Ajker Patrika

দ্য ডিপ্লোম্যাটে সাক্ষাৎকার

ভারত ও তরুণ প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রসঙ্গে যা বললেন মির্জা ফখরুল

চলতি বছরের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান ‘বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের নতুন সুযোগ দিয়েছে।’ এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ওয়াশিংটনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮: ০১
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফাইল ছবি

সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল বিএনপির অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের বর্তমান আলোচিত বিষয়গুলোর ওপর নিজের মন্তব্য তুলে ধরেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নয়া দিল্লিতে অবস্থিত সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে গবেষক শাহাদাত হোসেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে প্রায়ই ‘ফ্যাসিবাদী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসানের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং একক বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে।

বিএনপির শীর্ষ নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০১৬ সাল থেকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে, তিনি ২০১১ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ছিলেন। ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপির সর্বশেষ সরকারে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। ঢাকার বাইরে থেকে রাজনৈতিক জীবন শুরু করলেও ধীরে ধীরে তিনি দলের শীর্ষ পর্যায়ে ওঠে আসেন। ২০১১ সাল থেকে মির্জা ফখরুল বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যা দলের সবচেয়ে কঠিন সময় হিসেবে বিবেচিত। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করায় ফখরুলই বাংলাদেশে বিএনপির প্রধান নেতা হিসেবে দল পরিচালনা করছেন।

প্রশ্ন: আপনি কি জুলাই বিপ্লবকে একটি ‘বিপ্লব’ হিসেবে দেখেন, নাকি গণঅভ্যুত্থান হিসেবে বিবেচনা করেন?

মির্জা ফখরুল: নিঃসন্দেহে এটি একটি গণঅভ্যুত্থান। প্রায় ১৫-১৬ বছর ধরে বিএনপির নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদী সরকারের দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য লড়াই করে আসছিল। সর্বশেষ আন্দোলন শুরু হয়েছিল ছাত্রদের কোটা সংস্কারের দাবিতে। বিপুলসংখ্যক ছাত্র রাস্তায় নেমে এসেছিল। এই সময়ে অনেক ছাত্র দুঃখজনকভাবে প্রাণ হারিয়েছে।

শুরুর দিকেই এই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের রূপ নেয়নি। তবে জুলাই বিপ্লবের অন্যতম প্রথম শহীদ আবু সাঈদের মর্মান্তিক মৃত্যু আন্দোলনে মোড় এনে দেয়। তাঁর মৃত্যুতে পুরো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একত্র হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার উৎখাতের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় নামে, যা শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের জন্ম দেয়।

আমরা এটিকে একটি নির্মম ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন এবং বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরের নতুন সুযোগ হিসেবে দেখি। ছাত্রদের দাবিগুলো মূলত দীর্ঘদিনের প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য দূর করার ওপর ভিত্তি করে ছিল। এটি মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য ও সংগঠিত রাজনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজন। তাই আমরা জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব দিয়েছি এবং তা নিশ্চিত করতে কাজ করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা সংস্কারের কাজ শুরু করেছে, যা প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের প্রথম ধাপ।

প্রশ্ন: আপনারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন। তবে একজন উপদেষ্টা সম্প্রতি দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্ব জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু বিএনপি তা মানেনি। আপনার দল সেই প্রস্তাব সমর্থন করেনি কেন?

মির্জা ফখরুল: ছাত্র নেতৃত্বের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার গঠনের কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে আমি জানি না। তবে ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের পর, প্রতিনিধিরা আমাদের কাছে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে মতামত চেয়েছিলেন। তারা কিছু নাম প্রস্তাব করেছিল, আর আমরা সেই অনুযায়ী মতামত দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন: দেশে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো সংবিধান সংস্কার কমিশন। এই প্রক্রিয়াগুলোতে আপনার দলের প্রতিনিধিত্ব ও সম্পৃক্ততা কীভাবে রয়েছে?

মির্জা ফখরুল: বিএনপির কোনো প্রতিনিধিকে সংস্কার কমিটিগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এসব কমিটি কোনো রাজনৈতিক দলীয় প্রতিনিধিত্ব ছাড়াই গঠন করা হয়েছে, যা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য স্বাভাবিক ও সংগতিপূর্ণ। তবে তারা আমাদের মতামত চেয়েছে এবং আমরা এ কমিশনগুলোতে আমাদের মতামত পাঠাব।

বিএনপি নির্বাচন দাবি করছে এবং বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসেবে বিবেচিত। তবে সমালোচকেরা মনে করছেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপি আরেকটি ‘আওয়ামী লীগে’ পরিণত হতে পারে। বিশেষ করে, ৫ আগস্টের পরের ঘটনাগুলোর ভিত্তিতে বলা হচ্ছে যে, তৃণমূলের অনেক বিএনপি নেতা-কর্মী দখল ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এগুলো বিএনপির বিরুদ্ধে বিরোধী মিডিয়া ও রাজনৈতিক দলের ছড়ানো নেতিবাচক প্রচারণা ছাড়া কিছুই নয়। গণআন্দোলনের পর এমন ঘটনা বিরল নয়। দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার কথা আমরা অস্বীকার করছি না।

তবে বিএনপি বিষয়গুলো সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত পাওয়া যাওয়ায় এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৭০০ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেছি। আমরা দলে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি বজায় রাখতে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জন আস্থা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ সব সময় দাবি করে, অন্য দলগুলো শাসনামলে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নিরাপদ থাকে না। ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সবগুলোই কি রাজনৈতিক হামলা বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে? এটা কি আওয়ামী লীগের দাবিকেই আরও জোরালো করে না?

মির্জা ফখরুল: কিছু ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। আওয়ামী লীগের বহু নেতা- কর্মী, যারা অন্যায় করেছে, নির্যাতন চালিয়েছে, লুটপাট করেছে—তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। এ হামলাগুলো বিএনপি বা ছাত্রদের দ্বারা নয়, বরং ১৮ বছরের অপমান, বঞ্চনা ও ক্ষোভ থেকে পরিচালিত হয়েছে।

এই ঘটনাগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। কেউ কেউ প্রচার করছে যে, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বাড়ছে,’ যা দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। এটি পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি প্রচেষ্টা। এই প্রোপাগান্ডা আওয়ামী লীগেরই সাজানো, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটি তুলে ধরা যায় যে, দেশে সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য হলো, ভারতসহ মিত্রদের সমর্থন নিশ্চিত করা এবং নিজেদের এ সমস্যা সমাধানে একমাত্র সক্ষম দল হিসেবে উপস্থাপন করা।

পরিহাসের বিষয় হলো, আওয়ামী লীগের শাসনামলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

প্রশ্ন: আপনারা ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন এবং জনমতও মনে হচ্ছে আপনাদের পক্ষে। বিএনপির পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে? শেষবার যখন আপনারা ক্ষমতায় ছিলেন, বাংলাদেশ ‘লুক ইস্ট’ নীতির পথে এগিয়েছিল। এবার কি কোনো চমক থাকবে?

মির্জা ফখরুল: আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সহজ। আমরা বন্ধু চাই, প্রভু নয়। সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চাই, কিন্তু কারও অধীনস্থ হতে চাই না। বর্তমান আন্তঃসংযুক্ত পৃথিবীতে যোগাযোগ, ব্যবসা এবং বন্ধুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে আমরা আত্মনির্ভরশীলতাকে অগ্রাধিকার দেব।

প্রশ্ন: ভারত বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেশী দেশ। আপনার দলের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সব সময়ই ওঠানামার মধ্য দিয়ে গেছে। গত এক দশকের চেষ্টাতেও এই সম্পর্কে নতুন কোনো দিগন্ত উন্মোচন সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে বিএনপি-ভারত সম্পর্ক কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা সব সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। এটি আমাদের ঘোষিত নীতির অন্যতম ভিত্তি। জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই, আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম, ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক ধরে রাখতে কাজ করেছি। তবে আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপস করা যাবে না।

পানিবণ্টনের মতো বিষয়গুলো সমাধান করতে হবে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। সংযোগে সমতার নীতি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কাছ থেকে নেওয়া সুবিধাগুলোর সমান প্রতিদান দিতে হবে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা আশা করি, এ ধরনের হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে। বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণই নেবে।

প্রশ্ন: ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং দেশের পরিস্থিতি নিয়ে প্রচুর ভুল তথ্য ও মিথ্যা বয়ান (ন্যারেটিভ) ছড়ানো হচ্ছে। এটি নতুন কিছু নয়—আপনার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও ভারতীয় গণমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বলয়ের বাইরে থাকা দলগুলোর প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণত নেতিবাচক। বাংলাদেশ কীভাবে এই সমস্যাটি মোকাবিলা করতে পারে?

মির্জা ফখরুল: মিথ্যা প্রচারণা মোকাবিলার একমাত্র উপায় হলো, জনগণের শক্তিতে গড়া একটি শক্তিশালী সরকার প্রতিষ্ঠা করা। প্রথমেই, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে মনে রাখতে হবে যে, আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে সক্ষম। পাশাপাশি, বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী পাল্টা বয়ান (কাউন্টার ন্যারেটিভ) তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য ও ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে বিভ্রান্তি দূর করতে হবে।

প্রশ্ন: তরুণেরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ধারণা নিয়ে আলোচনা করছে। আপনার দল এতে খুব একটা উৎসাহী বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মির্জা ফখরুল: নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে তারা কী বোঝাচ্ছে? তাদের এই ধারণা স্পষ্ট করা উচিত। আমি জানতে চাই, তাদের নতুন রাজনৈতিক মীমাংসা আসলে কী? আমি এ বিষয়ে কোথাও কিছু লেখা নথিভুক্ত পাইনি। তাদের প্রস্তাব কী, সেটা স্পষ্ট নয়। আমাদের যে ধরনের রাজনীতি আমরা কল্পনা করি, তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত। তাদেরও যদি এমন কোনো স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে সেটি প্রস্তাব করা উচিত।

প্রশ্ন: শুধু আপনার দল নয়, আরও অনেক দলই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সাধারণ মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা জীবন উৎসর্গ করেছে। কেন মানুষ আগামী নির্বাচনে আপনার দলকে ভোট দেবে—এ বিষয়ে আপনি কি মনে করেন?

মির্জা ফখরুল: বিএনপি জনগণের দল। এটি সেই ধরনের রাজনীতি করে যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলে যায়। মানুষ স্বাধীনতা চায়, তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বাস করতে চায়। তারা চায় ভোট দিতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নেতাদের নির্বাচিত করতে এবং কাজের সুযোগ পেয়ে উন্নতি করতে। বিএনপি সেই সুযোগ তৈরি করে।

বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় এসেছে, প্রতিবারই নির্বাচনের মাধ্যমে। ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার করেছে। জিয়াউর রহমান (বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা) একদলীয় ব্যবস্থার পরিবর্তে বহুদলীয় ব্যবস্থা চালু করেন। পরে, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত হয়, যা রাজনৈতিক উদ্ভাবনের আরেকটি মাইলফলক।

অর্থনৈতিকভাবে বিএনপি একটি ত্রুটিপূর্ণ সমাজতান্ত্রিক মডেল থেকে সরে এসে মিশ্র ও বৈচিত্র্যময় অর্থনীতি চালু করে, যা আমরা এখন মুক্তবাজার অর্থনীতি হিসেবে চিনি। এরপরই বেসরকারি খাতের অর্থায়ন শুরু হয় এবং অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। আজ যে গার্মেন্টস খাত আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি, তা জিয়াউর রহমানের সময়ে শুরু হয়। এমনকি রেমিট্যান্স আসা শুরু হয় তাঁর উদ্যোগের ফলেই।

পরে, বেগম খালেদা জিয়ার শাসনামলে ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার হয়। বিএনপি এমন একটি দল, যার জনগণের সমস্যার সমাধান এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আছে। আমাদের দল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করেছে, যা একটি গণতান্ত্রিক দেশের মৌলিক স্তম্ভ।

প্রশ্ন: আপনি বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরের রাজনীতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। নতুন প্রজন্ম—যাদের অনেকেই সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে—দেশের আগামী ৫০ বছরের রাজনীতি গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন প্রজন্মের রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে বলে আপনি মনে করেন?

মির্জা ফখরুল: নতুন প্রজন্ম এরই মধ্যে রাজনীতিতে সক্রিয়, তারা রাস্তায় এবং সরকারের মধ্যে উভয় স্থানেই উপস্থিত। শাসনব্যবস্থায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা আছেন। তাদের প্রধান দাবি হলো, বৈষম্যহীন একটি সামাজিক ব্যবস্থা। তবে, তারা যেসব পরিবর্তন চায় তা নিয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বা লিখিত প্রস্তাব দেখতে পাওয়া যায়নি।

তারা প্রায়ই সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে বিপ্লব হিসেবে উল্লেখ করেন। ব্যক্তিগতভাবে, আমি একে বিপ্লব হিসেবে মনে করি না বরং একে ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তন হিসেবে দেখি। আমি একজন উদার গণতান্ত্রিক হিসেবে বিশ্বাস করি, এমন একটি রাজনীতিতে যেখানে সব দল অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে, কোনো বিধিবদ্ধ অবরুদ্ধ পরিবেশ আমরা চাই না।

জনগণের পক্ষ থেকে একটি রাজনৈতিক দলকে বেছে নেওয়া হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। এ জন্য আমরা দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান ব্যক্ত করেছি। নির্বাচন এখনো পর্যন্ত চলমান অনেক চ্যালেঞ্জ ও বিতর্কের সমাধান করবে। নির্বাচন যত দিন না হবে তত দিন পর্যন্ত বিতর্ক ও আলোচনা চলতে থাকবে।

আমরা দুই বছর আগে সংস্কারের সূচনা করেছিলাম এবং আমাদের প্রচেষ্টা এখনো এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ‘বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে’ অথবা ‘বিএনপি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত’—এর মতো নেতিবাচক বয়ান আমাদের বিরুদ্ধে প্রচার করা হচ্ছে আমাদের খাটো করে দেখানোর জন্য। আমরা যারা জাতীয়তাবাদী, যারা গণতন্ত্রে দৃঢ় বিশ্বাসী তাদের মতাদর্শ স্বাধীনতার পরিবর্তে অধীনতার পক্ষাবলম্বনকারীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে।

আমরা বাংলাদেশের জন্য একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চাই, যেখানে গণতন্ত্রের চর্চা সব সমস্যার সমাধান করবে। আমরা ‘আমি আপনার সঙ্গে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু আমি আপনার বাক স্বাধীনতার অধিকার রক্ষা করব’—এই মূলনীতি নিশ্চিত করতে চাই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দেশের একটি বৃহৎ অংশের মধ্যে ব্যাপক দারিদ্র্য আছে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জরুরি মনোযোগ প্রয়োজন।

প্রশ্ন: আপনার দল প্রায়ই দাবি করে যে, বিএনপি উদার ও গণতান্ত্রিক। আপনার দলের চেয়ারপারসন একজন নারী, তিনি দীর্ঘদিন ধরে দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তবে, আপনার দলে নারীদের প্রতিনিধিত্ব এখনো কম এবং ৩০ শতাংশ নারী প্রার্থী দেওয়ার ঘোষিত লক্ষ্য আপনারা পূর্ণ করতে পারেননি। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

মির্জা ফখরুল: আমরা আমাদের দলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এটি আমাদের একটি অগ্রাধিকার, এবং আমরা এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অনুবাদ করেছেন: আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

  • নির্বাচনী পরিকল্পনার ভিত্তি হবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ।
  • আগামী মাসে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা।
  • দুর্নীতিমুক্ত এবং গণমুখী প্রার্থী খোঁজা হবে।
  • দলের বাইরেও ‘গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিদের সমর্থনের চিন্তা।
সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা 
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৩৩
৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বামপন্থী দলগুলো। এ লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাই করে চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে দলগুলোর মধ্যে। নেতারা বলছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ভিত্তি ধরে নির্বাচনী পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তাঁরা।

বাম দলগুলো বলেছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। দলীয় প্রার্থীদের বাইরেও প্রগতিশীল, মুক্তমনা মানুষ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সদস্যদেরও নির্বাচনে সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

দেশের নিবন্ধিত বামপন্থী দলগুলোর অধিকাংশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অংশ হওয়ায় ৫ আগস্টের পর বামপন্থী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নেতৃত্বাধীন ৬ দলের সমন্বয়ে গড়া বাম গণতান্ত্রিক জোট। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই জোটের পাশাপাশি অন্য ৭টি বামপন্থী দলের জোট ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা’, বাংলাদেশ জাসদ, ঐক্য ন্যাপ এবং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও গণসংগঠনের সমন্বয়ে বড় বামবলয় তৈরির চেষ্টা করছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।

বাম দলগুলোর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক, বামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো এবং ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায় ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। প্রার্থী বাছাইসহ সার্বিক নির্বাচনী পরিকল্পনার পেছনের অন্যতম ভিত্তি হতে যাচ্ছে দেশের ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতাযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেওয়া অনেক মুক্তিযোদ্ধাও এ বলয়ের আওতায় প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে।

সিপিবির ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, দেড় শর বেশি আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

অন্যদিকে বাসদের নেতারা জানিয়েছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে ১১০ জন প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা করেছেন। অন্যান্য বাম দল, সংগঠন, জোটের নেতারাও প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, দলগুলোর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা সমন্বয়ের লক্ষ্যে আগামী ৩১ অক্টোবর তাঁরা বৈঠকে বসতে পারেন। সে বিবেচনায় ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই সব প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শেষ হবে। এরপর আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই প্রাথমিকভাবে কিছু আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দলগুলো বলছে, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার, শ্রমিক-কৃষকসহ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষায় ভূমিকা, দুর্নীতিমুক্ত ও জনসম্পৃক্ত রাজনীতির পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং এলাকায় গ্রহণযোগ্যতার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করব। প্রার্থীরা সবাই দলীয় না-ও হতে পারেন। তাঁদের মধ্যে স্থানীয় সমাজের পরিচিত বা প্রগতিশীল ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধকে আমাদের নির্বাচনী পরিকল্পনার ভিত্তি বিবেচনা করা হয়েছে। কেউ কেউ ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের বিকল্প হিসেবে দেখাতে চায়। আমরা মনে করি, এটি অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার পরিণতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত হয়নি বলেই ’২৪ ঘটেছে।’

একাত্তরে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেওয়া একাধিক মুক্তিযোদ্ধাও বামবলয়ের প্রার্থী তালিকায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন বাসদ সাধারণ সম্পাদক। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সব সময় আমরা প্রাধান্য দেই। আর মুক্তিযুদ্ধকে বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের সংগ্রাম কল্পনা করা যায় না।’ ’২৪ হলো মুক্তিযুদ্ধের অপরিণত আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ।’

