Ajker Patrika

পিআর আদায় করে ছাড়বে জামায়াত, সমাবেশে ঘোষণা

তানিম আহমেদ ও সাখাওয়াত ফাহাদ, ঢাকা
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একাংশ। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে এর আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একাংশ। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে এর আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, গণঅধিকার পরিষদ, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সংসদের নিম্নকক্ষ, উচ্চকক্ষ ও সংরক্ষিত নারী আসন—সব ক্ষেত্রেই ভোটের সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চায় জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু বিএনপিসহ কয়েকটি দলের অবস্থান এর বিপক্ষে। এই অবস্থায় পিআর পদ্ধতিতে ভোটের ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত। সেই দাবি মানা না হলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায়ের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।

রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল শনিবার জাতীয় সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন জামায়াতের নেতারা। সমাবেশে শেষ পর্যায়ে ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে দুই দফা পড়ে যান দলের আমির শফিকুর রহমান। পরে মঞ্চে বসেই সংক্ষেপে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

আমির শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে বেলা ২টা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেল ৫টার কিছু সময় পরে। তবে শনিবার ভোর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের অবস্থান উদ্যান ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক, রমনা পার্কে ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশের আশপাশের সড়কে বিশাল বিশাল স্ক্রিনের মাধ্যমে সরাসরি দেখানো হয় নেতাদের বক্তৃতা।

এর আগে সকাল থেকেই জামায়াতের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে মঞ্চ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। সমাবেশে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের পক্ষের দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। যাতে জামায়াতের নেতারা ছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিসের নেতারাসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সদস্য, জুলাই যোদ্ধারা বক্তব্য দেন। তবে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। কয়েক মিনিট কথা বলার পর কিছুটা অসুস্থ অনুভব করায় প্রথমে টুপি খুলে বক্তব্য দেন। এরপর কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে তিনি পড়ে যান। নেতা-কর্মীরা তাঁকে উঠিয়ে দিলে আবার বক্তব্য শুরু করেন তিনি। এ সময় তিনি আবার পড়ে যান। তখন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমির গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁর কথা বলা ঠিক হবে না। তবে আমির বসে থাকা অবস্থাতেই বক্তব্য শুরু করেন।

জাতীয় ঐক্যের নামে অহংকার, তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর অরাজনৈতিক ভাষা ব্যবহারকারীদের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দিত, হয়তো আজকের বাংলাদেশ আমরা দেখতাম না। অনেকের জীবন হয়তো ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত। আজকে যারা বিভিন্নভাবে দাবিদাওয়া তুলে ধরছেন, তখন তাঁরা কোথায় থাকতেন? সুতরাং অহংকার করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, কাউকে ছোট করে কথা না বলি। না হলে আমরা বুঝে নেব, স্বৈরাচারী বীজ তাদের মনে বাসা বেঁধেছে।’

জামায়াত সরকার গঠন করলে কোনো এমপি-মন্ত্রী ভবিষ্যতে সরকারি প্লট গ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা দেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, কোনো এমপি এবং কোনো মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়ি চড়বেন না। কোনো এমপি এবং কোনো মন্ত্রী তাঁর নিজের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবেন না। কোনো এমপি এবং কোনো মন্ত্রী যদি তাঁর নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন, কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে তাঁরা তার প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন।

আমির বলেন, ‘চাঁদা আমরা নিব না, দুর্নীতি আমরা করব না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করব না।’

বক্তব্যে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আজব বাংলাদেশ, চাঁদা না দিলে জীবন শেষ। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে আগামীর বাংলাদেশ, চাঁদা চাইলে জীবন শেষ। এ আইন চালু করতে হবে। তাহলে চাঁদা বন্ধ হয়ে যাবে।’

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কেন্দ্র দখল করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন আরেক নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, টাকা দিয়ে ভোট কেনা যাবে না। এই পদ্ধতি হলে কারচুপি সম্ভব নয়, আর তাই অনেকে এটার বিরোধিতা করছে।

সংস্কার বিষয়ে তাহের বলেন, মিডিয়ার সামনে সবাই সংস্কার চান, কিন্তু মিটিংয়ে বসে অনেকে এমন ভান করেন যেন এসব সংস্কারের কোনো প্রয়োজনই নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? সংস্কার তো সবার কল্যাণেই। যারা সংস্কার চায় না, তাদের ভিন্ন মতলব আছে বলেই মনে হচ্ছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের কথা তুলে ধরে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, সেখানে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে। অবিলম্বে সরকারকে সংবিধানে পিআর পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আজাদ বলেন, ‘এ পদ্ধতি অনুসরণ করে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে এ দাবি আদায় করে ছাড়ব।’

বক্তব্যে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে উচ্চকক্ষ চাই না, এই বক্তব্য যারা দেয়, তারা জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে। বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার বাইরে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘ফ্যাসিস্টবিরোধী আমাদের যে শক্তি, এদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ থাকতে গিয়ে অন্ধভাবে কারও দালালি করা যাবে না। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকবে, কিন্তু তার সৌন্দর্য নষ্ট করা যাবে না। তবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কার্যালয় স্থাপনের সমালোচনা করেন হেফাজতে ইসলামীর নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রাব্বানী। তিনি বলেন, ‘মানবাধিকারের নামে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কর্মকাণ্ড বরদাশত করব না।’

নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘মৌলিক সংস্কার নিশ্চিত না করে আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) নির্বাচনের দিকে হাঁটবেন না। তাহলে সেটা আরেকটি প্রতারণামূলক নির্বাচনই হবে।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনে নিহত বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘৬ বছর হয়ে গেছে। ছেলে হত্যার বিচার এখনো পাইনি। আমি চাই, দ্রুত যেন আমার ছেলে হত্যার বিচার করা হয়।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরে নিহত আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেলেও ভাইয়ের হত্যার বিচারও পাইনি। আমাদের শহীদ ভাইদের হত্যার বিচারের দরকার আছে কি নাই? আমি মনে করি, নির্বাচনের আগে এই শহীদ ভাইদের হত্যার বিচারের রায় প্রয়োজন।’

জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার শিক্ষার্থী জুনায়েদুর রহমান বলেন, ‘সংস্কারের নামে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন এখনো চালু রয়েছে। ফ্যাসিবাদের শিকড় যতই গভীরে থাকুক, তার মূলোৎপাটন না করা অব্দি আমাদের লড়াই চলমান থাকবে।’

হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ প্রামাণিক জামায়াতে ইসলামীকে শুধু একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, বরং একটি ‘ইউনিভার্সাল ইউনিভার্সিটি’ আখ্যা দেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য এ টি এম আজহারুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, নেজামে ইসলামের মহাসচিব মুসা বিন ইযহার প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কিছু দল জুলাই সনদকে কাগুজে দলিলে পরিণত করতে চায়: আখতার হোসেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো আড়ালের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক শক্তি জুলাই সনদের মূল অর্জনগুলোকে শুধু ‘কাগুজে দলিলে’ পরিণত করার প্রবণতা দেখাচ্ছে।

গত ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এনসিপি অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল। এ প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘বাস্তবায়ন ব্যতিরেকে এই সনদ স্বাক্ষরিত হলে তা কেবল “আনুষ্ঠানিকতা” হয়ে থাকবে এবং জনগণের অর্জন ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।’

তিনি স্পষ্ট করেন, জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে তাঁরা মূল বিষয়বস্তু মনে করেন না, বরং এটি একটি আনুষ্ঠানিকতা। এনসিপি মনে করে, জনগণের কাছে বাস্তবায়নের আদেশ সম্পর্কে পরিষ্কার বার্তা উপস্থাপন করাই মূল লক্ষ্য।

আজ শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আখতার হোসেন।

আখতার হোসেন দাবি করেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো একটি আদেশ জারি, গণভোট এবং সামনের সংসদকে জনগণ কর্তৃক ন্যস্ত ক্ষমতা (Constituent Power) প্রদানের মাধ্যমে একটি সংস্কারকৃত সংবিধান প্রণয়নের বিষয়ে একমত হয়েছিল।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘আইনি ভিত্তি দেওয়ার ব্যাপারে একমত হওয়া সত্ত্বেও সে আইনি ভিত্তি কীভাবে অর্জিত হবে? সেটা কখন থেকে কার্যকর হবে? সেই জায়গা জনগণের কাছে এখনো পর্যন্ত খোলাসা করা হয় নাই।’

তিনি যোগ করেন, জুলাই সনদকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার প্রধান হিসেবে এই সনদ জারি করবেন এবং গণভোটের মাধ্যমে আগামীর সংসদকে ‘কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার’ প্রয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এরপর সেই সংসদ সংস্কারগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে ২০২৬ সালের সংস্কারকৃত সংবিধান ঘোষণা করবে।

সনদ বাস্তবায়নের পথরেখা জাতির কাছে পরিষ্কার করার লক্ষ্যে এনসিপি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সদস্যসচিব জানান, অনানুষ্ঠানিকভাবে কমিশনের সঙ্গে তাঁদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে, যেখানে তাঁরা তাঁদের দাবিগুলো পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এনসিপি কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়া, বিষয়বস্তু ও পরিধি—প্রত্যেকটি জিনিস জাতির কাছে অবিলম্বে উপস্থাপন করতে হবে।

কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের একটি আদেশ প্রস্তুত করছেন, যা এনসিপি অগ্রগতি হিসেবে দেখলেও, সে আদেশের মধ্যকার বক্তব্য এখনো পর্যন্ত উপস্থাপন করতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাঁরা পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারেননি বলে জানান আখতার হোসেন।

আখতার হোসেন সতর্ক বলেন, কমিশন আন্তরিকতা থেকে কাজ শুরু করলেও, এটি যেন কোনোভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের’ মতো করে কোনো দলের চাপে পড়ে কেবল একটি কাগুজে দলিল হিসেবে বাস্তবায়ন পরিপন্থীভাবে উপস্থাপিত না হয়।

আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘জুলাই সনদকে আমরা শুধু রাজনৈতিক দলিল হিসেবে দেখি না। এটি জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের প্রতিফলন।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, আদেশের স্পষ্ট ধারণা না থাকলে শুধু গণভোট সংস্কারের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারবে না। তাই কমিশনকে সর্বাধিক সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে এনসিপি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে  এনসিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা
শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধিত প্রস্তাব থেকে সরে এলে, সরকার লন্ডনের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় বিএনপির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হবে।’

এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আজ শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। আজ সকাল ১০টার পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসে এনসিপি, দুপুর ১টার দিকে শেষ হয়।

উল্লেখ্য, সংশোধিত আরপিও প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তবে এতে দ্বিমত করেছে বিএনপি। এ ছাড়া গত সেপ্টেম্বরে জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যে বিশেষজ্ঞদের নতুন পরামর্শ প্রস্তাব সামনে এনেছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে বলা হয়, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর ওই আদেশ নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে। সে সময় বিএনপিসহ কয়েকটি দল সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাবে দ্বিমত করে। তবে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন করে। আর প্রস্তাবটি নিয়ে এনসিপি বলেছিল, এ নিয়ে তারা দলের ভেতরে আলোচনা করবে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গতকাল শুক্রবার এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গণভোটের প্রস্তাব বিএনপিই দিয়েছে। নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাবে দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সবাই একমত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব—জুলাই জাতীয় সনদের প্রজ্ঞাপন বা গেজেট নোটিফিকেশন কীভাবে করা যায়। কারণ, যেভাবেই হোক, সেটি শেষ পর্যন্ত জনগণের গণভোটের মাধ্যমেই আইনি রূপ পাবে।’

আজ শনিবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘সে আদেশের কনটেন্ট কী হবে, টেক্সট কী হবে, তার কার্যকারিতার জায়গাগুলো কী হবে? সেটা পরিষ্কার করা। যদি আদেশের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকে, তাহলে শুধু গণভোট আমাদের সংস্কারের বাস্তবায়নকে সিকিউর করতে পারবে না। এই কারণে আমরা আদেশের বিষয়টাতে সরকারের তরফ থেকে পরিপূর্ণভাবে আশ্বস্ত হয়ে তারপরেই গণভোট এবং স্বাক্ষরের মতো বিষয়গুলোতে অগ্রসর হতে চাই।’

আরপিও সংশোধনীতে বিএনপির আপত্তি প্রসঙ্গে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আরপিওতে যে সংশোধনীর বিষয়গুলো নিয়ে আসা হয়েছে এগুলোকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমরা খেয়াল করেছি যে আরপিওতে সংশোধনী আনার পরে বিএনপি তাদের পূর্বতন বক্তব্য থেকে সরে এসে, আরপিও সংশোধনীকে বাতিল করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে দরখাস্ত দেবেন বলে তাঁরা বলেছেন। কিন্তু আইন উপদেষ্টা এই প্রক্রিয়ার অংশ নন।’

আখতার হোসেন বলেন, ‘আইন উপদেষ্টার কাছে দরখাস্ত দিয়ে আরপিও সংশোধনীকে আটকে দেওয়ার যে মানসিকতার কথা বলা হচ্ছে তাতে করে মনে হয়, সরকার কোনো বিশেষ বিশেষ উপদেষ্টার মধ্য থেকে কারও কারও সঙ্গে কোনো কোনো দলের সম্পর্কের জায়গা থেকে, সেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে, তারা কোনো একটা বিষয়কে বাস্তবায়ন করতে চান। যেটাকে আমরা ইনঅ্যাপ্রোপ্রিয়েট (যথোপযুক্ত নয়) মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘একই সঙ্গে এটাও মনে হয়, যদি কোনো দলের কারণে সরকার এই সংশোধনী প্রস্তাবগুলো থেকে সরে আসে, তাহলে আমাদের কাছে আবারও প্রতীয়মান হবে যে, সরকার লন্ডনে যে বৈঠক করেছিল তার ধারাবাহিকতায়, সেভাবেই তারা ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই জাতির জন্য কোনো সুস্থ প্রক্রিয়া হতে পারে না।’

বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড.ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত আছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৫৮
শনিবার সকাল ১০টার পর ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শনিবার সকাল ১০টার পর ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শুরু হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আজ শনিবার সকাল ১০টার পরে জাতীয় সংসদের এলডি হলে এই বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার উপস্থিত আছেন।

১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই সনদে আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না পেয়ে ওই দিন স্বাক্ষর করেনি এনসিপি। দলটিকে সনদে স্বাক্ষর করাতে সরকার ও কমিশন কয়েক দফা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেও সমাধান হয়নি। এর মধ্যে আজ কমিশনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেছে এনসিপি।

এদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণে কমিশন কয়েক দফা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আজই সরকারকে সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত রূপরেখা-সংবলিত সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ এনসিপির সাক্ষাৎ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৩১
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একটি প্রতিনিধিদল। আজ শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় ঐকমত্য কমিশনের কার্যালয়ে এই সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রতিনিধিদলে থাকবেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

সাক্ষাৎকালে এনসিপির প্রতিনিধিদল জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ, আইনি ভিত্তিসহ সনদের নানা বিষয়ে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত