Ajker Patrika

২৪ দফা ইশতেহার: নতুন সংবিধান রচনার ঘোষণা এনসিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০০: ১৩
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবিতে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপির সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীদের একাংশ। সমাবেশ থেকে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ পাঠ করেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবিতে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এনসিপির সমাবেশে অংশগ্রহণকারী নেতা-কর্মীদের একাংশ। সমাবেশ থেকে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ পাঠ করেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘ফ্যাসিবাদ পতন’-এর বর্ষপূর্তিতে আজ রোববার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক জনসমাবেশে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ২৪ দফার এই ইশতেহারে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র গঠনের আহ্বান জানিয়ে আগামী দিনের রাষ্ট্র ও রাজনীতির কাঠামো পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইশতেহার পাঠ করেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এই ইশতেহার মূলত আগামী বাংলাদেশের কাঠামোগত রূপরেখা, যার ভিত্তিতে এনসিপি ভবিষ্যতের রাজনীতি পরিচালনা করবে।

এ সময় নাহিদ বলেন, ‘আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এই শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে আমরা ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার পতনের ডাক দিয়েছিলাম। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে সে ব্যবস্থা পরাজিত হয়েছে। কিন্তু আমরা জানতাম, কেবল শাসক বদল নয়, শাসনব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া মুক্তি মিলবে না। আমরা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপি গঠন করেছি সেই পরিবর্তনের পথ তৈরির জন্য। ২৪ দফা বাস্তবায়নই আমাদের সে পথের রূপরেখা।’

এনসিপির ইশতেহারে প্রথম দফায় একটি নতুন সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় জুলাই গণহত্যা, শাপলা গণহত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ আওয়ামী লীগের সংঘটিত সব মানবতাবিরোধী অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছে এনসিপি।

তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় যথাক্রমে গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার এবং ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কারের কথা বলা হয়েছে।

ইশতেহারের পঞ্চম দফায় যেকোনো দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এনসিপি। এ লক্ষ্যে সরকারের যেকোনো দাপ্তরিক দুর্নীতির তথ্য প্রকাশকারী ব্যক্তিকে বিশেষ আইনি সুরক্ষা দিতে ‘হুইসেলব্লোয়ার প্রটেকশন’ আইন প্রণয়ন এবং বিদ্যমান সব আইনি কাঠামোর যথাযথ সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরিবার ও সমাজে দুর্নীতিবিরোধী মূল্যবোধ তৈরি ও সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে শিক্ষা কারিকুলামে আমূল পরিবর্তন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় বিশেষ কর্মসূচি চালুর কথা বলেছে দলটি।

ইশতেহারের ষষ্ঠ দফায় জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কথা বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ঔপনিবেশিক আমলের ১৮৬১ ও ১৮৯৮ সালের পুলিশ আইন যুগোপযোগী করা, একটি স্থায়ী পুলিশ কমিশন গঠন, র‍্যাব বিলুপ্ত করা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহার বন্ধ করতে সুস্পষ্ট আইনি কাঠামো তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এনসিপি।

ইশতেহারের অন্য দফাগুলোয় সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন; জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী; গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার; স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ; সর্বজনীন স্বাস্থ্য; জাতি গঠনে শিক্ষানীতি; গবেষণা উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব; ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা; নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন; মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি; তারুণ্য ও কর্মসংস্থান; বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি; টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব; শ্রমিক-কৃষকের অধিকার; জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা; নগরায়ণ, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনা; জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা; প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার; বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়।

সমাবেশে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি সমস্যা সমাধানের রাজনীতি। আমরা এমন স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ব, যেখানে টাকার অভাবে কেউ মরবে না। তরুণদের স্বপ্নকে দমিয়ে না রেখে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করব।’

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘গত ১৫ বছরে খুনি আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সংগঠন আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে। আমাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।’

জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমীন বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার এই বাংলাদেশের মাটিতে হতে হবে। আমরা রাজপথ ছেড়ে যাইনি, আমরা রাজপথ ছেড়ে যাব না।’

দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘লড়াই জারি রাখুন। কোনো টাকাপয়সা, তদবির, টেন্ডারবাজি ছাড়া যদি লড়াই জারি রাখতে পারেন, তাহলে এই শহীদ মিনার থেকে ইনশাল্লাহ আমরা সরকার গঠন করব।’

দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি—কেউ যদি ভয় দেখায়, হুমকি দেয়, তাহলে পিছু হটবেন না। আমরা জানি, এলাকায় এলাকায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাটুরিয়া এনসিপির নেতা-কর্মীদের দিকে কেউ যদি চোখ তুলে তাকায়, তাহলে আমরা তা রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করব।’

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের পক্ষে আজ সন্ত্রাসী, খুনিদের বিচার চাইতে এসেছি, আহতদের পুনর্বাসন, চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিত করতে এসেছি। আমরা মুজিববাদী সংবিধান ছুড়ে নতুন সংবিধান চাইতে এসেছি।’

দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আমরা আর বিভাজনের রাজনীতি দেখতে চাই না। জুলাই সনদের প্রতিটি কথা বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করতে হবে। জুলাই সনদকে কোনো সাধারণ কাগজে পরিণত হতে দেব না। জুলাই ঘোষণাপত্রকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। জুলাই সনদ অন্তর্বর্তী সরকারকেই বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশের জনগণকে পাহারাদারের ভূমিকায় থাকতে হবে।’

সমাবেশ ঘিরে গত শনিবার দুপুরের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শহীদ মিনারের আশপাশে এসে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। মূল বেদির দুই পাশে এলইডি স্ক্রিনে আন্দোলনের তথ্যচিত্র প্রচার করা হয়। সমাবেশস্থলে ছিল লাল কার্পেট, নেতাদের জন্য তাঁবু, মোবাইল টয়লেট, মেডিকেল বুথ, নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন। পুলিশের ডগ স্কোয়াড, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী ইউনিট এবং বাড়তি টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

সমাবেশ থেকে এক দফা আন্দোলনের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন এবং এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রার’ সমাপ্তি ঘোষণা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

গঙ্গাচড়ায় হিন্দুপল্লিতে হামলাকারীদের উসকানি, স্থানীয় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

অতিরিক্ত ফি দাবি করায় বিমানবন্দর স্টাফের চোয়াল ভেঙে দিলেন যাত্রী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত