Ajker Patrika

খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা

  • অবতরণের ক্লিয়ারেন্স, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা আসছে মঙ্গলবার।
  • শরীর ঠিক থাকলে যাত্রা পরদিন।
  • ‘সিটি স্ক্যানের ফলাফল স্বাভাবিক’।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ০৪
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি

হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। তাঁকে বহন করতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসার কথা রয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবার। পরদিন বুধবার ওই অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর। তবে শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় তাঁর লন্ডনযাত্রা নিয়ে সংশয় কাটেনি এখনো। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার রাতে মেডিকেল বোর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলেছে, খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যান হয়েছে এবং তাতে ‘স্বাভাবিক’ রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল বোর্ড গণমাধ্যমকে কিছু জানায়নি।

গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। লিভার, কিডনি, ফুসফুস ও হৃদ্‌যন্ত্রের গুরুতর জটিলতায় ভুগছেন তিনি। ১২ দিন ধরে সংকটাপন্ন অবস্থায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা চলছে। দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে তাঁর চিকিৎসায় লন্ডন থেকে গত শুক্রবার এসে যুক্ত হয়েছেন পুত্রবধূ জুবাইদা রহমানও।

গতকাল রাতে একটি সূত্র জানায়, মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেছেন, ‘রোববার খালেদা জিয়ার সিটি স্ক্যানসহ কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলোর রিপোর্ট ভালো এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি দেশেই চিকিৎসা দিতে। আমাদের বিশ্বাস, তিনি দেশের চিকিৎসায় সেরে উঠবেন।’

খালেদা জিয়া কথা বলতে পারছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘কিছুটা বলার চেষ্টা করছেন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। উনার ছোট ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, দুই পুত্রবধূ সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাঁদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন।’

সিটি স্ক্যানের খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর এ নিয়ে রাত ৯টার পর এই প্রতিবেদক বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। শায়রুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাত ৮টা ৪৫ মিনিটেই তাঁর সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের কথা হয়। তিনি তখন বলেছেন, এ বিষয়ে নতুন করে বলার মতো কোনো সিদ্ধান্ত হলে জানাবেন। ‘নিজেদের অনুমান বা অন্য কারও তথ্য দিয়ে’ খবর প্রচার না করার জন্য ডাক্তার জাহিদ হোসেন একাধিকবার অনুরোধ করেছেন।

এর কিছু আগে সন্ধ্যায় মেডিকেল বোর্ডের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তখন পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি বা অবনতি কিছুই হয়নি। আর এখন তিনি যে অবস্থায় আছেন, তাতে উড়োজাহাজে দীর্ঘ ১২-১৩ ঘণ্টার যাত্রাকে উপযুক্ত মনে করছে না মেডিকেল বোর্ড। এরপরও এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনা হচ্ছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেই খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেবে বোর্ড।

সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. জাহিদ হোসেনই মূলত তাঁর অবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করবেন।

কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে গত শুক্রবার সকাল বা দুপুরের মধ্যেই লন্ডনের পথে যাত্রা শুরু করার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আসতে না পারায় সেদিন যাত্রা সম্ভব হয়নি বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়। গত শনিবার মেডিকেল বোর্ডের তরফে বলা হয়, উড়োজাহাজের যান্ত্রিক ত্রুটির পাশাপাশি খালেদা জিয়ার শরীরের অবস্থাও লন্ডনযাত্রা বিলম্বিত হওয়ার কারণ। ৯-১০ ডিসেম্বরের দিকে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাঁকে লন্ডনে নেওয়া হবে।

অ্যাম্বুলেন্স অবতরণের অনুমতি

আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি জানান, খালেদা জিয়ার জন্য কাতার কর্তৃপক্ষের ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আগামী মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বেবিচকের একজন কর্মকর্তা জানান, উড়োজাহাজটিকে সকাল ৮টায় অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, খালেদা জিয়াকে নিয়ে একই দিন রাত ৯টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা ত্যাগ করবে। তবে ওই কর্মকর্তা এ-ও উল্লেখ করেন, মেডিকেল টিমের মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে সময়সূচিতে পরিবর্তন আসতে পারে।

কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জার্মানিভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া করা হয়েছে। ঢাকা-লন্ডন দীর্ঘ রুটে গুরুতর রোগী পরিবহনের উপযোগী এই বিশেষায়িত বিমানে সব ধরনের জরুরি চিকিৎসার সুবিধা রয়েছে।

শনিবার বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদও গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়াকে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবার আসবে। ভিভিআইপি মুভমেন্ট হিসেবে এই ফ্লাইটের অবতরণ থেকে উড্ডয়ন পর্যন্ত সব ধরনের নিরাপত্তা ও অপারেশনাল প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনা করে গতকালও সারা দেশে দোয়া ও মোনাজাত হয়েছে। তবে এদিন এভারকেয়ার হাসপাতালসংলগ্ন এলাকায় আগের মতো দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিড় দেখা যায়নি।

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসা চলে তাঁর। তার পর থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডন ক্লিনিকের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। ৬ মে দেশে ফেরেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