জুলাই জাতীয় সনদে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সংক্রান্ত সংবিধানের মূলনীতি অক্ষুণ্ন রাখার প্রশ্নে জোরালো অবস্থান নিয়েছে সিপিবি, বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। সংবিধানের চার মূলনীতিসহ ৭টি বিষয়ে সমাধান না হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলগুলো। তাদের অভিযোগ, জুলাই সনদের মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত বিদ্যমান সংবিধানের চার মূলনীতি বাদ দেওয়াসহ মুক্তিযুদ্ধকে অপ্রাসঙ্গিক করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফি রতনও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তি রচিত হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী ২৩ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। তা-ই প্রতিফলিত হয়েছে ১৯৭১-এর ১০ এপ্রিল গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে। সংবিধানের প্রায়োগিক বিষয় নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বহু বিষয়ে সংস্কার আনায় ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সংবিধানের দার্শনিক ভিত্তি এর চার মূলনীতি প্রশ্নে আপস করার কোনো সুযোগ নেই।’

প্রার্থী বাছাই প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে মানে এমন দেশপ্রেমিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিকে নিয়ে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক দল ছাড়াও থাকবে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, ছাত্র, শ্রমিক, খেতমজুর ও কৃষক সংগঠন, দলিত সম্প্রদায়, পাহাড়-সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি। স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য নির্দলীয় ব্যক্তিদেরও প্রার্থী হিসেবে আমরা সমর্থন দেব।’

মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত গণতন্ত্রমনা এই জোট গঠনের লক্ষ্যে বামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোর যৌথ উদ্যোগে আগামী ১৪ নভেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘জাতীয় সমাবেশ’ আয়োজনের কথা জানিয়েছেন বাম নেতারা। এ ছাড়াও আগামী ৩১ অক্টোবর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশন, ২৮ নভেম্বর গ্রাম ও শহরের শ্রমজীবী মানুষের কনভেনশন, ৫ ডিসেম্বর নারীসমাজের কনভেনশন এবং ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের আয়োজন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই আন্দোলনের পর সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন আমলারা: হাসনাত আবদুল্লাহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনের পর আমলারা সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কার্যালয়ে চলমান বিসিএসগুলোর অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসনাত বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব জায়গায় গুন্ডামি চালাচ্ছে। জুলাই আন্দোলনের পর সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে আমলারা, কিন্তু চাকরি প্রার্থীদের নিয়ে তাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। পিএসসি চায় আর্থিক ও কার্যকর স্বায়ত্তশাসন, কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পিএসসির মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। চাকরি প্রার্থীরা এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নোটবুকের বাইরে।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভাগ-বাঁটোয়ারা ও পোস্টিং-প্রমোশন নিয়েই ব্যস্ত। ৫ আগস্টের পর কেউ সবচেয়ে বেশি বেনিফিট পেয়ে থাকলে, তা হলো আমলারা।’

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সমালোচনা করে হাসনাত বলেন, ‘সচিবালয়ে এখনো মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা চলছে। ২০১ নম্বর রুম থেকে ২০২ নম্বর রুমে একটা চিঠি পাঠাতে গেলেও সেটা প্রথমে জিপিওতে যায়, পরে আবার ফিরে আসে। অথচ তারা একসঙ্গে বসে চা খায়, ব্যবসাও করে, কিন্তু অফিশিয়াল কাজের ক্ষেত্রে এই সনাতনী প্রক্রিয়া বজায় রাখে।’

সচিবালয়ের কর্মকর্তারা প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘একজন সচিব এখনো বাটন ফোন ব্যবহার করেন, এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই যুগে এসে বাটন ফোন ব্যবহার করাকে অযোগ্যতা হিসেবেই দেখা উচিত।’

হাসনাত বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনের পুরো চেহারা বদলাতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, মাইলস্টোনে যে বিমানটা পড়েছিল, সেটা যদি সচিবালয়ে পড়ত, তাহলে ভালো হতো।’

রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের নোটবুকেও আমরা নেই। তাঁরা শুধু নির্বাচন, আসন ভাগাভাগি আর মন্ত্রণালয় ভাগাভাগি নিয়েই ব্যস্ত। চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে কেউ ভাবেন না। কোনো আন্দোলন হলে তখনই তাঁরা মাঠে নামেন, যাতে তাঁদের পোর্টফোলিও ভারী হয়।’

এদিন হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এনসিপির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পিএসসির কাছে ১৫ দফা প্রস্তাবনা জমা দেয়। এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মিরাজ মিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের কর্মীদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দিতে বিএনপির আহ্বান, জামায়াতের উদ্বেগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৩৮
রাজবাড়ীতে জামায়াতের সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজবাড়ীতে জামায়াতের সম্মেলনে মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইসলামী ব্যাংকসহ জামায়াতে ইসলামী প্রভাবিত চারটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বিরত রাখতে বিএনপির আহ্বানে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দলটি। আজ রোববার এক বিবৃতিতে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এই দাবিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক’ বলে মন্তব্য করেন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘গত ২৩ অক্টোবর দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল ও ইবনে সিনা হাসপাতালসহ বিভিন্ন সেবামূলক ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন—তাতে আমি উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমরা মনে করি, এ দাবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অযৌক্তিক ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।’

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানগুলো অরাজনৈতিক ও সেবামূলক। তারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে। ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সেবাগ্রহণ করে সন্তুষ্ট। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন—তাঁদের নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।’

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘দেশবাসী মনে করে, যদি রাজনৈতিক দলগুলো এভাবে সেবামূলক ও অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন দাবি উত্থাপন করতে থাকে, তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েই অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। নির্বাচন কমিশন যদি এ ধরনের ঠুনকো, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর দাবি গ্রহণ করে, তবে ভবিষ্যতে আরও অনেক অনর্থক দাবি উঠবে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’

বিএনপির এই ‘বিভ্রান্তিকর, অমূলক, ঠুনকো ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি আমলে না নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে ভোট চায় এনডিএম

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে রাজনৈতিক দলগুলোর জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ চায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। আজ রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের বরাবর দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। এনডিএমের দপ্তর সম্পাদক জাবেদুর রহমান জনি সিইসির কার্যালয়ে এই চিঠি জমা দেন।

চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনী জোট করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের মার্কায় নির্বাচন করতে হবে, যা পূর্বে জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছাধীন বিষয় ছিল। এই সংশোধনীর বিষয়ে এনডিএম তীব্র আপত্তি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মাত্র দেড় মাস আগে এ রকম একটি বিধান চালুকে আমরা দুরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছি।

চিঠিতে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নির্বাচনী জোট খুবই স্বতঃসিদ্ধ একটি প্রক্রিয়া এবং সাধারণত জোটের নেতৃত্বদানকারী দলের মার্কায় নির্বাচন করার মাধ্যমেই সেই জোটের শক্তিমত্তা প্রকাশ পায়। কোনো আইনের মাধ্যমে এই গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার এখতিয়ার কারও নেই। একটি রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধভাবে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারলে কেন জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার জন্য নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করতে আইনগতভাবে বাধ্য থাকবে তার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা নাই।

চিঠিতে বলা হয়, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নেওয়ার সময় এই শর্ত ছিল না যে, নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করতে বাধ্য থাকবে বরং এটা ইচ্ছাধীন বিষয় ছিল। নির্বাচনের মাত্র সাড়ে তিন মাস আগে এ ধরনের বিধান চালুর অর্থ হলো পর্যাপ্ত সময় না দিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী কৌশল এবং প্রস্তুতিতে বাধা সৃষ্টি করা। আমরা জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে জোটের যেকোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করার স্বাধীনতা লাভ করে—এ-সংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২-এর পূর্বের বিধান বহাল রাখার দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে বিএনপির দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে জোটের ভোটে দলগুলো ইচ্ছেমতো প্রতীক ব্যবহার করার একই দাবি জানায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

মালিকানা না, শুধু লাইসেন্সিং অপারেটর নিয়োগ: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

ট্রাম্প-সি বৈঠকের আগে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত

৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বামপন্থীরা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত