Ajker Patrika

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৈঠকে ক্ষোভ, আলোচনা যেসব বিষয়ে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০: ৫১
বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে কিছুদিন আগে বঙ্গভবন এলাকায় বিক্ষোভ, অন্তর্বর্তী সরকারে নতুন তিন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বিতর্কসহ সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনার জন্য আজ বুধবার রাজধানীতে বৈঠক করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ওই সভায় সমন্বয় বাড়াতে তিন ধরনের কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ১৫৮ জন সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়কের অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৮৮ জন। উপস্থিত ছাত্রনেতাদের অনেকে নানা বিষয়ে সমন্বয়হীনতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রথমত, এ সপ্তাহের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি ২০ থেকে ২২ সদস্যের হবে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কেরা থাকবেন। দ্বিতীয়ত, একটি অর্গানাইজিং (সাংগঠনিক) টিম থাকবে। এই টিম একাধিক সেলে বিভক্ত থাকবে এবং সেল অনুযায়ী কাজ করবে। এই অর্গানাইজিং টিম এ মাসের মধ্যে গঠন করার জন্য বলা হয়েছে। তৃতীয়ত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে অর্গানোগ্রাম দেওয়া হয়েছে চার সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির, সেটি এই সপ্তাহের মধ্যে বর্ধিত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। এ ছাড়া ১৫ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের ১০০ দিন উপলক্ষে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আন্দোলনে আহতদের খোঁজখবর নেবে কেন্দ্রীয় কমিটি; পাশাপাশি ঢাকায় শহীদদের পরিবারগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ, রিফাত রশীদ, আরিফ সোহেল, ওমামা ফাতেমা, আবদুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ।

বৈঠক শেষে আবদুল হান্নান বলেন, অতিদ্রুত একটা নির্বাহী কমিটি করা হবে। কয়েকটি সেল করা হবে, যাতে মানুষের সঙ্গে সংযোগ হয়। একটা সাংগঠনিক কমিটি হবে, যারা সংগঠন ঠিক করবে।

সমন্বয়কদের মধ্যে যাঁরা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আবদুল হান্নান বলেন, ‘যাঁরা রাষ্ট্র চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা থাকলে এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সরকারের বাইরের অংশের সঙ্গে কী হচ্ছে, সেটা আলাপের বিষয় নয়। তাঁদের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা আছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে একটা রূপরেখা দেওয়া হবে।’

আরিফ সোহেল বলেন, তাঁদের সভায় নীতিনির্ধারণী ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। যে বিষয় নিয়ে তাঁরা মাঠে আছেন, সে বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে এগোবেন, সেটা আলোচনা হয়েছে। কমিটি কীভাবে গুছিয়ে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

সম্প্রতি দুজন উপদেষ্টার নিয়োগ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সে বিষয়ে আরিফ সোহেল বলেন, কী প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হচ্ছে, সেটা তাঁরা জানতে চেয়েছেন। বর্তমানে দলীয় সরকার ও সংসদীয় সরকার নেই, তাই সে আলোচনা করে নিয়োগের সুযোগ নেই। তাই কীভাবে নিয়োগ হচ্ছে, তা নিয়ে মানুষের মতামত নিতে হবে।

তবে এর আগে দেওয়া তাঁদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সভা সূত্রে জানা যায়, অনেক সমন্বয়ক এই দাবি সম্পর্কে জানতেন না। বাহাত্তরের সংবিধানকে অনতিবিলম্বে বাতিল করে সেই জায়গায় চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে নতুন করে সংবিধান লেখার বিষয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তবে আলোচনায় পাঁচ দফা থেকে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে কথা হয়েছে।

সভা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাজ কী, তা নিয়ে একজন নারী সহসমন্বয়ক প্রশ্ন তুলে বলেন, উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কী করছে। সেটার একটা জবাবদিহি লাগবে। বৈষম্যবিরোধীরা কি সরকারকে সমর্থন করে, সেটা বলতে হবে; নাকি একটা অংশ আছে, সেটা পরিষ্কার করতে হবে। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে আবার তারা ছাত্র হয়ে যাবে। আগে যেমন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে রাস্তায় দাঁড়াতেন, সেভাবে রাস্তায় থাকি। না হলে জনগণ এসে গালি দিচ্ছে তাদের, যে উপদেষ্টা নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কেউ জানছে না।

আরেকজন সহসমন্বয়ক বলেন, সরকারের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক কী, সেটা জানানো। তারা যে দায়িত্ব নিয়েছে, সেখানে জনগণ কী চায়, সেটা দেখতে হবে।

একজন সহসমন্বয়ক কমিটির কাজ কী জানতে চেয়ে বলেন, তাদের যে জেলা কমিটি হচ্ছে, সেই জেলা কমিটির কাজ কী হবে। আগের সরকার ভুলত্রুটি ধরলে নিত না। জনগণ কী বলে, তা দেখতে হবে। জনগণের রায় দেখতে হবে। তারা বেশি না কম করছে, সেটাও দেখতে হবে।

সভায় সহসমন্বয়কের প্রশ্নে আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, উপদেষ্টা যাঁদের করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চার-পাঁচজন ছাড়া কেউ কথা বলেন না। মানুষের কাছে জবাবদিহি দেওয়া হচ্ছে না। উপদেষ্টারা কী কাজ করছেন, সেটা কারও কাছে পরিষ্কার নয়। তাঁদের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক হচ্ছে দ্বান্দ্বিক। সরকারের ভালো কাজগুলোতে সাহায্য করবে। আগে যেমন সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক ছিল, তাঁরা সেটা চাচ্ছেন না। তাঁরা একটা পরিবর্তন চাচ্ছেন। সরকারের যে ভুল সিদ্ধান্ত, সেটার প্রতিবাদ জানানো তাঁদের দায়িত্ব। দ্রব্যমূল্যের দাম কেন কমছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা তাঁদের দায়িত্ব। সব দায়িত্ব তাঁরা পালন করতে পারবেন না বলেই সরকার হয়েছে। এখন তারাও যদি সেই দায়িত্ব পালন না করে, তবে সেটা ফিরিয়ে দিতে হবে। উপদেষ্টারা কে কী দায়িত্ব পালন করছেন, সেটা সবার কাছে স্পষ্ট করতে হবে।

নিজেদের ব্যর্থতা আছে উল্লেখ করে হান্নান বলেন, যে কাজ তিন মাস আগে করার কথা ছিল, তা তিন মাস পরে হয়েছে। এই সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে সব শেষ হয়ে যাবে। এই সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বসিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক কিছুতে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। এটা ঠিক করতে হবে।

হান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র নেই, এমন খবর জানার পর একটা মব তৈরি হয়েছে। তখন সেনাপ্রধান দেশে নেই। ওখানে যদি কোনো ডিজাস্টার হয়, তখন কে দেখত। পরে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধসহ তাঁরা কিছু দাবি দেন। তাঁরা ভাবেননি যে এই দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য দেখা দেবে এবং বিরোধিতা করবে। এটা তাঁদের ভাবা উচিত ছিল। অনেক রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে রাজি হলেও একটা বড় দল রাজি হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক মো. মোবাশ্বের বৈঠকে ক্ষোভ ঝাড়েন বলে একাধিক সূত্র জানায়। মোবাশ্বের বলেন, তাঁরা ‘কোনো বুঝ’ নিতে বৈঠকে বসেননি, তাঁরা সুস্পষ্ট উত্তর নিতে এসেছেন। একটা বুঝ দিলেই তাঁরা চলে যাবেন—এখন আর সেই সময় নেই। তাঁদেরকে এখন ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান শুনতে হচ্ছে। সেটা তাঁদের জন্য এবং তাঁদের ব্যানারের জন্য দুঃখজনক। এই সভার বক্তব্য যেন উপদেষ্টা নাহিদ ও আসিফের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাঁরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন আর উপদেষ্টা পরিষদে বসে আওয়ামী লীগ।

মোবাশ্বের আরো বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদেরকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের করতে কতক্ষণ। বলা হচ্ছে, সরকারের সঙ্গে তাঁদের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক, তাহলে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মানে কি না। যদি মানে, তাহলে সেইভাবে ঘোষণা করা উচিত। না মানলে আবার তারা মাঠে নামবে।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করা হচ্ছে। আর এটাকে বিতর্কিত করলে গণ-অভ্যুত্থানের যে লেজিটিম্যাসি, সেটাকেও বিতর্কিত করা হবে। তাঁরা ক্রিটিক্যাল হচ্ছেন। ক্রিটিক্যাল হলেই প্রগেস আসে। তাঁরা সিট দখল করছেন না, কাউকে আন্দোলনে আসতে বাধ্য করছেন না, কেউ ক্যানটিনে বাকি খাচ্ছেন না। এই সভায় যাঁরা আছেন, তাঁদের কেউ এটা করছেন না। তাঁদের পরিচয় ব্যবহার করে এগুলো করা হচ্ছে। তাঁদেরকে তাঁদের ব্যানারটা ওন করতে হবে। ক্রাইসিস সময়ে কীভাবে ডিল করতে হয়, সেটা আলোচনা করতে হবে ৷ আন্দোলনের আগে তাঁদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। তাঁদেরকে সাসটেইন করতে হলে ভিজিবল হতে হবে। তাঁদের হাইড অ্যান্ড সিক থাকা যাবে না।’

হাসনাত আরো বলেন, ‘আমলাতন্ত্র ও পুলিশ ঐতিহ্যগতভাবে চায়, তাদের পেছনে রাজনৈতিক বিষয় থাকুক। তবে তারা তো পাওয়ার প্র্যাকটিস করছে না। তাঁদের মধ্যে অনেকে মন্ত্রণালয়ে যান, ডিজি-উপদেষ্টাদের সঙ্গে আসেন, কী করতে হবে। কাউকে প্রভাবিত করা আমরা নিরুৎসাহিত করি। তাই অনেকে তাঁদের মধ্যে পরে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁদের সঙ্গে মিলতে চাচ্ছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত