনপির নেতা আমিনুর রহমান সালামের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ‘সংবর্ধনা ও সাংবাদিকতার বিকাশে জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় বক্তারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করেন। 

আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন যেকোনো সময় পদত্যাগ করবেন। তাঁর পদত্যাগ করা উচিত। তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা নেই। তিনি আপাদমস্তক একটা দুর্নীতিবাজ লোক।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কেউ রাষ্ট্রপতি হতে হলে তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হয়। চুপ্পু সিঙ্গাপুরের নাগরিক। এসব জায়গায় নাগরিক হতে হলে অনেক টাকা লাগে। এসব টাকা কীভাবে পেলেন? মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যম ছাড়া এসব টাকা নেওয়া সম্ভব না।’ 

রিপন বলেন, ‘আমরা শুনেছি তিনি বার্বাডোজের নাগরিক হয়েছেন। এটা মনে হয় শুধু বাংলাদেশেই হয়। অন্য দেশের নাগরিক এ দেশের রাষ্ট্রপতি হয়। চুপ্পু সাহেব দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাকে কেন বানানো হয়েছিল, কারণ পদ্মা সেতুতে একটা বড় দুর্নীতি হয়েছে। এটা ওয়ার্ল্ড ব্যাংক মনে করে, আমরাও মনে করি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যখন তদন্তে আসে, এটা জেনেই শেখ হাসিনা চুপ্পুকে ওখানে বসিয়ে দিলেন। এরপর সেই মেয়াদ শেষ হলে ওনাকে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান করলেন। এরপর সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল। উনি নাকি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। এটা কিন্তু কেউ জানে না। ওবায়দুল কাদেরও জানতেন না।’ 

তিনি বলেন, ‘এই যে না জানা, এটা একটা সিন্ডিকেট। বিচার বিভাগ, পুলিশ—সব জায়গাতেই তারা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল, যাতে তারা ভিন্নমত দমন করতে পারে।’ 

রিপন বলেন, ‘একটা ডামি সরকার পদত্যাগ করবে কি করবে না, এটা নিয়ে এত আলোচনার কী আছে! উনি (শেখ হাসিনা) তো মানুষের ভোটে নির্বাচিত হননি। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ওনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন বলেই উনি পদত্যাগ করেছেন। উনি তো মানুষের ভোটে নির্বাচিত ছিলেন না। তাই উনি পদত্যাগ করলেন কি করলেন না, সেটা নিয়ে আলোচনার কিছু নাই।’ 

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে রেখে ঘোষণা দিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। তাঁকে পদত্যাগপত্র দেওয়া হয়ছিল। সেখানে হয়তো এটাই লেখা ছিল যে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। তাই তিনি দিয়েছেন। এখন আড়াই মাস পর এসে বলেন পদত্যাগপত্র পাননি তিনি। এর মধ্যে কোনো উদ্দেশ্য আছে।’ 

অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আমার সামনে যাঁরা আছেন, তখন অনেকেই ছোট ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত কোনো সংবাদপত্র কিছু লিখতে পারত না। একটা-দুইটা সংবাদপত্র কোনো রকম চেপেচুপে নিউজ করত। যদি ’৭৫-এর পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসতে না পারতেন বা কর্নেল তাহেররা ক্ষমতা নিতেন, তাহলে কী হতো এই জাতির জানা নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের কাছে আমরা দুইভাবে ঋণী। একটা হলো—২৭ মার্চে তাঁর স্বাধীনতার ঘোষণা। আরেকটি হলো—তিনি ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় আসতে পেরেছেন। তিনি গণতন্ত্র এনেছেন। এখন সাংবাদিক ভাইয়েরা লিখতে পারবেন। জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা এখন লেখা উচিত। এই জাতীয় প্রেসক্লাবও তাঁর অবদান।’ 

আমিনুর রহমান সালাম বলেন, ‘দেশ স্বাধীন! বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছে। একটা বর্বর জাতি ১৮ বছর পর দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। দেশের মানুষ এখন নিশ্বাস নিতে পারছে।’ 

তিনি বলেন, ‘খুব শিগগির আমরা আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করব। আমাদের মনে রাখতে হবে, এই ফ্যাসিস্ট, বর্বর দলটি যেন আর ফিরে আসতে না পারে। সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’ 

বিএনপি নেত্রী ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘সংবাদপত্রের কাজ হচ্ছে সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করা। তবে গত ১৮ বছর কেউ সেটা করতে পারেনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু মাত্র চারটি পত্রিকা রেখেছিল। বাকি সব বন্ধ করে রেখেছিল। যে কথা বলত, তাকে গুম করা হতো, মেরে ফেলা হতো। সেই একই চিত্র গত ১৮ বছর ধরে চলেছে। বাপ-বেটির একই চরিত্র।’ 

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময় সাংবাদিকেরা স্বাধীন ছিল। তারা ঠিকভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও পাঠাতে পারত। শেখ হাসিনা পালানোর পর অনেক মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আপনারা সঠিক সংবাদ প্রকাশ করবেন। কিছু দোসর এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এদেরকে আন্দোলন করে তাড়াতে হবে। না হলে মানুষ শান্তি পাবে না।’ 

প্রজন্ম দলের নেত্রী পারভীন কাউসার মুন্নী বলেন, ‘সাংবাদিকতা কতটুকু কুক্ষিগত করা হয়েছে তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমেই বোঝা গেছে। সেটা সংশোধন করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১১
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এনসিপি। ছবি: স্ক্রিনশট
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এনসিপি। ছবি: স্ক্রিনশট

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১২৫টি আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে জুলাই অভ্যুত্থানের পাটাতনে জন্ম নেওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করে জানান, এটি প্রথম ধাপ। পরবর্তী সময়ে আরও আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আলোচিত মুখ ও এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসনে, সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসনে, ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৯ আসনে, ডা. তাজনূভা জাবীন ঢাকা-১৭ আসনে, ঢাকা-১৮ আসনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং নরসিংদী-২ আসনে সারোয়ার তুষার।

এ ছাড়া সারজিস আলম মনোনয়ন পেয়েছেন পঞ্চগড়-১ আসনে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ইকবাল হোসেন। হাসনাত আবদুল্লাহ মনোনয়ন পেয়েছেন কুমিল্লা-৪ আসনে। এর বাইরে নোয়াখালী-৬ আসনে আব্দুল হান্নান মাসউদ এবং চট্রগ্রাম-৮ আসনে জোবাইরুল হাসান আরিফ এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড় নিয়ে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ শরিকেরা

  • বোঝাপড়া না হলে বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার কথা বলছেন কেউ কেউ।
  • বাস্তবতার নিরিখে শরিকদের মূল্যায়ন করার কথা বলছে বিএনপি।
  • ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হতে পারে আজ।
রেজা করিম, ঢাকা 
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ১৫
সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড় নিয়ে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ শরিকেরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন ছাড় নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মেলায় শরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। এই অবস্থায় বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার চিন্তাও করছেন শরিকদের কেউ কেউ। এর আগে অবশ্য বিএনপি কী করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় তাঁরা।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কার্যকর পদক্ষেপ না এলে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়বে।’ ফলে নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিতও পাওয়া যায় এই নেতার কথায়। তিনি বলেন, ‘বোঝাপড়া হলে (বিএনপির সঙ্গে) এক রকমের, আর বোঝাপড়া না হলে আরেক রকমের।’ এ ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দলগুলোকে নিয়ে অন্য একটা জোটও হতে পারে।

অবশ্য আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের মনোভাব প্রসঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে জিতে আসতে পারে, এমন প্রার্থীদের বেছে নেওয়া হচ্ছে। এ বাস্তবতা বুঝতে হবে।

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, এবারের ভোট অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। শেখ হাসিনার আমলের মতো যাঁদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে, তাঁরাই জিতে যাবেন—এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। অনেকে জাতীয় নেতা হলেও বেশির ভাগেরই ভোট করে জিতে আসার রেকর্ড নেই। এরপরও শরিকদের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা চলছে। যাঁরা বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, তাঁদের জন্য আসন ছাড় দেওয়া হবে।

আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে মনোমালিন্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। গতকাল তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করছি। আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

সব ঠিক থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে দুই দফায় ২৭২টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সম্ভাব্য বলা হলেও ঘোষিত এসব আসনে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা খুব কম বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তফসিল ঘোষণার পর অবশিষ্ট ২৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার কথা বলছে বিএনপি।

ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির শরিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ৩৬ আসনের মধ্যে মিত্র তিন দলের তিন নেতাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর আগে ওই আসনে তাঁকে কাজ করার জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছিল বিএনপি থেকে।

নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবারও এই আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেছিলেন এনপিপির নেতা-কর্মীরা। তবে এই আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকেই বেছে নিয়েছে দলটি।

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিএনপি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এটা গণতন্ত্রের জন্য একধরনের অশনিসংকেত। আমরা আশা করছি, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং শরিকদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে।’

একইভাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। তাঁর বাড়িও এই জেলায়। তবে এবার তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনে শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, ফ্যাসিবাদের কঠিন সময়ে কোনো কিছু চিন্তা না করে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা রাজপথে ঝুঁকি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে থেকে সরকার পতনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। বিএনপিও সে সময়ে ঘোষণা দিয়েছিল, তারা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন ও সরকার গঠন করবে। ৫ আগস্টের পরও বিএনপির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা-সমঝোতা ছাড়াই বিএনপি এককভাবে ২৭২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে বর্তমানে বিএনপি নির্বাচনী জোট নিয়ে তেমন আগ্রহী নয়, হয়তো মিত্রদের কিছু আসনে তারা প্রার্থী দেবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই শেষ পর্যন্ত বিএনপি কী ভূমিকা নেয়। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।’

বিএনপির সূত্র বলছে, বিএনপির কাছ থেকে অন্তত ২৫-৩০টি আসন ছাড়ের প্রত্যাশা করছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। এ প্রত্যাশার সঙ্গে বিএনপির হিসাব-নিকাশের মিল নেই। শরিকদের অবদানের কথা অস্বীকার করছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শরিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন মোকাবিলা ও বিজয়ী হলে সরকার গঠন করতে চান তাঁরা। কিন্তু নির্বাচন যেহেতু হারজিতের খেলা, সে খেলায় জিততে পারে এমন প্রার্থী ঠিক করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে শরিক দলগুলো থেকে বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী খুবই কম। এ বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্বের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্য দল ও জোটের সঙ্গেও বৈঠক করবে বিএনপি।

গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনো ২৮টি আসন তো বাকি আছে। জোটের আলোচনা তো এখনো শেষ হয় নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ১২
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) ফাতেমী রুমির কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে বক্তব্য শেষে তারেক রহমান দুঃখ প্রকাশ করেন।

এ সময় ১০১ জন সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরিচালনা করেন মেজর জেনারেল (অবঃ) ফজলে এলাহী আকবর।

তারেক রহমান তার বক্তব্যে বলেন, 'আমি স্ক্রিনে একজনকে দেখতে চাচ্ছি, এটা একটু পার্সোনাল ব্যাপার তারপরেও আমি এখানে উল্লেখ করতে চাচ্ছি। আমাদের সামনে এখানে আম্মার সময় উনি ডিজিএসএসএফ ছিলেন। রুমি সাহেব। রুমি সাহেব উপস্থিত আছেন? রুমি সাহেব আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে একটা মিছিল হয়েছিল একবার। সেই পুরান ঢাকা থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত এবং পুরো মিছিলটা আমি হেঁটে এসেছিলাম, আম্মাও (বেগম খালেদা জিয়া) ছিলেন। সেই মিছিলে অনেক ভিড় হট্টগোল ছিল। আপনি আমাকে একটা কিছু বলেছিলেন। আমি সেদিন আপনার সাথে একটু খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। সবকিছু মিলে আই অ্যাম ভেরি সরি ফর দ্যাট। আমি অনেকদিন চেষ্টা করেছি, আপনাকে রিচ করার জন্যে। কিন্তু সুযোগ পাইনি। আজকে সুযোগ পেয়েছি ওই ঘটনার জন্য দুঃখিত। সকলে ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আপনাদের সকলের কাছে আমি সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।'

তারেক রহমান তার মা বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে বলেন, আম্মা অসুস্থ হওয়ার আগে সর্বশেষ যেই (সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠানটিতে উনি গিয়েছিলেন ২১ তারিখে। সেখান থেকে আসার পরে উনি অসুস্থ হয়েছেন। উনি যে অনুষ্ঠানটিতে গিয়েছিলেন যাবার আগেও কিন্তু উনি একটু অসুস্থ ছিলেন। ওনাকে ডাক্তাররা কয়েকবার বলেছিলেন যে ম্যাডাম মনে হয় না গেলে বোধহয় ভালো হয়। কিন্তু ওই অসুস্থ শরীরেও উনি উনার মনের সর্বোচ্চ শক্তি, অসুস্থ শরীরের সর্বোচ্চ শক্তিকে এক করে ওই অনুষ্ঠানটিতে উনি গিয়েছিলেন। উনি যখন অনুষ্ঠানটি থেকে ফিরে আসেন তখন আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী বলছিল যে, আম্মা অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর যতক্ষণ ওখানে ছিলেন এবং উনি ফিরে আসার পরে মানসিকভাবে উনি এতটা বুস্ট আপ ছিলেন, যে উনার মনেই হচ্ছিল না যে উনি অসুস্থ একজন মানুষ। এই কথাটা দিয়ে আমার মনে হয় আর বুঝতে কারো বাকি থাকে না যে, আপনাদের সাথে সার্ভিসে অথবা যে অবস্থায় থাকুন, আপনাদের সাথে জিয়া পরিবারের সম্পর্কটা কি, আমি পুরো বিষয়টা এই ছোট্ট ঘটনা দিয়ে আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করলাম। আমি বিশ্বাস করি এই ঘটনার মাধ্যমে আপনারা বুঝতে পেরেছেন, যারা এই ঘরেই আছেন, অনলাইনে যারা দেখছেন, সবাই বোধহয় বিষয়টা বুঝতে পারবেন। উনার মনটা কোন জায়গায় আছে। উনি কিভাবে দেখেন পুরা ডিফেন্সকে। বাংলাদেশের আর্মি হোক, নেভি হোক, এয়ারফোর্স হোক, পুরো ডিফেন্সটাকে উনি কিভাবে দেখেন তা এই ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

তিনি বলেন, দয়া করে আপনারা ভুল বুঝবেন না। বিগত স্বৈরাচারের সময় যে রিক্রুটমেন্টগুলো হয়েছিল, সেখানে বিএনপি, শহীদ জিয়া, খালেদা জিয়া সম্পর্কে একটা নেতিবাচক পারসেপশন বা ন্যারেটিভ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। মেজর রেজা বা মেজর মান্নান যেটা বলেছেন, সামান্য কিছু ভ্রান্ত ধারণা স্বৈরাচার তৈরি করেছিল। একটা দূরত্ব তৈরি করার জন্য। আমাদের ধারণা এটি সম্পূর্ণভাবে তাদের তৈরি ছিল। আমার মনে হয় এই বিষয়টি বোধহয় আজকে ক্লিয়ার হয়ে গেছে। আমি আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক একটি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি, আমার মনে হয় এটার মাধ্যমে পুরা বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, লেঃ কর্ণেল (অব.) শামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) রেজা করিম, মেজর (অব.) সামসুজ্জোহা, মেজর (অব.) জামাল হায়দার, মেজর (অব.) আজিজুল হক, কর্ণেল (অব.) হারুনুর রশিদ, এয়ার কমোডর (অব.) শফিক আহমেদ, রিয়ার এডমিরাল (অব.) মোস্তাফিজ, লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব.) জয়নাল আবেদীন, কর্ণেল (অব.) জগলুল, লেফটেনেন্ট (অব.) ইমরান কাজল, মেজর (অব.) গোলাম মান্নান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) রেজাউর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) জামিল ডি আহসান বীর প্রতীক, কর্ণেল (অব.) হান্নান মৃধা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা বুধবার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রথম ধাপের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ঘোষণা করা হতে পারে। সকাল ১০টায় রাজধানীর বাংলামোটরে দলের অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই তালিকা ঘোষণা করার কথা। মঙ্গলবার রাতে এক বার্তায় দলটির মিডিয়া সেল এ তথ্য জানিয়েছে।

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে এক শ আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হতে পারে। এরপর ধাপে ধাপে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের প্রায় ১০০ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত। ১০ তারিখের মধ্যে আমরা এই আসনগুলোর প্রার্থিতা ঘোষণা করব।’

এনসিপির নেতারা জানান, ধাপে ধাপে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে এনসিপি। প্রথম ধাপে ১০০ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আসন বণ্টন করে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। চলতি মাসেই সব আসনে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করতে চায় এনসিপি।

গত ৬ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে এনসিপি। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে দলটি। ১ হাজার ৪৮৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতারা।

এনসিপির শীর্ষ নেতা আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা-১৮ থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১, আরিফুল ইসলাম আদিব ঢাকা-১৪, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ঢাকা-৯, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন ছাত্র উপদেষ্টার একজন পদত্যাগ করে এনসিপিতে যোগ দিতে পারেন। তিনি ঢাকা-১২ অথবা ঢাকা-১০ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত