Ajker Patrika

জনরায়ে যাদের ভয়, তারাই নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: তারেক রহমান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ০৮
তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

জনগণের রায়ের মুখোমুখি হতে যারা ভয় পায়, তারাই নির্বাচন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ‘জনগণ কোন রাজনৈতিক দলকে গ্রহণ করবে কিংবা বর্জন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে সে রায় দেবে জনগণের আদালত। যারা জনগণের আদালতের রায়ের মুখোমুখি হতে ভয় পায় কিংবা যাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারা নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।’

আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।

জনগণকে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের কাছে আহ্বান, আপনারা ধৈর্য হারাবেন না। নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকুন। নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে—এ বিশ্বাস রাখুন।’

এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। বরং সতর্ক থাকবেন। নিজেরা এমন কোনো কাজে সম্পৃক্ত হবেন না—যাতে কেউ অপপ্রচারের সুযোগ পায়। নিজেদের জনগণের আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে নিয়ে ইতিমধ্যে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে দাবি করে সরকারের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, ‘সরকার অনেক বড় বড় সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে এসব সংস্কার কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা উপেক্ষিত থাকলে জনগণ হয়তো খোদ সরকারের সংস্কারের দাবি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘এরই মধ্যে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, পলাতক স্বৈরাচারের আমলে সৃষ্ট বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার ভেতর আনতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে? ফ্যাসিস্ট আমলের দায়ের করা লাখ লাখ মামলায় এখনো কেন মানুষকে আদালতের বারান্দায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে?’

সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কার নাকি নির্বাচন—এ ধরনের জিজ্ঞাসাকে বিএনপি তথা দেশপ্রেমিক সব রাজনৈতিক দল স্রেফ অসৎ উদ্দেশ্যে কুতর্ক বলে মনে করে। বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার এবং নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। বিএনপি মনে করে, জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা পুঁথিগত সংস্কার শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই টেকসই হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সংস্কার বা গৃহীত পরিকল্পনায় ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ষড়যন্ত্রকারীরা ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বিনষ্ট করার সুযোগ নেবে। এরই মধ্যে তারা একাধিকবার দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে।’

‘বর্তমানে বাংলাদেশ এক বিপুল সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে’—মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে কোনো হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে যাতে গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতা-কর্মীকে সজাগ থাকতে হবে।’

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেশকে সংকট থেকে মুক্ত করতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের নামে আমরা এমন কিছু করতে দিতে পারি না—যেটা আমাদের গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করবে। আর বিলম্ব না করে অনতিবিলম্বে অতি দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের মানুষকে এই সংকট থেকে মুক্ত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা একটা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাকে তাড়িয়ে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তৈরি করেছি। আমরা আশা করছি, এই সরকার ন্যূনতম যে সংস্কার প্রয়োজন, নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, প্রশাসন যন্ত্র ঠিক করা, বিচারব্যবস্থাকে সংস্কারের মধ্যে নিয়ে আসা এবং ন্যূনতম অর্থনীতির সংস্কারগুলো করে তার মধ্যে দিয়ে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’

সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, ‘এই নামে (মার্চ ফর ইউনিটি) কেন সমাবেশ করতে হলো, ইউনিটির নামে এ ধরনের সমাবেশ, বক্তব্য, ষড়যন্ত্রকারী, লুটপাটকারী ও ফ্যাসিবাদীদের জন্য সহায়ক নয় কি? মার্চ ফর ইউনিটির সমাবেশে আমরা লক্ষ্য করেছি, তাঁদের মুখ থেকে কী ধরনের বাক্য এসেছে, কী ধরনের বক্তব্য এসেছে, তাঁদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ (শরীরী ভাষা) কী ছিল। আমাদের প্রশ্ন, কী কারণে ইউনিটির নামে মিটিং করতে হয়।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত মার্চ ফর ইউনিটির সমাবেশে বেশ কিছু পোস্টার দেখা যায়। তাতে কোনোটিতে “ভোট ভোট করে যারা, লুটপাটে ব্যস্ত তারা”, “কাদের-মির্জা ভাই ভাই, বাংলাদেশের শান্তি নাই”, “চাচার বয়সী ছাত্র যারা, বাংলাদেশ গড়বে কেমনে তারা”, ইত্যাদি উল্লেখ ছিল। সেই মিটিংয়ে কেন এ ধরনের বক্তব্য, পোস্টার, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আপনাদের মধ্যে আসবে?’

বাংলাদেশ নিয়ে চক্রান্ত শুরু হয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে চক্রান্তের ধারা শুরু হয়েছে। যেটা অতীতে হয়েছে বহুবার। যার ফলে আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়েছি, যারই ফলে আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ৬ বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে, যার ফলে আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবকে বিদেশে থাকতে হচ্ছে। এই চক্রান্ত আবার শুরু হয়েছে। সত্যিকারভাবে যারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী, যারা জোর গলায় বলতে পারে— সবার আগে বাংলাদেশ, সেই দলকে, সেই দলের নেতাকে আজকে তারা দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।’

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, রাকিবুল ইসলাম বকুল, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আকরামুল হাসান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, রাশেদ ইকবাল খান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এনসিপির লক্ষ্য গণভোট, কয়টা আসন পাবে সে হিসাব করছে না: নাহিদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম ধাপে ১২৫টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে নির্বাচনকে কেবল আসন জেতার লড়াই হিসেবে নয়, বরং এটিকে জনগণের আকাঙ্ক্ষার ওপর একটি ‘গণভোট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নেতৃত্বে আসা তরুণেরা শাপলা কলি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। নাহিদ ইসলাম ঢাকা–১১ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন।

এনসিপির নির্বাচনকালীন কৌশল ব্যাখ্যা করে নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনে আসন জেতাই যদি তাঁদের মূল লক্ষ্য থাকত, তাহলে তাঁরা অবশ্যই কোনো না কোনো জোটে ভিড়তেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না, এটা খুবই পরিষ্কার। সিট কয়টা পাব কি পাব না, সেটা বিবেচনায় রেখেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছি না।’

তাঁর মতে, এবারের নির্বাচন হলো ‘গণভোট’, যেখানে ভোটের প্রধান প্রশ্ন হলো ‘হ্যাঁ অথবা না’ (সংস্কারের পক্ষে বা বিপক্ষে)। এই বার্তাটি জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্যই এনসিপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

গণ-অভ্যুত্থানের এই ছাত্রনেতা এনসিপি গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর যদি ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের ও তরুণ প্রজন্মের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী নিজেদের রাজনীতি পুনর্গঠন করত এবং দলের অভ্যন্তরে সংস্কার আনত, তাহলে এনসিপির জন্মের প্রয়োজন হতো না।’

তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপি সাত মাস অপেক্ষা করার পরও বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো কোনো সমঝোতায় আসতে পারেনি। তারা নিজেদের দলাদলি–অন্তর্দ্বন্দ্বে ব্যস্ত ছিল, নিজেদের দলীয় এজেন্ডাকে প্রধান করে তুলেছে। এই ব্যর্থতার কারণেই এনসিপির জন্ম হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান এজেন্ডা ছিল সংস্কার ও বিচার। অথচ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো গণভোট ও সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের আলোচনা না করে কেবল নিজেদের দলীয় এজেন্ডা নিয়েই প্রচার চালাচ্ছে।’

নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গায় এনসিপির পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। একই সঙ্গে, নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে পোস্টারিং ও টাকা খরচের মতো অনিয়ম হচ্ছে।

অন্য দলগুলোর মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়েও সমালোচনা করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় মাফিয়াদের নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। ঋণখেলাপিকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে।’ তিনি নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এসব ঋণখেলাপি ও মাফিয়াদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া, তিনি বিএনপি–জামায়াত উভয় দলেই ‘অস্ত্রের মহড়া’র মতো সংস্কৃতির অভিযোগ করেন।

অন্যদিকে, নিজেদের প্রার্থী তালিকা নিয়ে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে আমাদের এই যে মনোনয়ন তালিকাটা হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক...সেখানে নারী-পুরুষ, সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সবকিছুর সমন্বয় আমরা করব।’ তিনি বলেন, মনোনীত কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ওঠে, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যৎ গড়ে: তারেক রহমান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এসব কথা লিখেছেন তিনি।

পোস্টে তারেক রহমান লেখেন, আজ বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনীতির চেয়েও বড় কিছু—একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ, যেখানে সবার জন্য মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, বিরোধী মত যেখানে হুমকি না হয়ে বরং গণতন্ত্রের অংশ হবে। যেখানে ভিন্ন মতের কারণে কাউকে নিপীড়িত হতে হবে না বা গুম হয়ে যেতে হবে না।

বিএনপি প্রতিশোধের রাজনীতি করে না উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লিখেছেন, বিএনপি আজ প্রতিশোধের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করছে, আমরা সমাধানের পথে বিশ্বাসী। আমরা এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, কোনো বাংলাদেশিকে রাষ্ট্রের ভয়ে বাঁচতে হবে না, তা সে সরকারের সমর্থক হোক বা বিরোধী।

১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়— মানবাধিকারই মানুষের দৈনন্দিন বেঁচে থাকার মৌলিক শর্ত মন্তব্য করে তারেক রহমান পোস্টে লেখেন, আমরা আবরার ফাহাদ, মুশতাক আহমেদ, ইলিয়াস আলী, সাজেদুল ইসলাম সুমন, সাগর-রুনি— আর অসংখ্য শহীদের গল্প মনে রাখি, যেন ভবিষ্যতে এমন নিপীড়ন আর দায়মুক্তি আর কখনো ফিরে না আসে।

১৬টা বছর ধরে বাংলাদেশ যেন একটা কালো মেঘের নিচে চাপা পড়ে ছিল বলে পোস্টে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি লেখেন, কেউ সেই অন্ধকারকে খুব তীব্রভাবে টের পেয়েছে, কেউ চুপচাপ বয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু যাদের রাজনৈতিক অবস্থান তখনকার পতিত সরকারের বিপরীতে ছিল, তাদের জন্য এই অন্ধকার ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা। রাতের বেলা দরজায় কড়া নাড়া, মিথ্যা মামলা, নির্যাতন, ভয়কে সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলা, আর অসংখ্য পরিবার অপেক্ষা করেছে সেই প্রিয়জনদের জন্য, যারা আর কোনো দিন ঘরে ফিরে আসেনি। এই বোঝা বিএনপির চেয়ে বেশি আর কেউ বহন করেনি।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানেও সবচেয়ে বেশি রক্ত ঝরেছে বিএনপির ঘরেই জানিয়ে তিনি লেখেন, ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, মিথ্যা মামলা— সব জায়গায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু অত্যাচারের শিকার শুধু বিএনপি ছিল না; ছাত্র, সাংবাদিক, লেখক, পথচারী, সাধারণ মানুষ— সবাই সেই ভয়ংকর পরিবেশের ক্ষত বয়ে বেড়িয়েছে, ন্যূনতম মানবাধিকার হিসেবে বিবেচিত মর্যাদা, নিরাপত্তা, মত প্রকাশের অধিকারের মতো মৌলিক সব বিষয়গুলো ছিল হুমকির মুখে।

পোস্টে তারেক রহমান তাঁকে ও তাঁর মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৌলিক অধিকার বঞ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি লেখেন, এই বছরগুলোতে আমাকেও কথা বলার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে আমার কথা বলার অধিকার সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়া হয়। দেশের কোনো পত্রিকা, টিভি বা সোশ্যাল মিডিয়া যেন আমার কোনো বক্তব্য প্রকাশ না করা হয়, এমন নির্দেশনা জারি ছিল। তবুও এই চাপিয়ে দেয়া নীরবতার মধ্যেও আমি অধিকার, গণতন্ত্র আর মানুষের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছি, কারণ সত্যের স্পিরিটকে আদেশ দিয়ে থামানো যায় না। এই পুরো অন্ধকার সময়টায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছিলেন আমাদের ধৈর্য ও প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় প্রতীক। মিথ্যা মামলা, কারাবাস, তাঁকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দেওয়ার চেষ্টা- এসবই পুরো দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এক কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রতিফলন। তবুও তিনি তাঁর গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে কখনো সরে যাননি। তাঁর বিশ্বাস একটাই— অধিকার সবার; ভয় দেখিয়ে দেশকে এগোনো যায় না।

এ প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও লেখেন, আমি ব্যক্তিগতভাবেও সেই দুঃসহ সময়ের সাক্ষী। আমার মা, যিনি দেশনেত্রী, নিজে সহ্য করেছেন তাঁর ছেলেকে জেলে নেওয়া, নির্যাতন করার মানসিক যন্ত্রণা। তাঁর আরেক ছেলেকে আমরা চিরতরে হারিয়েছি। বাংলাদেশের হাজারো পরিবারের মতো আমাদের পরিবারও ছিল লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু ইতিহাসের একটা সত্য আছে- কষ্ট মানুষকে সব সময় তিক্ত করে না। কখনো কখনো কষ্ট মানুষকে আরও মহান করে তোলে। দেশনেত্রী, আমার মা- এটাই প্রমাণ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন—যে অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, তা যেন আর কারও জীবনে না আসে। দেশকে বদলাতে হলে, ঘৃণার পথ নয়— ন্যায়, নৈতিকতা আর ক্ষমাশীলতার পথই ভবিষ্যৎ গড়ে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১১
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এনসিপি। ছবি: স্ক্রিনশট
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এনসিপি। ছবি: স্ক্রিনশট

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১২৫টি আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে জুলাই অভ্যুত্থানের পাটাতনে জন্ম নেওয়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ বুধবার রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করে জানান, এটি প্রথম ধাপ। পরবর্তী সময়ে আরও আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এ সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আলোচিত মুখ ও এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসনে, সদস্যসচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ আসনে, ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৯ আসনে, ডা. তাজনূভা জাবীন ঢাকা-১৭ আসনে, ঢাকা-১৮ আসনে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং নরসিংদী-২ আসনে সারোয়ার তুষার।

এ ছাড়া সারজিস আলম মনোনয়ন পেয়েছেন পঞ্চগড়-১ আসনে। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ইকবাল হোসেন। হাসনাত আবদুল্লাহ মনোনয়ন পেয়েছেন কুমিল্লা-৪ আসনে। এর বাইরে নোয়াখালী-৬ আসনে আব্দুল হান্নান মাসউদ এবং চট্রগ্রাম-৮ আসনে জোবাইরুল হাসান আরিফ এনসিপির মনোনয়ন পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড় নিয়ে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ শরিকেরা

  • বোঝাপড়া না হলে বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার কথা বলছেন কেউ কেউ।
  • বাস্তবতার নিরিখে শরিকদের মূল্যায়ন করার কথা বলছে বিএনপি।
  • ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হতে পারে আজ।
রেজা করিম, ঢাকা 
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ১৫
সংসদ নির্বাচন: আসন ছাড় নিয়ে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ শরিকেরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আসন ছাড় নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না মেলায় শরিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। এই অবস্থায় বিএনপির সঙ্গ ছাড়ার চিন্তাও করছেন শরিকদের কেউ কেউ। এর আগে অবশ্য বিএনপি কী করে, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় তাঁরা।

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কার্যকর পদক্ষেপ না এলে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়বে।’ ফলে নতুন জোট গঠনের ইঙ্গিতও পাওয়া যায় এই নেতার কথায়। তিনি বলেন, ‘বোঝাপড়া হলে (বিএনপির সঙ্গে) এক রকমের, আর বোঝাপড়া না হলে আরেক রকমের।’ এ ক্ষেত্রে বিকল্প চিন্তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দলগুলোকে নিয়ে অন্য একটা জোটও হতে পারে।

অবশ্য আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের মনোভাব প্রসঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বাস্তবতার নিরিখে বিভিন্ন আসনে প্রার্থী দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনে জিতে আসতে পারে, এমন প্রার্থীদের বেছে নেওয়া হচ্ছে। এ বাস্তবতা বুঝতে হবে।

নাম প্রকাশ না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, এবারের ভোট অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। শেখ হাসিনার আমলের মতো যাঁদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হবে, তাঁরাই জিতে যাবেন—এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। অনেকে জাতীয় নেতা হলেও বেশির ভাগেরই ভোট করে জিতে আসার রেকর্ড নেই। এরপরও শরিকদের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা চলছে। যাঁরা বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন, তাঁদের জন্য আসন ছাড় দেওয়া হবে।

আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে মনোমালিন্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। গতকাল তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা-ভাবনা করছি। আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে।’

সব ঠিক থাকলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামীকাল বৃহস্পতিবার।

এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে দুই দফায় ২৭২টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। সম্ভাব্য বলা হলেও ঘোষিত এসব আসনে প্রার্থী বদলের সম্ভাবনা খুব কম বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তফসিল ঘোষণার পর অবশিষ্ট ২৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার কথা বলছে বিএনপি।

ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির শরিকেরা। তাঁদের অভিযোগ, দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত ৩৬ আসনের মধ্যে মিত্র তিন দলের তিন নেতাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর আগে ওই আসনে তাঁকে কাজ করার জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছিল বিএনপি থেকে।

নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবারও এই আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেছিলেন এনপিপির নেতা-কর্মীরা। তবে এই আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকেই বেছে নিয়েছে দলটি।

এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘বিএনপি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। এটা গণতন্ত্রের জন্য একধরনের অশনিসংকেত। আমরা আশা করছি, তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং শরিকদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবে।’

একইভাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। তাঁর বাড়িও এই জেলায়। তবে এবার তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

বিএনপির বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ এনে শরিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, ফ্যাসিবাদের কঠিন সময়ে কোনো কিছু চিন্তা না করে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরা রাজপথে ঝুঁকি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে থেকে সরকার পতনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। বিএনপিও সে সময়ে ঘোষণা দিয়েছিল, তারা যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন ও সরকার গঠন করবে। ৫ আগস্টের পরও বিএনপির শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলেছেন। কিন্তু ইতিমধ্যে শরিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা-সমঝোতা ছাড়াই বিএনপি এককভাবে ২৭২টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে বর্তমানে বিএনপি নির্বাচনী জোট নিয়ে তেমন আগ্রহী নয়, হয়তো মিত্রদের কিছু আসনে তারা প্রার্থী দেবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই শেষ পর্যন্ত বিএনপি কী ভূমিকা নেয়। রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই।’

বিএনপির সূত্র বলছে, বিএনপির কাছ থেকে অন্তত ২৫-৩০টি আসন ছাড়ের প্রত্যাশা করছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো। এ প্রত্যাশার সঙ্গে বিএনপির হিসাব-নিকাশের মিল নেই। শরিকদের অবদানের কথা অস্বীকার করছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শরিকদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন মোকাবিলা ও বিজয়ী হলে সরকার গঠন করতে চান তাঁরা। কিন্তু নির্বাচন যেহেতু হারজিতের খেলা, সে খেলায় জিততে পারে এমন প্রার্থী ঠিক করার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে শরিক দলগুলো থেকে বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী খুবই কম। এ বিষয়ে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিএনপি সিদ্ধান্ত নেবে।

গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আসন ছাড় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্বের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ বুধবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্য দল ও জোটের সঙ্গেও বৈঠক করবে বিএনপি।

গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনো ২৮টি আসন তো বাকি আছে। জোটের আলোচনা তো এখনো শেষ হয় নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত