Ajker Patrika

জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে সরানোর উপায় খুঁজছে আওয়ামী লীগ

তানিম আহমেদ, ঢাকা
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২১, ০৪: ৫৩
জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদ থেকে সরানোর উপায় খুঁজছে আওয়ামী লীগ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে দলটির গাজীপুর মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে। একই সঙ্গে তাঁকে মেয়র পদ থেকে সরানোর উপায় খুঁজছে দলটি। 

শুক্রবার দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীরের ইস্যুতে আওয়ামী লীগের প্রায় ৩৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে দুজন ছাড়া সবাই জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করার দাবি জানান। একই সঙ্গে তাঁকে মেয়র পদ থেকে অব্যাহতি এবং তাঁর সম্পদের হিসাব নেওয়ার দাবি জানান। 

কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাহাঙ্গীরের বিষয়টি উত্থাপন করলে শুরুতেই বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীরকে কী ভাষায় শোকজ দেওয়া হয়েছে এবং উত্তর কী এসেছে আমরা জানতে চাই।’ পরে ওবায়দুল কাদের পড়ে শোনান বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে। এরপর নাছিম বলেন, ‘জাহাঙ্গীর অমার্জনীয় অপরাধ করেছে এবং শোকজের কোথাও অপরাধ স্বীকার করে নেয়নি। এই কুলাঙ্গারের আওয়ামী লীগ করার কোনো অধিকার নেই।’ 

এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের জবাবে অপরাধের কথা স্বীকার করে নাই। তাঁর বক্তব্য জাতির অস্তিত্বে আঘাত হেনেছে। এটা রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ। তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।’ 

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ না হলে জাহাঙ্গীর ঝুঁট ব্যবসা কীভাবে করত। হাজার কোটি টাকার মালিক কীভাবে হতো। তাঁকে শুধু দল থেকে বহিষ্কারই নয়, গুরুতর এই অপরাধের জন্য মামলা করতে হবে। মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করতে হবে। 

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আমাদের অস্তিত্বে আঘাত হেনেছে। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ। এখানে বিএনপি-জামাত আঘাত করার সাহস দেখাতে পারেনি। তিনি সেই সাহস দেখিয়েছেন। তাঁর আওয়ামী লীগ করার অধিকার নেই।’ 
 
বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। এগুলোকে বিতর্কিত করতে বিএনপি-জামাত যে সুরে কথা বলে জাহাঙ্গীরও সেই সুরে কথা বলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। 

তবে একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীরের পক্ষে কথা বলতে চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যকে শেখ হাসিনা থামিয়ে দেন। 

সম্পাদকমণ্ডলীর ওই সদস্যকে উপস্থিত নেতারা বলেন, ‘আপনিও কি সুপার এডিট হয়ে গেছেন।’ তিনি থেমে যান। 

দলের নেতাদের বক্তব্য শেষ হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান। তাঁরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিএনপি-জামাত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সমালোচনা করার সাহস এভাবে দেখায়নি। জাহাঙ্গীর যে ভাষায় কথা বলেছে। ভবিষ্যতে এই ধৃষ্টতাপূর্ণ অপরাধ যাতে কেউ সংগঠিত করতে না পারে তাঁর বিরুদ্ধে সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে। এ সময় জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার ঘোষণা করেন তিনি। 

বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে। মেয়র পদ থেকে কীভাবে তাকে অব্যাহতি দেওয়া যায় সে ব্যাপারেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। যেহেতু আমাদের সভার যে প্রস্তাব এটা তো বঙ্গবন্ধু ও আমাদের ইতিহাসকে কটাক্ষ করে বক্তব্য। এখানে আজকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে প্রেক্ষিতে সেটা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে অফিশিয়ালি। 

বক্তব্য সুপার এডিটেড দাবি করেছিলেন মেয়র, যাচাই-বাছাই করেছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মিটিং তো অনেক দিন পরে হয়েছে কাজেই আমাদের পার্টি, আমাদের পার্টির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও এই বিষয়টি ভালোভাবেই খোঁজ-খবর, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

বৈঠকে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিদ্রোহী প্রার্থী ও সহিংসতা নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রসঙ্গে আলোচনা উঠলে ৮ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের রাজনীতি সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করেন শেখ হাসিনার কাছে। প্রায় সকল বিভাগের ইউপি ভোটে বিদ্রোহীদের আধিপত্য, নিয়ম শৃঙ্খলা কেউ মানছেন না বলে রিপোর্টে তুলে ধরেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। 

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কোন ইউনিয়নে কোথায় কারা বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছে তাদের তালিকা তৈরি কর। আওয়ামী লীগের খেয়ে পরে যারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি করছে সেই নেতাদের আমি বাদ দিয়ে দেব। দলের নীতি আদর্শে বিশ্বাসী, ত্যাগীদের দিয়ে নতুন করে দল সাজাব। 

ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মাদারীপুরের কালকিনি ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বিদ্রোহীদের কারণে নৌকার প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অশনিসংকেত।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ‘অবশ্যই অশনিসংকেত।’ 

ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিয়েছে, তিনি যে পর্যায়ের নেতা হোন না কেন, শাস্তি পেতে হবে। তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। এমন কী জনপ্রতিনিধি হলে, মন্ত্রী হোক, এমপি হোক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত