Ajker Patrika

নভেম্বরে গণভোট দাবিসহ ইসিতে ১৮ দফা প্রস্তাব জামায়াতের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৪৭
নভেম্বরে গণভোট দাবিসহ ইসিতে ১৮ দফা প্রস্তাব জামায়াতের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সম্প্রতি বিএনপির ৩৬ দফার পর নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ১৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট চাইলেও জামায়াত নভেম্বরে গণভোটের প্রস্তাব জানিয়েছে চিঠিতে।

এদিকে জোটের ভোটে প্রতীক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দলগুলোর স্বাধীনতা চেয়েছিল বিএনপি। জামায়াত এর বিরোধিতা করে জোটের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার পক্ষে মত দিয়েছে এবং ইসির কাছে এই বিধান বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।

ইসিতে জমা দেওয়া জামায়াতের ১৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—

১. আইনি ভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির পরই আগামী নভেম্বরে গণভোটের আয়োজন করা।

২. উপদেষ্টা পরিষদে গৃহীত সর্বশেষ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ২০ নম্বর অনুচ্ছেদের সর্বশেষ সংশোধনীর বিধান অনুযায়ী প্রতি রাজনৈতিক দলকে তাদের নিজস্ব দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে হবে। অন্য কোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে না। এ বিধান বহাল রাখতে হবে। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের জোটগতভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান অন্তর্ভুক্তির জন্য নির্বাচনব্যবস্থাসংক্রান্ত সংস্কার কমিশনই সুপারিশ করেছে। ফলে এই বিধান কোনোক্রমেই পরিবর্তন করা যাবে না। সংশোধিত বিধানই বহাল রাখতে হবে।

৩. ইসি ও প্রশাসনের প্রতি স্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতভাগ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।

৪. নির্বাচনী কাজের জন্য নিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথা প্রিসাইডিং, পোলিং, আনসার, আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীকে নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।

৫. সব ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ করা।

৬. সব ভোটকেন্দ্রের নির্বাচনী বুথে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার দাবি জানিয়েছে দলটি।

৭. দলটির পক্ষ থেকে বিগত অবৈধ নির্বাচনগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল—এমন সব প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগামী নির্বাচনে নির্বাচনী দায়িত্ব না দেওয়া। শতভাগ লটারির ভিত্তিতে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি) নিয়োগ দেওয়া।

৮. রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তার সঙ্গে সঙ্গে সাধ্যমতো ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করা।

৯. সব ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনের কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে সামরিক বাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান নিশ্চিত করা।

১০. নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে নির্বাচনী মাঠ সমতল করা।

১১. সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। এ ছাড়া বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দলীয় লোকদের রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে তা সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।

১২. নির্বাচনী এলাকাগুলোতে যারা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে থাকে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

১৩. ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্রের নির্ধারিত এলাকার মধ্যেই শুধু নয়, বরং এর বাইরেও নির্বাচনী এলাকার যেকোনো স্থানে সন্ত্রাসী তৎপরতার খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক তা দমন করা।

১৪. ছবিসহ ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাই স্পষ্ট ছবিসহ ভোটার তালিকা পোলিং এজেন্টদের যথাসময়ে সরবরাহ করা।

১৫. নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত পোলিং ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং আনসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারী—সবাইকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাঁদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।

১৬. প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার পদ্ধতি সহজ করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট যেকোনো একটির মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। রেজিস্টার্ড প্রবাসী ভোটারদের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা।

১৭. নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের রাজনৈতিকসংশ্লিষ্টতা ও নিরপেক্ষতা যাচাই করা।

১৮. ফ্যাসিস্ট আমলে নিজেদের সুবিধামতো ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। তাই অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে সেগুলো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছে জামায়াত।

বৈঠক শেষে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগেই আগামী নভেম্বরের মধ্যে গণভোট অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে জামায়াত। জুলাই মাসে তৈরি জাতীয় সনদে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোকে পরিবর্তন করে যে সংস্কারগুলোর ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে, সে সম্পর্কে জাতিকে জানাতে হবে। এ ছাড়া একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট হলে নির্বাচনী কেন্দ্রে সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে, দু-চারটা কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হলে গণভোটের দশা কী হবে—এমন টেকনিক্যাল সমস্যা আলোচনা করা হয়।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসিকে অবশ্যই ‘জুলাই সনদ’ ও সংস্কারের বিষয়গুলো পাবলিক করতে হবে, যাতে ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। গণভোট আয়োজনে ইসির পক্ষ থেকে কোনো চ্যালেঞ্জ বা অক্ষমতার কথা জানানো হয়নি।

বিএনপির পক্ষ থেকে ইসলামী ব্যাংকসহ কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাদের নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি প্রসঙ্গে জামায়াত নেতা বলেন, তারা যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কথা বলেছে, তার কোনো একটার মালিকানার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই। তারা এটিকে ব্যাড ট্র্যাডিশন আখ্যা দিয়ে বলেছে, পাল্টাবিবৃতি বা তালিকা দেওয়া রাজনৈতিক শিষ্টাচার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ঘর আলো করেছে ৫ নবজাতক, চোখে অন্ধকার দেখছেন মুদিদোকানি সোহেল

বেতন–ভাতা বাড়িয়ে ১ ট্রিলিয়ন ডলার না করলে টেসলা ছাড়তে পারেন মাস্ক

আজকের রাশিফল: ভুল ব্যক্তিকে মেসেজ পাঠিয়ে বিপত্তি বাধাবেন না

ঘনীভূত হচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থা’, আঘাত হানবে সন্ধ্যার পর

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

এলাকার খবর
Loading...