Ajker Patrika

৪৩তম বিসিএস ভেরিফিকেশন নিয়ে যেসব প্রশ্ন তুললেন সারজিস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৩০
Thumbnail image
সারজিস আলম। ফাইল ছবি

৪৩তম বিসিএসে পুনঃ গেজেটে বাদ পড়াদের যাচাইকরণ (ভেরিফিকেশন) প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। আজ তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে এই পোস্ট করেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘৪৩তম বিসিএসের পুনরায় ভেরিফিকেশন হয়েছে। ১৬৮ জনকে এই ধাপে বাদ দেওয়া হয়েছে। ১ম ও ২য় ভ্যারিফিকেশন মিলে মোট বাদ পড়েছে ২৬৭ জন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার নেগেটিভ রিপোর্ট। অর্থাৎ পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড।’

সারজিস আলম লিখেন, ‘কিন্তু এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে।’

প্রশ্নের প্রসঙ্গে সারজিস লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে আওয়ামী লীগ পরিবার ব্যতীত অন্যান্য পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা যে কারও জন্য এই প্রথম শ্রেণির সরকারি ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন বিষয় ছিল। একই ধরনের একটি চিত্র যদি এখন দেখা যায়, তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?’

তিনি আরও লেখেন, ‘যে চাকুরীপ্রার্থী সে যদি নিজ যোগ্যতায় প্রিলিমিনারী, রিটেন, ভাইভা পাস করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয় এবং তাঁর যদি পূর্বে কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে তাঁর বাবা, চাচা, মামা, নানার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাঁকে চাকুরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন?’

ফেসবুক পোস্টে সারজিস আলম লিখেছেন, ‘আমি কি করবো সেটা কি আমার চাচা নির্ধারণ করতে পারে? কিংবা আমার চাচা কি করবে, সেটা কি আমি নির্ধারণ করতে পারি?’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘একটা সময় পরে সবাইকে ব্যক্তিগত জীবন গুছাতে হয়। ইভেন আমার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে আমার চিন্তাভাবনার মিল নাও থাকতে পারে। তাহলে পরিবারের কোনো একজন সদস্যের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারণে অন্য একজন সদস্যকে বঞ্চিত করার অধিকার রাষ্ট্র পায় কি না?’

এ সমন্বয়ক লিখেছেন, ‘সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা এবার হয়েছে—গোয়েন্দা সংস্থার অনেকে গিয়ে এবার ইউনিয়ন আর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি-সেক্রেটারির কাছে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চাকুরীপ্রার্থীদের পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জানতে চেয়েছে!’

তিনি আরও লেখেন, ‘তার মানে সারা জীবন অধ্যবসায় করা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট এক মেধাবী তরুণ প্রায় ৩ বছর দিনরাত এক করে পড়াশোনা করার পর প্রিলি-রিটেন ভাইভা পাস করে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর, কোনো এক ওয়ার্ড সভাপতি সেক্রেটারির মতামতের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে? সে তাঁর কর্ম নির্ধারণ করবে?’

সারজিস লিখেছেন, ‘তাহলে এতো আয়োজনের কি দরকার ছিল? এই ভ্যারিফিকেশন তো তাহলে প্রিলির আগে হয়ে যাওয়া উচিৎ। তাহলে তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো নষ্ট হতো না।’

সরকারকে প্রশ্ন তুলে সারজিস লেখেন, ‘আর কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে সে (স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা) এই মতামত দেয়? স্থানীয়ভাবে এমনিতেই নেতিবাচক একটা পলিটিক্স দেখা যায়, কে কারে ল্যাং মেরে উঠতে পারে! যদি একজন চাকুরীপ্রত্যাশী এমন স্থানীয় পলিটিক্সের স্বীকার হয়, তাহলে সে দায় সরকার নিবে কি না?’

সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্ট।
সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্ট।

একজনের নাম উল্লেখ করে সারজিস লিখেছেন, ‘আমার অমর একুশে হলের জাকারিয়া ভাই অ্যাডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিল। কী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি! ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট, এমএসে সিজিপিএ ৪ আউট অব ৪! প্রথম ভ্যারিফিকেশন উতরে গেলেও রি-ভ্যারিফিকেশনে বাদ দেওয়া হয়! যারা তাঁকে চেনেন, তাদের সবার আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা! আমি ভেবেছিলাম আওয়ামী আমলে তাঁকে আটকানো হতে পারে! কারণ তাঁর দাঁড়ি আছে, নুরানী চেহারা, ৫ ওয়াক্ত নামায পড়েন। জামাত-শিবির ট্যাগ দেওয়া সহজ। কিন্তু তাঁকে আটকানো হলো এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে! কিন্তু এখন তো নিয়োগের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড প্রক্রিয়া নতুন করে সেট হওয়ার কথা ছিল! এটা শুধু একটা এক্সামপল, এমন আরও অনেকজনের সাথে কথা হয়েছে।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘পরে দেখলাম যারা বাদ পড়েছে, তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন করে পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু এই ভ্যারিফিকেশন খেলা কেন? এখানে অনেকেই আছে যারা পূর্বের চাকরি ছেড়ে এসেছে, অনেকের ছিল জীবনের শেষ চাকুরির পরীক্ষা, অনেকের সামনের জীবন নির্ভর করছে এই চাকুরির ওপর। সেখানে যদি এমন রিয়েলিটি সেট করা হয়, তবে যে প্রজন্ম আগামীর চাকুরিপ্রার্থী তারা আপনাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে না, দোদুল্যমান অবস্থায় না থেকে দেশ ছেড়ে চলে যাবে। অলরেডি এটা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। যেটা কখনোই কাম্য নয়।’

সারজিস আলম লিখেছেন, ‘চাকুরি হবে মেধার ভিত্তিতে। যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, যদি পূর্বে ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যায়, অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকে, তাহলে নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকুরি পাওয়া তাঁর সাংবিধানিক অধিকার। কোনো অহেতুক এক্সকিউজে যেটা ক্ষুণ্ন করা কখনোই ভালো বার্তা বহন করে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত