Ajker Patrika

এনসিটিবিতে দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি নেতা তানভীরের নাম, সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৯: ১৮
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীর। ছবি: সংগৃহিত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীর। ছবি: সংগৃহিত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব এ বি এম গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরকে নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে নেট দুনিয়ায়। চলতি বছরে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই ছাপানোর কাগজ কেনায় কমিশন-বাণিজ্য নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে তাঁর নাম এসেছে। দেশের একটি অনলাইন পোর্টালে এ-সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই নেটিজেনদের মাঝে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারও বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

আজ সোমবার (১০ মার্চ) গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ডিসি নিয়োগের তালিকা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্র সমন্বয়কের নাম এসেছিল গাজী সালাউদ্দিন তানভীর ওরফে তানভীর আহমেদের। এনসিটিবির বিতর্কে তাঁর নাম নতুন করে আলোচনায় এসেছে। চলতি বছরে এনসিটিবির পাঠ্যবই ছাপানোয় কাগজের বাজারদরের চেয়ে টনপ্রতি ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি দিতে হয়েছে মুদ্রণপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ না কিনলে বই ছাপার ছাড়পত্র মেলেনি। এভাবে শুধু কাগজ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেশি কমিশন-বাণিজ্যের অভিযোগ এসেছে এনসিটিবির কয়েকজন কর্মকর্তাসহ গাজী সালাউদ্দিন আহমেদ তানভীরের বিরুদ্ধে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি তথ্য পেলাম, নতুন গঠিত রাজনৈতিক দলেও তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তিনি যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে দলে পদ পেয়েছেন। আমি সাংবাদিক ভাইদের বলব, গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে নিয়ে আপনারা বিস্তার অনুসন্ধান করেন, অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে। একজন অপরিচিত মানুষ কেন এত প্রভাবশালী, আপনাদের কি জানতে ইচ্ছে করে না?’

ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে গাজী সালাউদ্দিনের জড়িত থাকার প্রসঙ্গে রাশেদ বলেন, ডিসি নিয়োগের যে তথ্য গণমাধ্যমে এসেছিল, তা অসত্য ছিল না। এই লোকটিকে ছাত্র সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে দুজন প্রভাবশালী ব্যক্তি সমস্ত কাজ করিয়েছে। নতুন দল এনসিপি, দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থাকে বলব, তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করুন। গণমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগসংক্রান্ত সংবাদ থাকার পরেও তাঁকে কারা এনসিপিতে অন্তর্ভুক্ত করল, এতটুকু বের করতে পারলে এনসিপি, দুদক ও গোয়েন্দা সংস্থা সকল তথ্য পাবে।

এবি জুবায়ের নামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ভদ্রলোকের নাম গাজী সালাউদ্দিন তানভীর। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব। আগেও নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলার ডিসি নিয়োগ, বদলি-বাণিজ্য ইত্যাদি করে সচিবালয়ে ধরা পড়েছিলেন।

ইস্ট মিনিস্টার সোসাইটি বাংলাদেশ পেজের এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘এই গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর ওরফে সমন্বয়ক তানভীরের নাম মনে আছে? এই লোকটা হাতেনাতে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিবের রুমে ধরা খেয়েছিল ডিসি নিয়োগ-বাণিজ্যের সময় এবং ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স দেখে অনেকে হাসিঠাট্টা করে উড়িয়ে দিয়েছিল যে সে ছাত্র হয় কীভাবে ও ভুয়া সমন্বয়ক বলে। এটা বলেও ট্রল হয়েছিল, যুগ্ম সচিব বিশ্বাস করল কীভাবে! আজকে সে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব। তাহলে নিশ্চয়ই সেই যুগ্ম সচিব চিনতে ভুল করেননি। তিনি সঠিকই ধরতে পেরেছিলেন।’

গাজী সালাহউদ্দিন তানভীরের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায়, তিনি বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও চুয়েটের সাবেক ছাত্র। তাঁকে সারজিস আলমের বিয়ের অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে। একই টেবিলে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আল ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে বসে থাকার একটি ছবিও ভাইরাল হয়েছে।

এনসিটিবির টাকা লোপাটের বিষয়ে প্রতিবেদনকে ইঙ্গিত করে সারজিস আলম এক পোস্টে রাখাল রাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানালেও সেখানে সালাহউদ্দিনকে নিয়ে কিছু বলেননি। সারজিসের ওই পোস্টের স্ক্রিনশটসহ এক পোস্টে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমেদ লিখেছেন, ‘রাখাল রাহাকে যারা চেনেন, তারা দুর্নীতি বিষয়ে এই সব ফালতু অভিযোগের ন্যূনতম পাত্তা দেবে না। এই ছেলে যখন ছাত্রলীগের হয়ে মাঠ কাঁপাত, রাখালদা তখন হাসিনার শিক্ষানীতির বিপদ নিয়ে অল্প কয়েকজন লোকের সাথে বিপজ্জনব সব কর্মসূচি পালন করেছে। এই ছেলে যখন ৮ দফা দিয়ে বেড়াচ্ছে, রাখালদা তখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ করেছে বন্ধুদের নিয়ে।’

এসব বিষয়ে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দিয়েছেন গাজী সালাহউদ্দিন তানভীর। ওই দুটি পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘রাখাল রাহার মতো একজন নাস্তিকের সাথে আমার কীভাবে যোগসূত্র হতে পারে? এটা তো শয়তানও বিশ্বাস করবে না। এই সংবাদে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে জড়ানোর বিরুদ্ধে আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। যে সাংবাদিকেরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, কেউ একবারও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কিসের ভিত্তিতে আমার নাম রাখাল রাহার মতো একজন নাস্তিকের সাথে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করল? জবাব চাই।’

তানভীর আরও বলেন, ‘এই কথিত কাগজ সিন্ডিকেটের সাথে আমার জড়িত থাকার বিষয়ে দেশের বিদ্যমান সব ডিজিএফআই, এনএসআই তদন্ত করুক। তদন্ত করে যদি এক টাকার আর্থিক সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করতে পারে, তাহলে আমি বিদ্যমান যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেব। আর যদি প্রমাণ করতে না পারে, আমার ক্যারেক্টার অ্যাসাসিনেশনের এই হীন প্রচেষ্টার জন্য প্রোপাগান্ডা প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করব।’

একটি গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে নেমেছে দাবি করে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘রাখাল রাহার সঙ্গে আমাকে জড়ানো একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর চক্রান্ত। কথায় কথায় ধর্মকে প্রতিপক্ষ বানায় যারা, তারা নতুন রাজনৈতিক দলে একজন দাড়ি টুপিওয়ালার অবস্থানকে সহ্য করতে না পেরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। মূল অভিযোগ রাখাল রাহার বিরুদ্ধে হলেও নিউজে একটা কয়েক শব্দের বাক্যে আমাকে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আবার, দেশব্যাপী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে সচেতন না করে, আমাকে হাইলাইট করা হচ্ছে। যেন আসল দোষী রাখাল রাহার বিরুদ্ধে কিছুই নাই। এই চক্রান্ত আপনাদের বুঝতে হবে। মেইন অ্যাটেনশন সরায়ে ধর্মকে, দাড়ি-টুপিকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টায় তারা সফল হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বারবার বলছি, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত হোক। তারা প্রমাণ করুক। নয়তো সবাইকে ক্ষমা চাইতে হবে। ডিসি নিয়োগের সময়ও আমাকে জড়ানো হয়েছিল। ডিসি নিয়োগ দিয়ে অর্থ বিনিময়ের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে তদন্ত কমিটিতে কয়েকজন উপদেষ্টাও ছিলেন। তদন্ত কমিটি পরে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল যে ডিসি নিয়োগে এমন কোনো লেনদেনের সংশ্লিষ্টতা পায়নি। আমার জড়িত থাকারও কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড়ের হিসাবে বেগ পাচ্ছে বিএনপি

  • শরিকদের মূল্যায়ন করতে হবে। নতুন সঙ্গীও মিলতে পারে
  • কিন্তু শরিক দলে জেতার মতো প্রার্থী খুবই কম
  • নতুন জটিলতা হিসেবে এসেছে প্রতীক ব্যবহারের নিয়ম
  • সব হিসাব কষে ৩০টির বেশি আসন ছাড়ের সম্ভাবনা কম
অর্চি হক, ঢাকা রেজা করিম 
জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড়ের হিসাবে বেগ পাচ্ছে বিএনপি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের লাইন এখন অনেক লম্বা। প্রার্থী বাছাই করতে তাই নাজেহাল অবস্থা দলটির। এর ওপর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের জন্য ছাড়তে হবে আসন। খুঁজতে হচ্ছে নতুন শরিক দলও। হিসাব মিলে গেলেও আসনের ভাগ দিতে হবে তাদের। কিন্তু ওই দল থেকে জিতে আসার মতো প্রার্থী হাতে গোনা। আবার ভোটে প্রতীক ব্যবহারের নিয়মেও এসেছে বদল। এ অবস্থায় শরিক দল ও নিজেদের আসনের হিসাব মেলানো বেশ চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের জন্য।

ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। এর আগে চলতি মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে নিজেদের একক প্রার্থী বাছাই করে তাঁদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, ‘এ মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কম-বেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব। সে প্রক্রিয়ায় আছি, আমরা শেষের দিকে।’

বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্র বলছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে শরিক দলগুলোর আলোচনা চলমান রয়েছে। দলগুলো পৃথকভাবে তাদের প্রস্তাবিত প্রার্থীর তালিকা দিয়ে সে অনুযায়ী আসন ছাড় চেয়েছে। জমা পড়া তালিকা অনুযায়ী বিএনপির কাছে শরিকেরা দুই শতাধিক আসন ছাড় চেয়েছে। এসব তালিকা পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ ৩০টির মতো ছাড়ের কথা ভাবছে বিএনপি। এরই মধ্যে শরিক দলগুলোর মধ্য থেকে অন্তত ১৫ জনকে সবুজ সংকেত দিয়েছে তারা।

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়ার আলোচনাও এখন প্রকাশ্যে। তাদের মধ্যে আসন ভাগাভাগির আলোচনাও চলছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলছে। এসব আলোচনা আসন ভাগাভাগি পর্যন্ত গড়িয়েছে। জোটবদ্ধ হলে এনসিপিকে ৫ থেকে ৭টি আসন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে এনসিপির চাওয়া আরও বেশি।

যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলছেন, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে দল দুটি জোটবদ্ধ হবে কী হবে না—তা এখনই বলা যায় না।

এদিকে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এখনো সম্ভাব্যতা যাচাইপর্বে আছি। আমাদের লক্ষ্য সরকার গঠন করা। সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা উঠে আসতে চাই এবং সে ক্ষেত্রে যেকোনো দলের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা হতেই পারে। কিন্তু আমরা নিজেদের সক্ষমতাটা আগে তৈরি করছি।’

বিএনপির সূত্র বলছে, বিগত দিনে তাদের সঙ্গে রাজপথে যে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করেছে, তাদের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু যে সংখ্যক আসন ছাড়ের দাবি দলগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে, তা বাস্তবসম্মত নয়। আবার যাকে আসন ছাড়া হবে, তিনি বিজয়ী হতে পারবেন কি না, তাও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। আসন ছাড় দিয়ে বিজয়ী হতে পারলেন না, প্রতিদ্বন্দ্বীরা জয়ী হলো, হয়তো সেই আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী জয়ী হতো—এমনটি হলে সবদিক থেকেই ক্ষতির কারণ হবে।

এর মধ্যে প্রতীক ব্যবহারের নিয়ম বদলের কারণে শরিকদের নিয়ে নতুন ভাবনায় পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, এখন থেকে জোটের প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচন করতে হবে। জোটের প্রধান দলের প্রতীক ব্যবহার করা যাবে না। এ বাস্তবতায় শরিকদের জন্য ৩০টির বেশি আসন ছাড়ের সম্ভাবনা দেখছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখেন এমন এক নেতা বলেন, শরিক দলের প্রার্থীদের মাঠের অবস্থান দুর্বল। বিএনপির মাঠ জরিপে এ বাস্তবতা উঠে এসেছে। এখন তাদের মধ্য থেকে জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী খুঁজে পাওয়াই দুরূহ হয়ে পড়েছে। তবে যেহেতু প্রতিশ্রুতি রয়েছে শরিকদের জন্য, তাই ভালো একটা উপায় খোঁজার চেষ্টা চলছে। প্রতীক বদলের বিষয়টি সংশোধনের জন্য এরই মধ্যে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে যোগাযোগ করছে বলেও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

শরিক দলের নেতারাও এ বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেক দল আগে জমা দেওয়া তালিকা ছোট করার কাজ করছে বলেও জানা গেছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা যে তালিকা করেছিলাম, তার একটা শর্টলিস্ট করছি। আগামী দু-এক দিনে মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে এ নিয়ে আমরা বিএনপির সঙ্গে বসব।’

আর বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, প্রতীক ব্যবহারের নতুন নিয়ম বলবৎ থাকলে নিবন্ধিত ছোট দলগুলো সমস্যায় পড়বে। অচেনা প্রতীক নিয়ে তাদের জয়ী হতে বেগ পেতে হবে। তবে যেসব দলের নিবন্ধন নেই, তাদের জন্য সমস্যা নেই।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতা ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিগত সময়ে যারা যুগপৎ আন্দোলন করেছে, ‘বিএনপি আমাদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা চেয়েছে, আমরা দিয়েছি। শিগগিরই শরিকদের বিষয়টি নিয়ে বসবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’

আরপিও সংশোধন ও প্রতীক নিয়ে এই নেতা বলেন, গ্রামের মানুষ ছোট দলের প্রতীক চেনে না। এত কম সময়ে নতুন কোনো প্রতীককে পরিচিত করে তোলাও কঠিন। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৩: ৩০
সালাহউদ্দিন আহমদ ও আখতার হোসেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ ও আখতার হোসেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে সংশোধিত আরপিওর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিএনপি। নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, কোনো দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে। আগে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিল। বিএনপির দাবি, এই পরিবর্তন ‘একতরফাভাবে’ করা হয়েছে, যা পুনর্বিবেচনা করা জরুরি।

গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫’–এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। জোটের ভোটে দলীয় প্রতীক ছাড়াও আরপিওতে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আনা হয়। ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা— এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তবে জোটের ভোটে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করা ছাড়া বাকি সংশোধনীতে বিএনপি একমত।

জোটেও দলীয় প্রতীক নিয়ে বিএনপির আপত্তি কেন

গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা শুনেছি, উপদেষ্টা পরিষদ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। আইন উপদেষ্টা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি, সংশোধিত আরপিওতে এমন কিছু বিধান আছে, যেগুলোর বিষয়ে আমরা আগে থেকেই একমত ছিলাম। কিন্তু প্রতীকের বিষয়ে যেটি পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সম্মতি ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আগে আরপিওর ২০ ধারায় বলা ছিল— জোটভুক্ত দলগুলো চাইলে নিজেদের প্রতীকে বা জোটের মধ্যে সম্মত কোনো এক প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। তফসিল ঘোষণার পর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হতো। এতে ছোট দলগুলো জোটে থেকে কিছু আসন জয়ের সুযোগ পেত। এটা একটি ইতিবাচক ব্যবস্থা ছিল।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার পর বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা। তাই বিএনপি ধরে নিয়েছিল, ধারাটিতে কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সংশোধিত আরপিওতে দলীয় প্রতীক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে ছোট দলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত হবে।

বিএনপির আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘এখন যেভাবে সংশোধনীর খসড়া পাস হয়েছে, কয়দিন পর অধ্যাদেশ আকারে পাস হবে। সেটা হলে অনেক ছোট দলগুলোর যারা জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন করতে চাইবেন— ‘ছোট দল’ বলে কাউকে অসম্মান করছিন না, রাজনীতির মাঠে আকারে ছোট–বড় অনেক দল থাকে, যাদের জনসমর্থনের ভিত্তিতে এটা বলা হয়—তো তারা জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবেন না।’

এবিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের রাজনীতির ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, ছোটখাট দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ পার্লামেন্টে এলে জাতীয় সংসদটা সমৃদ্ধ হয়। এভাবে যুক্ত ইলেকশন করার মধ্য দিয়ে তাদের নির্বাচিত হওয়ার একটা সুযোগ হচ্ছে। সেটা থেকে তাঁদেরকে বঞ্চিত করা উচিত হবে বলে আমরা মনে করি না। কারণ আমরা একটা বহুদলীয় গণতন্ত্র, একটা সমৃদ্ধ জাতীয় সংসদ দেখতে চাই, যেখানে সকল মতের, আদর্শের ব্যক্তিগণ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জাতির কল্যাণে তাঁদের অবদান রাখবেন এবং সেটা হলেই জাতির গণতান্ত্রিক সমৃদ্ধি আসে জাতি উপকৃত হয়।’

বিএনপির সঙ্গে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেটায় (বাধ্যতামূলক দলীয় প্রতীক) তাদেরও সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে এভাবে কেন উত্থাপন করা হলো জানি না। কারণ আচরণবিধি এবং আরপিওর বিষয়ে আমাদের কাছে মতামত চেয়েছিল, আমরা নির্বাচন কমিশনে জানিয়েছিলাম। তার মধ্যে যে সমস্ত সংশোধনী এসেছে, সেগুলোর অধিকাংশের সঙ্গেই আমরা একমত। কিন্তু এই বিষয়টা, প্রতীকের বিষয়টা—জোটভুক্ত হলেও দলগুলোর নিজস্ব প্রতীকের বাইরে জোটের অন্য প্রতীক নিতে পারবে না—এ বিষয়ে আমরা কখনো সম্মত হইনি।’

এটি একতরফাভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে উত্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি ও আরপিও নিয়ে আমাদের মতামত নেওয়া হয়েছিল, এবং অধিকাংশ সংশোধনের সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু এই প্রতীকের বিষয়টি সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে ও নির্বাচনের অন্তর্ভুক্তিমূলক চরিত্র রক্ষার স্বার্থে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন ও আইন উপদেষ্টার কাছে চিঠি দেব। বহুদলীয় গণতন্ত্রে ছোট দলের অংশগ্রহণ সংসদকে সমৃদ্ধ করে। এভাবে তাদের সুযোগ সংকুচিত করা গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।’

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-এনসিপির জোট নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপিন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট গঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শেষ পর্যন্ত জোট কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায়, সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

এনসিপির সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দলটির সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে। তবে জোটবদ্ধ হব কি হব না—অথবা তারা হবে কি হবে না—রাজনীতির মাঠে এসব আগে থেকে বলা যায় না।’

তবে এনসিপির দিক থেকে এরকম কোনো ইঙ্গিত মিলেনি। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপাতত বিএনপির সঙ্গে জোট বা আসন সমঝোতা কোনো বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

বিএনপির অবস্থানে এনসিপির উদ্বেগ

এদিকে সংশোধিত আরপিও নিয়ে বিএনপির আপত্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে উদ্বেগ দেখা গেছে। সংশোধিত আরপিও থেকে সরকার সরে এলে তা ‘লন্ডনের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া’ হিসেবে দেখা হবে বলে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন। আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।

বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে আখতার বলেন, ‘আমরা আরপিও সংশোধনীকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ বাড়বে। কিন্তু বিএনপি এখন বলছে, তারা সংশোধনী বাতিলের আবেদন করবে আইন মন্ত্রণালয়ে। অথচ আইন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়ার অংশ নন। এটি রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তিকর সংকেত দিচ্ছে। আইন উপদেষ্টার কাছে আবেদন করে আরপিও সংশোধনী ঠেকানোর মানসিকতা থেকে মনে হচ্ছে, কিছু দল হয়তো বিশেষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ব্যবহার করে নিজেদের সুবিধা নিতে চাইছে। এটা গণতান্ত্রিকভাবে অযৌক্তিক ও অনুপযুক্ত।’

সরকারকে সতর্ক করে এই এনসিপি নেতা বলেন, ‘যদি কোনো দলের চাপে সরকার এই সংশোধনী থেকে সরে আসে, তাহলে সেটা প্রমাণ করবে, সরকার বিএনপির সঙ্গে লন্ডন বৈঠকের সমঝোতার ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের দিকে এগোচ্ছে। এটা জাতির জন্য কোনো সুস্থ প্রক্রিয়া নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করবে: সালাহউদ্দিন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে প্রাথমিকে ধর্মীয় শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যে জাতি ধর্মীয় ও নৈতিকতার ওপর সমুন্নত থাকে, তার পরাজয় হয় না।

আজ শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় মূল্যবোধ সংরক্ষণ পরিষদ আয়োজিত সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ ও মূল্যবোধ পরিপন্থী সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আয়োজন করা হয় সেমিনারটির।

এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল হালিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মো. রেজাউল করীম, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মো. মামুনুল হক প্রমুখ।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘বিগত দিনে কিছু সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালানো হয়েছে। নীতি-নৈতিকতাবিবর্জিত কোনো জাতি শক্তিশালী জাতি হিসেবে পরিচয় লাভ করতে পারে না। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, তবে বাংলাদেশে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান ও উৎপাত বন্ধ হবে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পশ্চিমা আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধবিবর্জিত শিক্ষার প্রসার ঘটানো হচ্ছে, যা দেশের সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রাথমিক শিক্ষাকে নৈতিকতাবিরোধী অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।

এনসিপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাসঙ্গিকতা ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনা হবে জানিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের জিপিএ-৫ প্রণোদনা দিয়ে মূল্যবোধ কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা। এভাবে সবাইকে কোনো না কোনো প্রণোদনা দিয়ে ফ্যাসিজম বহাল রেখেছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তিতে দেশ চলবে এবং শিক্ষাব্যবস্থায় সেটি বিরাজমান থাকবে।

সৈয়দ মো. রেজাউল করীম বলেন, ‘দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন এখনই দিতে হবে। অন্যথায় আমরা সব দল মিলে সম্মিলিত কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। এই ইস্যু আমাদের প্রজন্মের অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত, তাই আমরা যতটুকু কঠোর হওয়ার দরকার, ততটুকুই হব।’

মো. মামুনুল হক বলেন, ‘ভবিষ্যতে যারাই বাংলাদেশের ক্ষমতায় যাবে, তাদের ইসলামপন্থীদের সঙ্গে নিয়েই দেশ পরিচালনা করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় ইসলামি মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে সামনে বৃহত্তর কর্মসূচিও আসতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে, অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন—উপদেষ্টা মাহফুজের আশঙ্কা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ৩৪
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে শনিবার আয়োজিত সংলাপে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ছবি: ফোকাস বাংলা
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে শনিবার আয়োজিত সংলাপে কথা বলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। ছবি: ফোকাস বাংলা

তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন। আমি আশঙ্কা করছি, যদি এটার সঙ্গে ধর্মীয় যে দৃষ্টিকোণ, এটা যদি যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’

আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএমএ ভবনে ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান। সংলাপের আয়োজন করে সুফি সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করা প্ল্যাটফর্ম ‘মাকাম’।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দরবারগুলোর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে শুনেছি। দরবারগুলোকে এটা বোঝানোর জন্য যে অধ্যাপক ইউনূসের সরকার এসে মাজার ভেঙে দিচ্ছে, মসজিদ থেকে বের করে দিচ্ছে। এই কোশ্চেনটা (প্রশ্ন) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইস্যু নয়। এটা ৫০ বছর ধরে চলছে। যখন সরকার পরিবর্তন হয়, মসজিদ কমিটি বদল হয়ে যায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটি বদল হয়ে যায়।’

মাজার-দরবারে হামলা বন্ধে সামাজিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, ‘দেশে কোনো কোনো দূতাবাস চায়, মাজারগুলো ধ্বংস হোক। একধরনের রাজনৈতিক আদর্শিক জায়গা এখানে আছে। গত এক বছর যাবৎ মাজার-দরবারের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার যদি পাল্টা আঘাত হয়, তাহলে তা রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাকে নস্যাৎ করবে। ফলে এই সহিংসতাকে যেকোনো মূল্যেই হোক বন্ধ করতে হবে। সহিংসতা বন্ধ করার জন্য সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক সংলাপের মাধ্যমেই এই সংকট দূরীভূত করা সম্ভব।’

এ সময় সুফি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে মাজার ও দরবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের স্বার্থেই মাজার ও দরবারের প্রতি এই সহিংসতাকে রোধ করতে হবে। আমার পরামর্শ থাকবে, সুফি সমাজের পক্ষ থেকে এই আওয়াজ তোলা উচিত—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের ইশতেহারে যেন সুফি সমাজের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।’

সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘মাজারে সহিংসতার বিষয়ে কথা বলা একটা ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে। আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতেও আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু এই ট্যাবু ভাঙতে হবে। আমাদের দেশে মাজার-দরবারে দায়িত্বশীল যাঁরা আছেন, তাঁদের একটা ঘাটতি হলো, তাঁরা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণে প্রভাব রাখতে পারছেন না। যে কারণে তাঁদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে পারছে না।’

সুফি সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সুফি সমাজের এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করা প্রয়োজন, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণে আপনারা অবদান রাখতে পারবেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মাজার-দরবারে যে সহিংসতা হলো, এ ঘটনাগুলোর তদন্ত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা দরকার। জাতীয় নাগরিক পার্টি এই কমিশন গঠনের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা করবে। সর্বশেষ কথা হলো, এ দেশের নাগরিক কওমি হোক, আলিয়া হোক, সুন্নি হোক—যে যেই মতাদর্শ ধারণ করুক না কেন—কেউ কারও গায়ে আঘাত করবে না। এই জায়গায় আমাদের একটি বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।’

সংলাপে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আয়াতুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মানজুর আল মতিন, দ্য ডিসেন্টের সম্পাদক ও ফ্যাক্টচেকার কদরুদ্দীন শিশির, মাইজভান্ডার দরবার শরিফের রহমানিয়া মঈনিয়া মঞ্জিলের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আসলাম হোসেন, অলিতলা দরবার শরিফের পীর মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন লতিফী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত